অবরুদ্ধ কণ্ঠ-২ (যুদ্ধ পর্ব)
একটা সময় পার করলাম, বলা টা হয়তো ঠিক না। কিছুটা পথ অতিক্রম করলাম। এই পথ নতুন, এই পথে হাটার ধরন নতুন। সামাজিক ভাবে অছ্যুত এই পথ। নিয়তি যখন আমাকে এই পথের ধারে এনে দাড় করিয়ে দিল, আমি জেনে গেলাম এর কোন বিকল্প নেই, এই পথের কারনে পরিচিত অনেক বন্ধু বা আত্মিয় ই গায়েব হয়ে গেল নিমিষে। অনেকে থেকে গেল। অনেকে নতুন যোগ হল।
এই নতুন মুখ বা আধা পরিচিত মুখ যারা এই পঙ্কিল দুর্গম পথে আমার পাশে রাসেল এর জন্য এসে দাঁড়ালেন তাদের মাঝে প্রথম ফোন টা আমি পাই ফিরোজ ভাই এর কাছ থেকে। আমি তখন ও কোর্টে এ পৌছাই নি। কল পেয়ে ও তাকে না দেখা পর্যন্ত আমি বুঝতে পারিনি এটা সংহতির ফিরোজ ভাই।কেম্ন করে যেন সে এই পুরো পথটা ই আগলে রেখেছে আমাদের। সে ই পরিচয় করিয়ে দিল কিছু "মানুষের" সাথে।
আমি রাহনুমা আপা, গিতিয়ারা নাসরিন আপার জড়িয়ে ধরা ভুলতে পারি না। সেখানে আরও কয়েকজন আপু ছিলেন, নাম মনে করতে পারছি না। মনে হল তারা আমার কষ্টটা টেনে শুষে নিতে চাচ্ছেন। সে বৃষ্টিতে আমার রাসেল এর জন্য ন্য, এই মানুষ গুলোর জন্য ই ভিজে উঠেছিল। দাড়িয়ে থেকে, ফোন এ ফোন এ সবাই সব ব্যবস্থা করে ফেলছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করে দিচ্ছেন।সারা আপা কে ফোন করলেন, পরিচয় করিয়ে দিলেন জ্যোতি দা র মতো একজন মানুষের সাথে।সেই দিনের সেই বৃষ্টির দিনের রাজু ভস্করজের সামনের সেই মানুষ গুলো, বন্ধুরা আমাদের। ফহমিদুল ভাই, অনারা সাথে এক দিন পরিচয় হয় কৌশিক এর বাসায়। তেমন কথা হয় নি। এই মানুষ টা প্রতিনিয়ত খোঁজ নিয়ে, প্রয়োজনীয় লিংক গুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনে নিজে সাথে গিয়েছেন। কখন ও না বলেন নি।
জ্যোতি দা, ব্যরিস্টার, অসাধারন মানুষ। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এই মানুষ টা আমাদের চিনে না, অথচ শুধু আমাদের জন্য সে রাত ২-৩ টা পর্যন্ত কাজ করেছে অফিসে বসে।যখন দরকার ছুটে গিয়েছে নিন্ম আদালতে, যদিও সে সাধারনত এই কাজ টা করেন না। টাকা দিয়ে উকিল পাওয়া যায়, কিন্তু দাদা পাওয়া যায় না।যেখানে দরকার ফোন করেছে, কোন সংঘটন কল করলে তাদের সময় দিয়েছেন। জীবন বাজি রেখে আইনি লড়াই এর পাশাপাশি মিডিয়ায় লড়েছেন।্রিকশা করে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দৌড়ে গিয়েছেন আইনি লড়াইয়ের জন্য। যদিও জানতেন এ এক অসম লড়াই, তবু ও হাল ছাড়েন নি।সাথে আশা দিয়ে গিয়েছেন সারা আপা।
সেদিন ঘুরতে ঘুরতে রাত ১২ টা। সারা দিন কিছু খাইনি। আনু স্যার এর বাসায়।কোন দিন পরিচয় হয়নি। এতো রাত তাও বিরক্ত হননি। মেডাম কি করে যেন বুঝলেন বললেন খেয়ে নাও। খাবার সময় টা ও ছিল না আমাদের। ওনি মিষ্টি এনে দিলেন। গোগ্রাসে গিললাম। মেম ওটাই ছিল আমার সারাদিনের খা্ননি।এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে সব সময় নিজের ই মনে হয়। কোন সঙ্কোচ কাজ করে না তাদের সাথে। তারা ও আমাদের আপান করে নেন নিজ মহিমায়।
আরেকজন জন মানুষ, যার সাথে এই ঘটনা র আগে একবার ই পরিচয় হয়েছে। এই ঘটনায় একবার ই সামনা সামনি কথা হয়েছে। কিন্তু একটা মানুষের সাধ্যে যা করা যায় সবটা দিয়ে করেছেন। আমি কত বার যে ফোন করেছি। মাসুম ভাই, সে রীতিমত সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন সিস্তেম এর সাথে।
আরও কিছু মানুষ এই যুদ্ধে ছিলেন, যারা পথে দাড়িয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে আমাদের জন্য কথা বলেছেন।যারা আমাদের জন্য কথা বলছিল তাদের ও জীবন নাশের হুমকি আসছিল চারদিক থেকে। সেই সময় কিছু সাহসী মানুষ সিস্টেম এর কার্যকরণ নিয়ে হাই কোর্টে রিট করে শুধু আমাদের জন্য। তাদের জীবন এর নিরাপত্তা দেয়া আমাদের পক্ষে কখন ও সম্ভব ছিল না। শুধু আমাদের নিরাপত্তার জন্য তারা নিজের জীবন বাজি রেখেছেন।
আমার ব্লগ, আমরা বন্ধু, সাম হয়ইয়ার ইন ব্লগ, মুক্তমানা সাবাই ছিল আমাদের পাশে। অন্য ব্লগ সাইট থেকে ব্যক্তিগত প্রযায়ে ও অনেকে ছিল।অনেক অচেনা বন্ধু, যাদের শুধু এই ঘটনার মধ্যদিয়ে ই পরিচয়। তারা ও সাথে ছিলেন অনেক সাইবার ট্রলিং উপেক্ষা করে। গণজাগরণ মঞ্চ সংঘটন হিসাবে না থাকলে ও ব্যক্তি প্রযায়ে অনেকে ই ছিলেন আমাদের সাথে।গনজাগরণ এর মোরসালিন তো ঠিক আকাশ থেকে পড়া সাহায্য। সংহতির অফিস আমার নিজের ঘরের মতো ই হয়ে গিয়েছে। ক্যম্পাস ভিত্তিক সব ছাত্র সংঘটন ছিল আমাদের সাথে।
এতো এতো মানুস-বন্ধু আমরা পেয়েছি, যখন নিজের খুব কাছের বন্ধু বা আত্মিয় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ভয়ে ঘৃণায়। আমাদের এই বন্ধুদের আমি ধন্যবাদ বলতে পারি না। তারা যা করেছে তা কোন ফর্মাল সম্পর্কের ভিত্তিতে করা সম্ভব না। আমি কৃতজ্ঞ। আমরা পাশাপাশি থাকব।
সামনের সময়গুলোতেও পাশে পাবেন সবাইকে, যারা দুঃসময়ে পাশে থাকে তারাই প্রকৃত বন্ধু।
শুভকামনা অনেক অনেক!
শুভকামনা অনেক অনেক!
মন্তব্য করুন