নাম বনাম
আমরা বন্ধু ব্লগে এম. এ. সিরাজীকে দেখে অবাকই হয়েছি। আমার নামের সাথে এত মিল! প্রথমে ভেবেছি- এটা বুঝি আমি নিজেই। মাইনুলের এম, এইচের এ। পরে ভদ্রলোকের প্রোফাইল দেখে বুঝলাম- লোকটা আমি নই। আমিতো ভার্সিটি লাইফ শেষ করে এসেছি সেই ১১ বছর আগে। তবে অনেকে ভাবতে পারেন এম. এ. সিরাজী নামে আমি বুঝি আরেকটা একাউন্ট খুলেছি!
নাম নিয়ে এহেন বিড়ম্বনার গল্প শোনাবার জন্যই এই পোস্টের অবতারণা। একটা ধাঁধা দিয়ে শুরু করব, কৌতুক দিয়ে শেষ করব।
১। আচ্ছা বলুন তো, কী এমন জিনিস, যা একেবারেই আপনার; কিন্তু আপনি ব্যবহার করেন কম, অন্যরা সারাদিন ব্যবহার করে?
ঠিক ধরেছেন। এটা হচ্ছে আপনার নাম।
২। মেয়ে যখন তার মায়ের পেটে, এবং তারও আগে থেকে আমরা দুজনে ঠিক করে রেখেছি মেয়ের নাম রাখব মাতোয়ারা। যথারীতি রেখেছিও। কিন্তু ফুটফুটে মেয়েটাকে কেউ কেউ আদর করে ডাকা শুরু করল- মাতু। কী কুৎসিত অবস্থা! অবশেষে নাম পরিবর্তন করে রাখলাম কুশিয়ারা। এখন কুশি ডাকলে আমাদের কাছে আরো ভালো লাগে। দুটোই অর্থপূর্ণ।
সুতরাং নাম রাখার আগে ভাবুন। এমন নাম রাখবেন যাতে সেটাকে সংক্ষেপ করলেও ভালো শোনায়। যেমন পারভিন থেকে পারু।
৩। নামকে বিকৃত করা একধরনের অপরাধ। আপনি আদর করে নাম রেখেছেন জলি বা জলিল। দুর্জনেরা তাকে ডাকে জইল্যা। আপনি ইচ্ছে করলেই এমন নাম রাখতে পারেন যা বিকৃত করা যায় না। যেমন- বিনা, সালমা।
৪। জি বাংলার ডান্স বাংলা ডান্স এর একজন বিচারকের নাম অর্পিতা। ভূত চরিত্রটি ম্যাজিশিয়ান (মিঠুন চক্রবর্তী) কে জিজ্ঞেস করে- ওর পিতা তো বুঝলাম কিন্তু কার পিতা?
৫। আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করেছেন। তার নামটিও খুব স্বাভাবিকভাবে আপনার দারুণ পছন্দ। কিছুদিন পর বাসায় যে কাজের মেয়েটা যোগ দিল, হায় হায় তার নাম আর আপনার ভালোবাসার নাম একই! কী করা। শেষে কাজের মেয়ের নামটা পাল্টে রাখলেন মর্জিনা বা টুনি।
৬। সিরাজী আমাদের পারিবারিক উপাধি। শুরুটা হয়েছে আমার বাবাকে দিয়ে। তিনি মাসুদ রানার পোকা ছিলেন। সিরাজী মাসুদ রানারই একটা চরিত্র। আমাদের গ্রামের নামটাও সিরাজপুর। বাবা তাই লাগিয়ে নিলেন। আমাদের ভাই বোন, ভাতিজা, চাচা, চাচাতো ভাই- সবাই যার যার ক্ষেত্রে সিরাজী নামে পরিচিত। বিড়ম্বনায় পড়ি- যখন কেউ আমার মাকে বলে সিরাজীর মা।
৭। বিশেষ প্রয়োজনে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আমার নামের শেষে সিরাজী দেখে তিনি মন্তব্য করলেন, নামের সঙ্গে সিরাজী কেন? জঙ্গি জঙ্গি লাগে।
৮। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় লেখালেখি করতাম। প্রচুর চিঠিও পেতাম ভক্তদের কাছ থেকে। একদিন একটা চিঠি পাঠালেন জনৈক রুমি। আমি রুমি আপা সম্বোধন করে উত্তর দিলাম। উনি আবারও লিখলেন- জবাব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ইতি- শামসুল আরেফিন রুমি!
৯। এবারে কৌতুক। প্রথম শ্রেণীর বাচ্চাকে টিচার জিজ্ঞেস করলেন- বলো তো তোমার মায়ের নাম কী? বাচ্চা উত্তর দিল- রোকসানা। টিচারের আবার প্রশ্ন- তোমার বাবার নাম? বাচ্চার জবাব- ওগো।
তার আর দোষ কী? বাবা তো মাকে ওগো বলেই ডাকে। ছোট পরিবারগুলোর এই এক সমস্যা।
তবে নাম নিয়ে সেরা কৌতুকটা করেছেন বোধহয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। কেউ কেউ তাঁকে সাকা বলে। এজন্য একদিন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাংবাদিকদের কাছে বললেন- সব নামকে সংক্ষেপ করলে তো সমস্যা। তাহলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হয়ে যাবে BAL.
সব নামকে সংক্ষেপ করলে তো সমস্যা

মজার পোষ্ট মাইনুল (সিরাজী নয়
) ভাই।
১। বাড়ি করার আগে প্রায় ষোল বছর একই বাসায় ভাড়া ছিলাম চট্টগ্রাম শহরে। সে বাড়ির এক ফ্ল্যাটে থাকতেন ফরিদ সাহেব, তার স্ত্রী ও পাঁচ ছেলে যাদের সবার নামের শেষ অংশ ছিল "ইবনে ফরিদ" (বাংলায় যার অর্থ "ফরিদের ছেলে")। ছেলের বন্ধুরা এসে জিজ্ঞেস করত "ফরিদ আছে"। ফরিদ সাহেব বলতো "জ্বী বলুন, আমিই ফরিদ"। হয়ত দেখা যেত আগন্তক ছোটে ছেলেটির কাছে এসেছে। কিন্তু একে এক সব ভাইরা বের হয়ে বলতে হত "জ্বী বলুন?" লোকটি বলত "না না, আপনি না, আমি ফরিদের কাছে এসেছিলাম"।
২। আমাদের ঠিক পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন মানিক সাহেব। শান্ত সহজ সরল মানুষ। আবার দারোয়ানের নামও ছিল মানিক। বাসায় গোসলের সময় পানি নেই। আব্বা দরজা খুলে চিল্লাচ্ছেন ঐ মানিক, মানিকের বাচ্চাটা কই গেল। দেখা গেলো মানিক সাহেব মুখ কাচুমাচু করে হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসছেন।
৩। আমার মেয়ের নাম "তাহসিনা নূর সানা"। চট্টগ্রামের মানুষ 'রেল গাড়ি' কে বলে 'লেলগাড়ি' আর আমার 'সানা'কে ডাকে "ছানা"। আমার বিরক্তি চরমে উঠে।
৪। আত্নীয় এক বাচ্চার দাদু বাচ্চাটিকে বলছে, "পুস্পা, রুমকিকে (পুস্পার মা) বলো, দাদু ডেকেছি। পুস্পা মাকে বলে "মা, দাদু তোমাকে বকা দিয়েছে, তোমাকে আম্মু না বলে রুমকি বলেছে"। তুমিতো আম্মু, তুমি কি রুমকি?!
আপনার ১ নং টা একেবারে আমাদের কাহিনি বকলম ভাই
মাইনুল ভাই, চমৎকার লিখেছেন। #৫ টা আসলেই মজার। বাস্তবে অনেক ঘটে। খুব মজা পেলাম।
এই ধাঁধাঁটা বোধ হয় এই যুগে আর খাটেনা। কারন এখনতো প্রতিদিন নিজের নাম লিখতে হয় অনেকবার। মানে বিভিন্ন সাইটে লগইন করতে আর কি
ধুর, যে কথা বলতে গিয়ে বলাই হলোনা আর তার আগেই পোষ্ট করে দিয়েছি। আমার জমজ বাচ্চা। ওরা খেলছিলো। তো, আমি আমার বউকে আমার নামের ইতিহাস শোনাচ্ছিলাম এভাবে:
আমি: বুঝে, আমার জন্মের আগে আব্বু নাম রেখেছিলেন "শায়খ শুফিয়ান শাফেঈ রুমেল মোহাম্মদ শিবলী মেহেদী। তো, বিভিন্ন ফর্মে লিখতে অসুবিধা হয়, তাই সংক্ষেপ করে করা হলো শা.শু.শা রুমেল মোহাম্মদ শিবলী মেহেদী। তারপরও সমস্যার সমাধান হয়না। এভাবে চলতে থাকে ক্লাস ৯ পর্যন্ত। এস.এস.সি.-র জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে গিয়ে করে দিলাম R.M. Shiblee Mehdi (বাংলায়: রুমেল মোহাম্মদ শিবলী মেহেদী বা আর.এম. শিবলী মেহেদী)। আর সবাই ডাকে শুধু শিবলী, ভালোই হলো।"
কথাটা বলা শেষ করতে করতেই আমার বাচ্চারা আমাদের দিকে তাকায়। আমিও কিছু গুরুত্ব না দিয়েই বলি:
আমি: কি বুঝলি রে আম্মুরা?
ওরা: আগে তোমার নাম অনেক বড় ছিলো আর এখন ছোট হয়ে গেছে!
আমি: হুম্, কিন্তু ছোট হয়ে কি হয়েছে বলতো?
ওরা: বাপু
আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে গিয়েছিলো! তাইতো, বাবা হবার পর ওরা আমাকে 'বাপু' ডাকে নিজ থেকেই। আর সেটাইতো আমার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট নাম!
জমজ বাবুদের কাহিনি শুনতে চাই
রম্য দারুণ হয়েছে। ধন্যবাদ।
আপনাকে ২ টাকার ধইন্যা
লেখা মজারু হয়েছে।
ধইন্যা। এটা কী ফুল?
আমি নতুন সিরাজীর পোস্টটাকে পুরাতন সিরাজীর পোস্ট মনে করেই পড়ছিলাম । আর ভাবছিলাম যে সিরাজীর লেখা তো এমন হওয়ার কথা না (নতুন সিরাজী মনে কষ্ট নেবেন না প্লিজ) । শেষে যেয়ে পোস্টদাতার নামটা পড়ে আবার ফিরে গেলাম উপরে । না, একই রকম নাম হলেও এরা যে আলাদা মানুষ, তখন বুঝতে পারলাম ।
আপনার নামে সিরাজী দেখে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে, আপনি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর বংশধর । সিরাজগঞ্জে বাড়ী বলে এই অমর পুরুষ সিরাজী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন ।
পোস্ট সুন্দর ও মজার হয়েছে । আরও বেশী সময় কেন দিচ্ছেন না আমাদের ?
আরো বেশি সময় দেব? এমনিতে বোধহয় বেশি হয়ে যাচ্ছে
জোস হইছে সিরাজী থুক্কু মাইনুল এইচ সিরাজী। সত্যিকারের রম্যের স্বাদ পাইলাম।
কী যে বলেন না ঈশান!
আমার এক ফ্রেন্ড একবার বাংলাদেশ বেতার থেকে অডিশনে ডাকা হয়। সে গিয়ে দেখে তার নামের কারনে তাকে মহিলা দের অডিশনের দিন ডাকা হয়েছিল।
ওই পোস্টেও বলছি= আম্রার দুইটা সিরাজী।
পশ্চিমে অনেকেই আমাদের নাম থেকে ছেলে মেয়ে আলাদা করতে পারেন না। যদিও নামের শেষে এ, আই, ই থাকলে সাধারণত মেয়েদের নাম হয় বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু তারপরো অনেকেই মেইল করেন গুড মর্নিং মিষ্টার তানবীরা
আমার এক বাল্যবন্ধু পত্রমিতালী করতে স্কুলে থাকতে। প্রচুর চিঠি স্নো পাউডার সেন্টের শিশি উপহার পেত বলে আমাদের হিংসা হতো। বলতাম 'দোস্ত এই ভাগ্যের রহস্য কি'। বললো, 'আমার নাম'। বললাম, 'তোর নাম তো মাইনুদ্দিন'। বললো, ' আমার পুরো নাম শাহ মাইনুদ্দিন, সংক্ষেপে শামা। মিতালী পত্রিকায় সংক্ষেপটাই দিছিলাম।' এবার বুঝেন!
আমি একবার সিরু নামে পত্রমিতালি করেছিলাম। বস্তায় বস্তায় চিঠি আসত।
নামনামা পড়ে মজা পেলাম।
অধ্যাপক ডঃ এরশাদুল বারী (পরিচয় দেয়া বাহুল্য) ক্লাসে আমাকে ডাকতেন "নিউশেরা" বলে। বিদেশে চিঠি পেতাম- মিস্টার অ্যান্ড মিসেস তাজরীন।
ড এরশাদুল বারী দারুণ মজার মানুষ
নাম নিয়ে আসলেই অনেক ভেজাল। নাম সংক্ষেপে লিখার জন্যই ছোট কাকু আই মিন মাইনুল.এইচ.সিরাজী আমাকে চিনতে পারেননি।
এতো দেখি চাচা ভাতিজা কাহিনী... হা হা হা হা
এবারে চাচা কাহিনী আর ভাইস্তা কাহিনী শুরু হোক ।
আমি চিনে ফেলেছি ছবি আর প্রোফাইল দেখে। চেয়েছিলাম সম্পর্কটা অপ্রকাশিতই থাকুক। তুমি বলে দিলে!
ইউনিভারসিটিতে শারমিন বলে আমাদের সাথে ডিপার্টমেন্টে একজন ছিলো, অন্য ডিপার্টমেন্টে একজন ছিলো।। ।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দুজনেরই সিট ছিলো ঢাকা কলেজে।। আমাদের সময় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সব মেয়ের সিট ছিলো ঢাকা কলেজে।। তবে মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে আমাদের শারমিনের ঢাকা কলেেজ সিট পড়ার কথা না।. (purush bole)
ওয়েল ডান।
রিয়েল চাচা ভাতিজা এসে গেল দেখছি। জম্বে বেশ।
আমার ইচ্ছা আছে আমার ছেলেকে আমরা বন্ধুতে নিয়ে আসার। আমার ছেলে এখনি আমরা বন্ধুর নানা কাহিনী পড়ে!
বাপ ছেলে!
আসলেই, নাম বিকৃতি অপরাধের সামিল!
লেখা ভাল লাগলো।
মন্তব্য করুন