ইউজার লগইন

তেতো হয়ে গেছে সব হঠাৎ অসময়!

পোষ্ট লিখতে বসলাম আরেকটা। করার মতোন তেমন কিছু নাই আসলে। তাই লেখতে বসা। কারেন্ট থাকলে ফ্যানের বাতাসে এখন আমার আর কিছুই করতে ভালো লাগে না। দুপুরে থেকে সন্ধ্যা অবধি টানা বই পড়তে পড়তে ভালো লাগছে না। এখন আবার বই নিয়ে বসতে ইচ্ছা নাই। আমার পিসির টেবিল ছাড়া আর টেবিল নাই রুমে। শুয়ে শুয়ে বই পড়লে আমার কেনো জানি বইয়ের প্রতি সিরিয়াসনেস কমে যায়। তাও উপায় নাই গোলাম হোসেন। শুয়ে বসেই পড়ছি। শুয়ে বসে পড়ার আরেক সমস্যা হলো বারবার মোবাইলে ফেসবুক দেখা। ফেসবুক ব্যাপারটা অসহ্য। যদি অনেকের মতো ফেসবুক ছাড়া কাটাতে পারতাম তাহলে দারুন হতো। কিন্তু ফেসবুকে এক মোহে থাকি। আর মানুষের আপডেট জানার অদম্য ইচ্ছা পোষ মানে না। ফেসবুক থেকে সুমনাকে ডিলেট মারছে পুলক। কারন সুমনা ওরে চড়কীর মতো ঘুরাচ্ছে। ডিলেট মারার পর পুলকের মনে হলো আর তো আপডেট জানা যাবে না। এখন বলতেছে শান্ত ভাই ডিলেট ফেরানোর কোনো ওয়ে আছে? আমি বললাম একটা ওয়ে আছে। নতুন একটা চকলেট আসছে নাম এটম। তার ট্যাগ লাইন হলো এটম খাও চাপা পিটাও। আপনি এটম চাবাতে চাবাতে বলবেন সুমনা আমার একাউন্টে কি জানি এক সমস্যা হইছে? অনেকেই ডিলেট কিভাবে জানি? প্লীজ তুমি মনে কিছু করো না। এড দিয়ে দাও আবার। পুলক বললো ধুর অন্য বুদ্ধি বলেন। আমি বললাম আরেক কাজ করতে পারেন। আপনি যেহেতু তার জাকির হোসেইন রোডের বাসায় যান। ল্যাপটপে দেখবেন সাইন আউট করে নাই। সেখান থেকে এড পাঠায়ে দিবেন আপনারটায়। তারপর এড এক্সেপ্ট করে হিস্ট্রি রিমুভ করবেন। বিলবোর্ড মডেল ওতো তথ্যপ্রযুক্তি মুলক পারদর্শিতা থাকবেনা আশা করি। পুলক বললো দেখি। দেখি বলে শুনা শুরু করলো আশিকী টুয়ের গান। আশিকী টুয়ের দুইটা হিন্দী গান পুলক এতো শুনে। যে কানের সামনে বাজতে বাজতে আমারই মুখস্থ। এর আগে শুনছে নটংকী সালার গান। ঐ গান এতো বিরক্তিকর ছিলো তা বলার মতো না। পুলক এই গান শুনা শুরু করলেই আমি অন্য বেঞ্চ খুজতাম দূরে বসার জন্যে। তাও মুক্তি নাই। তবে এখন অবস্থার উন্নতি হইছে। জেমসের গান শুনে পদ্ম পাতার জল, মাঝে মাঝে, ফুল নেবে না, এক নদী যমুনা দেবদাস ইত্যাদি। গান গুলা শুনতে খারাপ না। কিন্তু সেন্ট্রিমেন্টাল হয়ে কেউ শুনলে তার জন্য করুনাই লাগে।

গত সপ্তাহেও আমার দুপুরে প্রচন্ড ঘুম আসতো। এখন আর আসে না। কতো চেষ্টা করি ঘুম আর আসে না। সামিয়া থেকে শুরু করে কামরুল ছয় বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বললাম তাও ঘুম আসে না। অতীতে আমার মোবাইলে শুয়ে শুয়ে কথা বললেই ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতো। এখন তাও আসে না। পাব্লিক লাইব্রেরীতে মাহমুদুল হক শেষ করছিলাম। এবারের বই মেলায় উনার বইয়ের পুরা সেট আবার কিনছি। বেশীর ভাগই আগে পড়া। বই শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ঘুম আর আসে না। যেই ঘুম আসছিলো সেই সময়ই কেয়ারটেকার দরজায় নক। কয় সেদিন কাচ লাগায়া গেলাম। পুডিং দেই নাই। আসলাম পুডিং দিতে। মেজাজটা যে কী খারাপ হলো। আগের ফরমে থাকলে বলতাম এখন যান। শুক্রবার সকালে আইসেন। কিন্তু ইকোনোমিক্যাল কন্ডিশন খারাপ তাই আমারও ওতো দেমাগ নাই। আসলো ঘর দোর ময়লা করে। বিছানায় চেয়ার বসিয়ে জানালায় পুডিং লাগালো। আমাদের জানলায় পর্দা নাই। বাশের সেই রেক রেক দড়ি দিয়ে বাধা শক্ত আচ্ছাদন গুলো লাগানো। আগের দিনের অফিসে ঝুলতো। এগুলো একবার পুরোটা উঠালে ধুলা আর ধুলা। বেচারা কেয়ারটেকার পুডিং লাগাতে গিয়ে চোখে খাইলো ধুলা। ধুলা খায়া আর চোখে দেখে না। সেই আন্ধা অবস্থাতেই কি পুডিং মুডিং লাগালো। আর আমার ঘুম গেলো উড়ে। কি করবো? ভাবলাম চায়ের দোকান যাই। সন্ধ্যা বেলায় বাসায় বসে কাজ কি? চায়ের দোকানে গেলাম। দেখি পুলক বসে। পুলকের আবার এখনকার বাতিক হলো কফি দিয়ে চা খাওয়ার। এক কাপ চায়ে দুইটা কফি কাচা পাতি দিয়ে ছেকে তারপর দুধ চিনির বন্যায় ভাসিয়ে চা বানানো। আমি এই কফি কাচাপাতির চায়ের দিওয়ানা না। তাও দুর্মুল্যের বাজার। পকেটে টাকা নাই। খাওয়ায় যদি খাই। খেলাম সেই চা। টেস্ট তো পাইলাম না উলটা এতো মিস্টি যে মাথা ব্যাথা শুরু হলো। দোকানদার নান্নুর এখন মুখ থাকে কালা। তার ধবেধবে ফর্সা মুখটা দুশ্চিন্তায় কালা হয়ে গেছে। একে তো অনেক বেশী দোকান ভাড়া, রাস্তা কাটার কারনে কাস্টমার খালি আমরাই। তারভেতরে বাকী বেচে দিশেহারা। আমি বাকী খাই না পকেটে টাকা নাই। হিসাব নিকেশ করে খেতে হয়। আগের মতো মন প্রান উজার করে খাওয়াতে পারি না। এমন না যে নান্নু বাকী দেবে না। বাকী ঠিকই দেবে কিন্তু এমনিতেই বেচারা আছে গেঞ্জামে তার ভেতরে আমি বাকী খাইলে বেচারার আরো বাশ। আগে পুলাপানরে দেদারসে সিগারেট চা খাওয়াতাম। এখন আর তা পারি না। বাসা থেকে বের হবার সময় ৩০ টাকা নিয়ে বের হয়। তিন চা ১৮। আর ১১ টাকা মোবাইলে। সহজ সমীকরন। আর চায়ের দোকানে এখন বসে থাকতে অসহ্য লাগে। ফাতরা টাইপের কিছু লোক এখন আসে দোকানে। আইসাই অফিসে কি করলো? অফিস করলে কেমন টায়ার্ড লাগে? অফিসে তাদের কোন কলিগ বেশী হট তার গল্প জুড়ে দেয়। অনেক সিনিয়র নয়তো এমন গালি গালাজ শুরু করতাম যে চায়ের দোকানেই আসতো না। তারপর ঘুরে ফিরে এক সাইফরেই শুধু পচানো। বেচারা অসাধারন একটা ছেলে বলে সব হজম করে যায়। আমাকে নিয়ে এতো বেশী প্রতিদিন পচালে আমি পুলাপানের গোষ্টী উদ্ধারে নামতাম। তাই চায়ের দোকান ভালো লাগে না আর। সেই প্রানবন্ত আড্ডার জায়গা মিস। আমি মুড অফ করে কানে হেডফোন দিয়ে মেটালিকা শুনি। পুলাপান বারবার জিগায় শান্ত ভাই এদিকে বসেন। আমি বলি ইচ্ছা নাই। আর আমি সারাদিন বাসায় চেয়ারে বসে থাকি। তাই প্লাস্টিকের চেয়ার সেরকম কোনো মহার্ঘ কিছু না যে তাতেই বসতে হবে। তার ভেতরে আদনান পাইছে সিটি ব্যাংকে জব। ও সন্ধ্যা বেলায় এসে বাসায় ঢূকে। শাহজাদপুরে অফিস। ৫০ কিলোমিটার বাইক চালায় প্রতিদিন। আদনান নাই আমারো সন্ধ্যায় সেই দারুন আড্ডা নাই। আর অফিস টফিস করে আদনানের খালি অফিসের গল্প। অফিসের গল্প সেইটা যারই হোক শুনতে ভালো লাগে না। কারন কামলা গিরি সারাদিন করে সেই কামলা গিরির আত্মপ্রসাদ চর্বন করার কি মানে? খোদার কসম যদি কোনোদিন চাকরী করি অফিসের গল্প অফিসেই কবর দিয়ে আসবো। এরকম আরেক পিস হলো আমার বন্ধু এহতেশাম। তার গল্প শুনতে আমার ভালোই লাগে। কিন্তু যখনি অফিসের গল্প শুরু করে মেজাজ খারাপ হয়। তাও তাল মিলায়। কি আর করা। রিলিফ হোক গল্প করে।

কাউকে না বলেই সাড়ে আটটার দিকে ভাবলাম বাসায় যাই। কাউরে বলতে গেলে কারন দর্শাইতে হবে। ওতো টাইম নাই হাতে। হাটতেছি সেই চিরচেনা ১৭ মিনিটের পথ। এমন সময় খলিল সাহেবের সাথে দেখা। খলিল সাহেব রিক্সা চালায়। উনি এককালে খুব ভালো একটা জব করতো। ইন্টার পাশ। এখনো ভালো ইংরেজী বলে। ফাস্ট ডিভিশন ফুটবল খেলছে ৯২-৯৫ পর্যন্ত। তবে সমস্যা হলো ফেনসিডিল খোর। ফেন্সিডিল খেতে খেতে সব গেছে উনার। চাকরী, শংকরের জমি, হাইপ্রোফাইল বন্ধু বান্ধব সব। এখন উনি সব শেষ করে দিয়ে ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে রিক্সা চালায়। উনারে এক ডায়লগ আমার চোখে পানি এনে দিছিলো। যে মামা ধানমন্ডির দিকে খুব সাবধানে রিক্সা চালাই। কোন সময় যে কোন বন্ধু দেখে ফেলায় বলা মুশকিল, একবার আমার এক বন্ধু গাড়ীতে বসে আমাকে রিক্সা চালাতে দেখে হা করে তাকায় আছে। রাস্তায় জ্যাম বাধিয়ে বসে আছে আমাকে দেখতে দেখতে। গাড়ী থেকে নেমে বললো খলিল ভাই আপনি রিক্সা চালান? এও দেখতে হলো আমার? সেই দিন যে অপমানটা লাগছে তারপর থেকে ক্যাপ পড়ি। যেনো সহজে কেউ না চিনে। খলিল সাহেবের সাথে কথা বললেই আমি বুঝি একটা মানুষ কতোটা নিরাশার বিষন্নতায় দিন পার করতে পারে। উনার আবার আইবিএ থেকে পাশ করা বন্ধু আছে যারা উনারে দেখলেই যাকাত দেয়। উনি টাকা নেয় কিন্তু খুব কষ্ট লাগে উনার। কেনো জানি আমার জয়ী মানুষদের ভালো লাগে না। আমি ভালোবাসি পরাজিত মানুষদের। পরাজিত মানুষদের যে বেদনা তা আমাকে খুব আকর্ষন করে। সবাই তো কোনো না কোনো ভাবে জয়ী হয় জীবনে। কিন্তু খলিল সাহেবের মতো এতো এতো বিষাদের পরাজয়ের স্বাদ কে পায়?

অযথা পোস্টটা লিখলাম। এতো অনিচ্ছায় লিখছি যে খুব দোয়া করছিলাম যেনো কারেন্ট যায় তাতে আমার আগ্রহ চলে যাবে লেখার। কিন্তু কারেন্টটাও গেলো না। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। তাও এই না ভালো লাগার দুনিয়া নিয়েই পড়ে থাকি এই বড্ড অসময়ে!

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


না শুইলে আমার বই পড়ার মুডই আসে না! Tongue

ছেলেমানুষ দিনের বেলা ঘুম না আসাই ভালো। Laughing out loud

অসময়ের দরকার আছে,
এইটা মানুষ চিনায় দিয়া যায়।
তাছাড়া
অসময় না থাকলে
সুসময়েরও আর আলাদা কোন
কদর থাকতো না। Stare

আরাফাত শান্ত's picture


কেনও ছেলেরা দিনে ঘুমালে প্রবলেম কি? আমি তো আজকেই ভালো একটা ঘুম দিলাম!

ভালো থাকো। নতুন পোস্ট কই?

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


আর পোস্ট!

নিউজ দেখি আর মন মেজাজ খারাপ থেকে আরো খারাপ হয়।
পকেটে থাকে না পাত্তি,
কিছুই করতে পারতাছি না।
ভাল্লাগতাছে না কিছুই.. Sad

নাঈম's picture


ব্লগে আছি সাড়ে পাঁচ বছর পার হয়ে গেল। এই দীর্ঘ ব্লগিং জীবনে অনেক রথী-মহারথীদের লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে, পড়েছি অনেক দিনলিপি। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি তোমার মত দিনলিপি আর কেউ লিখতে পারেনা, লিখলেও আমার চোখে পড়েনাই। পাঠকদের এমন লেখার মাঝে তন্ময় করে রাখার গুণটা সবার থাকেনা, খুব rare একটা quality এইটা। তোমার কাছে একটা অনুরোধ থাকবে শান্তু, এই লেখালেখিটা কখনো ছাইড়ো না, লেখালেখিটা যদি কোনদিন ছাইড়া দাও, তাইলে তুমি যতটা না কষ্ট পাবা, তার চেয়ে হাজার গুণে বেশী কষ্ট পাবে সেইসব মানুষগুলা যারা তন্ময় হয়ে তোমার লেখা পড়ে আর হৃদয় দিয়ে অনুভব করে।

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যান্কস মামা। দারুন এবং অসাধারন একটা কমেন্টের জন্য। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এইসব দিনলিপি লেখাটা বেহুদা। কিন্তু এতো দারুন কমেন্ট পেলে মনে হয় আমি আসলেই কিছু লিখতে পারছিলাম!

পজিটিভ's picture


তোমার এই লেখাটা আমার অনেক পছন্দ হইসে..খুব মন দিয়া পড়সি Smile

আরাফাত শান্ত's picture


আমি আপনার সব লেখাই মন দিয়ে পড়ি সোহাগ ভাই! Party Party

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


তোমার দিনলিপি অনেকটা আয়নার মত! অনেক কিছুই দেখা যায়।

আজ মনটা খুব খারাপ। আমরা আর কত ধ্বংশ দেখবো, কত হাহাকার দেখবো? কিছু মানুষের সম্পদের পাহাড় গড়তে আর কত ঝরবে তাজা প্রাণ? এই প্রাণগুলো কি এতই তুচ্ছ?

আরাফাত শান্ত's picture


খুবই মন খারাপ ভাইয়া এইটা নিয়ে। কিছু ভালো লাগে না!

১০

টুটুল's picture


অস্থির সময় Sad

১১

আরাফাত শান্ত's picture


খুবই অস্থির আর ভয়াবহ খারাপ সময়!

১২

তানবীরা's picture


ফেবু কি হইছে!!!!

খোদার কসম যদি কোনোদিন চাকরী করি অফিসের গল্প অফিসেই কবর দিয়ে আসবো।

গল্প হয়তো কবর দিয়ে আসতে পারবা কিনতু টেনশান পারবা না Sad(

১৩

আরাফাত শান্ত's picture


ডিএক্টিভেট মারছি আপু!
শরীর অত্যন্ত খারাপ। এসিডিটি আর ঘুমের কারনে ঘাড় ব্যাথায় অবস্থা কাহিল! তাই এই ভারাক্রান্ত সময়ে ফেসবুক ব্যাবহার করাও একটা গেঞ্জাম। পত্রিকাও পড়া ছেড়ে দিছি!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!