ইউজার লগইন

আমাকে নিয়ে লেখা

আমাকে নিয়ে লেখা শুরু করতে আমার বেশ কিছু চিন্তা জোগাড় করতে হয়েছে। আমি দেখতে পেয়েছি যে আমি বাক্য গঠন করতে পারছি। এবং আমি এই মুহূর্তে তেমন কোনো বিষয়বস্তু পাচ্ছি না যা নিয়ে লেখা যেতে পারে। তাছাড়া আমার বিষয়গুলো গত কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাকে ভাবাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে আমাকে নিয়ে লেখাটাই সবচেয়ে জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাত চারটার দিকে অবশেষে চোখ বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সবগুলো মসজিদ থেকে একযোগে আযান দেওয়া শুরু করল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকার মসজিদগুলোর আযান শেষ হতে হতে একটা সময়ে আলো ফুটতে শুরু করল।

আমি টের পাচ্ছিলাম। কিন্তু তবুও ঘুমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আকাশে চিলগুলো যখন ডাকাডাকি শুরু করল তখন আমার চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করল। তাকিয়ে দেখতে পেলাম খয়েরী রঙের চিলগুলো তাদের বিশাল ডানা মেলে দিয়ে উড়ছে। আর আকাশটার রঙ মাঝে মাঝেই বদলে যাচ্ছে। আমার দেখা সুন্দর দৃশ্যগুলোর ভিতরে এই দৃশ্যটাকে যায়গা করে দিতেই হল।

কিছুক্ষণ ওদের ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে টের পেলাম এখানকার অন্যান্য প্রজাতির পাখিগুলোও জেগে উঠে সমস্ত প্রকৃতিকে সরব করে তুলেছে। অবশেষে আমাকে না ঘুমানোর সিদ্ধান্তটা নিতে হল।

এর আগে আমি চোখ বন্ধ করে রেখে নিজের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কেন আমি শিল্পের কাছে যেতে পারছি না। কেন আমি নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি না। কেন আমি ঠিক কি চাই তা ভেবে বের করতে পারছি না এইসব। বলা বাহুল্য যে আমি এসবের কোনো কূল কিনারা বের করতে পারিনি। হয়ত আমি সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করা শিখে নিতে পারিনি এখনো।

প্রকৃতির নানান ঘটনার ফলাফলে গত সন্ধায় আমি পাঁচ ঢোক রাম এবং তিন চুমুক হুইস্কির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু সে কারণে আমার চিন্তা ভাবনা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে এবং আমি ঘুমানোর ব্যাপারটায় মনোযোগ দিতে পারি নি তেমনটা নিশ্চয়ই হয় নি। তাছাড়া এর আগের অনেকবার আমি পরীক্ষার আগের রাতে নানান বাহানায় না ঘুমিয়ে রাত পার করেছি। কেন যে এসব রাতেই সব কিছু বুঝে ওঠাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সেটাও এক রহস্য। অথচ গত রাতে আমিই আরেক পরীক্ষার্থীকে বলেছিলাম- আমি এখন ঘুমাব, এবং আমার মনে হয় পরীক্ষার হলে মস্তিস্কের সবচেয়ে ভালো পারফর্মেন্সটা পাবার জন্য তোমারও কিছুটা ঘুম প্রয়োজন।

কিন্তু আরও একটি রাতে আমি ঘুমাতে পারলাম না। ছাদের মেঝেতে পাতানো বিছানাটা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করল। গতদিনে প্রচুর বৃষ্টি এসে প্রকৃতিটাকে ভিজিয়ে রেখে গেছে। রেলিঙের ধারে গিয়ে দাড়িয়ে দেখতে পেলাম আশেপাশে প্রচুর সবুজ। রাস্তার দু’ধারে এবং হলের ভিতরে। কাক, শালিক, দোয়েল, টিয়া এবং আরও কয়েকটি প্রজাতির পাখি সেই গাছগুলোর আশেপাশের যায়গাগুলো একেবারে সরব করে তুলেছে। শুনতে সত্যিই দারুণ এক সঙ্গীতের মত লাগছিলো।

গাছগুলোর দিকে তাকাতে গিয়ে দেখলাম কাঠগোলাপ গাছের গাড় সবুজ পাতা। আর তার ভিতরে শাদা রঙের অপূর্ব ফুল। আমি ঠিক করলাম যে এই ফুলগুলো নিয়ে কিছু একটা লিখতে হবে। তাই আরও নিবিষ্ট হয়ে দেখছিলাম এবং সবুজ পাতার ফাকে ফাকে শাদা ফুলের উজ্জ্বল ছোপগুলো দেখে আনন্দে প্রায় হতবিহব্বল হয়ে যাচ্ছিলাম।

একই সাথে আমি মানুষও ভালোবাসি। কেননা মানুষও প্রকৃতির উপাদান। বাসার দরজা বন্ধ হয়ে গেছে বলে যে সাংবাদিককে আমার সাথে হলের ছাদে ঘুমাতে হয়েছে আমি চাই তার আজকের দিনটি ভালো কাটুক। সেই সাথে আমার এবং অন্যান্য যাদের আজকে পরীক্ষা আছে তারা যেন পরীক্ষার সময়ে মস্তিষ্ককে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে তাও আমি চাই। কিন্তু মানুষের কারণে মানুষ দুর্ভোগ পোহাক এমন আমি চাই না।

ঠিক যেরকম করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানান অব্যবস্থাপনার ফলে একজন ছাত্র হিসেবে আমাকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ মানুষ ঢোকে আর বের হয়। এতে সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের ভিড় এবং গাড়ির হর্নের শব্দ লেগে থাকে। তাছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢোকার রাস্তার সাথেই লাগোয়া একটি পুলিশ স্টেশন যেটার নাম শাহবাগ থানা। আর একটু ভিতরে ঢুকলেই একটি বিশাল আকারের ডাস্টবিন যেটা চারুকলা অনুষদের সামনের রাস্তাটার উপরে রাখা থাকে।

আমি প্রায়ই ভাবি- যে শিক্ষার্থী ল্যাটিন আমিরিকার বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা ইউরোপের বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তার শিক্ষাজীবনটা কিরকম। ওখানকার কোনও এক শিক্ষার্থীর সাথে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছা করে। কেননা আমি জানি এখানে আমি কি কি পাচ্ছি, তাই জানা প্রয়োজন কি কি পাচ্ছি না।

আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি একজন প্রকৃতি ঘেঁষা মানুষ বা প্রকৃতিপ্রেমী। কেননা আমার আকাশের রঙ বদলানো ভালো লেগেছে, পাখিদের চলাফেরা এবং শব্দ ভালো লেগেছে, ফুল এবং সবুজ গাছ ভালো লেগেছে।

আমি লিখতে পারি। গদ্য এবং পদ্য। এবং একই সাথে আমি একজন বঞ্চিত মানুষ, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের যা যা দেবার কথা তার বেশিরভাগই আমি পাচ্ছি না।

নিজের সম্পর্কে আরও যেটা না বললেই নয় তা হল আমার দায়িত্ববোধের অভাবের বিষয়টা। বন্ধুদের ভাষায় ‘চূড়ান্ত’ অভাব। ওদের কাছে এখনো প্রায়ই শুনতে হয়- তুই যদি আর একট রেস্পন্সিবল হতিস তাহলে ‘এই’ বিষয়গুলো ‘এরকম’ হত না ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে ব্যাপারটা নিয়ে আমিও ভেবেছি এবং দায়িত্ববোধের জন্ম দেবার চেষ্টা করছি নিজের ভিতরে।

যা দেখলাম- নিজেকে নিয়ে লেখার কাজটা খুব সহজ। কিভাবে এতোগুলো শব্দ লিখে ফেলেছি তা নিজেও জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার প্রয়োজনটাও দেখা দিয়েছে।

পোস্টটি ১২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


যা দেখলাম- নিজেকে নিয়ে লেখার কাজটা খুব সহজ। কিভাবে এতোগুলো শব্দ লিখে ফেলেছি তা নিজেও জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার প্রয়োজনটাও দেখা দিয়েছে।

নিয়োনেট's picture


নিজেকে চিনতে পারার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেকেই গবেষণা করেছেন এবং দার্শনিক-বৈজ্ঞানিকরা উপদেশ দিয়েছেন নিজেকে চিনতে চেষ্টা করার। আসলে বিষয়টা তত সহজ নয় যতটা মনে হয়। আমি নিজেকে পুরোপুরি চিনতে পারি নাই এখনো।

দূরতম গর্জন's picture


এসব দেশের বিশ্ব বিদ্যালয়ের ব্যবস্হাপনার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করার মানে হয় না। ভালো হয় উচ্চশিক্ষার পাঠটা এখানকার কোনো দেশে চুকানো। আমাদের দেশ মনে হয় না আর বদলাবে

নিয়োনেট's picture


আমাদের দেশ বদলাচ্ছে, কিন্তু খুব ধীরে। এতই ধীরে যে আমরা ধরে নিতে পারছি না যে আমাদের পরের জেনারেশন বদলানোর সুফলটা ভোগ করতে পারবে। আমাদের ব্যবস্থাপনার প্রকৃত উন্নয়নের গতি নিয়ে কেউ গবেষণা করেছে কিনা জানতে ইচ্ছা করছে।

প্রিয়'s picture


আমার ইউনিভার্সিটিতে অনেক অব্যবস্থাপনা থাকতে পারে, রাস্তার উপরে ডাস্টবিন থাকতে পারে, তবুও এই ক্যাম্পাসে আমরা যত ফ্লেক্সিবিলিটি পাই তা পৃথিবীর অন্য কোন ক্যাম্পাস আমাকে তা দিবেনা। অনেক কিছু খারাপ, তবু আমার ইউনিভার্সিটি ইজ দ্যা বেস্ট ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড। Smile

নিয়োনেট's picture


এই ক্যাম্পাসে আমরা যত ফ্লেক্সিবিলিটি পাই তা পৃথিবীর অন্য কোন ক্যাম্পাস আমাকে তা দিবেনা।

নিয়োনেট's picture


ফ্লেক্সিবিলিটি আমি পাই, কিন্তু আমার বন্ধুটা পায় না। যেমন- রাত ৯ টা ৩০ এ ওর হলের গেট বন্ধ হয়ে যায়। তারমানে ফ্লেক্সিবিলিটিও সবাই পায় না, আর এতে করে বৈষম্য দেখা দেয়। কিন্তু এ সব থাকা সত্ত্বেও এই বিশ্ববিদ্যালয় ভালোবাসি; ঘৃণা বা বিদ্বেষ জন্মায় না!

তানবীরা's picture


নিজেকে নিয়ে লেখা চমতকার হয়েছে

নিয়োনেট's picture


ধন্যবাদ। অনেকদিন আপনার লেখা পড়তে পারছিনা। পরীক্ষা চলে, নিজেকে সময় দেবার সময় নাই।

১০

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


বাহ!চমত্‍কার আত্মকথন..

১১

নিয়োনেট's picture


ধন্যবাদ বিষণ্ণদা। নিজেকে ভালো রাখুন। আর লিখতে থাকুন।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

নিয়োনেট's picture

নিজের সম্পর্কে

অতীতের ভিত্তিতে নিজেকে ডিফাইন করা অর্থহীন। আর আগামীও অদেখা। বর্তমানে আমি কী সেটা যদি এখন বলি, সেই তথ্য খানিক সময় পরে ইনভ্যালিড হয়ে যাবে, যেহেতু মানুষ প্রতি সেকেন্ডে বদলায়। ফলে, নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলাটা কঠিন কাজ।