ক্যালেন্ডারে বাঁধা দিনরাত্রীর অযথা হিসাব নিকাশ!
প্রায় গোটা বিশেক দিন পর পিসির সামনে লিখতে বসলাম। পিসিটা নষ্ট ছিল আজ ঠিক করে আনলাম, ভালোই টাকা চলে গেল- তবে খুব আনন্দ পাচ্ছি, কেন তা জানি না। কারন হতে পারে, ব্লগ লিখতে ভালো লাগে। লেখা শেষ করে অনলাইনে প্রকাশ করার একটা আনন্দ আছে। সেই আনন্দ আগেও পেতাম এখনও পাই। বন্ধুরা পড়ে, কেউ কেউ অভিমত জানায়। এতোটুকুই তো। পত্রিকায় ঢাউস ঢাউস সম্পাদকীয় লিখেও তো মানুষ সেই লেখা পড়ে না। কোনো মহান সাহিত্য কর্ম তো আর ব্লগ লিখে সম্ভব না, আর গল্প কবিতা লেখার মতো প্রতিভাও আমার নাই। তবে গত দু চার মাস ধরে আমার সচলায়তনের ফরমেটে অনুগল্প লিখতে ইচ্ছে করে খুব। কয়েকটা লিখেছিও, কিন্তু বই পড়ার নিদারুন অভ্যাস থাকার দরুন, কোনটা কেমন লেখা তা নিয়ে ধারনা করতে পারি। নিতান্তই অখাদ্য কয়েকটি গল্প হয়েছে, তাও আমি অবশ্য আশাবাদী যে খাতা কলম নিয়ে লিখতে তো বসছি। একদিন না একদিন, একটা না একটা পাঠযোগ্য লেখা লিখেই ছাড়বো।
নতুন বছর আসলো, সবার অনেক আনন্দ ফুর্তি দেখলাম, আমার বাসা পাঁচ তলায় ছাদের সাথে লাগানো, চার তালার ছেলেরা ছাদে ঊঠে পার্টি করবে। ব্যাপক শব্দ করে হিন্দি গান ছাড়বে, ৮ জন মিলে ৪৫০ গ্রাম কেরু খায়া আমাদের রাতটার পনেরোটা বাজাবে। তা বাজাক। কিন্তু সামান্য কেরু খেয়েই তাঁদের অনেকের মাথা আউট হবে, চিল্লাচিল্লি করবে এইটার চিন্তার ছিল। তবে আল্লাহর মেহেরবানীতে বিকট গানের শব্দের ঝামেলা ছাড়া আর তেমন কোনো ঝামেলা হয় নাই। রাত দুটার সময়তেই তাঁদের খাবার পানীয় খতম, আপসোস করতে করতে চলে গেল। আমি কোনো কালেই নিউ ইয়ার পালনের লোক না। যখন ছিলাম তখন বাসা থেকেই বের হতে দিতো না। আর এখন আটকানোর কেউ নেই তাও আমি বের হই না। দিন যেতে যেতে বুঝে গেছি, সব দিনই একই দিন, প্রতিদিনই তো জীবন থেকে হারাচ্ছে। কিছু কিছু ইউনির বন্ধু আছে আমার যারা বিশেষ দিনে উপলক্ষে ফোন দিয়ে খোজখবর নেয়। তেমন এক বন্ধু ফোন দিয়ে জিগেষ করলো- কিরে লাঞ্চ করছোস? আমি তো অবাক তিন চার মাস পরে ফোন দিয়ে আমার লাঞ্চের খবর নেয় কেন নেয়। আমি বললাম- না এখনো করি নি। জিগেষ করলো, থার্টিফাস্টে প্ল্যান কি? আমি বললাম শাহ আলমের দোকান থেকে কেনা মুড়ি আছে রাতে বেশি খিদে পেলে রুচি ঝাল চানাচুরের সাথে মিশিয়ে খাবো। তাঁর হতাশ উত্তর, তুই এখনও আগের মতোই রয়ে গেলি। আমিও বহুদিন পর চান্স পেয়ে বলে ফেললাম ঠাস করে, আমারও তো সেই একই প্রশ্ন, তোরা আগের মত নাই কেন? তবে আমার বন্ধুরা কেউ ছিল না থার্টিফাষ্টে, কেউ বেড়াতে গিয়েছে দেশে বিদেশে, কেউ ফ্যামিলী ট্রিপে ঢাকা ছেড়েছে, কেউ কেউ গিয়েছে বড়লোকি দেখাতে র্যাডিসনে। আমি এক মফিজ, আজও বুঝলাম না, একা একা বা গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে টিকেট কেটে পার্টি করার মানে কি? পার্টি করার এত উত্তেজনা থাকলে নিজেরাই আয়োজন করে বন্ধুদেরকে ডাকলেই তো হয়। তবে অনেক সাধারণ ফ্যামিলির লোকজনও এখন নিউইয়ার এক রকম ভাবে পালন করে, সন্ধ্যায় ঘুরতে বের হয়, ভালো রেষ্টুরেন্টে খায় কিংবা বাসায় ভালো রান্না হয়, ব্যাচেলর ছেলেরা পাসপোর্ট কিংবা টিচার্সের বোতল আগে ভাগেই সংগ্রহ করে, বুয়াকে দিয়ে গরুর মাংস রান্না করায়। আমি তেমন কিছুই কখনো করি না, আগে শান্ত ভাইয়ের বাসায় নিজেরা নিজেরা পিকনিক করতাম, এখন সব বন্ধ। এবারের থার্টিফার্ষ্টের রাত তাই আমাকে সাধারণ দিনের মতোই বুয়ার রান্না করা মাছের তরকারী ও ভাত খেয়ে কাটাতে হলো, টিব্যাগ ছিল না তাই রাত্রীকালিন চা খেতে পারি নাই ইহাই একমাত্র অপূর্ণতা।
সময় কাটে এখন বাসায় থেকে, আর সকালে হাটতে বের হই নিয়ম করে। ঘুমাই দেরীতে তাই উঠিও দেরীতে। আমি যখন হাটতে বের হই, তখন সবাই প্রায় বাড়ীর দিকে ফিরছে। রোদ উঠে যায়, আমি সব কিছু অবহেলা করে হাঁটতে থাকি। বসি না মোটেও। বাসা থেকে বের হয়ে পুরান থানা দিয়ে এমপি হোষ্টেল পর্যন্ত যেয়ে আবার ফিরি আসাদ গেইট টাউন হল হয়ে বাসায়। মজাই লাগে। কারন কাউকেই আমি পাঞ্জাবীর সাথে কেডস পড়ে হাঁটতে দেখি না। এমনকি হুজুরদেরকেও না। মুখে ৪৬ দিনের দাড়ি নিয়ে হাঁটা বিপদজনকও এখন, খাকি রংয়ের এসপিবিএন এর লোকেরাও কেমন করে চায়। আমি চেয়ে থাকি তাঁদের অটোমেটিক রাইফেলটার দিকে। সকালের আলোয় চকমক করে। ভারী নিশ্বাস নিতে নিতে আমার দিকে তাকায় তখন ইচ্ছে করে লোকটার সাথে গল্প করি, বাড়ীতে কে কে আছে, কবে জয়েন করলো, বিয়ে করেছে কিনা, করলে ভাবী কি করে তা নিয়ে আলাপ জুড়ে দিই। আমার বন্ধু আবীর থাকলে পারতো। আমি পারি না, শুধু দেখেই যাই। সকাল সকাল পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিয়েছি। এত দুঃসংবাদ আর ভালো লাগে না, দুপুর বেলা ভাত খেয়ে এরপর পেপার নিয়ে বসি। খেলা, বিনোদন, আর সম্পাদকীয়ই পড়ি মন দিয়ে। বিশাল বাংলা পাতাটা পড়া কষ্টের। কারন সেখানে জেলা ভিত্তিক সব খারাপ ঘটনার খবর। তবে সেখানেও কিছু খবর আমাকে মুগ্ধ করে। যেমন আজ পড়লাম, ১২৫ বছরের পুরোনো এক ছাপাখানা যন্ত্র চালায় এক পরিবার। স্থানীয় কাজ করেই ঠিক কোনোরকমে চলে। এক কালে লোকাল সব চেয়ে শক্তিশালী পত্রিকা তাঁদের প্রেস থেকে ছাপাতো। এরকম জীবনযুদ্ধের গল্প পড়তে সুখ। তেমন এক গল্প শুনলাম চিটাগাং থেকে কামরুলের মুখে। যে এক মহিলা গার্মেন্টসে চাকরী করে নিজের অন্ধ ছেলেকে জেএসসি পাশ করালো, সেই ছেলে এ+ পেয়েছে। আজব ব্যাপার হলো সেই মহিলার কোনো মিষ্টি কিনতে হয় নাই। সবাই মিলে টাকা দিয়ে সবাই সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে। যারা এমন চাকরী করে ঢাকায় তাঁদের কথা শুনেছিলাম বন্ধু জেমসের মুখে। মহিলা শ্রমিকেরা ভাত খায় কিভাবে, সিড়িতে বসে, কমন মেন্যু- ঝাল ভর্তা আর ডাল, একজন আরেকজনের রান্না শেয়ার করে, খাবার শেষ হয়ে ১০-১৫ মিনিটেই, বাকী ৪০-৫০ মিনিট যার সাথে যার জমে তাঁর সাথে আলাপ করে। আর ফ্লোরে ঢুকলেই শুরু হয় গালিগালাজ। সুপারভাইজার যে গালি গুলো দেয় সারাদিন কোনো ছেলের পক্ষে তা হজম করা খুব কষ্টের। মেয়ে বলেই গায়ে মাখায় না, তাই গালি হজম করতে পারে। অফিসে আসার সময় সকাল সকালে মাদ্রাসা মসজিদ কত লোকেরা চাঁদা তুলে, বেশীর ভাগই দেয় এইসব অগ্নিকন্যারা আর ওয়াজের সময় যাবতীয় গালি এদেরকেই দিয়েই শুরু হয়।
আপনের হিমুভাব বাড়তেছে মনে হইলো!
অণুগল্প পোস্টানো শুরু করেন, সপ্তায় অন্তত একটা। প্লীজ..
হ বাড়তেছে কেন জানি?
তোমার কি খবর? ফেসবুকে দেখি না কেন?
অসময়ের পরীক্ষায় মন মেজাজ সিরাম খারাপ থাকে। এফবি ভালো লাগে না আর।
ফেসবুক ছাড়া দিন কাটানো আসলেই দারুন ব্যাপার। কিপ ইট আপ। মন দিয়ে পড়ো। মনে ফুর্তি রাখো। বেশি হলে আর ৪০-৪৫ টা বছরই না হয় বাঁচবা, ওতো ভেবে ভেবে আর কি হবে
সিটাই! আমি আবার অত চাইনা। আর ২৫/৩০ ই অনেক। নিজের পায়ে চলতে শিখে বিছনায় পড়ার আগেই ফুরুত্ হলেই খুশি।
বন্ধুরা সব এমনই। কোন বিশেষ দিনে হুট করে ফোন দিবে আর সারাবছর কোন খোঁজ খবর থাকবে না
"অফিসে আসার সময় সকাল মাদ্রাসা মসজিদ কত লোকেরা চাঁদা তুলে, বেশীর ভাগই দেয় এইসব অগ্নিকন্যারা আর ওয়াজের সময় যাবতীয় গালি এদেরকেই দিয়েই শুরু হয়।"
অসাধারণ থ্রোয়িং!
অনেক থ্যাঙ্কস!
একদিন ভালো লেখা লিখবেন সেটাই বিশাল এক অনুপ্রেরণা। কোনো এক চলচ্চিত্র নির্মাতা বলতেন- আমি অনেক ছবি বানাতে পেরেছি, কারণ প্রতিটা ছবি বানিয়ে আমার মনে হয়েছে এটা দিয়ে সন্তুস্ত হওয়া যাচ্ছে না।
যাই হোক, "সব দিনই একই দিন, প্রতিদিনই জীবন থেকে হারাচ্ছে।" আশা করি দিনগুলো হারিয়ে যেতে দেবেন না।
সেটাই, সেই একদিনের জন্যই অপেক্ষা!
কলেজ জীবনের কথা মনে পড়ে গেলো। অবশ্য বন্ধু বান্ধবরা কেরু আনতো না তখন, বিদেশী মদ জোগাড় হয়ে যেতো। এমনকি সেরাতে মেয়েদের আনাগোনাও ছিলো। উন্মাতাল সে রাতগুলো পাগলামীতে পরিপূর্ন ছিলো
এটা ঠিক বুঝলাম না
আপনার আমার মত বন্ধু দরকার যে প্রায় প্রতিদিন ফোন করে বলবে কিরে তোর খবর কি
গার্মেন্টসে প্রতিটা বিভাগে তাঁর সাথে প্রতি ফ্লোরে একজন করে প্রোডাকশান সুপারভাইজার থাকে, সারাদিন ব্যাপক পরিশ্রম করেও যার অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুনতে শুনতে মেয়েরা এমন অভ্যস্ত হয়ে যায়, গালি শেষমেশ গায়ে মাখায় না।
শুধু জন্মদিনের দিনটা অন্যরকম লাগে আর মাঝে মাঝে পহেলা বৈশাখ
অণুগল্প পোস্টানো শুরু করো, সপ্তায় অন্তত একটা। প্লীজ..
পতিতার ঘরের মাটি ছাড়া পূজার ঠাকুর হয় না .-- এই জগতের নিয়ম ---- তুলনাটা সামঞ্জস্য হয় নাই কিন্তু তারপরও কিছুটা মানেতো হয়
আপনাকে ব্লগে আবার দেখেই ভালো লাগছে। হ্যাপি ব্লগিং!
দেখতে দেখতে আজ সব সয়ে গেছে। একদিন হয়ত মনের উপরও এই ট্যাগ বসে যাবে যে এগুলোই স্বাভাবিক, এগুলোই ঠিক। সময়ের স্রোত বলে কথা! কী পারে না সে?
হুম। কেমন আছেন আপনি? ব্লগে আসেন না কেন?
মন্তব্য করুন