ইউজার লগইন

কি হবে "বিজয় দিবস" দিয়ে?

বছর ঘুরে আবার এলো বিজয় দিবস। ছোট বেলায় দেখতাম, পাড়ার মোড়ে দোকানে ছোট ছোট পতাকা ঝুলছে। মাইকে বাজছে বিজয়ের গান। বড় ভাইয়েরা দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর আমরা এক কোনায় দাড়িয়ে শুনছি তারা কি বলে। সিঙ্গারা সমুচা পাওয়া যাবে-দাড়িয়ে থাকার সেটাও একটি উদ্দেশ্য ছিলো।

আজ বড় হয়ে গেছি। এখনও বছর ঘুরে ঘুরে আসে বিজয় দিবস। ৩৬৪ দিন পর আবার এসেছে ১৬ ডিসেম্বার। আবারো রাত ১২ টায় প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতি পুষ্প অর্পণ করবেন স্মৃতিশৌধে আবারও শীতের সকালে কম্বলের নীচ থেকে বের হতে চাইবে না শরীর।
আবারও লেখা হবে ৫০০০ কবিতা আর ৮০০০ গদ্য। শহীদের কান্না আর বিজয়ের আনন্দের অশ্রুতে গাওয়া হবে আরো ২০০ গান। ২ লক্ষ চেয়ার টেবিল ভাড়া করে মঞ্চায়ীত হবে আরো ৪০০ সেমিনার। আবারো ৬৫ বছরের বৃদ্ধ বুদ্ধিজীবি আর ২২ বছেরর তরুনের সমন্বয়ে যাত্রা করবে কিছু র‌্যালি। আর ফুলে ফুলে ভ'রে উঠবে স্মৃতিশৌধ। ঝকঝকে প্লাজমা টিভির স্ক্রিনে শুরু হবে নাটক আর টেলিফিল্ম। জুই, কেয়া, আর বসুন্ধরা গ্রুপের সৌজন্যে আমরা দেখবো বিজয়ের নাটক। ঠিক যেমনটি দেখেছি গত বছর। তার আগের বছর। তারো আগের বছর।

কিসের জন্য এই উৎসব? কোথায় সেই বিজয়? আমার ভাইয়ের রক্তের উপর যে সবুজ ঘাস জন্মেছে সে জন্য এই উৎসব? নাকি আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা আজ রক্ত কাঁশতে কাঁশতে রিকশা চালাচ্ছে সেই উল্লাসে? আহা! বড় কষ্ট লাগে যখন দেখি দরিদ্র, পঙ্গু, নুয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধারা ময়লা কুচকানো পাঞ্জাবী পড়ে সেমিনারের প্রথম সারিতে বসে আছেন, আর রাজদরবারের মত দশফুট উচু অশ্লীল মঞ্চে বসে আছেন কোন একজন মন্ত্রী! শুকরের মত চর্বিযুক্ত মন্ত্রী নামক মাংসপিন্ডটা যখন তার লোমশ হাতে আমার দরিদ্র বাবার হাতে ক্রেষ্টতুলে দেন, আর আমার দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা বাবা বোকার মত হাসতে হাসতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকেন, তখন বিজয় দিবস শব্দটা আমার কাছে পৃথিবীর অশ্লীলতম শব্দ মনে হয়। বোধ করি বীর শহীদরা তখন অট্টহাসীতে ফেটে পড়েন, কারন তাদের এই অশ্লীল অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে যেতে হয়নি।

কে না জানে এই অশ্লীলতার উৎস! কে না জানে ১৭ ডিসেম্বারে আবারো রাস্তায় ভিক্ষারত দেখা যাবে সেই মুক্তিযোদ্ধাকে যে ১৬ তারিখ বসে ছিলেন কোন এক সেমিনারের প্রথম সারিতে। কে না জানে যে মন্ত্রীর অশ্লীল হাত ক্রেষ্ট তুলে দিয়েছিলো সেই হাতে স্বাক্ষরিত হবে কোন দৃর্ণীতির চুক্তি। যে চুক্তিতে ধর্ষিত হবে দেশ বছরের পর বছর।

কে না জানে আজ যে নপুংশক কবিরা ৫০০০ কবিতার জন্ম দিবেন কাল তারা ২০ টাকা ঘুষ দিয়ে ট্রেনের টিকিট কিনবেন! আর শুকরের মত ঘোৎ ঘোৎ করে বলবেন "শালার দেশে ঘুষ ছাড়া কিছু হয় না!" কে না জানে আমাদের কবিরা কদম ফুল কল্পনা করেন শুধু বর্ষার প্রথম দিনে। শরতের মেঘের তুলা না ভাসলে কাঁশফুলও যে দোলে না তাদের মনে! এই অশ্লীল কবিরা তিন মাস লেখে আদিরসের কবিতা, দুমাস লেখে বর্ষার কবিতা। আর চারমাস ব্যস্ত থাকে হস্ত মৈথুনে! হায় মুক্তিযুদ্ধ! হায় মুক্তিযোদ্ধা, হায় অভাগা শহীদ! তোমাদের জন্য কবিরা দয়া করে বরাদ্দ করেছেন একটি দিন! ১৬ ডিসেম্বার! অশ্লীল ৫০০০ হাজার কবিতায় ভ'রে উঠবে, পত্রিকা, দেয়াল আর ব্লগ!

আর ৮০০০ গদ্য লেখকের প্রতি শুধুই করুনা। যে পত্রিকায় যে ব্লগে ছাপা হবে তার লেখা সেই পত্রিকায়ই ছাপা হবে জামায়াত ইসলামির নিজামির বিবৃতি! আর বৃহন্নলা লেখকের দল আত্নপ্রসাদে ভুগবেন এই ভেবে যে গত এক সপ্তাহের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে! বিজয় দিবসের লেখাটা শেষ হয়েছে!!!!

খুব জানতে ইচ্ছে করে কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্রটি বুকে গুলি খেয়ে মরে পড়েছিলো কোন জলাভূমিতে? যে গুলিটি সে বুক দিয়ে ঠেকিয়েছে, মায়ের গায়ে লাগতে দেয়নি। কেমন আছে সে! ভাই, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো তোমাদের নিয়ে বিজয় দিবসে কতবড় নাটক মঞ্চায়িত হচ্ছে দেশে! তোমাদের মা আজ ১৪ বছর ভাত খায় না কারন তুমি জেলে মৃত্যুর আগে ভাত খেতে চেয়েছিলে। তোমাদের মা আজ ১৪ বছর মাটিতে শুযে ঘুমায়, কারন তুমি জেলে শক্ত মেঝেতে পড়েছিলে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত। তোমার মা আজ ছেড়া স্যান্ডেল পড়ে সংয়ের মত বসে থাকে সেমিনারে। আর ভন্ডের দল বক্তৃতা দিয়ে যায়।

হায় ঈশ্বর! আর কত অশ্লীল নাটক দেখতে হবে বিজয় দিবস নিয়ে! আর কত তামাশা! কেন শুকরের মঞ্চ ভেঙ্গে পড়ে না! কেন নপুংসক কবিদের কবিতা ধুয়ে যায় না শহীদের রক্তে! আর কত অশ্লীল নৃত্য দেখবো স্বাধীনতার ব্যবসায়ীদের?!

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

অতিথি পাখি's picture


একটা সময় এই দিনে আমরা ৫ টাকা দিয়া ১০০টা কাগজের ফ্লাগ কিনতাম । আর রাস্তার মোড়ে বন্ধু-বান্ধব মিলে গাড়ি ঘোড়া দাড় করায়া আলপিন দিয়ে ফ্লাগটা পকেটে লাগিয়ে দিতাম যাত্রিদের । বিনিময়ে হাদিয়া মিলতো ।

সন্ধ্যার পরে হিসেবে দেখা যেত বিশাল অংক!!!
এখন বিজয় দিবস অন্য দিনের মতই । মাঝে মাঝে মনেও থাকে না !!

পোষ্টের ব্যাপারে বলবো,

দেখে দেখে সয়ে যাই সব ! বুকের এক কোণে ক্ষয়ে ক্ষয়ে জমা হতে থাকে কিছু পচা কফ ! ইচ্ছে হয় থু করে মারি ছুড়ে মারি আর লেপ্টে পড়ুক তাদের মুখের উপড় !! আর তা দেখে এক চিলতে অস্পষ্ট করে হাসুক নির্যাতিত, লাঞ্চিত, অপমানিত মুক্তিযোদ্ধারা।

কাওছার আহমেদ's picture


দায়িত্ব যখন আনুষ্ঠানিকতায় বাধা পড়ে তখন সেই দায়িত্ব কখনোই পালন করা হয়ে উঠে না!!

তানবীরা's picture


দেখে দেখে সয়ে যাই সব ! বুকের এক কোণে ক্ষয়ে ক্ষয়ে জমা হতে থাকে কিছু পচা কফ ! ইচ্ছে হয় থু করে মারি ছুড়ে মারি আর লেপ্টে পড়ুক তাদের মুখের উপড় !! আর তা দেখে এক চিলতে অস্পষ্ট করে হাসুক নির্যাতিত, লাঞ্চিত, অপমানিত মুক্তিযোদ্ধারা। Frown

 

আমারো এইই কথা।

নীড় সন্ধানী's picture


প্রথমেই সিরিয়াস পুষ্ট দিলেন? এমনিতেই মনটা ভালো না আজকে, আপনার পোষ্ট পড়ে আরো খারাপ। :(

কাওছার আহমেদ's picture


আমাদের তো মন খারাপ, আর যে ছেলেটা ১৬ বছর বয়েসে গুলি খেয়ে পড়ে ছিলো তার কেমন লেগেছিলো! এইটা ভাবছি সারারাত! নিজেকে বড়ই তুচ্ছ মনে হচ্ছে

হাসান রায়হান's picture


নীড়দার মত আমারো মনখারাপ হইল। কিছু বলার নাই।

নীড় সন্ধানী's picture


হাসান ভাই আপ্নেরে বহুবছর পর দেখলাম, দুই ঈদের কোলাকুলি বাকী আছে। বুকে আসেন........... :)

হাসান রায়হান's picture


হ্যা বস, অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নাই।

কাওছার আহমেদ's picture


অনেকদিন পর কথা হলো কেমন আছেন, মন খারাপ কোন ব্যাপার না, আমাদের সবকিছুই ক্ষনস্থায়ী আর সতেরো তারিখেই আমরা যার যার কাজে চলে যাবো,

১০

টুটুল's picture


এই স্পিরিট যদি সব্বার মধ্যে থাকতো তাহলে বাংলাদেশের চেহারাটাই অন্য রকম হতো :(

স্পিচলেস :(

১১

বিহঙ্গ's picture


কেমন যেন কিছুই, বলার নাই। কিছুই করার নাই, জড়বস্তুতে পরিণত হয়েছি।.......................

১২

সাঈদ's picture


বিজয় দিবস মানে একটা ছুটির দিন শুধু।

১৩

সোহেল কাজী's picture


সবই বলা হয়ে গেছে নতুন করে কিছু বলার নেই। পঁচা মাংস আর হাড়ের বনীকদের দেখে দেখে ক্লান্ত।

১৪

নজরুল ইসলাম's picture


সময় আসতেছে, সব ঠিক হয়ে যাবে... হ...

১৫

রন's picture


আমারো তাই মনে হয়, বিচার হবেই, বাট সময় তা প্রচুর নিচ্ছে সরকার। নিজেকে গুছানোর জন্য সময় নিচ্ছেন সরকার, নিতে পারেন কিন্তু পাঁচ বছর ওয়েট করাবেন না আশা করি।

১৬

সুমনা's picture


এত হতাশ হয়েননা। এখনো মনের বেহায়া অংশ টুকু আশা করে সব ঠিক হয়ে যাবে। কে জানে হয়ত একদিন ঐ অংশটুকুরই জয় হয়ে যাবে।

১৭

পদ্মলোচন's picture


এই গুলান গায়ে বাঝে না। অভ্যাস হয়া গ্যাছে।

ওঃটঃ তুই এমন এক্সাক্ট সংখ্যা কৈ থেইকা জানলি?

১৮

নুশেরা's picture


মন খারাপ হয়ে গেলো

তবুও আশায় থাকি...
তবুও শুভেচ্ছা মহান বিজয় দিবসের...

১৯

ডানপিটে's picture


মানুষ বদলায় আমিও বদলে গেছি। একটা সময় খুব ইচ্ছে করতো ওদের টুটি চেপে ধরি। কিন্তু এখন দেখি আর নিজেক ধিক্কার দেই। কারন আমি কাপুরুষ, সত্য বলার সাহস আমার নেই, প্রতিবাদের সাহস আমার নেই।

২০

লোকেন বোস's picture


মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণের বিণিময়ে আমাদেরকে বিজয় দিয়েছেন। একে পূর্ণাঙ্গ করে তোলা আমাদের দায়িত্ব।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন আপনার মতো এরকম প্রশ্ন করতে না পারে, সেই দায়িত্ব আমাদের।

চলুন আমরা সবাই মিলে এই বিজয়কে স্বার্থক করে তুলি

২১

মাসরুর's picture


লেখাটা পড়ে মনে হল আমরা কি আদৌ স্বাধীন হয়েছি? নাকি সবাই স্বাধীন হওয়ার অভিনয় করে যাচ্ছি!!!!!! :(

সেইরকম লেখা হইছে কাওসার ভাই! সকালেই এটা ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম!

২২

রন's picture


এইভাবে হাল ছেড়ে দিলে তো হবেনা, আমাদের প্রেসার গুলই বিচার এনে দিবে। আর কিছু পথ জেতে হবে ঃ)

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.