দিনলিপিতে দু'হাজার বাইশ - ৪
গভীর রাতে ব্লগ লেখার সেই প্রাচীন ব্যামোটি কি আবার ফিরে আসতে পারে না? আমার মনে আছে, কোন এক কালে গভীর রাতে ব্লগ লেখার ব্যামো ছিল। না লিখলে ঘুম আসতো না। হাত নিশপিশ করতো, পানির তৃষ্ণার চেয়ে বেশি ধোঁয়ার তৃষ্ণা পেতো এবং নানান উপসর্গ দেখা দিতো। সেই উজ্জল সময়টা হেলায় হারিয়েছিলাম দেখেশুনেই। এ জীবনে দেখেশুনে আমি যা কিছু হারিয়েছি তার তুলনায়, না বুঝে হারানো সবকিছুর অনুপাতই অনেক কম। কি ভয়ংকর, তাই না? কিন্তু আমার আরও মনে হয়, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো একই রকম।
হাঞ্চ-মতো একটা কিছু আরকি! একটা সামাজিক গবেষণার মানচিত্র আঁকা গেলে অবশ্য হাঞ্চটা টেস্ট করে দেখা যেতো। সেটা তো সম্ভব না। জীবনের বেশিরভাগ জিনিসপত্রই আবার এই কাতারের, "সম্ভব না"।
কাফকার একটা অমর বাণী রয়েছে, "জীবনে বেশিরভাগ ভালবাসাই আসে হারিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু শেষ অবধি সে ভালবাসা আবার অন্য কোন রুপে ফিরে আসে। ভালবাসা বারবার ফিরে আসে।"
তাই, ছোটখাটো হাঞ্চের দিকে নজর দেয়ারই বা সময় কই? তারচেয়ে কত জরুরি বিষয় নিয়ে সময় কাটানোর সময় মেলে না এখানে! তারপরও মাঝে মাঝে একটা গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে ছোট করে কাটা পিঙ্গল চুলের কোন এক অ্যানাবেল এসে জিজ্ঞেস করে, আজ সকালের কফিটা এখনও পান করো নি কেন? সারাটা দিন এত আনমনা থাকো কি করে?
তারপর, সন্ধ্যায় একশত পঞ্চান্ন নাম্বার বাস ধরে আমি প্রথমে শুলটে নুয়েনিং থেকে আসি প্রধান স্টেশনে। হপ্টবানহফ যার নাম, এ দেশের সব শহরে একটা থাকে। সেখান থেকে প্রথমে হেঁটে হেঁটে পার হই সেতু, তারপর গোলচক্কর। তারপর চক্রাবক্রা একটা রাস্তা। সে রাস্তা দিয়ে সামনে গিয়ে দেখি একটা বাড়ির চারপাশে ভাড়া লাগানো। বাশেঁর নয়। লোহালক্করের। একটা ক্রেনমতো যন্ত্রও দেখা যায় সেখানে।
সেই বাড়ির একতলায় চাবি ঘুরিয়ে একটা বাসায় ঢুকে আমি কাঁধের ব্যাকপ্যাকটা প্রথমে নামাই। পকেটের চাবিটা বের করে রাখি। এক পা দিয়ে আরেক পায়ের জুতা খুলি। তারপর সে গৃহে প্রবেশ করে আমি আমার ভেতরে ডুবে যাই।
মাঝে মাঝে ডুব থেকে মাথা তুলে দেখি আশপাশে কি হচ্ছে। ফ্রেন্ডস্-এর একটা বা দুইটা পর্ব ছাড়া দেখা হয় না কিছুই আসলে। কখনো হয়তো একটা কিছু কোনমতে বানিয়ে, খেয়ে আবার ডুবে থাকি হারানো সমুদ্রের গভীরতম খাদে। যেখানে কেউ নেই। যেখানে দেখতে পায় না কেউ আমাকে। তারপর আবার সকালে উঠে দেখা হয় অ্যানাবেলের সাথে। কল্পনায়।
জানি, আমি খুঁড়তে খুঁড়তে কোন এক সীমানার শেষ প্রান্তে চলে এসেছি ঠিকই। এখান থেকে আর অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কতবার যে এ খোঁড়া বন্ধ করে অন্য কোনদিকে চলে যেতে চেয়েছিলাম তার ইয়ত্তা নেই। প্রত্যেকবার নিজেই সেই চাওয়াগুলোকে গলা টিপে হত্যা করে আমি সীমান্তের পানে ছুটেছি। মৃত্যুকে যেন তার ন্যায্য সময়টুকুও আমি দিতে রাজি ছিলাম না কখনো!
অথচ আমিই ছিলাম ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সবচেয়ে বড় সমর্থক, আর উকিল। আর সেই আমি কিনা আজ নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি যে, নিজের বেলায় তাতে আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাসের লেশ নেই!
মানুষ বাহিরে যত বড় বড় কথাই বলুক না কেন, সঠিক শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার চর্চা না থাকলে কোন কথাই নিজের ক্ষেত্রে কাজে প্রতীয়মান করে দেখানো যায় না। তারমানে জীবনটা খুব সহজ, তাই না? সবকিছুই এখানে সত্যের মাপকাঠিতে ভর দিয়ে চলে। যার যতটুকু সত্য, তারজন্য ততটুকুই রয়েছে এখানে। সত্য যা নয়, তাকে আসলে কোনদিনও পাওয়া হয় না। আমরা শুধু সত্যকেই পাই এ জীবনে। এবং সে পাওয়াটার পরিধি অত্যন্ত সীমিত।
অসীম মহাবিশ্বের সীমিত একটা পরিধি আমাদের পাওয়া'র আলোকে প্রজ্জ্বলিত। দুর থেকে একটা বিন্দুর মতো দেখা যায়। বাকি চারপাশটা অন্ধকার। কোন আলো বের হতে পারে না সেখান থেকে। আলাদা করে কোনকিছু দেখা যায় না সেখানে। শুধু মানুষ তার নিজের মনের ভেতর সেখানে যা আছে বলে ধরে নেয়, যার ছবি আঁকে মাথার মধ্যে, তাই দেখতে পায় সেই পরিধির বাইরে।
এর পুরোটাই তো আমাদের কল্পনা, তাই নয় কি? সেই কল্পনা দিয়েই ভরা হয় আমাদের প্রত্যেকের সীমিত উজ্জল সত্যের পরিধির বাহিরের অসীম অন্ধকারটা। আর সেটাই আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় সারাটা জীবন।
তার অর্থ হচ্ছে, সেটাকে যদি আমরা রঙিন প্রাণের ছোয়াঁয় জীবন্ত করে রাখি মনে মনে, তো সেটা তেমন থাকবে। আর যদি সেটাকে বর্ষার আকাশভরা ধূসর মেঘের মতো গুমোট করে রাখি আমাদের কল্পনাতে, তো দমবন্ধ লাগবে।
এই তো। ঠিক কিনা?
---
তোমার লেখা পইড়া একটা মুভির কথা মাথায় ভাসতেছে, নাম মনে আস্তাছে না। ইমাজিনেশনরে আমার মাঝে মাঝে সফটওয়্যার টাইপ একটা কিছু মনে হয়, শরীরটা হার্ডওয়্যার।
এখন চিন্তা কইরাই অদ্ভুত লাগতাছে, একটা সময় জাস্ট প্রথম পাতার লেখাতেই রাত শেষ হইয়া সকাল হইয়া যাইতো!
সফটওয়্যার কি আসলেই মাইনষের কল্পনাশক্তির ফসল না? কিন্তু শরীর হৈল অন্য কিছু। হার্ডওয়্যার, যে নিজেও আবার অনেক হার্ডওয়্যার বানাইতে পারে। কল্পনাশক্তির সাহায্যে।
আসলেই!
পেচ্ছাপেচ্ছির কথা মনে আছে?
হ!
মন্তব্য করুন