অনলাইন-অফলাইন
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মেজাজ খারাপ। বেলা দশটা অবধি যেদিন ঘুমাই সেদিন আমার অত্যন্ত বাজে কাটে কিছুই মন দিয়ে করা হয় না। সকালে উঠে বিবিসি বাংলা শুনবো ব্লগে ফেসবুকে ঘোরাফেরা করবো তারপর দু তিনটা পত্রিকা পড়বো নিজে রং চা বানাবো ড্রাইকেক বিস্কিট খাবো তারপর আস্তে ধীরে বাইরে বের হবো তাহলে না হয় একটা পারফেক্ট সকাল উদযাপন হয়। এরকম না হলেই সব কিছু বিগড়ায়। উঠেই মুখ ধুয়ে বাইরে চলে যাই দিনটা কাটে জঘন্য। আজকেও তেমন ভাবেই বের হ্লাম। নিউএজ কিনে হাটতে হাটতে গেলাম হোটেলে। কোনো এক অদ্ভুত কারনে সেই হোটেলের এক খাবার পরিবেশকের চেহারা আমার বন্ধু হাসিনের মতো। তাকে অপ্রস্তুত হয়ে দেখলেই আমার কাছে হাসিন বলে মনে হয়। আর আমাকে দেখলেই তার শুধু নেহারী খাওয়াতে মন চায় কিন্তু আমি খাই মাসে ১ বার তা। এইটা খুব জটিল একটা সমস্যা। সমস্যাটা নিয়ে ভাবতে হবে। যাই হোক নাস্তা করলাম সামান্যই। মুগডাল আর রুটি আর বিস্কুটের গুড়া দেয়া বাজে চা। এরপর চায়ের দোকানে গিয়ে দেখি চায়ের দোকান বন্ধ। মেজাজটা হলো আরও খারাপ। নান্নু সাহেবের পিন্ডী চটকালাম মনে মনে। আরেক দোকানে চা খেলাম শান্তি পেলাম না কারন তারা বানাতে পারে না দুধ চিনি কম দেয়া কড়া লিকারের চা আমার মতোন করে। যাই হোক পুলক বললো রক্ত দিতে যাবে শ্যামলী। তার বন্ধু আওয়াল যাকে আবাল নামে ডাকে তার মামীর জন্য রক্ত দিবে। রক্তটা নিবে শিশু মেলার অপোজিটে বাংলাদেশ ব্লাড ব্যাংক। আমি রিক্সায় যেতে পুলককে বললাম ব্লাড ব্যাংকে কেনো? দিয়েন না। তাও গেলাম। পুলক রক্ত দিলো আমি আবালের সাথে প্যাচাল পারলাম। সে কিছুদিন মালদ্বীপ এম্বাসিতে চাকরী করছে সেখানকার গল্প গুজব শুনলাম। কিছু সময় টিভি দেখলাম। ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে এক আমেরিকানের পাকিস্তানে মাদক ব্যাবসায়ীদের ফাদে পড়ে জেলে থাকার গল্প চলে। ব্লাড ব্যাংকের দেয়াল জুড়ে পুলিশের বড় কর্মকর্তাদের সাথে মালিকের ছবি। মানে কি হালারা কি ডাকাত নাকি যে পুলিশের ছবি এইভাবে দেখানো। এক লোক চারজনকে নিয়ে আসলো তাদেরকে একাউন্টস থেকে টাকা দিলো টাকা দিয়ে তারা কোথায় জানি গেলো। এতো টাকা দেয়ার কি কারন থাকতে পারে তা চিন্তা করলাম। তখন মনে হলো এরা পেশাদার রক্তদাতা তাই টাকা পয়সার ডিলিংস। বাংলা সিনেমায় দেখতাম শাবানা রক্ত বেচে খাবার কিনে সংসার চালায় এরাও কি সেরকম মহান লোক। আমি প্রায়ই বলি বাপের রক্ত বেচা পয়সা নিয়ে ঢাকায় এতো ফুর্তি করি আসলে রক্ত বেচতে কেমন টেস্ট তা জানা হলো না। পুলক আমি মাম পানি খেতে খেতে বাইরে গেলাম। পুলকের ধারনা রক্ত দিলো দু তিন দিন নাকি ভালো ঘুম হয়। বাসায় ফিরে নিউএজটা ভাজা ভাজা করলাম। তারপর পিসিতে বসলাম ফেসবুকে গুতাগুতি। ভাত খেয়ে নামায পড়ে বের হলাম শাহবাগের উদ্দেশে। ছয়মাস পরে রাজধানী বাসটা আবার চালু হলো। রাজধানী বাসটা হলো আমার অতি আপন বাহন। কত অজস্র দিন বছরের পর বছর আমি এই বাসে চড়ে কখনো কলাবাগান কখনো কাটাবন শাহাবাগ মতিঝিল গিয়েছি তার হিসেব নাই। আগে একটা সময় রাজধানীর বেশীর ভাগ স্টাফকেই আমি চিনতাম। একবার একজন চেনা মেয়ে রাজধানীতে তার স্যোয়েটার ফেলে গেছিলো। আমাকে বলার পর আমি খুব সহজভাবে তা খুজে বের করে দিলাম। এক রাতের কথা বন্ধু আবির বললো সে তার বাসায় যাবে না আমি বললাম আমার বাসায় চল সে বললো তাও যাবে না আমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরবে। তার সেকেন্ড গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রোক আপ হতাশ মন। আমি বললাম চল একটা রাজধানী বাসে চড়ে বসে থাকি। যেই কথা সেই কাজ আমি আর আবীর সারারাত রাজধানী বাসে জানলা দরজা আটকিয়ে বসেছিলাম। সেই জন্য ৫০ টাকা দিতে হইছে চা নাস্তা হিসেবে আর একটা কয়েল আর আবীর ১ প্যাকেট বেনসন কিনে প্যাচাল পারতে পারতে পার করছি রাত। যাই হোক রাজধানী অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলো সেই ৬টাকার আমল ৮ টাকা শাহবাগ। এ কয়দিন রিক্সা ভাড়া দিতে দিতে ফকির অবস্থা আমার। রাজধানী এসে বলা যায় উদ্ধার করলো। শাহবাগ গিয়ে দেখি ভালো লোক সমাগম। প্রচুর তরুন প্রজন্মের ব্লগার। শামীমের সাথে দেখা হলো হেলাল ভাই বললেন বুঝলা শান্ত জেনারেশন গ্যাপ। আসিফ মহিউদ্দীন নিয়ে কথা বলতে যেয়ে তিনি নৃশংসতার শিকার তা নিয়ে না বলে লোকজন আজাইরা কাব্য চর্চা করতেছে। আসিফ তো আর সাধু সন্ন্যাসী ছিলো না যে তাকে উচ্চাসনে বসাতে হবে। সে একজন ব্লগার। তার নামে যথেস্ট সমালোচনা বাজারে চালু। কিন্তু যে নির্মমতায় তার বিরুদ্ধে আক্রমন হইছে তা নিয়ে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। কিন্তু আলোচকদের দেখলাম আসিফ মহিউদ্দীন অতিতে কি কোন বাল ফালাইছে তার ফিরিস্তি দিতে দিতে ক্লান্ত তার মানে কি আজ আমি যদি কোপ খাই তাহলে পাবলিক বলবে দিনলিপি বাদে আর কি লিখছে বেকুবটা তার কোপ খাওয়াই উচিত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা উপরে যদি এই আঘাত এসে থাকে তবে সেই প্রতিবাদেই আমাদের যেতে হবে। আসিফ কবে কি করছে কে তার মিত্র কে তার শত্রু তা জানা জরুরী না। শত্রুকে রুখে দাড়াবার জন্যে এক থাকাটাই জরুরী। আসিফের সিপিবি বাসদ বন্ধু ছিলো তার পদ ছিলো তাই তার নামে মিছিল হইছে কাল আমি কোপ খেলে আমার পাশে কেউ দাঁড়াবে না ইহাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। তবে আসিফের তিন বোনের বক্তব্যে মনটা বিষন্ন হইছে। কিন্তু জনসংহতির ফিরোজ ভাই তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটাই বক্তব্য হিসেবে দিয়ে দিলো তা দেখে মজা পাইছি। সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম থাকার কারনে নিঃসন্দেহে প্রতিবাদের ভ্যালু বাড়ছে। স্লোগান দিতে দিতে মিছিল গেলো আমি মিছিলে থাকতে থাকতেই ছবির হাটে দিকে গেলাম চা খেলাম তা খেতে গিয়েই পড়লাম ফ্যাসাদে পকেটে হাতিয়ে দেখি ভাংতি নাই। আরেকটা চা খেলাম তারপর শুভ ভাইদের প্রানের দোকানদার ইমনকে একটু বিনয়ের সুরে বললাম এক চায়ের দোকানে ভাংতি আমি পকেটে নিয়ে ঘুরি সব সময় কিন্তু আজকে ভাইয়া হুট করে দোকান বন্ধ ছিলো তাই ভাংতি নাই ভাইয়া মাফ করে দিয়ো ইমন দারুন ভাবে ৮৮ টাকা ফেরত দিলো আমি চেয়ে থাকলাম। হাটতে হাটতে এমবিএ বিল্ডিংয়ের দিকে গেলাম। যেয়ে দেখি এক পরিচিত লোক মিস্টি খাওয়াচ্ছে কেনো? বললো চাকরী হইছে তার মিস্টি। আমি চেয়ে থাকলাম মিস্টিটায় এক ধরনের অরুচি হলো হতাশায়। গ্যাস্ট্রিকের কারনেই মনে হয় মিস্টিটা মুখে দিয়েই উক করে ফেলে দিলাম। ক্লাস করলাম। ক্লাস শেষে বাসে করে ধানমন্ডী ২৭ গেলাম বন্ধু মাহফুজ আসলো। দুজন মিলে মনের দুঃখে স্টারে খেলাম। স্টারে এক মেয়ে আমাদের ভগ্ন জামাকাপড় দেখে এমন ভাবে তাকালো তার চাহনী দেখেই বমি এসে গেলো আবারো উক করে প্রায় তার কাছাকাছি বমি করতে উদ্ধত হলাম। ভাগ্যিস করি নাই মেয়েটা যা ভয় পাইছে। স্টারে ঝাল ফ্রাই পরোটা টরোটা খেয়ে চায়ের দোকানে চা খেয়ে বাসায় আসলাম। বিবিসিতে শুনি পাকি প্লেয়াররা আসবেনা শুনে মনটা আমোদে ভরে গেলো। এইভাবেই চলে গেলো অনলাইন অফলাইন এক্টিভিজ়মের একটা দিন!
এই পোস্টটা তাতাপুকে প্রেজেন্ট করলাম। আইডিয়াটা সেই ই দিছিলো ফেসবুকে!
নাম টা দারুন, পোস্ট ভাল্লাগছে।
বাসের রাত নিয়ে পড়ে কিঞ্চিত হিংসিত।
স্টার এর পরাটা ঝালফ্রাই পুরাই জরজিয়াস!
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু!
তুমারে খাওয়াতে পারলে ভালো লাগতো!
আরে বাস কড়কড়া মুচমুচা প্রেজেন্ট ভাইডি
তুমি দিনলিপি আকালে হেলাফেলা টাইপ করে লিখলেও লিখেছো কিন্তু অনেক মূল্যবান সত্যি কথা।
প্রত্যেক কথায় একমত।
তোমাদের কি সুন্দর সকাল হয়, হিংসে লাগে। আমার সকাল হয় ভীষন দৌড়ের ওপর আর সারাদিন যায় দৌড়াতে দৌড়াতে। অনেক ক্লান্ত লাগে আজকাল
আপনারা দ্বায়িত্বশীল লোক তাই অনেক কাজ। আমার কোনো ডিউটি নাই তাই সব কিছুই ভালো যাওয়ার কথা তাও যায় না। থ্যাঙ্কস আপু। আপনাকে নিবেদন করা পোষ্টটা খারাপ লিখে ফেলি নাই তাহলে!
দিনলিপি ভাল লেগেছে শান্ত।
লেখাটায় অনেকগুলো বিষয় খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। কিপ ইট আপ!
থ্যাঙ্কস ভাইয়া। ভালো থাকবেন!
তোমার এই দিনলিপি পড়তে কি যে ভালো লাগে সেইটা বলে বুঝাইতে পারবোনা... আর ইমনের দোকানে বিল দিতে গেসো কেন মিয়া?
আপনার কমেন্ট পেলে শান্তি লাগে। আজকেও ক্লাস শেষে গেছিলাম আপনাকে পাইলাম না মেজবাহ ভাইকে পাইলাম তিনি একটা দুধ চা খাইলেন আমি নিজের টাকায় একটা রং চা খাইলাম একবন্ধু আসলো কিছু সময় বসে রিক্সা দিয়ে বাসায় আসলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া!
ব্লগে আসাই হয় শান্তর লেখা পড়বার জন্য
এই কমেন্টটা যখন বিকালে পড়ি অবাক হয়ে কিছু সময় মনিটরের দিকে চেয়ে ছিলাম। থ্যাঙ্কস ভাইয়া এতো বড় কম্প্লিমেন্টের আমি যোগ্য না!
সারারাত বাসে! দারুণ তো! কি মজার দিন কাটাও!
আমারও ব্যপক গ্যাস্ট্রিক হইছে আর আর এই রেরাগটাকে আমি হেইট করি।
ইমনের দোকানের চা অনেকদিন খাওয়া হয় না।
তুমি দিনলিপি লেখা শিখাবা আমাকে?
আমারো ব্যাপক গ্যাস্ট্রিক তাও কেয়ার করিনা পরে ভুগলে ভুগলাম সমস্যা কি?
দোয়া কইরেন আপু। ভালো থাকেন!
কি এলেবেলে অথচ স্বতঃস্ফূর্ত লেখা!!!!
পড়ে ভালো লাগল।
ধন্যবাদ আপু একটা এলেবেলে লেখাকে ভালো বলার জন্যে!
প্রথম প্যারাটা একটানে পড়লাম। এক নিঃশ্বাসেই পড়তাম, কিন্তু দমে কুলালো না। বাসে রাত কাটানো নিয়ে আমার একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা আছে। সেইটা লেখার কথা ভাবতেসি।
লিখে ফেলেন বস। পিকনিকে আসলে দারুন হতো!
কারুর সাথে বনে না, তারে দেখতে পারি, চরম বদ লোক - এই বলেই তারে মেরে ফেলবো! যত্রতত্র বাজে বলে বেড়াবো!!
টুকটুক করেই বেশকিছু কথা বলে ফেললা। কমেন্ট করা হয় না কিন্তু পড়ি সব, আমার জায়গা, ছাইড়া যাবো কই!
পড়েন জানি তাও জিগেষ করে প্যারা দেই।
আপনি কত অসাধারন লিখেন কিন্তু লেখেন না একেবারেই সেইদিকে একটু মন দিয়েন।
ভালো থাকেন আপু শুভকামনা!
মন্তব্য করুন