ইউজার লগইন

ব্যাঘ্র মামার আস্তানায়ঃ এবার সবিস্তারে

১.

সে রাতটা ঘুটঘুটে রাত হতে পারতো, কালি-গোলা অন্ধকার বলা যেত। কিন্তু নাহ... সে রাত ছিল চাঁদনী রাত, চাঁদটাও বেশ বড়। একদিন পরই পূর্ণিমা। তবু বনের সরু খালটার উপর গাছের ডালপালা এসে এক আধো আলো-ছায়ার আবরণ তৈরি করেছিল। গাছের সে সবুজ তোরণের নিচে আমরা কজনা ভাসছি। ট্রলারের ইঞ্জিন অনেক আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খালের মাঝে নোংর ফেলেছে মাঝি। নোঙরের দড়ির ঢিলটুকুর সুযোগ নিয়ে ঢেউয়ের তালে নৌকা মাঝে মাঝে তীরের কাছে চলে যাচ্ছে। আর শিউরে উঠছে নৌকার অভিযাত্রীরা। এই কিছুক্ষণ আগেও বনে অনেকরকম নিশাচর পশু-পাখির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। হঠাৎ সে আওয়াজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের কাছটায় বন নীরব। বনরক্ষী দুজন বন্দুক হাতে সতর্ক। নীরবতাই বলছে, ব্যাঘ্র মামা এসেছে। ডানদিকের বড় একটা ঝোপ হঠাৎ নড়ে উঠলো। সাথে সাথে বনরক্ষী সেদিকে বন্দুক তাক করলো। আমরা আতংকে সিঁটিয়ে উঠলাম। তবে কি ব্যাঘ্র মামা এল?

২.

ঢাকা থেকে সুন্দরবনের যাত্রা এক বিশাল যাত্রা। আমাদের লক্ষ্যস্থল ছিল কটকা। সন্ধ্যা ৭টার চিত্রা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে আমাদের নিয়ে যাবে খুলনা। তবে কথায় আছে না, ছটার ট্রেন নটায় ছাড়ে; আমাদের সাতটার ট্রেন সময়ানুবর্তিতার এক উজ্জ্বল(!) দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নটাতেই এসে পড়লো। তারপর ১০ ঘন্টার যাত্রা শেষে আমরা পৌছলাম খুলনা। আমাদের অভিযাত্রী দলটা ছিল তের জনের। খুলনাতে অপেক্ষায় আছে ১৪ জনের দলের বাকি একজন। ট্রেনে দেখা হলো বুয়েটেরই অনুজ ৬ জনের সাথে; নিরুদ্দেশ ভ্রমণে বের হয়েছিল। সঙ্গী করে নিলাম তাদেরও। খুলনার বন্ধু জ্যোতি রেলস্টেশন থেকে আমাদের নিয়ে গেল রূপসা ঘাট। সেখান থেকে ট্যুর কোম্পানির ট্রলারে করে সকাল ৯টার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম লঞ্চে।

রূপসা ঘাটে অপেক্ষায় আমরা

লঞ্চ

৩.

ট্যুর কোম্পানি সম্পর্কে এইবেলা বলে রাখা ভাল। এই ট্যুর কোম্পানির আর যাই হোক না কেন, খাওয়াটা চমৎকার। আমি তেমন ভোজনরসিক না হয়েও বুঝতে পেরেছি, ৩ দিনের এই ট্যুরে যে খাবার তারা দিয়েছে, নিশ্চিতভাবেই ঢাকায় ফিরে সাদামাটা খাবার অনেকদিন মুখে রুচবে না। কি না ছিল!? প্রতিদিন দুই-তিন পদের স্থানীয় মাছ ভাজা, কয়েক পদের মাংস। মাঝে মাঝে চিংড়ি ভর্তা, কাকঁড়া ঝাল ফ্রাই, ভেজিটেবল শ্রিম্প স্যুপ, চিকেন রোস্ট, চিকন চালের ভাত, পোলাও...আহ বলতে বলতেই জিভে পানি চলে আসলো। এক দিন রাতে ছিল বার্বিকিউ। চিকেন গ্রিল আর শিক কাবাবের সাথে লুচি। রান্নার মান অতি চমৎকার। লঞ্চে অনেক পরিবারের অনেক মানুষ ছিল, কিন্তু কেউ রান্না খারাপ বলতে পারেনি। বিকেলে মাঝে মাঝে ছিল চটপটি, ছোলা মুড়ি, জাম্বুরা ভর্তা, আপেল, নাশপাতি। আর চা-কফি তো অফুরন্ত।

বার্বিকিউ চলছে

৪.

প্রথম দিনের কথা বলি। খুলনার রূপসা ঘাট থেকে কটকা যেতে লঞ্চে সময় লেগেছিল প্রায় ১২ ঘন্টা। সুতরাং সকাল নটায় ছাড়া লঞ্চ কটকায় নোঙর ফেললো রাত নটার কিছু আগে পরে। সরু এক খালের মাঝে নোঙর ফেলেছিল আমাদের লঞ্চ। আমাদের স্থান সংকুলান হয়েছিল লঞ্চের নিচের ডেকে। রুমগুলো ছিল ছোট, কিছুটা বদ্ধ। বাজেটের সাথে তাল মিলাতেই এই রুম নেয়া। জানালা খুললেই প্রায় পানির লেভেল। আমরা কেউ কেউ অতি-কল্পনা করে বলে ফেললাম, কুমির যদি জানালা দিয়ে লাফ দেয়?! জানাল খুলে ঘুমানোর সাহস বাকিদের কারো হলো না। রাতে কিছুক্ষণ জেনারেটর ছেড়ে পরে বন্ধ করে দেয়া হলো। নীচতলার বদ্ধ রুমে আমাদের কারো ঘুম আসলো না। ছাদে এসে ঘুমালাম। বনের মাঝে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার, চাঁদ মেঘের আড়ালে। এদিক সেদিক জোনাই পোকার ছড়াছড়ি। মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে নাম না জানা পাখি। সে রাতে ধুন্ধুমার ঘুম দিলাম।

৫.

পরদিন ভোরে উঠেই আমরা ঘুরে বেড়ালাম আশেপাশের খালগুলো। ক্যামেরা বন্দী করলাম কয়েক পদের মাছরাঙ্গা, বক-সারস সহ নানা পাখি। দেখলাম কেওড়া ফল, সুন্দরী লেবু, গোলফল(গোলপাতার গোলফল) আর নানা রকম গাছ। নৌকার সামনের দিকে বসে ছিলাম আমি। তো হঠাৎ তীরের দিকে নজর পড়তেই চোখ পড়লো একটা কুমীরের দিকে। বেশি বড় হবে না, প্রায় চার-পাঁচ হাত লম্বা। আমি কুমীর কুমীর বলে চিৎকার করতেই পানিতে ঝাঁপ দিল। নৌকার বাকিরা ভাবলো মিথ্যেবাদী রাখাল বালকের "বাঘ বাঘ" ডাক। কেউ বিশ্বাস করলো না। ক্যামেরায় বন্দি করার সুযোগও পাইনি, সুতরাং সাক্ষী মানতে হলো আমার পাশের দুতিনজনকে, যারা আমার সাথেই সে কুমীর দেখতে পেয়েছিল।

নৌকা তারপর চললো আরেকদিকে। এখানেই আমরা প্রথম হরিণ দেখলাম। নিরপদ দূরত্বে তারা দল বেঁধে হাঁটছিল। আমাদের প্রায় পুরোটা দল হাঁটু পানিতে নামলো সেসময়। পায়ের নিচে কাদা, মধ্যে মধ্যে কাটার মতো শ্বাসমূল। তারই মাঝে হেঁটে হেঁটে তারা হরিণের কাছে পৌছতে চাইলো। হরিণের দল ততোক্ষণে আরো দূরে। কিছুক্ষণ ফটোসেশন চললো। তারপর আমরা লঞ্চে ফিরে এলাম। সকালের নাশতা শেষে বের হলাম আবার।

৬.

এবারের প্লান ছিল বনের ভেতর দিয়ে আড়াই কিলোমিটারের মতো হেঁটে সমুদ্রতীরে যাওয়া। বিশাল এক লাইন করে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। আগে পরে ছিল বনরক্ষীরা। ভয়ের কারণ ছিল, জায়গাটার নাম যে টাইগার পয়েন্ট! যাই হোক, দিনের বেলা শুধু হরিণই দেখা গেল। এতোই হরিণ দেখা গেল যে শেষে অনেকে হরিন দেখতে দেখতেই বিরক্ত হয়ে পড়লো। আমাদের চলার পথে প্রথম প্রথম আমরা হরিণের খুরের ছাপ আর লাদি দেখেই যদিও উত্তেজিত হয়েপড়েছিলাম। পরে অবশ্য একটু পরপর দেখা মিললো হরিণের পালের। আমাদেরই চলার পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সেসময় আমিও বেশ কাছে থেকে কয়েকটা ছবি তুললাম।

বনের দিকে যাচ্ছি

বনের ভেতরে আমাদের দলের অগ্রবর্তীরা দেখতে পেল গুইসাপের প্রজননকর্ম। অনেকেই ক্যামেরায় সে জিনিস ভিডিও ও করে রাখলো। বনের ভেতর অনেকটা পথ কাদাপানি ডিঙ্গিয়ে তারপর আমরা গেলাম সমুদ্র সৈকতে।

সাগর বেলাভূমি

সেখানে সাগর অবগাহনে পার হলো দুপুরটা। তারপর ফেরার পালা। ফেরার পথে আমরা বন-মোরগের দেখা পেলাম। হতাশ হয়েই বলতে হচ্ছে, সাধারণ মোরগের সাথে খুব সামান্যই তার পার্থক্য। উৎসাহী কেউ কেউ ওয়াচ টাওয়ারে উঠলো। কিন্তু হরিণ আর সবুজ ছাড়া নতুন কিছুর দেখা পেল না। ফিরে এলাম আমরা লঞ্চে।

অবশ্য লঞ্চে ফিরেই আমরা আবার বের হলাম। সমুদ্রের বালি ধুতে কাছেই ফরেস্ট অফিসের মিঠাপানির পুকুরে গেলাম। এখানে একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করলাম। সমুদ্রে পানি নোনতা ছিল না, মিষ্টি পানি ছিল। আর পুকুরে এসে পেলাম নোনতা পানি! কারণটা অবশ্য বোধগম্য-- বৃষ্টির কারণে সমুদ্রে পানি মিষ্টি। কিন্তু পুকুরে জমানো পানিটা জোয়ারে আসা পানি, নোনতা তো হবেই। যাই হোক, সে পুকুরে কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে আমরা আবারো লঞ্চে ফিরলাম।

৭.

বিকালটা বিশ্রামের সময় ছিল। আমাদের কেউ কেউ রুমে ঘুমিয়ে কাটালাম। কেউ ছাদে তাশের প্যাকেট নিয়ে বসলাম। মেইন ডাইনিংটাকে বানিয়ে ফেললাম ক্যাসিনো টেবিল। কেউবা দাবায় উৎসাহী হলো। বাকিরা লঞ্চের সামনে বসে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলো। আমাদের লঞ্চ থেকেই তীরে হরিণের পাল, বুনো শুয়োর দেখা গেল। কয়েকটা বানরও দেখা গেল পানিতে গোসল করতে। আমরা চারিদিক দেখতে দেখতে এমনি করে বিকালটুকু পার করে দিলাম।

সূর্যাস্ত দেখবো বলে শেষ বিকেলে আবার বের হলাম। আরেকটা সাগর বেলাভূমির দিকে এবার রওনা দিলাম। বন বিভাগ থেকে বিশাল জলাভূমির উপরে সেতু তৈরি করে দেয়া। মধ্যে মধ্যে তার সিডরের ছোবলের দাগ। অনেকটা পথই তাই ক্যাটওয়াক করতে হলো সে পুলসিরাতের ওপর।

পুলসিরাত

পুলসিরাতের উপর সারিবদ্ধ আমরা
শেষে এসে পেলাম জলার ধারে সাগর বেলাভূমি। সেখানে পটাপট শাটার টিপতে লাগলাম। তারপর সূর্যাস্ত দেখে ফিরে এলাম।

নীড়ে ফেরার পালা

রাতের খাবারের পর বের হলাম নাইট সাফারিতে। খালের ভেতর নৌকা নিয়ে ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ করে আমরা বাঘ মামার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। শুরুতে তো সে গল্পই বলছিলাম! যাই হোক, বাঘ মামার উপস্থিতিতেই সন্তুষ্ট থেকে নিরাপত্তার কারণেই আমরা দিরে এলাম। ফিরে আসার পর আমাদের তর্ক শুরু হলো।

"আসলে আমরা কি আশা করছিলাম? ব্যাঘ্র মামা আমাদের সামনে মডেলিং করে হেঁটে বেড়াবে?"
"আরে ব্যাটা এটা কি চিড়িয়াখানা পাইছস?"
"না, কিন্তু ব্যাঘ্র মামা ডাক ছাড়তে তো পারতো!"
"ধুর শালা...আসছে শিকার করতে ডাক ছাড়বে ক্যান? অবশ্য তোরে খাইতে পারলে পরে ডাক ছাড়তো।"
"আইচ্ছা, বাঘ না খালি খালি মানুষকে আক্রমণ করে না?"
"ধুর ব্যাটা, তুই ওর শিকারের সময় ওর এলাকায় গেছস, ও কি চুম্মা দিবে?"
"বড় কথা কি জানস? বাঘ বাই চান্স ঝাঁপায় পড়লো। বনরক্ষীরা কি করতো? দুইজনের একজনের হাতে ব্রিটিশ আমলের বন্দুক, আরেকজনের হাতে পাকিস্তান আমলের। আরো মজার ব্যাপার কি জানস, দুজনরেই জিগাইলাম -- বাঘ আক্রমণ করলে গুলি করার পারমিশন আছে কিনা? একজনে কয় হ্যা আরেকজনে কয় না! বুঝ অবস্থা!!"

এমনি সব তর্কাতর্কিতে অনেকটা রাত পেরুলো। শেষে এসে আমরা সবাই উপলব্ধি করলাম, ব্যাঘ্র মামার দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, আর দেখা পেয়েও বেঁচে ফেরা আরো বড় ভাগ্যের ব্যাপার। রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছে...যে যার রুমে ঘুমোতে গেলাম। কেউকেউ আগের রাতের মতোই ছাদে ঘুমের আয়োজন করতে লাগলো। জোনাই পোকার টিমটিমে আলোতে আর বনের অজানা সব রহস্যময় শব্দে শব্দে আমাদের সুন্দরবনের দ্বিতীয়রাত শেষ হতে লাগলো।

৮.

পরদিন ভোরবেলা কেউ উঠতে পারলো না। আগেরদিনে দীর্ঘ ধকলের ক্লান্তি আর শেষরাতে ঘুমোতে যাওয়ার কারণেই এ অবস্থা। অবশ্য লঞ্চে পরিবার নিয়ে যারা এসেছিলেন তারা উঠলেন। আমিও সকালের দিকেই উপরে গেলাম। আমাদের আদুরে খুদে সহযাত্রী মালিহা তখন তার খালার সাথে বসে পান খাচ্ছে। সেসময়ই তুললাম এ ছবি। নিঃসন্দেহে ট্যুরে তোলা আমার সেরা ছবি(আমার মতে)।

মালিহা

তৃতীয় দিনেই আমরা আবার খুলনার দিকে রওনা দিতে লাগলাম। বন ছেড়ে আসার সময় মনে হলো আরো সময় নিয়ে আসার দরকার ছিল। এদিন আমরা সহযাত্রীরা নিজেরা নিজেরা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে লাগলাম। তিনদিন ধরে যারা আমরা একসাথে ছিলাম, আজ মনের আর্গল খুলে বসলাম। বিভিন্ন পরিবারের বিভিন্ন জনের সাথে কথা হলো। মধ্যে মধ্যে প্রকৃতি দেখাও চললো। ক্যামেরার সাটারে টিপও সমান তালে পড়তে লাগলো। বন্ধুর এইচ-৫০টা আমার হাতে থাকায় আমাদের দলের মেইন ফটোগ্রাফার এই অধমই ছিলাম। এ গল্পেরও শেষ বেলায় এসে আমাদের খুদে সহযাত্রীদের কথা না বলাটা অন্যায় হবে। আদুরে সহযাত্রী মালিহার কথা তো বললামই, সে আবার কোল ছেড়ে নামতে চায় না। ছিল মালিহার ভাই(অনেক কঠিন নাম, মনে পড়ছে না); সে আমাদের বিশাল বিশাল গল্প শুনাতো। আমাদের রাতের আড্ডা মালিহার ভাই আর আরেক খুদে সহযাত্রী আদিয়াতকে নিয়েই হতো। আদিয়াতের গল্প হতো দুই কি তিন লাইনের। সে গল্পের রেশটা থাকতো অনেকটুকু। আর মালিহার ভাই বিশাল সব গল্প বলতো, যে গল্প শেষ হতো না। দুজনের মধ্যেই অদ্ভূত মিল, দুজনেই জাহাজ ছাড়া কোনো গল্প বলতো না। শেষে আমরা অনেক অনুরোধ করলাম, "জাহাজ ছাড়া গল্প বল রে বাপ!" তো তারা বললো। শুনুন গল্পটা--

একটা ছিল প্লেন, বুঝছো।(আমরা হুমম বলে মাথা নাড়ি) তো সেই প্লেনের উপ্রে ছিল জাহাজ!

আর মালিহার ভাইয়ের দীর্ঘ গল্পের একটা নমুনা দিয়ে আমার লেখাটা আরেকটু লম্বা করি।

একটা লোক ছিল। সে লোকটা হ্যাচ্চু দিত। হ্যাচ্চু...হ্যাচ্চু...

মালিহার ভাই অভিনয় ছাড়া গল্প বলতো না। তো বেচারার হ্যাচ্চু হ্যাচ্চু শুনে আমরা বাদ সেধে বলতাম, তারপর কি হলো সেটা বলো। হ্যাচ্চুর পর কি হলো?

হ্যাচ্চুর পর? একটা বড় হ্যাচ্চু দিল

তারপর, তারপর?

আবার হ্যাচ্চু দিতে লাগলো ...হ্যাচ্চু হ্যাচ্চু...

আমরা ততোক্ষণে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি। হ্যাচ্চুর গল্প আর শেষ হলো না সে রাতে।

হ্যাচ্চুর গল্প চলছে

দুই গল্পকথক

আদিয়াত আর মালিহার ভাইয়ের গল্প বাদেও রাতে মাঝে মাঝে আর সব ভাইয়া-আপু-ভাবী-খালাম্মাদের অনুরোধে আমরা হেড়ে গলায় গান ধরতাম। যাই হোক...গান শুনে তারা দ্বিতীয়বার অনুরোধের সাহস করতেন না। আমরা অবশ্য তাতে উৎসাহ হারাতাম না, একের পর এক গান ধরেই যেতাম। অবশেষে খাবার টেবিলে খাবার দেয়া হলে বাকিরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচতো।

এক রাতে শুরু হল কৌতুক বলা। একে একে দারুন সব কৌতুক চলতে লাগলো। আংকেল-আন্টিরা চমৎকার পারফরম্যান্স দেখালেন। আমরা হেসে কুটি কুটি হতে লাগলাম। এমন সময় ট্যুর কোম্পানির মালিক ফারুক আংকেল কৌতুক বলতে এলেন। সে কৌতুক বলতে বলতে তিনি যে কোথায় গেলেন... ... ঠিক বলতে পারি না। মাইল মাইল লম্বা প্যাচাল শেষ হবার আগেই ভেগে গিয়ে ছিলাম।

৯.

তিন দিনের যাত্রা শেষ হলো ৩ তারিখ রাতে। ফেরার সময় বারবার মনে হয়েছিল, ইশ! যদি আরো কয়েকটা দিন থাকতে পারতাম। মালিহার মায়ামায়া দৃষ্টি, আদিয়াত আর মালিহার ভাইয়ের গল্প, হরিণের ছোটাছুটি, আপু-ভাবীদের গল্প, বনের মধ্যে হাইকিং ... এই ব্যস্ত নগরে এইসবের আর কিছুই হবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলেই আমরা মিশে যাই প্রতিদিনকার জীবনে, শুধু উড়ে যাওয়া পাখির পালকের মতো পড়ে থাকে স্মৃতি...পড়ে থাকে মায়া।

বনের মায়া হয়তোবা এড়ানো যাবে, মনের মায়া এড়াই কিভাবে?

সুন্দরবন নিয়ে ফোটুক পোস্ট

*********************** ****************** ***********************
সামান্য পরিমার্জিত, ব্লগস্পট আর সামহোয়ারে প্রকাশিত হয়েছিল, এখনো ব্লগস্পটে পোস্টটা আছে

পোস্টটি ১৫ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টুটুল's picture


চমৎকার বর্ণনা... পইড়া আরাম পাইলাম

টুটুল's picture


চমৎকার বর্ণনা... পইড়া আরাম পাইলাম

নুশেরা's picture


নীড় সন্ধানী's picture


সুন্দরবন যাইনি কখনো। তাই সুন্দরবন বিষয়ক যে কোন লেখা গোগ্রাসে গিলি। প্রিয় পোষ্টে নিলাম Smile

সাঈদ's picture


বাসায় গিয়ে আরাম করে পড়বো।

মুকুল's picture


দারুণ!

খরচ কত হইছে ?

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


সাড়ে চার লাগছে ট্যুর কোম্পানিতে। আর ধরেন ঢাকা-খুলনা ট্রেন খরচ। সব মিলায়া পাঁচের মতো।

বিষাক্ত মানুষ's picture


বেশ Smile

সোহেল কাজী's picture


প্রিয়তে নিলাম সময় নেয়ে পড়তে হবে Smile

১০

অপরিচিত_আবির's picture


মেজাজ গরম করিস না, এমনি ঐবার যাওয়ার জন্য বলস নাই তার উপর পুরান পোস্ট দিয়া ব্লগ গরম করার ফন্দী!!

১১

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


এইবার আগে থেকে বইলা রাখলাম বান্দরবান যাব, দেখি তোর দৌড় কদ্দুর Tongue

১২

তানবীরা's picture


আবার আমিও যাবো আর এসে এমন পিত্তি জ্বালানো ফটুক দিবো। আপাতত আপনাকে ব্যপক হিংসা। আরো কিছু ছবি দিয়ে আর একটা পোষ্ট দেন প্লীজ।

১৩

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


এই লিঙ্কটায় আরো কিছু ছবি আছে, দেখতে পারেন।
http://vangapencil.blogspot.com/2009/10/blog-post_05.html

১৪

তানবীরা's picture


এবার****

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.