ইউজার লগইন

কোনও এক কণিকার জন্য!

শুক্রবার আমার মন ভালো থাকে। ঘুম থেকে উঠি, গান বাজনা শুনি, নাস্তা করি হেলতে দুলতে। স্মুথ একটা দিন। কোনোকিছুর জন্যই তাড়া নাই। সকালটা শুরু হয় দরজার কোনায় পড়ে থাকা পত্রিকা দেখি, একটা পড়ে হয় না, অনলাইনে পত্রিকায় চোখ বুলাই। ফেসবুকের ইস্যু গুলোর সাথে তাল মেলাই। কিছু নিয়ে ইচ্ছে করলে স্ট্যাটাস দেই। বই পড়ি শুয়ে শুয়ে। একটার দিকে বের হই। নামাজে যাই। নামাজ শেষে জম্পেশ আড্ডা দেই অনেকক্ষণ। বাসায় আসি ভাত খাই। আবার সন্ধ্যায় বের হই। কোনো ভালোই রেস্তোরায় খাই, বারেক সাহেবের দোকানে ফিরি, আড্ডা মারি, বাসায় আসি। আজও সেইম কাজ গুলোই করলাম। কিন্তু সব আলগা ভালো থাকা মাটি করে দিলো একটা খবর। মধ্যম আয়ের দেশে, উন্নয়নের মহাসড়কে বুলেট গতিতে মার্সেডিজ চালানো বাংলাদেশের এক পত্রিকার অনলাইনে পাওয়া এক অকিঞ্চিৎকর খবর, শেরপুরে কণিকা নামের এক কিশোরীর আত্মহনন। কিশোরী, বৃদ্ধা, তরুনী,কন্যাশিশু, কারো জন্যেই এইদেশ নিরাপদ না এটা পুরোনো খবর। ইভটিজিং, ধর্ষণ, শারিরীক মানসিক নির্যাতন, ৬৪ জেলায় মরার কত কারন। কিন্তু এই কারনটা ভিন্ন, তার নিরাপত্তা মোটেও বিঘ্নিত হয় নাই, কণিকা নামের কিশোরী আত্মহত্যা করেছে ভাতের কষ্ট সইতে না পেরে। ঈশ্বরের দুনিয়ায় এত ভোগ সম্ভোগের ভেতরে সে খালি চেয়েছিল প্রাত্যহিক আহারের জন্য ভাত। তার আত্মীয় জানাচ্ছে সংবাদপত্রে, মা মরা মেয়েটাকে ভালো খাবার দিলে, সে খুব মন দিয়ে খেত। জামালপুরে শেরপুরে অনেকেরই নামই কনিকা রাখা হয়। তা কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে মিল রেখে কিনা জানি না। তবে মেয়েটার আত্মহত্যার খবর শুনে আমার ভাত খাওয়া হলো না আজ। বুয়া ভালোই রান্না করেছে আজ, মুরগীর মাংস, ডাল, করোলা ভাজি, সব পড়ে আছে রান্নাঘরেই।

বুয়া না আসার দরুন মাঝেমাঝে আমার না খেয়ে থাকতে হয়। তখন আমি বুঝি ভাতের কষ্ট। তবে ব্যাপারটা সৌখিন। চাইলেই আমি হোটেল থেকে খেয়ে আসতে পারি কিংবা রান্নাঘরে গিয়ে রেঁধে খেতে পারি। কিন্তু যারা ভাতের অভাবে থাকে তাদের চেয়ে দুনিয়ায় আর কি কষ্ট থাকতে পারে। অনেকেই রপ্ত করে ফেলে ব্যাপারটা। কণিকা নামের কিশোরীটা রপ্ত করতে পারে নি, সে শেষ করে দিয়েছে জীবনটা। বুদ্ধিমান লোকেরা বলবেন, ভাতের জন্য মরার দরকার কি। ব্যবস্থা তো হবেই। জীবন অনেক সুন্দর। এইসব ক্লিশে জাহান্নাম মার্কা কথা। হয়তো কণিকার চাইতেও কষ্টে অনেকে বেচে থাকে। কিন্তু কণিকাকে আমি বলবো সাহসী। সে অস্বীকার করেছে এই বেঁচে থাকাকে। একটা লোকের গল্প জানি। জন্ম তার উত্তর ভারতে। শৈশবে কিডন্যাপ হয়। বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রি হতে থাকে, বিকৃত রুচির মানুষদের কাছে শিশু হিসাবে তার সুনাম ছড়ায়। জীবনের অর্ধেকটা সময় তার চলে যায় যৌন নিগ্রহে। বাধ্যতামূলক তাকে জেন্ডার অপারেশন করায়। অনেক চেষ্টার পর সে পতিতালয় ছাড়তে পারে। পড়াশুনা শুরু করে এক প্রতিষ্টানের টাকায়। এখন সে একটা এনজিওতে চাকরী করে। তার মত মানসিক ভাবে শক্ত কজন হয়, অমানুষিক নির্যাতনে অর্ধেক জীবন কাটানোর পরেও সে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছে, দোযখ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে। কজন আর হয় এমন? কনিকার মত সাহসীরা মারা যায়। অসংখ্য কনিকারা মরে মরে বেঁচে থাকে এই ভুখন্ডে।

রাজশাহী ভার্সিটির চারুকলা অনুষদে প্রশ্ন নিয়ে কত মাতামাতি, কত বিবাদ, অভিযোগ। এইসব দেখলে আমার হাসি পায়। মদীনা সনদে চলা বাংলাদেশে আপনি এর চেয়ে ভালো কি আশা করবেন? পত্রিকায় আমি কিছু খবর দেখি যা পড়লেই হাসি পায়, ভেতরে পড়া হয়না। যেমন ধরুন পরিকল্পনা মন্ত্রী কিছুদিন আগে বলে গেলেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠায় নাই, ধর্ম বর্ণ বিভেদ ভুলে সবাই ভালো আছে। গতকাল আবার বললেন- ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীর সমতাই সরকারের অগ্রাধিকার। আমার ধারনা মন্ত্রীরাও এসব বলে মনে মনে হেসে নেন। শুধু কথা দিয়েই যদি পেট ভরতো তাহলে তো হতোই। পেট ভরতে লাগে বাজার। বাজারে জিনিস পত্রের দাম লাগামহীন। তেমনই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেরও গল্প অস্তিত্বহীন। রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িক চাষাবাদে বিপর্যস্ত এক দেশ। রাষ্ট্রের বড় বড় কর্তাদের খারাপ লাগে ধর্ম নিয়ে কেউ কিছু বললে, কিন্তু ক্ষুধার্ত কিশোরীর মৃত্যু, ধর্ষিতার চিৎকার, এসিডে ঝলসে যাওয়া গৃহবধুর মুখ, দুধের শিশুর ধর্ষণে মৃত্যু এইসব রাষ্ট্রের লোকদের সামান্য ব্যথিত করে কিনা সন্দেহ। ইতিহাসে আছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রানা প্রতাপ ঘুরছেন বনে-প্রান্তরে। শত দুঃখ-দুর্দশা সত্ত্বেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি আকবর বাদশাহর কাছে। কিন্তু যেদিন একটা বুনো বেড়াল তার শিশুকন্যার হাত থেকে ঘাসের রুটি ছিনিয়ে নিয়ে গেল সে দিনই তিনি ধরা দিলেন আকবরের সৈন্যদের হাতে। এই রাষ্ট্র কখনোই বুঝবে না নিপীড়িত ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারি।

আমরাও আছি এইসব ভুলে। দুঃখের কথা মনে রাখতে চাইনা। তার চেয়ে সাউথ আফ্রিকা সফর নিয়ে কথা বলা যায়। বাংলাদেশের মর্মান্তিক পারফর্মেন্স নিয়ে আলাপ করা যায়। ঢাকা এট্যাক, ডুব বিবিধ বিলো-এভারেজ ছবিকে আসমানে উঠানো সংক্রান্ত আলাপ করা যায়। এক মুরুব্বীকে চিনতাম, তিনি বলতেন সব সময়- দেশটা শেষ হয়ে গেল। দেশ শেষ হয়ে যায় নি, দেশের মানুষ গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও শেষ বলে কিছু নাই তবুও এইসব শেষেরই আলামত। আমির খানের ছবির নাম দঙ্গল, আর আমরা দেশটাকে বানাচ্ছি জঙ্গল। জংলী দেশে বর্বরতার সীমানা নাই, বিচার নাই। যুদ্ধবিহীন দেশ গুলোর ভেতরে সব চেয়ে খারাপ শহর ঢাকা, বাংলাদেশী পাসপোর্টের মুল্য সব চেয়ে নীচে, সব চেয়ে দুষিত শহর গুলোর ভেতর ঢাকা প্রথম দিকে। এরকম জরিপের সীমানা নাই। তাও বলা হচ্ছে সবুর করেন, দেশ হবে মালয়েশিয়া। একা একা মরতে ভালো লাগে না, সবাই এক সাথে কোনো দুর্যোগে মারা যাবো, এই শহর ধবংস হবে, সেই অপেক্ষায় আছে সবাই।

পোস্টটি ২০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টুটুল's picture


Sad

তানবীরা's picture


কিন্তু কণিকাকে আমি বলবো সাহসী। সে অস্বীকার করেছে এই বেঁচে থাকাকে।

এই টুকু বাদে পুরো লেখার সাথে একমত

Sad( Sad( Sad(

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!