ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি
সেদিন এক ক্লাসমেটের সাথে দেখা হওয়া মাত্র কি খবর, কেমন আছো কোনো কিছুর ধারধারি নাই জিজ্ঞাসা করলো এই তুমি কি এখনো ক্লাসে ঘুমাও?
আমিও স্বীকার করলাম হ্যাঁ। আগের মতোই ঘুমাই।
ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে ঘুমানোর প্রতিভা আমি খুব ভালো ভাবেই আয়ত্ব করে নিসি অনেক আগেই। পড়তে বসলে বইয়ের উপর মাথা রেখে ঘুমানো সহ অনেক বিচিত্র ঘুম ঘুমানোর অভ্যাস থাকলেও স্কুল লাইফে ক্লাসে বসে কোনোদিন ঘুমাই নাই।
স্কুল লাইফের ফার্স্ট বেঞ্চার কলেজে উঠে হয়ে গেলাম ব্যাক বেঞ্চার শুধু মাত্র ঘুমের জন্য। আমার কলেজ লাইফের একমাত্র এবং অন্যতম বান্ধবী মীমের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার সাথেও আছে আমার ঘুমের গল্প।
কলেজে পরিসংখ্যান ক্লাস নিত আতাম স্যার। ক্লাসে আমি যে হারে ঘুমাতাম, স্যারের কাছে ব্যাচে পড়তে গিয়েও সে ভাবেই ঘুমাতাম। স্যার বেশীর ভাগ দিন আমাকে বলতো, "স্বর্ণালী, তোমার শ্বাশুরী তোমাকে ভাত রান্না করতে দিলে তো তুমি হাঁড়ির উপর ঘুমায়া থাকবা।"
স্যারও হাসতো, আমিও হাসতাম। আবার অংকে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করতাম। এক সময় অবস্থা এমন হলো আমি ঘুমায়া ঘুমায়া লেকচার তোলা রপ্ত করে নিলাম। আমি খাতা দেখলেই বলতে পারি লেকচারের কোন অংশটুকু আমি ঘুমাচ্ছিলাম।
কলেজের ফার্স্ট ইয়ার, ততোদিনে সবাই খুব ভালো ভাবেই জানে আমার ঘুমানোর নৈপুন্যতার কথা। পহেলা বৈশাখে ক্লাসের মেয়েরা হালখাতা করলো সবার একটা করে নাম রেখে। আমি সেদিনও ঘুমাচ্ছি। মীম নাম দেখে এসে আমাকে ডেকে বলল, নাম দেখে আসলাম আমাদের। তোর নাম কি রাখসে জানিস? আমি বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলাম কি রাখসে? মীম জানালো, আমার নাম রাখা হইসে ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি। আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে আবার ঘুম দিলাম।
কলেজে ঘুমাতে আমাকে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করতো মীম। আমাদের কলেজে প্রত্যেকটা ক্লাসে টিচার এসে রোল কল করতেন। আমার কোড ছিল ৪৪৪ আর মীমের ৪৭৮। মীম সব সময় আমার এ্যটেন্ডেন্স দিয়ে দিত। ক্লাস শেষে কি পড়া আছে ওর ডায়েরী থেকে তুলে নিতাম। একদিন মীম আমাকে বলল ওর এ্যটেন্ডেন্স আমি দিতে। কারণ আমারটা দেয়ার সময় ম্যাডাম ওকে দেখসে। ও নিজেরটা দিতে গেলে ঝামেলা হয়ে যাবে।
কম্পিউটার ক্লাস নিত পিচ্চি একটা স্যার। মাত্র পাশ করে বেচারা জয়েন করসিল। ছোটখাট সাইজের স্যারকে কেউ পাত্তা দিত না ক্লাসে। স্যারও প্রায় ৮০ টা মেয়ের সামনে খুবই নার্ভাস ভাবে ডায়াসের এই মাথা থেকে ঐ মাথা হেঁটে হেঁটে একা একাই কি জানি কি পড়াতেন। আমরা কেউ শোনার দরকার মনে করতাম না। আক্ষরিক অর্থে ক্লাসের প্রতিটা মেয়ে চিল চিৎকার করতো সেই ক্লাসে। স্যারের নামটা ঠিক মনে নাই। তবে ওনার ক্লাসেই আমার প্রথম শুরু ফার্স্ট বেঞ্চে বসে ঘুমানোর।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মীম আমাকে কোনোদিনও জিজ্ঞাসা করে নাই আমি ক্লাসে এই হারে কেন ঘুমাতাম । সিটি কলেজে পড়তাম আমরা। মীমের বাসা উত্তরা। আমার বাসা কলেজ থেকে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্বে। উত্তরা থেকে সকাল সাতটার মধ্যে কলেজে এসে মীম আমার জন্য জায়গা রাখতো। আর আমি সাড়ে সাতটার পর কলেজে যেতাম। ক্লাসে বিন্দুমাত্র মনোযোগ না দিয়ে ঘুমাতাম।
অনেক অনেক পরে আমিই একদিন মীমকে জিজ্ঞাসা করসিলাম, আচ্ছা তুই কেন আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করলি। ও বলল, আমার খুব অবাক লাগতো তোর ঘুম দেখে। বাসায় গিয়ে আপুর সাথেও বলতাম তোর কথা। অথচ প্রথম দিকে তেমন কথাও হতো না মীমের সাথে আমার। শুধুই পাশাপাশি বসতে বসতে কিভাবে যেন বন্ধুত্ব হয়ে গেল!!
কলেজের সেই সময়টা আব্বু অনেক অসুস্থ ছিল। রাত জেগে আব্বুর পাশে বসে থেকে, মেঘলার সাথে খেলা শেষে সকালে কলেজে গিয়ে ঘুমাতাম। এরপর রাত জাগার দরকার শেষ হয়ে গেলেও আমার ঘুম শেষ হলো না।
কলেজ শেষ করে ততদিনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করছি। ইংরেজি ক্লাস, আমি ফার্স্ট বেঞ্চে বসে আছি। চোখ খুলে রাখতে পারতিসিলাম না। অসম্ভব ঘুম পাচ্ছে। স্যার বুঝতে পেরে আমাকে বললেন, তোমার মনে হয় শরীর খারাপ লাগছে। তুমি পাঁচ মিনিট বাইরে থেকে ঘুরে আসো। আমি খুব লজ্জা পেয়ে বললাম, না স্যার আমি ঠিক আছি। স্যার বললেন, না রুমটা এমনেই খুব গুমোট। তুমি পাঁচ মিনিট বাইরে বসো, হাতে মুখে পানি দাও।
ক্লাসের কেউ বুঝতে পারলো না কেন স্যার আমাকে একথা বলসে। এমনকি আমার পাশে বসা বান্ধবীরাও না। ঘটনাটা মনে হলে এখনো স্যারকে সালাম জানাই। সেদিন যদি স্যার সরাসরি আমাকে কিছু বলতেন তাহলে আমার আর ক্লাসে যাওয়া লাগতো না। কারণ কোচিং এ আমি আমাদের ব্যাচের কাছে বেশ পরিচিত মুখ ছিলাম।
পরিচিত হওয়ার ঘটনাটাও বেশ মজার ছিল। কোচিং এর শুরুর দিকে কতো গুলো প্রশ্নসহ কুইজের মতো একটা কিছু দেয়া হয়েছিল আমাদের (ম্যাগাজিনে যেমন থাকে) বিষয় ছিল ‘আপনি কেমন মানুষ’? সবাই ইচ্ছামতো নিজের পরিচয় দিসিলো সেই কুইজে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো কয়দিন পর যখন ক্লাসে স্যার এসে বললেন, সেই কুইজের উত্তর গুলোর ভিত্তিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হিসেবে তিনজন নির্বাচিত হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় অন্য শাখায় হলেও তৃতীয় হয়েছে আমাদের শাখার একজন ছাত্রী। এবং তৃতীয় হিসেবে নাম ঘোষণা করা হলো আমার পুরস্কার হিসেবে দেয়া হলো তিনশ টাকা আর একটা বই
আরেব্বা!!! আপনি তো ঝাক্কাস ঘুমকুমারী!!
তাহলে স্বপ্নও নিশ্চয় অনেক দেখা হয়!?
আপ্নেও আর একটা নাম দিয়া ফেললেন ঘুমকুমারী!!

স্বপ্ন দেখবো কেমনে লেকচার তুলি তো
শিরোনামের সাথে কন্টেন্ট মিলে নাই!
মাসি-পিসি বল্লা, কই ভাব্লাম মেঘ আর বাকিগুলাকে ঘুমপাড়ানোর নানান কান্ডের কথা বলাবা, কিন্তু এই দেখি নিজেই!! তাহলে তো পিচ্চিগুলাকে ঘুম পাড়াতে গেলে নিজেই ভোস ভোস ঘুম দেও!
ক্লাসে কে না ঘুমাইছে! এখনো ঘুম দেই কিন্তু আপ্নে দেখি আসলেই একটানা খেলোয়াড়!
শিরোনাম তো দিলাম আমার যা নাম রাখা হইসিলো কলেজে সেটা। আর পিচ্চি পাচ্চা ঘুম পাড়াতে গিয়া তো কতই ঘুমাইসি সেগুলা কিছুই না। ঘুম নিয়া আর যে সব কান্ড হইসে সেটা ব্লগে কেন কানে কানেও বলা যাবে না
ক্লাসে ঘুমাই না। গত সেমিস্টারের এক জাপানী বুইড়ার ক্লাসে এর ওর লগে চ্যাট কইরা পার করছি
আপনে তো বস মানুষ
পুরানা দিন মনে করাইয়া দিলেন .....ক্লাসে একবার মাস্টার তার লেকচার দেয়া শেষ করে আমারে জিগায় যে ক্লাস কেমন লাগলো আর আমিও ভালা মাইনসের মত কইলাম " স্যার ভাল লাগছে কিন্তু ঘুম পাইতেছে " ।
।
এই কথার উত্তর স্যার দিলেন পরের দিন যে তিনি নাকি উনার বউরে জিগাইছে যে তার ক্লাসে এক ছাত্রি লেকচার শেষে ঘুমাতে চাওয়ার কারন কি? স্যার এর বউ জবাবে বলছে যে " মেয়েটি মনে হয় তোমার লাকচার শুনে ক্লান্ত হয়ে গেছে "।
এ গেলো ক্লাসের মধ্যের কাহিনি, স্কুল ছুটির পর দেখি উপর নিচ সব ক্লাসের পুলাপাইন আমারে জিগায় যে " তুমি নাকি লুলু স্যার এর ক্লাসে ঘুমাইতে ছিলা ! " কইলাম তিল হইয়া গেলো তাল
এর পর স্যাররা সহ পুলাপাইন খালি জিগাইতো " কি আজ ঘুম কেমন হইছে ? "
সৃতি তুমি মিল্লাত ব্লাম । লেখা পড়ে মজা পাইছি । এইরাম প্রতিভা কই জনের থাকে
আমিও তো তাই ভাইবা পোস্ট দিলাম। এখন তো দেখি জনে জনে প্রতিভা
আহা ..মজারু লেখা।
ওপরওয়ালার আশীর্বাদে আমিও যেকোন স্থানে যেকোন পরিস্থিতিতে ঘুমাতে পারি। ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে গালে হাত দিয়ে ঘুমাতাম। মাস্টাররা ভাবতো, আমি কত্তো মনযোগী ছাত্র! পড়াতে গিয়েও ঘুমাতাম। স্টুডেন্টদের একাউন্টিং করতে দিয়ে গালে হাত দিয়ে মাথায় টোকা দিতে দিতে ঘুমাতাম। চলন্ত রিকসায়ও ঘুম দিছি কত..
~
রিকশায় বসে জেগে থাকা অবস্থায় পড়ি মরি দশা হয় আমার ঘুমালে তো খবরই আছে। তবে গন্তব্যের দূরত্ব বুঝে সুবিধাজনক বাহনে ঘুমানো ব্যাপার না
তিতুমীর কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার কোনোমতে পার করলাম! সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম দিন কেটে গেল টেনেটুনে। দ্বিতীয় দিন স্যারে কী যেন পড়াচ্ছেন, আমি আস্তে করে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। মাত্র মিনিট কয়েক পার হলো, জেগে উঠলাম ধরমর করে- দেখি অন্য একজন ক্লাশ নিচ্ছেন। পাশের জনকে বললাম- আগের স্যার কখন গেলেন? সে বলে, তুমি যার ক্লাশে ঘুমানো শুরু করসিলা সে যাওয়ার পর মাঝখানে আরেকজন পড়ায়া গেসে। এখনকার জনেরও ক্লাশ প্রায় শেষের পথে! মারহাবা!!
ঘুম হচ্ছে জীবনের সবচে' আরামদায়ক অনুষঙ্গ। আহা প্রিয় ঘুম।
ঠিক তাই। আমারো এখন প্রিয় কাজটা করা দরকার
লেখাটা পড়ে ্মনে পড়ল আমিও মাঝে মাঝে ক্লাসে ঘুমাতাম, ঘুমে ঢুলতাম। চোখ খুলে তাকাতে পারতাম না তখন ্রুমাল ভিজিয়ে চোখে পানি দিতাম
বইনে বইনে জব্বর মিল

সুপার লাইক।
আমার অবশ্য ভেজা রুমাল, চোখে পানি দেয়া কোনোটাই কাজে লাগে না। যদি ক্লাস ইন্টারেস্টিং লাগে তো মনোযোগ দেই আর যদি বোরিং লাগে তো অন্য কিছু করি। জোর করে বুঝতে চাইলেই ঘুমায় যাই
কত ঘুম ঘুমায় রে..
কুম্ভকর্ণ!
রিপ ভ্যান সামিয়া'পু!
কাহিনি তো আরো আছে তবে সেন্সরে আটকাইসে
চ্রম একটা লেখা পড়লাম। তুমি মিয়া বহুত ভালো লেখো
তোমার লেখার পুরা পাঙ্খা হয়া গেলাম।
লীনা আপু লজ্জা দেন কেন?
আমার এক ডাক্তার বন্ধু বলতেন, ঘুম নাকি সর্ব রোগের মহৌষধ । যে হারে ঘুমান, রোগ-বালাই অবশ্যই কাছে ঘেঁষার সুযোগ পাবেনা । আজীবন নিরোগ থাকুন ।
দোয়া রাইখেন কাদের ভাই
পুরোনো সহপাঠীদের সাথে দেখা হলে আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এখন চুল আঁচড়াও? আমি রোজ তিনবেলা নিয়ম করে চুল আঁচড়াতাম তবু কলেজে প্রায়দিন কেউ না কেউ জানতে চাইতো, চুল আঁচড়াস না কেন?
মায়বতী, তোমার আশেপাশে থাকলে সুখ-সুখ লাগতো, কারো ইচ্ছা ঘুম দেখলে মন ভরে যায় কারণ আমি রাতে ছাড়া ঘুমাতে পারি না। ভাত ঘুমের বড় শখ আমার!
দোয়া করি আপনার শখ সারিকা সব পূরণ হোক। সুম্মা আমিন
ঘুম পাইতাছে............
আপনার তো ঘুম পাবেই রাত জাইগা টক শো করতে করতে ...............
ঘুমের প্রতিভা বিশেষ!

।
"আমার অবশ্য ভেজা রুমাল, চোখে পানি দেয়া কোনোটাই কাজে লাগে না।"
আমি একবার ভাত খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়েছিলুম! লেখা মজারু, "ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি" নামটা আগে শুনিনি
আপনারা তো কত কিছুই করছেন আফা। ফুলের টবে ভাত রাখসেন একটু যদি সবাইরে বলতেন!!!!
আপ্নের লেখাটা ঘুমে ভরা । পরতে পরতে ঘুম আইলো । ঢুলতে ঢুলতে কী বোর্ডের
সাথে উসটা খাইলাম ।
চ্রম একটা লেখা পড়লাম। তুমি মিয়া বহুত ভালো লেখো


আমিও মাঝে মাঝে পড়তে পড়তে ঘুমাই যাই, আগে ক্লাসে মাঝে মইধ্যে ঘুমের মধ্যে অনেক কিছু পার হয়ে যেত।
লেখা ভালু পাইছি আপুমনি।
আপনার লেখা দেখলেই পড়ে ফেলি একটানে । লেখার প্রতিটি ছত্রে এক ধরণের মায়া জড়িয়ে থাকে, এইটাও তার ব্যতিক্রম না । খুবই মজা পেলাম পড়ে এবং এমন ঘুম প্রতিভার জন্য এক চিমটে হিংসা
আপনাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ আর আমার ব্লগে আবার আসার জন্য
এর দাওয়াত রইল
আমি ক্লাস রুমে কখনো ঘুমাই নাই। আর যেকোনো যায়গায় যেকোনো সময়ে ঘুমানোর যোগ্যতা রাখি
আপ্নে তো তাইলে খুবই ছিনছিয়ার ইষ্টুডেন্ট
যতোটা মজা আসলে মনে হচ্ছে, ততোটা মজা বোধহয় ছিল না সময়টা, তাই না? অনেক কষ্টের, গভীর কষ্টের দিন ছিল সেগুলো। সেই থেকে কষ্টাকষ্টির দিনের আসলে শুরু, এখন নানা বর্নে, নানা গন্ধে কষ্ট পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি আমরা
গভীর কষ্টের সেই দিন গুলি ও অনেক মিস করি। বাজি।।
মন্তব্য করুন