শেকড়ের টানাটানি
আবারো মোবাইলে পোষ্ট লেখার সাহস করলাম। এই সাহসের জন্য বেশি কিছু করতে হয় নাই খালি অসীম ধৈর্যের সাথে ঘন্টা দেড়েক মোবাইলের কিপ্যাড টিপতে হয়। তাতে ঘাড় ব্যাথা হয় কয়েল জ্বালানোর পরও কিছু মশার কামড় খেতে হয় এই যা। ১১ দিন ধরে জামালপুরেই আছি। কাল সকালে ব্রহ্মপুত্র নামে এক আন্ত: নগর ট্রেন আছে তাতেই প্রথম শ্রেনীতে করে ঢাকা শহরের উদ্দেশে রওনা দিবো। জামালপুরে সেভেনটি পারসেন্ট রেলের টিকেট ব্ল্যাকে চলে যায়। আর যে বাকী থার্টি পারসেন্ট থাকে তা পেতে ফজরে লাইনে দাড়িয়ে থেকে সকাল নয়টায় থেকে শুরু হবে টিকেট কেনা। আমার আব্বু অনেক ভালো দ্বায়িত্বশীল লোক তিনি ফজরে উঠে চলে যান আর দশটার সময় এসে এভারেষ্ট জয়ের আনন্দ নিয়ে বলেন এই নে তোর টিকেট। আমি আব্বুর এই কর্তব্যনিষ্টা ও পরিশ্রমের ৫ ভাগও পাইতাম তাহলে অনেক কিছু করে ফেলতাম। এখন আসি জামালপুরে থেকে আমি কি করি? খাই দাই ঘুমাই টিভি দেখি কারেন্ট নিয়ে হাহাকার করি আর বিকেল রিকশা দিয়ে জামালপুর ষ্টেশনে যাই। আমাদের জামালপুরে বাড়ীর পজিশনটা বড়ো ইন্টারেস্টিং জায়গায়। যদিও জামালপুর শহরেও আমার বাপের ভালো জমি আছে । আমার দাদার শ্বশুর বাড়ীর ভালো জমি পাইছিলো দাম সেগুলার এখন অনেক কিন্তু দাম হবার আগেই তিনি ইচ্ছে মতো জমি বেচছেন। আমার মেজো কাক্কুও সেই ধারায় দাদা মরার পর পেনশন থেকে শুরু করে ভালো জমি যা ছিলো সব বেচছেন। ছিলো খালি ভিটাটাই। আমার আব্বুও সেই ভিটাতেই বাড়ী করছেন। বাড়ীটা গ্রামেই। তবে এমন গ্রামকে শহরতলী বলাই ভালো। আমাদের বাড়ী থেকে দেড় মাইল পরেই মেইন জামালপুর শহর। কিন্তু পথের ভেতরে আছে পাকা রাস্তা, আছে ইটের রাস্তা, তারপর মাটির রাস্তা। বাড়ীটা অতো বড়ো না চারটা বড়ো রূম রান্নাঘর বড় বারান্দা ছোটো উঠোন এই তো। ছাদ দেয়ার সামর্থ্য থাকার পরেও টিনের চাল সাথে বাশের চাটাইয়ের সিলিং। এইতো আমার বাড়ী। বাড়ীতে আসতে আমি কোনকালেই টান অনুভব করি না। আমি ঢাকায় জন্ম নিয়ে চিটাগাং তারপর খুলনা তারপর আবার চিটাগাং তারপর ঢাকা এইভাবেই মানুষ। তখন বাড়ীতে আসছি বেশী হল চার থেকে ছয়বার। এসেই নানু বাড়ীতে থাকা কিছুদিন খালার বাড়ীতে থাকা তারপর যেদিন ফিরবো সেদিন সকালে দাদুবাড়ীতে আসা। তারপর দাদী মারা গেছে আমার জন্মের আগেই আর আমার দাদাও সেই পথে গেছে আমার শান্ত নামটা রেখে দিয়েই। কাকুরা বিজি তাই বাড়ী মানেই একাএকা। কিন্তু যখন থেকে আব্বু আম্মু বিশাল ট্রাকে করে মালপত্র নিয়ে জামালপুরে শিফট করলো তখন থেকেই জামালপুরে বারবার আসতে রীতিমতো বাধ্য হইলাম। আমাদের এলাকাটা ভালই কিন্তু বেশি ভালো না। জুয়া খেলার জন্যে স্বনামে ধন্য। তাসের জুয়া, লটারী জুয়া, মেলার ভিতরে খালি জুয়াই। এই আইপিএলেও তাদের শান্তি নাই প্রতি ওভারে ওভারে বাজি ধরে তাও কম টাকার না। আর এইখানে মেট্রিকের পরেই ছেলেরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে সরকারী নিম্নমানের জবে ঢুকে আর আরো বেশী টাকা থাকলে ইতালী লিবিয়ায় চলে যায়। বই পুস্তকে পড়ি গ্রামের লোক নাকি সরল। গত ৪০ বছরে গ্রামের কে কতো সরল আছে তা গবেষনার বিষয়। তবে আমাদের গ্রামে আমার আব্বুর কথামতে সরল তো দুরে থাক ইউনুসের মতোই সব সুদখোরের আর চোগলখোরের দল। তাই গ্রামে আব্বু মিলে মিশে থাকে। আব্বুর জন্ম ছোটবেলার স্মূতি সাথে নিজের সামাজিক ভাবমুর্তি সব মিলিয়ে ভালোই আছে। আম্মু প্রথমে একটু সমস্যা হলেও এখন সব মানিয়ে নিছে। আর আমি বাড়ীতে এসে খালি টিভি দেখি বই পড়ি। আম্মুর চমকপ্রদ রান্না খাই। পত্রিকা কিনে আনি তা গোগ্রাসে গিলি আর সাথের এই মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে পড়ে থাকি। জামালপুরে আমার এক বন্ধু আছে বই পেপারের দোকানদার ওর সাথে সন্ধ্যায় অনেক গল্প করি এরপর রিকশা বা অটো দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ীতে আসি। যতদিন আব্বু আম্মু আছে ততদিন এই ভাবেই বাড়ীতে আসতে হবে। লোকজন শেকড় সন্ধানী হয়। গান গায় ফিরে চল মাটির টানে। আমি কোনো টান অনুভব করি না। খালি চিটাগাং অনেকদিন ছিলাম অনেক বন্ধূ আছে এখনো তাই এই ভালো লাগা। খুলনাতে অনেকদিন যাই না তাই খূব ইচ্ছা করে দেখতে কেমন আছে শহরটা। এখন ঢাকায় থাকি মোহাম্মদপুরে হাউজিং সোসাইটিতে সাড়ে পাচ বছর ধরে আছি। অনেকেই আমাকে চিনে সাথে ভালো বন্ধু আছে কিছু। হয়তো এই জায়গাতেও এক মায়াই আটকে যাবো। আসলে শেষ কথা হলো শেকড় বলতে আমার কাছে বাংলাদেশ বাংলা ভাষা এখানে মানিয়ে নেয়ার অভ্যাস করে নেয়া এতোটুকুই! আড়াই ঘন্টা লাগলো লিখতে। মোবাইলে লেখার কারনে বাক্যে অনেক ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে নিজে গুনে মাফ করে দিয়েন।
আপনার লেখার মধ্যে একটা সুন্দর শিশুতোষ টোন আছে। যেটা অন্য লেখাগুলোর চেয়ে বেশি ভালোভাবে ফুটেছে আজকেরটায়
হ..কথা সইত্য!
আসলে মুখের কথা যে ভাবে বলতাম ঠিক সে ভাবেই লিখি। এই ভাবেই লিখতে আনন্দ পাই!
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভকামনা!
মোবাইলে এতবড় লেখা লিখা যায়?
জামালপুরের কথা শুনে যেতে ইচ্ছে করছে। দাওয়াত পেলে দুইদিনের জন্যে যাইতাম।
জমি বিক্রির কাহিনীটা মজার। আমার বাপ চাচারাও এই কাজে বেশ সিদ্ধহস্ত। বিশেষ করে আমার আব্বার তো জমি বেচার লম্বা হাত ছিল। বেচারা দাদার ছিল জমি কেনার হাত। ছলে বলে কৌশলে, টাকায়, জমিয়ে কমিয়ে যেভাবে যেমনে পারে ভদ্রলোক জমি কিনেছে। এত জমি কেমনে কিনল যে বেচে শেষ করা গেল না সেটাই প্রশ্ন। তবে বাপের ভাগ্য ভাল যে দাদা এমন জমিলোভী ছিল তাতে বাপ বেচারা জমি বেচে মজা করে জীবন কাটাতে পেরেছে, হয়ত আমিও পুরোটা না পারি অর্ধেকের বেশী জীবন বেচে বেচে কাটিয়ে দিতে পারব। কিন্তু আমার আবার কেনার শখ। কিন্তু সমস্যা, পয়সা নাই
আইপিএল নিয়ে জুয়া। মজার তো। লোকালী এমন স্মার্ট জুয়া হয় জানতাম না। ভালই তো। দেশে জুয়ার জন্যে বুকমেকার শপ খোলার অনুমতি দিয়ে দিলেই ভাল হত মনে হয়।
দাওয়াত তো তোমাকে ২০০৮ সাল থেকেই দেওয়া। দেশে আসলে ভীষন ব্যাস্ত তুমি আমার কি করার! আবারো দিলাম দাওয়াত। কোনও এক সকালে ট্রেনে করে চলে যাবো দুইজনে শেষ!
জমি জমা দিয়া কাজ কি জীবন মাত্র দুই দিনের। জুয়া নিয়ে ঘটনা মনে পড়ে গেলো। কোনও এক আইপিল ম্যাচে পুনে হারতেছে। শেষ ওভারে ৮ এর বেশী হবে না এই বলে একজন বাজি লাগলো। ৯ জন ২০০ টাকা করে দিয়ে বললো ৮ এর বেশী হবে। রান হলো সাত। সেই লোক এক ওভারেই ইনকাম ১৮০০!
ভালো থাকো ভাইয়া। অনেক শুভকামনা!
এই প্রথম মনে হয় তোমার কোন লেখা পড়লাম যেখানে কারো উপর তোমার মেজাজ খারাপ না। তোমার বাড়িটার লোকেশন চিন্তা করেই ভাল লাগছে।
মোবাইলে এত বড় পোস্ট লিখেছো? পুরাই মাথা নষ্ট।
যে ভাবে দিন যাপন ঢাকায় তাতে মেজাজ তো খারাপ থাকবেই। মোবাইলে লেখতে গেলে একটা জিনিসই খালি মনে রাখি লেখাটা শেষ করতে হবে সময় যতই লাগুক তাইলেই লেখা শেষ করা যায়!
তোমারে দেখলে কিন্তু ইরাম মনে হয়না, শান্ত ।

তোমার সব লেখার মত এটাও একটা চমৎকার ব্লগ পোস্ট
ধন্যবাদ ভাইয়া! ভালো থাকেন........
বাপরে দিয়া ট্রেনের টিকেট কাটায় এই পুলা
, পুলা তো বড়ই বদ

পুরাই বদ
আড়াই ঘন্টা ধৈর্য ধরে মোবাইলে বাংলায় ব্লগ লেখা... ইস তোমার মত ধৈর্য বেশীর ভাগ বাংলাদেশীদের থাকলে দেশটা অনেক আগাতো!!!
~
এই সব কাজেরই খালি ধৈর্য আছে!
তোমার দেখি অসীম ধৈর্য
দেখা যাক কয়দিন থাকে এই অসীম ধইরযো!
শুভকামনা ভাইয়া!
ধৈর্যের কথা নাই বা কইলাম! মোবাইলের হাল কি এই অত্যাচারে?
লেখা ভাল্লাগছে।
মোবাইলে অবস্থা ভালৈ। খালি ল্যাপটপের মতো পিছনের সাইডটা গরম হয় অনেক। চায়নিজ নোকিয়া তো সেই অনুযায়ী দারুন সেট, আর বাংলা লেখার আনন্দ তো বলে বুঝানো যাবে না!
এইটা আসলেই বুঝানো যাবে না।
মেইলে বা ফেসবুকে যাই লিখি বাংলায় তখনি মনে হয় প্রযুক্তির কি আনন্দ!
যা মনে আসছে তাই লিখছি অনেক বড় ব্যাতিক্রম থাকতেই পারে!
আরে আমিতো তোমার সাথে একমত
ধন্যবাদ ফর সহমতিং!
লেখাটির মাঝে ক্যামন জানি মনে হইলো কেউ তার বায়োডাটা দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত দিলো না ... অনেক টা এই রকম যে , বাবা বলা হয়নি - আমি বড় হয়ে গিয়েছি ... খেকজ !
অনেক কাল পর আপনার সাথে ফেসবুকেই বাইরে কথা হইলো। আগে সালাম দিয়া নেই। আসসালামু আলাইকুম অন্তু সাহেব। দিনকাল কেমন যায়? মন দিল ভালো?
মন্তব্য করুন