বিশ্বাসের আসামীরা
২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে ডিবির রিমান্ড শেষে আদালত আমাদের চারজন’কে (রাসেল পারভেজ, আসিফ মহিউদ্দিন, মশিউর রহমান বিপ্লব) পাঠিয়ে দিল কারাগারে। কারাগারে আমাদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার সাথে অপেক্ষা করেছিল কারাগারে আটক বন্দিদের কর্তৃক মৃত্যুর হুমকি। আমাদের দেখা মাত্র কয়েদিরা ক্ষোভে ফেটে পড়ল। এতো বিশ্রি ভাষায় গালাগালি আমি কখনো কারো মুখে শুনিনি।
তখন জানতে পারলাম রাজিব হায়দার হত্যা মামলার চিহ্নিত আসামীরাও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কোর্টে আমাদের হাজিরা দিতে নিয়ে যাবে। নিয়ম অনুসারে আমাদের দাঁড় করানো হল। সেই হাজিরা দেওয়া লাইনে রাজিব হায়দার হত্যা মামলার আসামীরাও ছিল। তাদের প্রথমে আমি চিনতে পারিনি। পরে সম্ভবত রাসেল ভাই বলল এরা রাজিব হায়দারের খুনী। ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি, ওরা শুয়রের ন্যায় দাঁত বের করে হাসছে আর আমাদের দিকে ইশারা করছে। খোঁজ নিয়ে আরো জানতে পারলাম ধনীর দুলাল হওয়ায় তারা একটা ভাল রুম পেয়েছে। যে রুমে টিভি ফ্রিজ সবকিছুর সুযোগ সুবিধা আছে। কারাগারে প্রবেশের সময় একজন অবশ্য বলেছিল পাঁচ হাজার টাকা দিলে একটা ভাল রুম দেবে আমাদের। যাই হোক সেই জঙ্গিমনা দুলালেরা এতো আরাম আয়েশ করেই জেলে ছিল। কিছুদিন পর শুনি তাদের জামিনও হয়ে গেছে। বাংলাদেশে মামলা ও বিচার বিভাগের যে অবস্থা তাতে দশ বছরেও রাজিব হায়দার হত্যার বিচার হবে কিনা সন্দেহ। এমনও হতে পারে জামিন নিয়ে ইতোমধ্যে তারা বিলেতে গিয়ে সংসার ধর্ম শুরু করে দিয়েছে।
আরেক আসামী ফারাবী। রাজীব হায়দারের জানাজা যে মৌলভী পড়াবে সেই মৌলভীকেও জঙ্গিটা খুনের হুমকি দেয়। পুলিশী হেফাজতে কয়েকদিন থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়। কিন্তু কুকুরে লেজ যেমন সোজা হয় না তেমনি জঙ্গিরা সহজে সুস্থ হয়না। জেল থেকে বের হওয়ার পরপরই ফেসবুক ও ব্লগের অনেক মানুষকে হত্যা হুমকি দিতে থাকে। একটা অসুস্থ সাইকো জঙ্গিকে কোন বিবেচনায় জামিন দিল তা বোধ গম্য নয়। অভিজিৎ রায়কেও হত্যার হুমকি দেয় এই ফারাবী। সে স্ট্যাটাসে বলে, অভিজিৎ রায় এখন আমেরিকায় যদি সে দেশে আসে তখন তাকে হত্যা করতে হবে। শুধু অসভ্য লেখককেই নয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুনের হুমকি দেয় এই ফারাবী। অথচ ফারাবী গায়ে বাতাস লাগিয়ে আজো ঘুরে বেরাচ্ছে। অথচ ধর্ম ও শেখ মুজিব নিয়ে কেউ কিছু বললে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আর ধর্মান্ধরা মুক্তভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে, সরকার থেকে জঙ্গিচাষ করার জন্য জমি পাচ্ছে। বিচার তো দূরের কথা তাদেরকে ধমক দেওয়ার সাহসটুকু আমাদের প্রগতিশীল সংস্থাগুলো ও সরকারের নেই। আজকে বই মেলা থেকে ফেরার পথে পরিকল্পিতভাবে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হল। মৌলবাদীদে চাপাতিতে আহত হলেন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বন্যা আহমদ। অভিজিৎ রায়ের খুনীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার দাবী করছি।
হ্যা! এটাই বাংলাদেশ। এখানে আপনি জঙ্গি, খুনি হলেও আপনি অনেক মানুষের কাছে সহানুভূতি পাবেন। আপনার উগ্র হিংস্র বিশ্বাসের কারণে সহানুভূতি পাবেন কিন্তু কারো ঘৃণা পাবেন না। কিন্তু আপনি যদি উগ্র হিংস্র বিশ্বাস বা প্রচলিত বাজারি বিশ্বেসের বিরুদ্ধে লিখেন তাহলে চাপাতির আঘাত আপনার জন্য বরাদ্দ। আর ভাগ্য ভালো হলে জেল হেফাজতে। কারণ তাহাদের ইমান চাপাতির ন্যায় ধারালো!
তারা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে। এর আগে বই মেলা থেকে ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদকে আক্রমণ করেছে। এরা ভবিষ্যতে আরো অনেক মানুষকে আক্রমণ করবে। কিন্তু অভিজিৎ রায়দের চিন্তা-চেতনা কী খুন করতে পারবে? পারবে না কারণ অভিজিৎ রায়রা মরে না। হাজারো তরুণের মাঝে অভিজিৎ রায়রা বেঁচে থাকে, বেঁচে থাকবে।
বইমেলা শুরু হলে এদের হত্যা উৎসব শুরু হয়ে যায়
শুয়োরের বাচ্চার দেশে থাকি!
মন্তব্য করুন