ইউজার লগইন

বৃদ্ধাশ্রম

আজকাল লিলির সাথে সম্পর্কটা আমার
ভালো যাচ্ছে না ।
লিলি আমার বিয়ে করা বউ ।
দেখতে অসম্ভব সুন্দরী সে , আধুনিকা ,
স্মার্ট আর অত্যন্ত
রুচিশীল এই
মেয়েটাকে ভার্সিটি লাইফের প্রথম
থেকেই
আমি পছন্দ করতাম ।
আমেরিকা থেকে পি এইচ ডি করে আসার
পর নামকরা এক
ভার্সিটিতে আমি লেকচারার
হিসেবে জয়েন করি ।
তার কিছুদিন পরেই লিলির সাথে আমার
বিয়ে হয় ।
এবার লিলির সাথে আমার সম্পর্কের
অবনতির
কারণটা ক্লিয়ার করছি ।
আমার বাবার বয়স প্রায় ৬৫ বছর। মা অনেক
আগেই
মারা গিয়েছেন । আমার
বাবা আলঝেইমার্স নামের এক কঠিন
রোগে আক্রান্ত । এই রোগে আক্রান্ত
হলে মানুষের
হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা ।
সে কাউকে চিনতে পারেনা, ঠিকমত
কথা বলতে পারেনা, সবকিছু
ভুলে যায়।
বাবার সেবা যাতে ঠিকমত করা হয় এ জন্য
আমি এক
মহিলা পরিচারিকাকে ঠিক
করেছিলাম। একবার গুরুত্বপূর্ণ এক
সেমিনারে যোগ দেয়ার জন্য
আমাকে কয়েকদিন
ইন্ডিয়াতে যেতে হয়েছিল ।
এই সময়ে আবার ঐ পরিচারিকার ভীষণ জ্বর
হয়।
কাজেই আমার বাবার বাথরুম পরিস্কার
করা থেকে শুরু
করে ভাত খাইয়ে দেয়া পর্যন্ত সব কাজ
লিলিকে করতে হয়।
ইন্ডিয়া থেকে বাসায় আসা মাত্রই
লিলি আমার সাথে প্রচণ্ড
ঝগড়া করা শুরু করল।
তল্পিতল্পা গুছিয়ে সে বাপের
বাড়ি চলে গেল।
যাওয়ার আগে আমাকে একটা কন্ডিশন
দিয়ে গেল।
তার সাথে যদি আমি সংসার করতে চাই ,
তাহলে আমার
অসুস্থ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে হবে ।
আজ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলাম ।
আসার সময় বাবার
মুখের দিকে তাকানো মাত্রই আমার
বুকের ভেতরতা মোচর
দিয়ে উঠল ।
মুখ তার থরথর করে কাঁপছে যেন
আমাকে কিছু বলতে চান
উনি , চোখ দিয়ে তার অশ্রু
বেয়েবেয়ে পড়ছে ।
বাড়িতে এসে বাবার রুম পরিস্কার
করা শুরু করলাম । আমার
প্লান এই রুমে আমার পার্সোনাল
লাইব্রেরি থাকবে ।
হঠাৎ বিছানার
নিচে ধুলাবালি ভরা বাবার
একটা ডায়েরি পেলাম।
পরিস্কার করে সেটা পড়তে লাগলাম ।
### আজ ভরা পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে ।
চাঁদের জোছনার মত
আমার সংসার আলোকিত করে আজ আমার
ছেলে জন্ম
নিয়েছে । আমি জানি আমার এই ছেলেই
একদিন তার ভালবাসার
আলোতে আমার জীবনের সব অন্ধকার দূর
করবে ।
### আজ আমার ছেলের আকিকা । নাম
রেখেছি তার
শামসুদ্দিন হেলাল । শামস মানে সূর্য আর
হেলাল মানে চাঁদ ।
আমার ছেলের পৌরুষত্ব হবে সূর্যের মত আর
মনটা হবে চাঁদের আলোর মত । ১১০০
টাকা দিয়ে তার
আকিকার খাসিটা কিনেছি । এর কাছ
থেকে ১০০ , ওর কাছ
থেকে ২০০ এইভাবে ধার করে ১১০০
টাকা যোগার করেছি । ধার
করতে আমার ভালো লাগে না , কিন্তু
ছেলের জন্য আমি সব
করব ।
### আজ আমার মনটা খুব খারাপ । আমার
ছেলে আজ
আমেরিকায় পড়াশুনা করতে যাবে । আমার
গর্বিত হওয়া উচিত
ছিল , কিন্তু আমি আজ খুব কষ্টে আছি ।
ছেলের মুখ
না দেখে আমি একদিনও
থাকতে পারেনি । সামনের
দিনগুলো আমি কিভাবে ছেলেকে না দেখে কাটাবো ??
ডায়েরিটা বন্ধ করলাম । খেয়াল করলাম
আমার
চোখদুটো কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ।
বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষন
নিঃশব্দে কাঁদলাম ।
আয়নায় তাকিয়ে দেখি চোখ আমার
রক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে ।
সে রক্তবর্ণ চোখ নিয়েই
আমি সে রাতে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম
থেকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম ।
আমিও পারব না , আমার
বাবাকে ছাড়া একদিন থাকতে ।
তোমাকে বড় ভালবাসি বাবা ।
ক্ষমা কর আমায় !!!

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

রুদ্র আসিফ's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি খুব অগোছালো একজন মানুষ
জাগতিক নিয়ম নীতির বাইরে আমার অবস্থান ।
বাউন্ডুলে স্বভাবটাই আমার মাঝে বিদ্যমান..
একা চলতে ভালবাসি..
রাতে একা একা রাস্তায় হাটি.
মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই আপন খেয়ালে ।
পড়তে ভালবাসি, লিখতেও চেস্টা করি কিন্তু শেষ পর্যন্ত লেখাটা
অসমাপ্ত ই থেকে যায় ।
একটু ফুরসত পেলেই নিজের সাথে নিজে
কথা বলি →

আপাতত এতটুকুই লিখলাম



♥happy bloging......