হায় সাধু!
স্থানীয় পোস্ট অফিস। যিনি টিকেট বিক্রি করেন, তিনিই আবার মানি- অর্ডার গ্রহণ করেন। তাই তাঁর ব্যস্ততা প্রচুর।
এক বিকেলে টাকার হিসাব মেলাতে পারছিলেন না ডাকঘরের সেই কর্মীটি। ধরে নিই তাঁর নাম শফিক।
অনেকবার গুেণটুনেও যখন হিসাব আর মিলল না-১৫০০ টাকার গরমিল হলো-শফিক ভাবলেন, গরমিল যখন হলোই, পোস্টমাস্টারকে যখন ব্যাপারটা জানাতেই হবে, ধমক যখন খেতেই হবে তাহলে নিজের পকেটেও কিছু থাকুক না! তিনি আরও ১০০০ টাকা রেখে দিয়ে পোস্টমাস্টারকে ব্যাপারটা জানালেন।
পোস্ট অফিসের সব কর্মী গভীর রাত অব্দি চেষ্টা করে হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হলেন। শেষে পোস্টমাস্টার নিজের সুনামের কথা ভেবে পকেট থেকে টাকা দিয়ে হিসাব মিলিয়ে দিলেন।
আমার বসবাস পোস্ট অফিস থেকে কিছু দূরে। এ ঘটনা আমার জানার কথা নয়। তবু আমি খুব ভালোভাবেই জেনেছি ঘটনার সাথে আমি জড়িত ছিলাম বলে।
খুলে বলি। সেদিন মাসের ২ কি ৩ তারিখ ছিল। বেতন পেয়ে বাজারে গিয়েছি- মাসিক বাজার, মায়ের জন্য টাকা পাঠানো ইত্যাদি জরুরি কাজগুলো সারার জন্য। আামার একটা হিসাবের খাতা আাছে। সারাদিনের খরচের বিবরণ আমি ওটাতে টুকে রাখি। সেদিন সন্ধ্যায় হিসাব করতে গিয়ে আবিস্কার করলাম- আমার মানিব্যাগে ১৫০০ টাকা বেশি আছে! তার মানে মুদি দোকানে বা পোস্ট আফিসে আমি টাকাটা দিইনি। আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি এই ভেবে যে, ভুলটা যেখানে হয়েছে তারা হিসাব মেলাতে না পেরে না জানি কতটা সমস্যায় পড়েছে!
সকালে আমার অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল অফিস শেষে খুঁজতে বের হবো- কোথায় টাকাটা দেওয়া হয়নি।
আমাদের পিয়ন বলল, স্যার আপনি বোধহয় পোস্ট অফিসে টাকা দেননি। ওরা কাল সারারাত হিসাব করতে করতে হয়রান হয়ে গিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেই পিয়নকে দিয়ে টাকাটা পাঠিয়ে দিলাম। পোস্টমাস্টার আমাকে চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন।
আমি গেলাম একদিন। পোস্টমাস্টার মহাশয় যা করলেন তা অকল্পনীয়। তিনি বারবার বলছিলেন- আপনার মা-বাবাকে আম একবার সালাম করতে চাই। যারা আপনার মতো সন্তানকে বড় করেছেন, দেখতে চাই তাঁরা কেমন মানুষ। িবব্রত আমি শুধু ভাবছিলাম- অসঙ্গতির মাঝে বাস করে করে স্বাভাবিক ব্যাপারগুলোও এখন আমাদের অবাক করে দেয়।
এই ঘটনার দুদিন পর সেই টিকেট বিক্রেতা শফিকের সঙ্গে রাস্তায় দেখা। রোদে ঘেমে নেয়ে তিনি চিঠি বিলি করছেন। আিম বললাম, কী ব্যাপার, আপনি এখন কাউন্টারে বসেন না? তিনি ক্ষেপে গিয়ে বললেন, আপনিই তো আমাকে রাস্তায় নািময়েছেন। আমার সর্বনাশ করেছেন আপনি। তিনি আরও যা বললেন তার সারসংক্ষেপ মোটামুটি এই- আমি ১৫০০ টাকা ফেরৎ দেওয়ার পর পোস্টমাস্টার বাকি ১০০০ টাকার জন্য শফিককে ডেকে পাঠান। জেরার মুখে শফিক শেষে ১০০০ টাকা মেরে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এর শাস্তি হিসাবে কাউন্টার থেকে সরিয়ে তাঁকে চিঠি বিলি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শফিক আমাকে বলছিলেন- টাকাটা আপনি ভুল করে দেননি, ব্যস শেষ হয়ে গেছে।পরে আবার দিতে গেলেন কেন? আমরা তো হিসাব মিলিয়ে ফেলেছিলাম। আপনি সাধু সাজতে গিয়ে আমাকে চোর বানিয়েছেন। আমি আপনাকে ছাড়ব না।...
হা হা হা !
আপনার কাজতো আপনি ঠিকই করেছেন ।
আমরাবন্ধুতে স্বাগতম ।
স্বাগতম। 'সততা' বেঁচে থাক।
সততা বাঁচিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য, উদরাজী
আমরা সবাই এমন হই না কেন?
কেন?
ভাল লাগলো।
সততা এখন একটা এলিয়েন শব্দ মাত্র...বই টই এ থাকে, কোনো ব্যাবহারিক প্রয়োগ নেই।
ঠিকই বলেছেন
আরে, সিরাজী ভায়া যে ! কী খবর ? স্বাগতম টু আমরা বন্ধু...
জী ভায়া। আছি ভালো। দোয়া করবেন।
ধন্যবাদ শিপন
সততা এখন একটা এলিয়েন শব্দ মাত্র...বই টই এ থাকে, কোনো ব্যাবহারিক প্রয়োগ নেই।
শফিক তো চাল্লু পাবলিক! আপনিই সেকেলে
খুব ভালো লাগলো সিরাজীকে এখানে দেখে। সুস্বাগতম। নিয়মিত লেখা পড়তে চাই আপনার।
ধন্যবাদ নুশেরা। চেষ্টা করব নিয়মিত হতে।
দুনিয়াতে নানা প্রকার মানুষের সমাহার । আমি কী অবস্থায় আছি, সেটাই ভাবার বিষয় ? হায়রে লোভ আমাদের !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
সততা খুব দূরবর্তী শব্দ এখন আমার কাছে
ভাইটি বাকী জীবন এরাম সৎ- সুন্দর থাকেন, শুভ কামনা 
এই মন্তব্য তো আমি করছিলাম! তাজ্জব নাম নাই কিলা

চমৎকার লাগলো লেখাটা অভিজ্ঞতাটা সততার বিবরণ।
আপনি কি সেই সিরাজী যিনি চবিতে কনিকা কটেজে থাকতেন?
জি ভাই, কনীনিকা সেভেন
জ্বী, ঠিকই আন্দাজ করেছেন। সেই চবি'র কনিনীকা-৭ এর বাসিন্দা সিরাজী।
সিরাজী ভাইকে আমরাবন্ধুতে স্বাগতম!
মন্তব্য করুন