হোয়াট হ্যাপেনস ইন ভেগাস...
শিরোনামের কথাটা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে। নাটিকে, সিনেমায়, বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় সবাই লাস ভেগাসের প্রসঙ্গ উঠলেই কথায় কথায় বলে বসে হোয়াট হ্যাপেনস ইন ভেগাস স্টেইজ ইন ভেগাস। কিন্তু কেউ ব্যাখ্যা করে বলে না, আসলে এর মানে কী। অনেকদিন যাবতই ইচ্ছা ছিল আমরিকা গেলে ভেগাসে একবার একটা চক্কর মেরে আসব। এমনই কপাল এবার কনফারেন্সের ভেন্যুই গিয়ে পড়ল একেবারে মালীর ঘাড়ে--মানে লাস ভেগাসে। আর পায় কে, লাস্ট মিনিটে টিকেট কেটে, হোটেল বুকিং দিয়ে, লোকজনকে অল্পবিস্তর জানিয়ে ঢুকে পড়লাম জাম্বো জেটের পেটে।
বিমান তাইপে থেকে টোকিও গিয়ে একটু যাত্রা বিরতি করলো। ডেলটা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট, তেমন আহামরি কিছু না। নারিতা এয়ারপোর্টও তেমন আহাউহু করার মতো মনে হলো না। বরংচ কিছুটা নিরিবিলিই লাগলো। টোকিও থেকে লস এঞ্জেলস সাড়ে দশ ঘন্টার যাত্রা। ঝিমাতে ঝিমাতে পৌঁছে গেলাম। এল এ তে ইমিগ্রেশন কাস্টমস এর পালা শেষ করে ডমেস্টিকে ফ্লাইটে ভেগাস যেতে হবে। আমেরিকার ইমিগ্রেশন নিয়ে কতো ভয়াবহ সব কথা শুনেছিলাম, অথচ বলতে গেলে সল্পতম সময়ে সব ঝামেলা মিটে গেল। এর চেয়ে সহজে শুধু একবার প্যারিস এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন ক্রস করেছিলাম ( আমার এখনও মনে হয় অফিসার বোধহয় অন ডিউটিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, চেহারার দিকে একবারও না তাকিয়ে পাসপোর্টে স্ট্যাম্প মারতে আর কোথায় দেখিনি)। এল এ তে কাস্টমস অফিসারেরাও বেশ আন্তরিক ছিলেন, দু'একটা প্রশ্ন করেই নিজে থেকেই তাড়া দিলেন জলদি গিয়ে আমার পরবর্তী ফ্লাইট ধরতে। ধন্যবাদ জানিয়ে পরের টার্মিনালে চলে যাই লাগেজ নিয়ে।
এল এ থেকে ভেগাস ঘন্টাখানেকের ফ্লাইট। সহযাত্রীর সাথে গল্প করতে করতেই কেটে গেলে। ভেগাসের আকাশে প্লেন ঢোকার পর থেকেই আমি তাজ্জব। দিগন্তজোড়া সব ধূসর। কোথাও সবুজের কোনো ছায়া পর্যন্ত নেই। এমনকি পাহাড়্গুলোও সব ন্যাড়া, সামান্য লতাগুল্মও দেখা যায় না খালি চোখে। অথচ এখানেই গড়ে উঠেছে আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম চোখ ধাঁধানো শহর, মরূদ্যান আর মরিচিকার বিরল মিতালী। আসমান থেকে যা দেখছিলাম তাতে শহরটা ঘুরে দেখার আগ্রহ প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছিল। প্লেন মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে বের হয়ে লাগেজ আনতে বেল্টের কাছে গেলাম। বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এত দেশ দেখেও ভেগাসে লাগেজ কালেকশন এরিয়া দেখে আমি রীতিমতো ভিমড়ি খেলাম। অস্ফুটে মুখ থেকে বের হয়ে এল--হোয়াট দ্য হেল! চারদিক লোকে লোকারণ্য, হৈ চৈ সরগরম, ঘটনা কী? ভালোমতো তাকিয়ে বুঝলাম আশেপাশে শত শত স্লট মেশিন বসানো। ক্যাসিনোর সূত্রপাত এখান থেকেই। লোকজন লাগেজ আসতে দেরী দেখলেই হুটহাট জুয়া খেলতে বসে যাচ্ছে। কেউ কিছু জিতলেই গগনবিদারী হুল্লোড়ে জানান দিচ্ছে। মেশিনে ট্যাঁ ফোঁ তো চলছেই।
লাস ভেগাস এয়ারপোর্টের কাস্টমস এরিয়া
লাগেজের জন্য খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। হাতে পেয়েই ঝটপট বেরিয়ে এলাম। ইচ্ছা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে পৌছে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া। টার্মিলানের সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেই বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম। মনে হলো কে যেন আসুরিক শক্তিতে চোখে মুখে বিশাল একটা ঝাপটা মেরে গেল। বিশ্বাস করেন দশ সেকেন্ডের ভেতরেই আবার টার্মিনালের ভেতরে চলে আসতে বাধ্য হলাম। ধাক্কা বলেন বা ঝাপটা, দেনেওয়ালার নাম মরুভূমির লু হাওয়া। জানতাম যে এখানে খুব গরম পড়ে, কিন্তু এর প্রচণ্ডতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। মনে হলো আমাকে কেউ বোধ হয় জোর করে ফূটন্ত কড়াইয়ে বসিয়ে দিয়েছে। এর আগে মধ্যপ্রাচ্য, ভারত বা আফ্রিকার মরুতে ভ্রমণ করেছি, কিন্তু এতটা ভয়াবহ কোথাও অনুভব করিনি--হয় তো দীর্ঘদিনের অনভ্যস্ততার জন্যেই। ভেতরে এসে যিনি রিসিভ করতে আসবেন তাকে ফোনে জানালাম কত নাম্বার গেটে আমি আছি, উনি সেখানে এসে গাড়ির থামালেন, আমি পড়িমরি করে উঠে বসলাম। ফুল স্পীডে এসি ছাড়া অবস্থাতেই সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছিল। মূল কারণ হলো বাতাসে আদ্রতার অভাব। গরমে চামড়া ঝলসে যাবে, কিন্তু এক বিন্দু ঘাম বের হবে না। হাঁসফাঁসানি কিছুটা থামলে জানালা দিয়ে বাইরে নজর দিলাম।
এয়াপোর্ট থেকে মূল শহর মাত্র মিনিট পনেরোর রাস্তা। শহরের মূল অংশে প্রবেশ করলে চারদিকে চোখে পড়ে বিশাল বিশাল সব দালান। অত্যাধূনিক স্থাপত্য, নিঁখুতভাবে সাজানো। বলা বাহুল্য--এর বেশিরভাগই ক্যাসিনো, যার মায়ার টানে সারা পৃথিবী থেকে মানুষ ছুটে আসে। নিজের কস্টার্জিত অর্থবিত্ত উড়িয়ে সাময়িক বিমলানন্দ অনুভব করতে।
আমি যেখানে ছিলাম--লুক্সর হোটেল & ক্যাসিনো
চেক ইন এরিয়া, পাশেই ক্যাসিনোর হাতছানি
লুক্সর পুরাই মিশরী স্টাইলে সাজানো, ক্যাসিনো আর হোটেলের মাঝামাঝি বিশাল সব মূর্তি
ভর দুপুরেও ক্যাসিনো জমজমাট, দিনরাতের তফাত বোঝার কোনো উপায় নেই
পাশেই মান্দালয় বে, আমাদের কনফারেন্স চলছিল ওখানেই
আজ এ পর্যন্তই থাক। পরের পর্বে রাতের লাস ভেগাসের কিছু ছবি দেব। যুবক ভাতৃবৃন্দের কিছু দাবী-দাওয়া ছিল মনে আছে। আসলে ছবি তোলাতে আমার ব্যাপক আলসেমি, আর খুবই ব্যস্ত ছিলাম কনফারেন্সের কাজে। তবুও সময় বের করে টুকটাক ছবি তুলেছি। ভালো লাগলো না মন্দ দয়া করে জানাবেন।
এর জন্যই সবাই বলে আমেরিকা গেলে একবার ভেগাস ঘুরে আস
ঠিকই বলে আসলে, দেখার মতোই শহর একখান
এগেইন আসক!
ভালো লাগছে। ছবি গুলা খুব ভালো হইছে। এখনো টপলেস রেস্তোরায় খাইতে যান নাই?
হাসান ভাই, সব কথা কি আর বলা যায়। মডু এসে মাইর লাগাইবো না?
আপনিও শেষমেশ জুয়া খেলতে গেলেন!

আর ছবিটাও দিছেন মাপমতো। বালিকার নিচে আপনে দাঁড়ানো। কেমুন যেন অশ্লীল অশ্লীল লাগতাসে।
হ, অশ্লীষের আর দেখছেনডা কী? সিনসিনারি প্রায় সবই এ রেটেড ঐখানে!
আমারে নিয়া যাওয়ার কথা ছিল। একলা একলা দেখতে গেলেন! আমারে নিয়া গেলে কি আপনার চৌক্ষে ভাগ বসাইতাম?
ছি ছি গৌতম আপনে না ভালো পোলা?
আমি তো ভালাই! খালি তানারে একটু চৌক্ষের দেখা দেখতে চাইসিলাম! মামু ভাইয়ের জন্যই দেখাডা হইল না
গৌতমজি, সামনের বছরের জন্য আগাম বুকিং দিয়ে রাখেন, যেতে যেতে হবে দেখা
ধুর এতোদিন মুলা ঝুলায় রেখে এই নাযিল করলেন????????আসল ছবি কই?????????????????
আপনেরে মাইনাস।

যা ব্যাটা বান্দর, এবি একটা ফ্যামিলি ব্লগ, এইখানে আমি তোর খায়েশমতো ছবি দিলে পরিবেশ দূষিত হয়ে যাবে, তার চেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে নিজেই একবার ঘুরে আয়
আপনার লাসভেগাসের ছবি শুধু আমার দাবী না এটা জাতীয় দাবী ছিলো।এখনো আছে।আর খালি আমারে বকেন!!!!!!!
আাপনে কিন্তু মেলা লেখা বাকী করে রাখছেন।সেই পাকি কাহিনী এর কি হলো সেটা জানান তাড়াতাড়ি।তারপর লাসভেগাসের ট্যাক্সী ড্রাইভার আর ঢাকার সিএনজি ওলা আরেক টা হচ্ছে এষা আর আয়লার ফটো।
তাড়াতাড়ি দেন ব্রো.।.।
জলদি পরের পর্বে সুন্দর সুন্দর (!!!) ছবি দিয়া ছাড়েন। এইসব কি ভুজুং ভাজুং ছবি দিছেন???
অঃটঃ লেখা ভালা পাইলাম।
ধন্যবাদ সাঈদ ভাই, পরের পর্বে দুই একটা ভালু ছবি থাকলেও থাকতে পারে!
মামুন ভাইকে দেখে ভাল্লাগতেসে। মন্তব্য পড়ে করুম।
আপনাকে দেখেও ভালো লাগলো মীর ভাই। অনেকদিন আপনার লেখা পড়া হয় না, নতুন কিছু ছাড়েন জলদি
এখন অফিসে আছি। চুপচাপ পড়ে গেলাম!
আপনে চুপচাপ থাকা মানে তো ঝড়ের পূর্বাভাষ!
মামুন ভাই অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।লাস ভেগাসের লেখাটা দুঃখ দিল-
( আমি লাস ভেগাস না দেখার দুঃখে লাশ হয়ে গেলাম।আহা কি আনণ্দে আসেন ভাই..।বালিকার ছবির জন্য প্লাস।
অতিরিক্ত গরমে এমন হইতেই পারে।

ধন্যবাদ ভাই। আসলেই অতিরিক্ত গরমে বালিকাদের নাভিঃশ্বাস উঠে যায়
চলন্ত ছবি নাই?
(লিভিং ইন লাসভেগাস মুভিটা দেখছেন?)
ভিড্যু আছে একটা দুইটা, দেখি আপ্লোড করে দিব পরের পর্বে। না ভাই ছবিটা দেখা হয় নাই, লিংক দিতে পারেন দয়া করে?
হে হে দারুণ। ডেস্টিনেশন লাস ভেগাস নামক অভিযান শুরু কর্তে মঞ্চায়

শুরু করে দে। আর মন্তব্য করে ভেগে গেলে হবে? কতদিন তোর মজার কোনো লেখা পড়ি না!
বালিকার ছবি ভালো পাইলাম! পরের পর্বে যুবক ভাই-বেরাদরদের দাবি যথাযথভাবে পুরণ করা হউক!
ছুম্মা আমিন!
একালের ঝাণ্ডু দা। আপনি কখন আসেন আর কখন যান, ঠাহর কর্তে পারিনা। তবে আপনার সাথে থাকলে, বড়ই জ্ঞান বাড়ে----
কত দেশ-বিদেশ জানা যায়------ তাই সংগেই আছি।
শাপলা, লেখালেখির ক্ষেত্রে অনেক কিপটা হয়ে গেছি আজকাল, কেন জানি ভালোই লাগে না লিখতে। আসলে অনেক কথা স্কিপ করে চলে যাই, ধৈর্য্য থাকলে সব বলতাম। তবে আপনার ঝাণ্ডুদা খেতাবটা শুনে খুব মজা লাগলো, অনেক বছর আগে আমার বড় বোন আমাকে সেই নামে ডাকতো, আর আজকে আপনি ডাকলেন। ধন্যবাদ
লাসভেগাস যাইতে মঞ্চায়... আফসুস...
চলেন পরের বার একসাথে যাই
মামুন ভাই, লেখালেখিতে কিপটামি করলে মানবো না। ছবি দেন, ভিডিও দেন এবং বিশদ বিবরণ দেন। এই বিবরণ অনেক ছোট হইসে। আর মাসিক শিশুবার্তা প্রকাশের সময়ও হয়ে গেছে মনে হয়।
জ্বি মাসিক শিশুবার্তা আজকেই পাবেন
লেখালেখি কী কারণে যে হচ্ছে না আগের মতো বুঝতে পারছি না। দেখি চেষ্টা করে ছাই ভষ্ম কিছু নাজেল করতে পারি কিনা
হ্যাঁরে
তোর উপর আমার মেলা রাগ। তুই কবে গেলি এলি কিছুই জানলাম না। তুই তো জানিস আমি ফেসবুকাই না। যাই হোক, তোর ছবি আগেই দেখছি ফ্লিকারে। কয়েকটা প্রশ্ন আছে তাই মন্তব্য করি:
১। একটা ছবিতে দেখলাম প্রায় ৯৮% নগ্ন একটা মেয়ে। ও দেশে কি ছেলেরা এরকম কোন নৃত্য করে? মানে মেয়েটার শরীর দেখার জন্য যারা যায় সেরকম ছেলেদের শরীর দেখার জন্য কেউ যায়? নাকি নারী যে পণ্য সেটার বাস্তব প্রমাণ এই ছবি? এটা কি নারীর স্বাধীনতা না পরাধীনতা?
২। শুনেছিলাম শহরে নাকি ডামি শহর থাকে। মানে নিউইয়র্কের মতো শহর বা একরম কিছু। তাই?
ছবিগুলো চকচকে ঝকঝকে আসছে।
দোস্ত রাগ করিস না, তুই একা না, আম্রিকায় গিয়ে কারও সাথেই যোগাযোগ করার সুযোগ পাইনি। আসলেই খুব দৌড়ের উপর ছিলাম। আর ব্লগাড্ডাবাজি তো ছেড়ে দিয়েছি জানিসই। পরের বার একেবারে তোর দরকার গিয়ে নক করবো, তখন ঠেলেও বের করে দিতে পারবি না
১। হ্যাঁ রে শরীর প্রদর্শনীর সব রকমের খেলা ওখানে দিন রাত চলে, আমি তো স্পেশাল জায়গাগুলোতে যাই নি, ইচ্ছে করেই, ছবিটবি যা দেখলি সেগুলো রাস্তা থেকেই তোলা। ভেতরের অবস্থা আসলেই কেরোসিন। আমি কারও দোষ দিতে চাই না, তবে ছেলে হোক বা মেয়ে তারা স্বেচ্ছায় শরীর কেনাবেচা করে, কেউ চটজলদি টাকা কামাতে, কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়ে। এটাকে স্বাধীনতা না পরধীনতা বলবো সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।
২। লাস ভেগাস আসলে ছোট্ট একটা শহর, মানে মূল অংশটা খুব একটা বিশাল কিছু না। ওখানে ডামি শহর দেখিনি, তবে নামী শহরের বিশেষ স্থাপনা বার চিহ্নগুলোর আদলে দালান কোঠা বানানো আছে।
যাবি নাকি একবার?
লাস ভেগাস শেষ?
হ, আইসা পড়ছি। পোলাপান রেখে বেশিদিন বাইরে মন টেকে না। এখন আপনেও বুঝবেন বাচ্চার মায়া কী জিনিস
পৃথিবীর আর সব আনন্দ গৌণ হয়ে যায় তার কাছে।
ছবি তো কিছুই দেখলাম না
হা হা দেখামু বস, এট্টু ফ্রি হইলেই
মন্তব্য করুন