যে ইতিহাস বলতে চাই না
ব্লগ জগতে অবস্থানে দিক থেকে একমাত্র শক্তিশালী অবস্থানে আছে আওয়ামী লীগ ও বাম দলের ব্লগাররা। প্রায়-ই দেখতে পাই এই ব্লগাররা একে অপরের দলের দোষ-ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বিশেষ করে ইস্যুটি হয়; স্বাধীনতা পরিবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর বিশেষ করে চৈনিক বামদের ভূমিকা নিয়ে। কে কতো দোষ বা অপরাধ করেছে তাই হয় তার মূল বিষয়। আওয়ামী লীগের কথা শুনলে মনে হয়; স্বাধীনতার পরে তারা শুধু একটি মাত্র ভুল করেছে আর বামের কথা শুনলে মনে হয় এরা কোন ভুল-ই করে নাই। আমরা আমজনতা ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে এদের দোষ গুলোর দেখার চেষ্টা করি।
বিষয় যেহেতু স্বাধীনতা পরবর্তী সেহেতু স্বাধীনতার সময় টুকুও কিঞ্চিৎ স্মরণ করা উচিত। বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চিন বাঙলাদেশের সরাসরি বিপক্ষে ছিল। এমন কী বাঙলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে দুই কুকুরের লড়াইও বলেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে চৈনিক বামরা দুই পক্ষ হয়ে যায়। এক পক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিতে সম্মতি জানায় অন্য দল এর বিপক্ষে। স্বাধীনতার সময় আবদুল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি উপদল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে নির্মূল করার জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে অস্ত্র সাহায্য চায়ে প্রতিনিধি পাঠায়। একটি কথা স্মরণে রাখা ভাল তা হল; বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানিদের অস্ত্র দিয়েছিল চিন। আর বাঙলাদেশ কে অস্ত্র সাহায্য দিয়েছিল ভারত তবে শর্ত ছিল যুদ্ধ শেষে অস্ত্র তাদের ফেরত দিতে হবে। ভারতের বড় ভয়ের কারণ ছিল বাঙলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যদি এই অস্ত্রগুলো নকশালদের কাছে পৌছে যায়। স্বাধীনতার সময় চিনপন্থীরা যখন স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক ও বাঙলাদেশের প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এর কাছে অন্ত্র চাইতে যায় তখন তিনি চৈনিক বামদের অস্ত্র দেন নি। তাঁর বক্তব্য ছিল- আপনাদের অস্ত্র দিলে স্বাধীনতার পরে তা নকশালদের কাছে চলে যেতে পারে। যাই হোক মূল কথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বামের একটি অংশ আমাদের সরাসরি বিরোধী ছিল।
এবার আসি স্বাধীনতা পরিবর্তী বাঙলাদেশে। আপনি যে দল-ই করেন না কেন আপনার স্বীকার করতে বাধ্য বঙ্গবন্ধু এই দেশের জনগনের নেতা। এই বাঙলার জনগনই তাকে বড় নেতা বানিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব আর বাঙলার জনগনের অংশ গ্রহণ যদি না থাকত তাহলে বাঙলাদেশে স্বাধীনতা আসত কিনা তাতেও সন্দেহ থেকে যায়। হ্যাঁ বঙ্গবন্ধুকে আমি মানুষ ভাবি তাকে আমি দেবতার আসনে বসাই নি। সুতরাং মানুষ-ই ভুল করে, মানুষ-ই বিভ্রান্ত হয়। বঙ্গবন্ধু তাই হয়েছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে। আমি তাকে এই দেশের জাতির পিতা যেমন মানি তেমনি তার কিছু ভুল হয়েছে তাও স্বীকার করি। কিন্তু এই ভুলের কারণে আপনে যদি বঙ্গবন্ধুকে ছুড়ে ফেলে দিতে চান তাহলে আপনে এক সহ রাজাকার পন্থী না হয় বঙ্গবন্ধু বিদ্বেষী।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার, আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের একাংশ নেতা ও সমর্থকদের লুট ও দুর্নীতি জাতিকে দূর্ভীক্ষের দিকে ঠেলে দেয়। অধিকাংশ আমলা, নেতা, মন্ত্রী দুর্নীতির যুবরাজ হয়ে উঠে। তাই তো বঙ্গবন্ধু আফসোস করে বলেছিলেন- সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি। হ্যাঁ আমরা আসলেই চোরের খনি পেয়েছিলাম। স্বাধীনতা আনল যারা তাদের-ই একাংশ কিনা লুটে যোগ দিয়েছে। আর এটাই আমার জাতির জন্য সবচেয়ে দূর্ভাগ্য ছিল। আমরাদের রক্ষকদের একাংশ আমাদের ভক্ষক রূপে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। এই কথাগুলো সাধারণ মানুষ জন যেমন বলে তেমনি স্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা তবে শুধু স্বীকার করতে চায় না আওয়ামী ব্লগাররা। বাঙলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অংশ গ্রহণ করে তাদের অনেকে পরবর্তীতে অপরাধ ও দুর্নীতে জড়িয়ে পড়ে। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্য। তাই তো হুমায়ুন আজাদের সাথে গলা মিলিয়ে বলতে হয়- মুক্তিযোদ্ধা সব সময় মুক্তিযোদ্ধা থাকে না। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এসব লুট, অন্যায় অপরাধের মধ্যেও ভাল কাজ করতে চেয়েছিলন কিন্তু হায়! সব কিছু যেমন নষ্টদের দখলে চলে যায় তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব সৃষ্টির জটিলতায় অনেক মহৎ কাজ আর সম্পন্ন করা সম্ভব হয় নি।
স্বাধীনতা পরপরই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয় রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বদ্ধ । এর-ই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ আমাদের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে হরতাল দেয় জাসদ। এই হরতাল দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে অনেক বির্তক সে বিষয়ে যাচ্ছি না।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও তত্ত্বে উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ যেহেতু স্বাধীনতা যুদ্ধের বাপ দাদা ছিল সুতরাং তারাই ছিল স্বাধীন বাঙলাদেশে অন্য রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রতিপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় বাম দলগুলোর প্রধান প্রতিপক্ষ হয় আওয়ামী লীগ। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায় সেহেতু চাটুকার, চোর, ধান্ধাবাজরা ভিরতে থাকে আওয়ামী লীগে। চোর, বাটপার, ধান্ধাবাজে দলটির একটি বড় অংশ দখল করে দেয়। অন্য দিকে নতুন বিপ্লবে দীক্ষিত হয়ে বিভিন্ন বামের নেতারা হত্যা, লুণ্ঠনে জড়িয়ে পড়ে। শ্রেণি শত্রু খতমের নামে অনেক মানুষকে হত্যা করে তারা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাঙলাদেশে ৫ জন এমপি বিপ্লবীদের হাতে খুন হয়। এদের মধ্যে একজন ইদের নামাজের সময় খুন হন। শ্রেণি শত্রু খতমের নামে অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। শ্রেণি শত্রু খতমের প্রবক্তারা হয়তো আদর্শে সিদ্ধ ছিলেন কিন্তু তাদের দলের বেশির ভাগের মধ্যে আদর্শের লেশ মাত্র ছিল না, ছিল বরং লুণ্ঠন। মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদার তো থানাতেই হামলা চালিয়ে ছিলেন। যে বিপ্লবে জনগন সম্পৃক্ত নয় যে বিপ্লবে জনগনের মুক্তি নেই সে বিপ্লব ব্যর্থ হতে বাধ্য। নব্য বিপ্লবও তাই বেশি দিন টেকে নাই।
তাহলে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আসলে সব দলই ভুল করেছে আর এই ভুলের মাশুল আজো আমাদের দিতে হচ্ছে। মানুষ বা রাজনৈতিক দল ভুল করে। ভুল করা কোন অন্যায় না কিন্তু ভুল করে যদি ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে একি কাজ আবার করে তাহলে তা অন্যায়ের পর্যায় পড়ে যায়। কিন্তু আমাদের আক্ষেপ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কখনো শিক্ষা নেয় না। ১৯৭১ সালে আমরা করে ছিলাম স্বাধীনতার যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসে ঐ যুদ্ধে আমরা জয়ী হলেও স্বাধীনতার পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধে আমরাদের বিজয় আসে নি কারণ আমরাদের অভাব, অনটন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের অভাব থেকে আজো আমরা মু্ক্ত হতে পারে নি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। তবে এই যুদ্ধে শত্রু মিত্র এই দেশেরই মানুষ। আমরা কী পারব আমাদের অভাব অনটন থেকে মুক্ত হতে? আমরা কী জেতব এই মুক্তিযুদ্ধে?
সুনদর বলেছেন
একেবারে সরল কথন ! বহুবার আলোচিত হয়েছে । বংগবন্ধু যেমন ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার মতো কেউ নন তেমনি সমালোচনার উর্ধেও নন । তার সফলতা যেমন ব্যাপক ব্যার্থতাও তেমন সীমাহীণ । তিনি চিরকালই থাকবেন উজ্জল নন্দিত/নিন্দিত তারকা হয়ে বাংলা দেশের আকাশে ।
কাউকে ব্র্যান্ডিং করা কি ঠিক ? রাজাকার একদিন নিঃকেষ হয়ে যাবে হয়তো কিন্তু কোন কোন রাজনীতিকের জন্য মানুষের চেতনায় বিদ্বেষ থেকে যাবে অনন্তকাল ।
বামরা চিরকালই হঠকারি । এদের বর্তমান পেশা লেজুড়বৃত্তি । এদের জন্য আ লী অতীতে ডুবেছিল, এবারও মনে লয় ।
সাহস নিয়ে সত্য কথা বলেছেন। সাবলীল লেখা। যাতে কোন জড়তা বা তোতলামি নেই, যা আমার লেখায় খুব বেশী থাকে।
স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগের নেতারা সাধারন জনগনকে অনেক সুখ-শান্তির স্বপ্ন দেখায়। সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুতির জোয়ারে সকলে ভাসে। তারা ধরে নেয় যে স্বাধীনতা আসলে পরে নেতারা কোন খনি থেকে সুখ-শান্তি তুলে এনে দেবে। তাদেরকে নিজেদের কিছুই করতে হবেনা। নিজেদের কর্মোদ্যোগের কথা কেউ তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়নি।
হাস্যকর ব্যাপার হল স্বাধীনতার পরে স্বয়ং শেখ মুজিবও জনসভায় দেয়া ভাষনে ঘোষনা দেন - "তিন বছর আমি আপনাদেরকে কিছুই দিতে পারবনা।" । জনতা তাতে রাজী। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা এখন ঘুমুতে যাবে। তিন বছর পর এক সুখ-শান্তির দেশে তারা জেগে উঠবে।
তবে হ্যাঁ স্বাধীনতা urban middle class-র জন্য প্রচুর সুখ-শান্তি নিয়ে এসেছিল।
মন্তব্য করুন