বাংলাদেশ- একটি প্রত্যাশার নাম
বাংলাদেশ নামটির সাথে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। কিন্তু আজ নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে বাংলার বাঘেরা । বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। অবশ্য ধন্যবাদ দিতে চাই একটু বৃষ্টি এবং ব্রিটিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশের চমৎকার টিম স্পিরিটকে। এবার আমাদের সামনে রয়েছে আমাদের পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বী এবং চিরচেনা ভারত। সব বাংলাদেশীদের আজ একটাই চাওয়া ভারতকে হারিয়ে খেলবো সেমিফাইনাল। এই চাওয়ার অবশ্য কারণ আছে, ক্রিকেটের বড় মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে সবসময় দুর্দান্ত খেলে টিম বাংলাদেশ। এই ভারতের সাথেই জ্বলে উঠেন বাংলার প্রতিটি খেলোয়াড়। আর এবার বাংলাদেশ কোন আনাড়ি দল নয়। ইংলিশদের সাথে ব্যাক টু ব্যাক জয় এবং স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের সাথে দুর্দান্ত লড়াই, এই সবকিছুই আজ আমাদের প্রত্যাশার পারদটাকে অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। সুতরাং ভারতকে হারিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই । এর প্রমাণ দিয়েছি ২০০৭ এবং ২০১২ এর এশিয়া কাপে। এবার প্লেয়ারদের নিয়ে কিছু বলতে চাই ! অর্থাৎ ভারতের বিপক্ষে কে কেমন খেলেছে বা খেলে :----
১) তামিম ইকবাল : যত সমালোচনায় হোক না কেন এই মানুষটাকে কিন্তু ভারতীয় বোলারদের অনেক ভুগিয়েছে বিগত দিনে। তাঁর যত বড় ইনিংস সব এই ভারতের বিপক্ষেই। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে এবং ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে একাই লড়াই করেছেন। আমরা চাইবো এবারও তিনি প্রমাণ করবেন ভারতীয় বোলারের কোন পরোয়া করি না।
২) ইমরুল কায়েস: কপালের জোরে খেলতে পারছেন এবারের বিশ্বকাপ। কিন্তু ২০১১ সালের বিশ্বকাপে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি রান স্কোরার বাংলাদেশের হয়ে। ভারতের বিপক্ষে খেলেন কিন্তু চমৎকার। তাঁর উপরেও আশা করি।
৩) সৌম্য সরকার : এখনো ভারতের মুখোমুখি হননি। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে চমৎকার খেলছেন তিনি। তারুণ্যের কারিশমা তিনি দেখিয়েছেন । প্রত্যাশা করবো ভারতের বিপক্ষে তিনি খেলবেন একটি মার কাটারি ইনিংস।
৪) মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : তাঁর নাম ইতোমধ্যেই ইতিহাসের পাতায় উঠে গেছে। এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান শিকারিদের তালিকায় আছেন ৫ নম্বরে। বোঝাই যাচ্ছে ক্রিকেট বলটাকে এখন ফুটবল দেখছেন তিনি। আর সেজন্যই স্পটলাইট থাকবে তার উপরই। অনেক ভালো কিছু শট খেলতে পারেন। আশা করবো, পরপর তিনটি সেঞ্চুরির জন্য।
৫) সাকিব আল হাসান : আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সারা পৃথিবীই চেনে এই মানুষটাকে। অলরাউন্ডার হিসেবে তার অবস্থান থাকে সেরাদের তালিকায়। আর ভারতের বিপক্ষে তো চমৎকার খেলেন। কারণ তিনি বিশ্বখ্যাত প্লেয়ার তাই আর কিছু বলার দরকার নেই।
৬) মুশফিকুর রহিম : ছোট্ট এই ছেলেটি যখন হাঁটুগেড়ে ছক্কা হাঁকান তখন হতবাক হয়ে যায় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। সবসময় তিনি দলকে বিপদের থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যান। এবারের বিশ্বকাপে তো মাহমুদউল্লাহর পরেই বাংলাদেশের ভরসার নাম এই মুশি। কেউ কেউ তাকে দ্যা ডিপেন্ডেবল হিসাবে ডাকে । আর ভারতের বিপক্ষে চরম খেলেন। এশিয়া কাপে তো একাই লড়ে জয় এনে দিয়েছিলেন। স্পটলাইট থাকবে তার উপরেও।
৭) সাব্বির রহমান : তরুণ উদীয়মান মার কাটারি ব্যাটসম্যান। তাঁর ছক্কা হাকানোর স্টাইল অনেক ভাল। চার যত মারেন ছক্কাটা তার চেয়েও বেশি মারেন। ভারতের মুখোমুখি হননি এখনো কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়েছেন। শ্রীলংকা এবং নিউজিল্যান্ডের সাথে চমৎকার খেলেছেন। প্রত্যাশা তাঁর উপরেও আছে ।
৮) নাসির হোসেন : মাঝে কিছুদিন আগেও তাকে মিস্টার ফিনিশার নামে ডাকা হতো। কিন্তু সেই ফর্ম এখন আর নেই। এবারের বিশ্বকাপে মাত্র দুটো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন । তিনি অলরাউন্ডার হিসাবে পরিচিত। ব্যাটিং এর পাশাপাশি বলটাও খারাপ করেন না। ভারতের বিপক্ষে সফল খেলোয়াড়দের তালিকায় তিনি অবশ্যই আছেন । ভারতীয় বোলারদের ভুগিয়েছেন অনেক। আর চমৎকার ফিল্ডিং হিসাবে সবার প্রিয় তিনি। আশা করি, ভারতের বিপক্ষে আবারো আলো ছড়াবেন তিনি।
৯) মাশরাফি মর্তুজাকে : তাকে অনেকে ক্যাপ্টেন কুল নামেও ডাকেন। ব্যাটিং করেন মার কাটারি । আর বোলার হিসেবে তো অসাধারণ। তাঁর ৫ উইকেট শিকার এই ভারতের বিপক্ষেই। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের খুবই ভুগিয়ে থাকেন। ভারতের বিপক্ষে খেলার আগে তিনি একবার বলেছিলেন, ভারতরে ধরে দিবানি। এবং সেবার সত্যিই ধরেই দিয়েছিলেন ভারতকে। এবার তিনি বাংলার ক্যাপ্টেন ভারতকে ধরে দেওয়ার অপেক্ষা করছি।
১০) তাসকিন আহমেদ : তরুণ খেলোয়াড় তিনি । তার বলে প্রচুর গতি এবং সুয়িং রয়েছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তিতে ফেলতে পারেন এই উদীয়মান।
১১) রুবেল হোসেন : ভারতের বিপক্ষে পরিসংখ্যান খুব একটা ভাল না হলেও এবারের বিশ্বকাপে কিন্তু তিনিই টাইগারদের সেরা বোলিং। তার রিভার্স সুয়িং ইংলিশদের বিপক্ষে জয় এনে দিয়েছেন। তাই একটু বেশিই উজ্জীবিত থাকবেন তিনি । আমাদের প্রত্যাশা আবারো জ্বলে উঠবেন এই হ্যাপিখ্যাত রুবেল হোসেন ।
শুভকামনা থাকবে টাইগারদের প্রতি! একটি বিজয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম
মন্তব্য করুন