ইউজার লগইন

২০৩৬ - এ ব্লগ স্টোরি (১৬)

সড়কে ফুটপাথ নেই। তবে হাঁটার জন্য আলাদা লেন আছে। বিষয়টা বিরক্তিকর। একসময় ঢাকার রাস্তায় ফুটপাথ ছিলো। যদিও তাকে চাকাপথ বলা হতো - মটর বাইক, রিকশা দিব্যি সেঁধিয়ে যাওয়ায়। তারপরেও আলাদা একটা জায়গা তো ছিলো। এখন চার লেনের সড়কের একটা থাকে পথচারীদের জন্য। তবে ক'জন আর সত্যিকারের পায়ে হেটে চলে! রোলার-স্কেটিং আর স্টিং-কেডসের প্রাদুর্ভাবে জুতা পায়ে হাঁটার জো নেই। যে হারে মানুষ এখন যান্ত্রিক পায়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে - প্রখর রোদ্র সেবন একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ক্যানসার প্রিভেনসনের জন্য ডাক্তার আমাকে দুপুরে ঘন্টা দুই প্রখর রোদে হাঁটতে বলেছিলো। অযান্ত্রিক গ্রাস সু পায়ে। আমার সবুজ রঙা দেহে সূর্যের আলোকরশ্মি একধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করবে, যা গ্রাস সু’তে বন্দী হবে। এর ভেতরে কি এমন ধারক রয়েছে নাকি। ঘরে ফিরলে রিএনার্জিকলার হবে।

সমস্যা হচ্ছে গ্রাসরুটেড ফুটপাথের কনো খবর নাই। বেশ কয়েকবছর পর্যন্ত সবুজ ঘাসের একটা মেঠোপথ তৈরীর আন্দোলন চলছে। ধানমন্ডি টু ফকিরাপুল ফ্লাইওভারের উপরে। যেখানে খালি পায়ে হাঁটা যাবে। এখন যেখানে পুরাতন এয়ারপোর্ট রেসিডেন্টসিয়াল এলাকা, একসময় সেখানে সবুজ বনানী ছিলো। তখন শহরের ভেতরে জলাশয়, বনভূমি রাখার একটা প্রাগৈতিহাসিক মতবাদ ছিলো। মানুষ মনে করতো একটা শহরের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃক্ষ এবং ঝিল থাকতে হবে। সেজন্য বিশাল জনারণ্যের আবাসনসংকটে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রমনা, চন্দ্রিমার মত খোলা প্রান্তর ফেলে রাখা হয়েছিলো। পুরাতন এয়ারপোর্টের বিশাল বিরাণ ভূমি ও বনাঞ্চলে ইউনিফর্ম-ধারী কিছু মানুষ শারিরীক কসরত করতো। তখন যেটা কুচকাওয়াজ নামে পরিচিত ছিলো। পরবর্তীতে জনরোষের ফলে আবাসন অগ্রাধিকার পায় আর বায়ুসেবন এবং বৈকালিক ভ্রমণের মত অবৈজ্ঞানিক শরীরচর্চা অপ্রচলিত হয়ে পড়ে। এখন এসমস্ত জায়গায় জাদুঘরের মত করে পার্কের মডেল রাখা হয়েছে। পোর্টেবল এসব রিক্রিয়েশন সেন্টারগুলোতে বিভিন্ন ডাইমেনশন দেয়া থাকে। আমি বিশ্বাস করি এসব আইনসংগতভাবেই জনসেবায় নিয়োজিত, কিন্তু তারপরেও ঘাসের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ষাটোর্ধ্ব টাপুরের মা অবশ্য কিছুদিন আগে একটা ঘাস-বালিশ কিনে দিয়ে বলেছিলো, আমার বুকের উপরে ঘুমিয়ে তো আর মজা নেই, এই ঘাস বালিশ বেশী লোভনীয় লাগবে তোমার, ঘুমাও এখানে!

আমার ঘাসবালিকা ম্রিয়মান হয়ে গেছে বটে, কিন্তু তার হৃদয়ভূমি বেশ সপ্রতিভ। ইদানিং তিনি হার্টবিট রিডার ব্যবহার করেন কথায় কথায়। দুপুরে শূন্যে ঝুলানো নদীর রেলিং ধরে বসে ছিলাম দুজন। স্কাইরিভারের এই অংশটা বেশ রোমান্টিক। যদিও বললাম, আহ, কি মনোরম ছিলো সেই বুড়িগঙ্গা! কোনকালে অত্র অঞ্চলে প্রচুর নদী ও খালের দেখা মিলতো। যেসব আবার পরিবেশ দূষণ রোধে মাঝেমাঝে শোধন করার জিগির উঠতো। কেমিক্যাল মিশ্রিত ফ্লুয়েডকে প্রাকৃতিকভাবে অপসারণের মাধ্যমে কিভাবে পরিশোধন করা সম্ভব – সেটা একটা বেশ ফানি চ্যাপ্টার ছিলো। বিস্তীর্ণ এলাকা জুরে উন্মুক্ত ড্রেন হিসাবে সেগুলোকে চিহ্নিত করে একসময় ভরাট করে ফেলা হলো। ফলে গড়ে উঠলো ঝকমকে শহর, আর আকাশ জুরে নদী। পুরোটা নয়। প্রশস্থ একটা জায়গা জুরে ঠিক যেখানটায় আগে বুড়িগঙ্গা ছিলো। টাপুরের মা আমার বুকে হার্টবিট রিডার সেট করে বললো, দেখেছো তুমি এই জায়গাটাতে সেকেন্ড একটা পালস দাও – আর বাসায় দুটো। আজকাল কি ভয় পাও আমাকে? দেখবে বুড়িগঙ্গা? কিবা উত্তর দেই এর। ঘাস নেই, নদী নেই – এমন স্মৃতিকাতরতা টের পেলে হয়তো ভার্চুয়াল একটা ফ্লাস শানিয়ে দেবেন চোখের সামনে। তার হাতের আংটিতে একটা এক্সট্রা মেমরী প্রজেক্টর রয়েছে। বিগত দিনের ঢাকা রেকর্ড হয়ে আছে। সুতরাং ভয় তো পেতেই হয়। উপোসী এ্যাডভেঞ্চারে আর পালস মিস করতে চাই না, ভুলেই গেছিলাম দুই যুগ আগের বুড়িগঙ্গা দেখা আরো ভয়ংকর হবে!

পোস্টটি ৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

হাসান রায়হান's picture


চলুক বস। টপক্লাস হইতেছে লেখাটা।

কৌশিক আহমেদ's picture


থ্যাংকু থ্যাংকু।

মেঘকন্যা's picture


পড়া চলছে, লেখা চলুক...

কৌশিক আহমেদ's picture


পড়ার জন্য ধন্যবাদ মেঘ।

শওকত মাসুম's picture


পড়ছি, চলুক

কৌশিক আহমেদ's picture


উৎসাহ ট্রিমেনডাস লাগছে...থ্যাংকুসসসসসসসস

লীনা দিলরুবা's picture


ষাটোর্ধ্ব টাপুরের মা অবশ্য কিছুদিন আগে একটা ঘাস-বালিশ কিনে দিয়ে বলেছিলো, আমার বুকের উপরে ঘুমিয়ে তো আর মজা নেই, এই ঘাস বালিশ বেশী লোভনীয় লাগবে তোমার, ঘুমাও এখানে!

ঘাসের বালিশ! কই থেকে এসব আইডিয়া পান বস?! নেন কোক Beer

কৌশিক আহমেদ's picture


থ্যাংকু বস। ভুলেই গেছিলাম...যে আইডিয়া কামস ফ্রম ইনস্পিরেশন..

জ্যোতি's picture


পড়তেছি পড়তেছি

১০

কৌশিক আহমেদ's picture


থ্যাংকু ব স।

১১

শিবলী's picture


২১৩৬ হলে ভাল হত। Cool ২০৩৬ মনে হয়না আমরা এত দূর জেতে পারব Tongue

১২

কৌশিক আহমেদ's picture


আপনার সাথে একমত। ২০৩৬ সাল আর ২০১২ এর মধ্যে হয়তো তেমন কোনো পার্থক্য থাকবে না। তবুও ভাবছি।

১৩

তানবীরা's picture


পড়া চলছে, লেখা চলুক...

১৪

কৌশিক আহমেদ's picture


ইচ্ছা আছে কন্টিনিউ করার...

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

কৌশিক আহমেদ's picture

নিজের সম্পর্কে

ঠিক যে সময়ে তুমি অ-সিদ্ধান্তের স্থির ভলকানো
হরতাল-বিভ্রমে অফিস নামক খাঁচার জন্য অনিরাপদ
উদ্দেশ্যবিহীন রিমোট ঘুরিয়ে দুচোখের আশ্রয়ে
এক অথবা একাধিক নিউজ নিউজে বিচারক
একটু কি অবসর হবে? এক কাপ চা?

এই যে ধরুন বিগলিত ডিনারের পাশে অপেক্ষমান শ্রোতা
আমাদের ডাল-ভাত সকাশে বিনিদ্র মূল্যযান
রোজগেরে টমোটো-শশার উপরিতে
ভদ্রলোকের মত চামচ বাজিয়ে আলাপের করতল
একটু কি অবসর মেলে? কি হচ্ছে দেশে?

দুই দিকে যাচ্ছি বিলক্ষণ
তোমার দয়ার্দ্র রাজনীতির ভেতরে আমার গোরস্থান।