স্বপ্নালু অশ্রু
সেদিন বিশাল পার্টি ছিলো গ্রান্ড হোটেলে। প্রচুর লোক, ব্লন্ড চুলের অপরুপ সুন্দরী, কমপ্লিট স্যুটের কর্পোরেট, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের ছড়াছড়ি। ওয়াইন সার্ভ করার দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে আর আমার সাথে সিন্থিয়া আর জোবিহা। জোবিহা ইসরাইলের। প্রথম যেদিন দেখা হলো বেশ ভড়কে গিয়েছিলাম। শেভ করা ছিলাম না, চোখ দুটো লাল। ভোর বেলা আধ ঘুমে ড্রেস রুমে জামা চেন্জ্ঞ করে যখন টেবিলের বিশাল বিশাল সাদা কাপড় লন্ড্রিতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ পেছন থেকে আমাকে একটা মেয়ে ডাকলো।
পেছনে তাকিয়ে দেখি অপরুপ সুন্দর কালো চুলও মেয়ে। মেয়েটির চেহারার সবচেয়ে আকর্ষনীয় হলো চোখ আর তার মোটা ভ্রু। বিশাল বিশাল চোখে চোখা চোয়াল আর নাকের সাথে অদ্ভুত ভাবে মিলিয়ে গেছে। ডোরা কাটা সুন্দরী যাকে বলা যায়।
: (সুইডীশে) তুমি কি এখানে নতুন?
: এই তো কিছুদিন।
: যাই হোক, ওয়াইনের বোতল গুলো কার দায়িত্বে? একটাও সাজানো নেই। ফ্রেন্ঞ্চ ওয়াইনের সাথে লেবানীজ। হোয়াইটের সাথে রেড। কাল কি নতুন কেউ কাজ করেছে এখানে?
: তা তো বলতে পারবো না। তবে কোথায় এরকম হয়েছে বলতে পারো?
: আসো দেখাচ্ছি। ভীড়ের মধ্যে এরকম বিশৃঙ্খলা জায়গা থেকে কিছু নিতে আসলে সময়মতো কিছুই পাওয়া যাবে না।
আমার আগে আগে ও হেটে যাচ্ছে। টাইট জেগিংসে ওর চোখা নিতম্বের দুলুনীর দিকে মোহমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলো, কতক্ষন হেটে যাচ্ছিলাম খেয়াল নেই। আমি জানি যে আমি হাটছি শুধু তার দোলানো কোমড় অনুসরন করে।
: এই তো দেখো। প্যাকেট খোলা না, কি অবস্হা!
: তাই তো! আসলে কারা যে কাজ করতে আসে এখানে। আমি তো নতুন, আমি ঠিক করছি। সমস্যা নেই।
: ওকে, আমি আধা ঘন্টা পর এসে দেখে যাবো।
এই বলে মেয়েটি চলে গেলো। আমি ৫টা মিনিট নিজেকে তটস্হ করলাম এই ঝড়ে ঝাপটাটা সইবার জন্য। আমার ওদিকে লন্ড্রির কাপড়গুলো ড্রাইয়ারে গুজতে হবে সেটা ভেবে ওখানে দৌড়ালাম। কাপড়গুলো সব সাইজ করে ব্রেক ফাস্ট দেবার ট্রলি সাজাতে কীচেনে আসলাম, মনসুর ভাই দেখেই বললো,"ঐ মিয়া, সোফিয়ার নম্বর তো দিলেন না। আমার কথাটা কি ওরে কইছিলেন?"
: বলছি ভাই, আজকে ওর বয়ফ্রেন্ড আসছে। আমি তো রুম রেডী রাখছি। কিন্তু ও নাকি ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকবে।
: শীট! গত দু সপ্তাহ ধইরা সেট হইতাছে না।
: ভাই, নতুন একটা আসছে, ওর সাথে সেট করবো?
: একটা হইলেই হইলো। যেমনেই হোউক তুমি দেখো। তোমার ভাবী আইতে এখনও ৩ মাস। এর মধ্যে যা পারো।
: ওকে ভাই টেনশন নিয়েন না।
এমন সময় সোফিয়া আর ঐ ইসরাইলি পেছনে এসে বললো," হাই শাফি, হাই মানছু! গুড মর্নিং!"
মনসুর ভাই ৩২ দাত বের করে বললো,"গুড় মর্নিং! কেমন আছো আমার জানের জান?"
সোফিয়া তার কথায় কান না দিয়ে বললো," শফিক, ওয়াইনের নাকি কি সমস্যা?"
আমি পাশের ইসরাইলিটার দিকে তাকালাম," ওটা সমাধান হয়ে গেছে। আমি ওটা ঠিক করে ফেলেছি।"
কথাটা শেষ না হতেই ইসরাইলি বলে ফেললো," না সোফি, ও মিথ্যা বলছে। আমি এখনো গিয়ে দেখলাম সব বিশ্রি অবস্হা। এভাবে থাকলে কিছুই গোছানো যাবে না।"
মেজাজ গরম করবো কি না বুঝতে পারলাম না, তাই বলেই ফেললাম,"তোমার একটা ভুল হয়েছে। তুমি গোডাউনটাকে আমাদের ফ্রিজার মনে করেছো। ওটা ফ্রিজার না। ফ্রিজারটা ছিলো ওর পাশে সেটা সবসময়ই সাজানো ছিলো।"
সোফিয়া অবাক হয়ে তাকালো ঐ মেয়েটার দিকে,"তোমার সাথে পরিচয় হয় নি আসলে সবার সাথে। ওর নাম শফিক, ও এখানকার ওয়াইনের চার্জে আছে। তুমি আজকে থেকে ওর সাথে কাজ করবে। তোমার সাথে আরেকজন আসবে সিন্হিয়া। শফিক তোমাদের দু'জনকে কাজ ভাগ করে দেবে কে কবে কাজ করবে। আর শফিক, তোমার মন ভালো? আজকে কিন্তু তোমার দাওয়াত আমার সামার হাউজে। আজকে আমাদের লাস্ট পার্টি।"
আমি সোফিয়াকে হেসে বললাম,"অবশ্যই। আমি কাজ শেষ করেই তোমার বাসায় যেতে পারবো।"
সোফিয়া চলে গেলো। মনসুর ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,"তুমি না কইলা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটাবে? কাহিনী কি?"
: ভাই, মনে হয় বয়ফ্রেন্ড ভাগছে। আপনেও আসেন। কোনো সমস্যা নাই।
মনসুর ভাই গজরাতে গজরাতে চলে গেলো। এদিকে আমি ব্রেকফাস্টের ব্যুফে রেডী করতে করতে ইসরাইলী মেয়েটির দিকে হাত বাড়িয়ে বললাম,"আমি শফিক, বাংলাদেশ থেকে।"
মেয়েটি পরক্ষনেই হাসি দিয়ে বললো,"আমি জোবিহা, আমার বাবা ইসরাইল থেকে কিন্তু আমি সুইডেনে জন্ম নিয়েছি!" আমার হাতের সাথে হাত মিলিয়ে গালে একটা চুমু।
আমার সাথে আরেকটি মেয়ে সিন্হিয়া অনেকটা আবেগ হীন কিন্তু ব্লন্ডি। এত সুন্দর মেয়ে আবেগ হীন হয় কিভাবে সেটাই বোধগম্য নয়। মাঝে মাঝেই বলি কাস্টমারের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে, কিন্তু সে কাস্টমারের সাথে এমন ভাব করে যে বাসর রাতে বর ঘোমটা উঠালে নতুন বধূ যে লজ্জাটা পায় ও ঠিক সে লজ্জাটা পায়।
সেদিন পার্টিতে জোবিহার প্রথম পার্টিতে কাজ করা। সিন্হিয়া এর আগে আরও দুটো পার্টিতে কাজ করেছে, তাই বেশ সহজ ভাবেই ওয়াইনের বোতল গুলো সার্ভ করছে। আমি ভাবলাম জোবিহাকে দিয়ে ট্রাই করি। ওকে একটা ট্রেতে একটা রেড লেবানীজ রেড ওয়াইন আর দুটো গ্লাস দিলাম আর বললাম বুড়ো বুড়ির টেবিলে নিয়ে যেতে। বোঝাই যাচ্ছে বুড়ো বুড়ি সরকারী লেভেলের বড় কেউ কেটা আরকি।
আমি দেখছি ও টলতে টলতে এগুচ্ছে। আমি দৌড়ে গিয়ে বললাম,"জোবিহা, বুড়ো বুড়ো সাপ না যে তোমাকে কাটবে। মনে করো বুড়োটা একটা সেক্সি প্লেবয় আর মেয়েটা ধরো পর্ন স্টার। তোমার কাছে তারা কিছুই না!"
: দেখো শফিক, আমার বাসায় একটা ভাইপার আছে। আমার মায়ের খুব প্রিয়। বরংচ আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। হট ছেলে দেখলেই ঘামতে থাকি।
: ওফফ....আমি যাবো?
: শাট আপ....তুমি দু মাসে যা শিখেছো সেটা আমার কাছে দু'দিনের ব্যাপার।
ওর আত্মবিশ্বাস দেখে পেছনে সরে আসতেই হঠাৎ গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ পেলাম। তাকিয়ে দেখি জোবিহা টেবিলে ওয়াইনের ট্রে সহ উল্টে পড়ে আছে।
যাই হোক, পার্টি শেষ হবার পর সবাই ওকে ওকে ধরা ধরি করে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিলো। কাঁদছিলো। আমি ট্যাক্সির জানালায় গিয়ে বললাম;"কাদছো কেন? তুমি কি পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছো? বাসায় গিয়ে দ্রূত ঘুমাবে আর কাল দুপুরে তোমার কাজ। আগামী দু'দিন সিন্হিয়ার ছুটি। তুমি আসবে কিন্তু।"
হরিণীর মতো চোখ দুটোর কাজল মুছে কাতর ইশারায় বললো,"শাফি, তুমি কি আমাকে বাসায় পৌছে দেবে? আমার খুব কান্না আসছে!"
আমি ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম। সবাই থম থমে। ওর বাসা স্কার্পনেক। আমি পরিস্হিতি হালকা করবার জন্য শুরু করলাম,"আমি সুইডেনে এসে খুব শখ ছিলো ন্যুড বীচ দেখার। একটা সুইডিশ মেয়ে আমাকে চিনিয়ে দিলে আমি গেলাম সেখানে। ওখানে গিয়ে দেখি সবাই ন্যাংটো। সবাই ন্যাংটো ঠিক আছে কিন্তু সবার বিশাল বিশাল শসার সাথে আমার ছোট্ট একটা লিপস্টিক নিয়ে লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম!"
এই কথা শেষ হবার আগেই জোবিহা তো ঠিক আছে, ট্যাক্সি ড্রাইভার পর্যন্ত হেসে দিলো। ট্যাক্সি ড্রাইভার বলে উঠলো,"তুমি আসলেই একটা প্লেয়ার!"
ওদিকে জোবিদা হাসতে হাসতে আমার বুকে মাথা দিয়ে ফেলেছে। আমি শুরু করলাম,"আমি তখন ঐ সুইডিশটাকে বললাম তুমি কি জানতা না যে আমার মতো একটা বাচ্চাকে এখানে এভাবে ঢুকতে দেয়া ঠিক না? আমার বয়স তো ১২ কি ১৩!"
জোবিহার হাসির বেগ আরও বাড়তে লাগলো,"স্টপ শফি! ইউ আর সো কিউট।" এই বলে ছোট্ট করে একটা চুমু দিলো আমার ঠোটে। আমি চোখ বন্ধ করে ওর ঠোটের নোনতা চোখের জলের স্বাদ পেলাম।
চুমু থেকে চোখাচোখি হলো, আমি আস্তে আস্তে বললাম,"তোমার ইহুদী বাবা মা আমাকে দেখলে আমার লিপস্টিকে গুলি করবে!"
ও আমার চোখে চোখ রেখে বললো,"আমি সেই লিপস্টিক আমার বুকে রেখে দেবো। ভয় নেই, বাসায় কেউ নেই আজ।"
আমার বাসাতে একজন ইতালী থেকে আগত এক ভাই উঠেছেন। থাকার জায়গা নেই, ট্রেন স্টেশনে বসে ছিলো সে।কাজ থেকে ফিরবার সময় তার সাথে দেখা হয় আমার। জানতে পারলাম উনার দেশের বাড়ি বরিশাল আর ইতালীতে ১৫ বছর থাকবার পর এখন সুইডেনে স্যাটেল হতে চাচ্ছেন। ছুটির দিন আমি বাসাতেই কাটাতাম। তো এই সপ্তাহ থেকে ছুটির দিনও কাজ নিচ্ছি। এমন না যে টাকার দরকার, কারনটা হলো বাসায় থাকাটা মুশকিল।
: বুঝছো নি মনু, সুইডেন কুনো জাতেরই না। না আছে কাজ না আছে মৌজ মাস্তি। ইতালী থাকতে কিছু না করলেও খালি পেনশনই পাইতাম ৮০০ ইউরো। আর এদিক ওদিক মিলাইয়া ৬০০। পুরা ১৪০০ ইউরো।
: বলেনকি? তাহলে ইতালি তো ভালোই ছিলো।
: লাভ কি? পাসপোর্ট তো দিতো না। কাজ করো থাকো, এইটাই সমস্যা। নাইলে চিন্তা করেন যে কাজ না খুজলেও বাসায় আইসা কাজ দিয়া যাইবো।
: আপনি কি করতেন ইতালীতে?
: হেন কাজ নাই যে করি নাই। আমারে দেখলে খুব বয়স মনে হয় তাই না? আমি ফ্যাক্টরীতে কাজ করতে আছিলাম। এই ভারী ফার্নিচার উঠায় ফেলতাম। আফ্রিকানরা দেইখা আমার সাথে হ্যান্ডশ্যেক করতো। আমার মালিক তো আমারে ছাড়া ফ্যাক্টরীই খুলতো না। আফ্রিকান গো তো অভ্যাস খারাপ, তাই আমার কাছে পুরা ফ্যাক্টরীর তালা চাবী। ইতালীর এত টাকা যে সুইডেনের মতো দেশরে ১৪ বার কিনতে পারবো বেচতে পারবো।
: সত্যি?
....................... এভাবে চলতে থাকে সব অলীক গল্প। পন্ঞ্চশোর্ধ্ব ব্যাক্তিটিকে না পারছি বলতে কিছু না পারছি থাকতে। রান্না বান্না নিয়েও অনেক সমস্যা। রান্না করবার পর চুলো অপরিষ্কার, সবকিছু।
ভাবছি তার জন্য একটা বাসা খুজে দিবো। স্টক হোমে ইদানিং কাজের চেয়ে বাসা পাওয়াটা আরও বেশী কষ্টকর। ছাত্রদের সংখ্যা কমে আসায় এখন বাসাও তেমন পাওয়া যায় না।
অদ্ভুত দ্বায়বদ্ধতায় পড়ে আছি।
কন্ট্রোল, ম্যান!!
কন্ট্রোল করবো কোনটা?
আপনার পোস্ট বরাবরের মতই সাবলিল ও চমৎকার।
ধন্যবাদ
নতুন লেখা দিচ্ছেন না যে?
পড়লাম
Hmmm
হুম
শসা-লিপস্টিকের কৌতুকটা দূর্দান্ত হৈসে। সব মিলায়ে লেখা ফাটাফাটি।
দূরতম গর্জন শুনতে পাচ্ছি না বেশ কয়েকদিন।
ভালো আছেন তো?
একটু ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলাম নিজের ভুল শুদ্ধ ঠিক বেঠিক করার জন্য। কেসটা নিয়েও একটু সমস্যায় পড়েছি
তবে এভাবে খোজ নেয়ার জন্য খুব আহ্লাদীত হলাম। ইদানিং এভাবে খোজ নেবার মানুষ তেমন দেখা যায় না
ধন্যবাদ ভাই! ব্লগ জিনিসটা খুব কঠিন চিজ...সম্পর্কের হাতছানি সব জায়গায়। ভালো থাকবেন।
মন্তব্য করুন