ইউজার লগইন

কিছু কথা

অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার এক মাস চারদিন পর খুন হয় ওয়াশিকুর বাবুর। অভিজিৎ দা’র ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। অভিজিৎ দা’র সাথে বই মেলায় দেখা হয় ১৯ ফেব্রুয়ারি। এই ফেব্রুয়ারি মাসেই হেফাজত ইসলামের দাবীর মুখে রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ করে দেওয়া হয়। অলি দোস্তির বই ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ বইটির অনুবাদ প্রকাশ করার কারণে বইটি বাতিল করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবং রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ করা দেওয়া হয় এবং নিষিদ্ধ করার হয় আগামী বছরের জন্যে। দুঃখের বিষয় আমাদের সচেতন লেখক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রতিবাদ আসেনি। অভিজিৎ দা খুন হয়ে যাওয়ার পর অনলাইনে অনেকেই খুব অসহিঞ্চু ও বালখিল্য আচরণ শুরু করে দেন। অদ্ভুত বিষয় হল যারা অনলাইনে অনেক পুরাতন তাদের মধ্যে একই জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমার কথা শুনে হয়তো অনেকে গোস্বা করে ভাবছেন ব্যাটায় পিট বাঁচানোর জন্য সুশীলদের ভাব ধরছে। আমি তাদেরকে বিনয়ের সাথে বলতে চাই মশাই আগে আমার পুরো কথাগুলো শুনুন!

অভিজিৎ দা’কে হত্যা করা মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর জন্য অবশ্যই একটা বড় অর্জন ছিল। কারণ অভিজিৎ দা দেশে বিদেশে নিজের যোগ্যতার কারণে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে বা অবিশ্বাসীদের পক্ষে কাজ করতে পারতেন। তাঁর গুণের কারণে তিনি মোটামুটি অভিভাবকের ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। ২০১৩ সালে ব্লগার গ্রেফতার হওয়ার ঘটনার সময় অভিজিৎ’দা দেশের বাহিরে থেকে বিদেশী অঙ্গ সংগঠনগুলোকে জানানো থেকে সকল কাজ-ই দক্ষতার সাথে করে যেতে পেরেছিলেন। যা করার সামর্থ্য হয়তো অনেকেরই ছিল না। এছাড়া ওনার বইগুলো বাংলাদেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করছিল। জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ হল সহজ বোধ্যতা।

ওয়াশিকুর বাবু’র অভিজিৎ দার মতন বই ও আর্টিকেল ছিল না। কিন্তু তারপরও তাকে খুন হতে হল ফেসবুক পোস্টের কারণে! এবং খুন হতে হল নিজ বাসার কাছেই, সকাল বেলা অফিস যাওয়ার পথে। এর পর থেকে অনেকের ফেসবুকে খুব অশ্লিল ও কুৎসিত আচরণ শুরু করে দেয়। এটা খুবই দুঃখজনক। বাংলাদেশের মতন রক্ষণশীল সমাজে যেখানে অভিজিৎ দা’র মতন গুণী লেখককে ধারণ করতে সমর্থ্য হয় না সেখানে এসব গালাগালি ও কুৎসিত ইভেন্ট তৈরির মাধ্যমে পরিস্থিতি আরো প্রতিকূল করে তুলছি। ফেসবুক কোন ঘরোয়া আড্ডা নয় যে দরজার বন্ধ করে কথা বললে কেউ শুনতে পারবে না। এখানে সকল শ্রেণির সকল পেশার মানুষ আছে। আছে ভিন্ন দর্শন ও ধর্মের মানুষও। ধর্মীয় ত্রুটিগুলোকে সমালোচনা করতে গেলে গালাগাল মারতে হবে এমন কোন কারণ আমি অন্তত দেখি না। আমি দেখি না কারো সম্পর্কে আলোচনা বা সমালোচনা করতে গিয়ে বাক্যের শুরুতে লুচ্চা লাফাঙ্গার বলে সম্ভোধন করা!

অনেকেই বলে বাংলাদেশে নাস্তিকতা প্রচারের কী দরকার। নাহ আমি তাদের মতে নেই কারণ যে যেটায় ইন্টারেস্ট পায় সে সেই বিষয়েই তো লিখবে। কেউ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে পছন্দ করে কেউ বা নিজের ধর্মের ভাল গুণগুলো প্রচার করে মানবিকতা শেখাতে পছন্দ করে। সবারই সবকিছু করার অধিকার আছে। আমরা কারোকে ঠিক করে দিতে পারি না যে, তুমি এটা নিয়ে লিখবা। হ্যা ব্যক্তির মতামত থাকতেই পারে। সেটা ভিন্ন বিষয়। আপনি যখন কোন প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থান করবেন বা আপনার দর্শন, মতবাদ প্রচার করতে চাইবেন তখন কিন্তু আপনাকে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। যেহেতু শক্তিতে আপনি টিকতে পারবেন না সেহেতু যে কথাগুলো মানুষের জন্য আপনি লিখতে চাচ্ছেন বা বলতে চাচ্ছেন সেই কথাগুলোকে গালাগাল হজম করে হলেও আপনাকে মানুষের সামনে হাজির করতে হবে। আপনার উগ্রতা, অশ্লীলতা দেখে যদি মানুষ আপনার থেকে দূরে সরে যায় তাহলে আপনি কাদের জন্য লিখছেন? তাহলে প্রশ্ন আসে তাহলে কাদের জন্য আপনি চাপাতিতে কোপ খাচ্ছেন?

কয়েকদিন আগে ইস্টিশন ব্লগে যতীন সরকারের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন পারভেজ আলম। (লিংক দিতে পারছি না কারণ সাইট ডাউন খেয়েছে) তিনি নিজে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন এবং সাক্ষাৎকারের একটি অংশ তিনি প্রকাশ করেন। স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রাপ্ত, মাঠ লেবেলের প্রগতিশীল ও একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হলেন যতীন স্যার। স্যারের সাক্ষাৎকার পরে অনেকেই খুব ক্ষিপ্ত হয়ে বাজেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েন। যা আমারকে সত্যি ব্যথিত করেছে। যে কোন কিছুতে দ্বিমতন থাকতেই পারে কিন্তু তার প্রকাশ ভঙ্গিটাও কেমন হওয়া উচিত তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে নাস্তিকতা প্রচার করা আর মাঠ পর্যায়ে মানুষকে ধর্মান্ধমুক্ত করা এক বিষয় হয়। সমাজের মানুষকে ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত করতে চাইলে আপনাকে বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্নভাবে তাদের সাথে মিশতে হয়, কথা বলতে হয় তাদের কথা শুনতে হয়। স্যার তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি আস্তিক কারণ যা আছে তাই তিনি বিশ্বাস করেন এবং যার অস্তিস্ত নেই তা যারা বিশ্বাস করে তাদের বরং তিনি নাস্তিক বলেন । এই বক্তব্যকে অনেকেই হাস্যকর কেউবা স্যারের ভিমরতি ধরেছেন বলে মন্তব্য করলেন। আমার কাছে স্যারের এই বক্তব্যটি নতুন না। ভারতবর্ষের এই দর্শনটা আগ থেকেই ছিল। এবং বাংলাদেশের অনেক বড় বড় মানুষকে এই একই কথাটি বলতে আমি শুনেছি। সাক্ষাৎকারের পর অনেকের বক্তব্য এতো বেশি প্রতিক্রিয়াশীলতা রূপ নেয় সে তা দেখে আমি সত্যি অবাক হতে হয়েছে। সমালোচনা যারা করেন তাদের সমালোচিত হওয়ার ধৈর্য্যটুকুও থাকা উচিত। আপনিই শুধু সমালোচনা করবেন আর কেউ করতে পারবে না তা তো নয়। ব্যক্তি বিশেষে যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা আছে। কেউ নাস্তিক হলেই যে নাস্তিকতা প্রচার করবে তাও না কেউ নাস্তিক হলেই যে আবার ধর্মীয় কোন ব্যক্তির সব কর্মের বিরোধীতা করবে বা করতেই হবে তাও না। মানুষের ব্যক্তি বিশেষে দৃষ্টিভঙ্গি তো আলাদা থাকে। যার গর্ভে জন্ম নিলাম সেই মায়ের সাথেও নিজের মতার্দশের পার্থক্য আছে তাই সবাইকে আমার মতনই হতে হবে অথবা আমি যা বলেছি তাই একমাত্র সত্য সেটা দাবী করাও বোকামী। কারণ আজ আমি যা ভাবছি বয়স ও অভিজ্ঞতার কারণে আমার বর্তমান ভাবনটা ভবিষ্যতে একই ভাবে নাও থাকতে পারে। উন্নতির দিকেই হয়তো সবাই যেতে চায় তবে কেউ বা পতনেই সুখ খোঁজে!

কামারুজ্জামান ফাঁসির রায়ের পর তার ছেলে মেয়ে মিডিয়াতে ‘ভি’ পদর্শন করেছে। আজকে একজন একটা ইভেন্ট শেয়ার দিল তাতে লেখা; রাজাকার কামারুজ্জামানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে শিবিরের পুলাপানের মায়েদেরকে বলৎকারের সুযোগ দেয়া হোক” এমন ইভেন্ট করার রুচিশীল অবস্থান থেকে কী জামাত-পাকিস্তানীদের থেকে নিজেকে খুব উৎকৃষ্ঠ প্রমাণ করা সম্ভব? পাকিস্তানীরা যেভাবে আমাদের মা-বোনকে অসহায় পেয়ে ধর্ষণ করেছে তেমনি আমরা কেউ কেউ তাদের ছেলেমেয়েদের ধর্ষণ করতে চাচ্ছি। আমরা তাদের মতন নোংরা নই বলেই নিজেকে তাদের থেকে উচুঁ ভাবতে পারি। তাদের পরিবারের অসহায় মানুষগুলোর সাথেই যদি এমন আচরণ করি তাহলে নিজেদের সাথে ওদের পার্থক্য থাকল কোথায়? এগুলো করে জাতি হিসেবে নিজেদের কী ছোট করছি না?

অভিজিৎ রায়ের মতন লেখক খুন হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই তবে কিন্তু যদি ইত্যাদি বসিয়ে হত্যাকারীদের মৌন সমর্থন দিয়েছে। হ্যা হত্যাকারীদের শাস্তির দাবীও কম মানুষ তোলেনি। আমি আপনি হয়তো নিরাপদ কোন শহরে বা দেশে অবস্থান করছি। ফলে ফেসবুকে কোন ধর্মীয় নবীকে গালাগাল মারলেও আমার আপনার কল্লা যাবে না কিন্তু এটা করে কী কোন সাধারণ মানুষকে নিজের মর্তাদর্শে উদ্ভূদ্ধ করা সম্ভব? অশ্লীল ইভেন্ট করে কী কোন সুস্থ মানুষকে নিজের মতাদর্শে নিয়ে আসার সম্ভব? উত্তরটি না-ই হবে। যদি না হয় তাহলে এগুলো করে আসলে লাভ হচ্ছে কার? বরং আপনার আমার অশ্লীল পোস্টের কারণে মানুষ নাস্তিক বা অবিশ্বাসী শুনলেই গালাগাল মারবে বা একটা নেগেটিভ ধারণা তৈরি হবে। যেমন পাকিস্তান নামটা শুনলে স্বাভাবিকভাবেই একটা খারাপ ধারনা হৃদয়ে জন্ম লয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ধর্ম না মানলেও তিনি ধর্মীয় বই ঘেটেই কিন্তু বিধবা বিবাহের প্রচলন করেছিলেন ও বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। কারণ তিনি সমাজের আত্মাটি ধরতে পেরেছিলেন। বলছিল না সবার তাই করতে হবে কিন্তু মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই অনেক সহিঞ্চু হতে হবে। আপনাদের সুন্দরের চর্চায় মুগ্ধ হয়েই আরেকজন আপনার মতে ভিড় জমাবে কিন্তু আপনার আচরণে যদি মানুষ দূরেই সরে যায় তাহলে এই মত আর ত্যাগের কী কোন মানে হয়? মানুষের মাঝে মিশেই মানুষকে পরিবর্তন করতে হয়। এই ধর্মান্ধ সমাজে হয়তো কাজটি অনেক কঠিন কিন্তু সেই কাজের ব্রত নিয়ে যারা লড়ে যাচ্ছেন তাদের অবশ্যই এই বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া উচিত।

পোস্টটি ২৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। এসব অশ্লীল ইভেন্টের কারণে, উগ্রবাদীতার কারণে ভাল জিনিসও পঁচে যায়

সুব্রত শুভ's picture


ধন্যবাদ পড়র জন্য।

হ্যা! এগুলো করে বরং নিজেদের ক্ষতি করছে তা তারা বুঝতে চায় না। এটাই দুঃখের বিষয়।

নাজমুল  ইসলাম 's picture


ভাই কথাগুলো খুব লাগছে। আসলেই তো। আমার একটা মতবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে আমিওই জদি মানুষের গাল খাই তাহলে লাভ কি?

চৈতী আহমেদ's picture


সুন্দর লিখেছেন শুভ। গালাগালি করে মানুষের মনের আঁধার দূর করার চিন্তা বালখিল্য। যারা এটা নিয়ে কাজ করছেন তাদের এটা বুঝতে হবে, তানা হলে হারাধনের সব কটিই ছেলেই একটি একটি করে চাপাতির নীচেই অপচয় হবে, এটা বলাই বাহুল্য। আমরা চাই না আর একটিও অপচয়। অভিজিৎ রায় প্রতিদিন জন্ম নেয় না, যে তাকে হেলায় হারাবো!

সুব্রত শুভ's picture


গালাগাল, নোংরামী করে মৌলাবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের পথ আরো কঠিন করে তুলছে। বিশেষ করে যারা মাঠ পর্যায় কাজ করতে সেই সব মানুষদের কাজকে আরো বেশি বাধাগ্রস্থ করে তুলছে।

আরাফাত শান্ত's picture


লেখাটা খুব ভালো হয়েছে!

সুব্রত শুভ's picture


ধন্যবাদ ব্রাদার Smile

অতিথি's picture


I dont find any valid reason for why the bloggers do focus on religious matters.Recently it has been increased.There are endless complicated issues in country and abroad.There are lot of development related unsolved cases in our country,the Nation might be benefited if these Intellectuals concentrate on those.But why talking much about belief,non belief,Preachers of Islam,Islam,why they bring The Prophet(S:) and Islam as their point of attack.Why dont they see there are lot many Villains are causing harm to our country presently.They should utilize their talents to contribute to the Nation by criticizing them.Why religion?This should be stopped for causing unreasonable instability in the country.

সুব্রত শুভ's picture


আপনার ধর্ম নিয়ে লেখা-লেখিতে আপত্তি। কারো রাজনীতি নিয়ে লেখা-লেখিতে। কেউ বা বলবে লেখা-লেখিতেই তাদের আপত্তি। তাহলে তো মানুষের লেখা-লেখি বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম। সবার ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতে হবে বা সবাইকে ক্রিকেট দেখতে হবে এমন মানসিকতা তো সবার জন্য ভয়ংকর। পৃথিবীর সকল দেশেই সব ধরনের লেখালেখি হয়। জঙ্গি রাষ্ট্র ছাড়া কেউ আহত হয় না। কারো কোন সমস্যা থাকলে আইনের আশ্রয় নেক। ইনিয়ে বিনিয়ে যতো ভাবেই বলতে চাই না কেন; শেষ পর্যন্ত আমরা ঐ মানুষের চিন্তার বিপক্ষেই অবস্থান করি।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সুব্রত শুভ's picture

নিজের সম্পর্কে

অকামের লোক