ইউজার লগইন

সততা !!!

প্রতিদিনের মত সেই দিনেও মায়ের ফোন ......

তবে মা সাধারণত সন্ধ্যা বেলায় কখনও ফোন দিত না। সারাদিন ক্লাস আর আড্ডা বিকেলে ঘুম, সন্ধ্যায় পদ্মার চড়ে ঘুরে বেড়ানো তারপর রুমে ফেরা। যা কথাই তা রাত নয়- দশটা ছাড়া হত না।

কিন্তু অন্য আর দশ দিনের মত সেদিন ছিল না। ফোন রিসিভ করার সাথেই ওপাশের কন্ঠটা কিছুটা বিচলিত। কুশল বিনিময় করার আগেই মায়ের মুখে গুরুগম্ভীর কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মা কেনই বা এসব কথা বলছে। তারপর যা শুনলাম তা রীতিমতই কাল্পনিক, যদিও তা বাস্তব ছিল।

ঘটনা ঠিক আজ থেকে বছর তিনেক আগে। ঢাকা টু কুড়িগ্রাম মাঝে মাঝেই আসা যাওয়া হত। তবে সব সময় মা এর সাথে বাবা, মামা বা আমি না হয় অন্য কেউ থাকত, কিন্তু সেবারেই প্রথম মা একা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা একাই আসতেছিল। বলা বাহুল্য মা একটু বেশী সাদা মনের মানুষ ছিল। তাই সেইদিন একটু বাড়তি টেনশন সবার মাথাই ছিল। দীর্ঘ যাত্রায় মায়ের সাথে সবসময় সবার যোগাযোগ ছিল। আমিও দু একবার খোঁজ নিয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনা টা যে রটনা হবে তা কারোই ভাবনায় ছিল না ।

যথারীতি কুড়িগ্রাম থেকে গাড়ী ঢাকার গন্তব্যে, রাস্তায় যানজট থাকার কারনে পথে কিছুটা দেড়ি। তাই আমার রাগী বাবা আর মা কে রিসিভ করার জন্য স্টেশনে যায় নি। কি আর করা, মা একায় সাহস করে স্টেশন থেকে রিকশা যোগে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। বলা প্রয়োজন মা এর সাথে অনেক লাগেজ ছিল। সেগুলা ঠিকমত খেয়াল রাখতে গিয়ে কখন যে তার মানি ব্যাগটা পরে গিয়েছে তা প্রথম বুঝতে পারল যখন রিকশা ভাড়া দিতে গেল তিক তখন।

মা এর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল, কারন সেই ব্যাগের মধ্যে ছিল দুই ভরি স্বর্ণের চুরি আর বিশ হাজার টাকা ক্যাশ Sad(

কোনরকোমে রুম থেকে বিশ টাকা দিয়ে রিকশাওয়ালাকে বিদায় দিয়েই মা অজুখানা গিয়ে অজু করেই সোজা জায়নামাযে সিজদায় পড়লেন। দু হাত তুলে পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করলেন। তারপর সবার সাথে নরমালি কথা হল, কেউ যেন ঘুণাক্ষরে টের না পায়, কারন বাবা যে পরিমান রাগী ছিলেন সেটা নিয়েই মা বেশি চিন্তিত ছিল।

ব্যাগটা মা হারিয়েছিল টঙ্গীর কলেজগেট নামক এলাকায়। মা এতই ভঁয় পেয়েছিল যে বাবাকে খুলে বলার মত সাহস ও করে নি। শুধুমাত্র তাঁরই কৃপায় আশায় বুক পেতে রইলেন।

ঠিক আধাঘন্টা পর মা এর ফোনে এ খালামনির কল, মা ফোন রিসিভ করে কিছু একটা বলবে তার আগেই খালামনি শুরু করল ফাজলামি। মায়ের এই দুঃসহ অবস্থায় সে কোনমতেই খালামনির ফাজলামি সহ্য করতে না পেরে ফোন রেখে দিল।
আবার ফোন, এবার মা রীতিমত তেলে বেগুনে আগুন। ঠিক ওঁই মুহূর্তে খালামনি যা বলল তা মা আজও বিশ্বাস করতে পারে না। এও কি সম্ভব!! তাও আবার একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে.........মা সাথে সাথেই শুকরিয়া আদায় করলেন।
আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না। টাকা হারাল মা কিন্তু সেই টাকা খালামনি কিভাবে পেল?

তারপর সব ঘটনা মা খুলে বলল। টাকার ওঁই ব্যাগে খালামনির মোবাইল নম্বর একটা চিরকুটে লেখা ছিল। যারা সেটা পেয়েছিল তারা ওঁই চিরকুটের প্রাপ্ত নম্বর এ ফোন দিল, এখানেও মজার কাহিনী ঘটল।
খালামনি অপরিচিত নম্বর দেখে বারবার রিসিভ না করে কল কেটে দিচ্ছিল, তিনবারের সময় রসিভ করার পর ওঁই প্রান্ত থেকে বলা হল আপনার স্বর্ণের চুরি আর টাকা সহ একটা ব্যাগ পাওয়া গেছে। খালামনি রং নম্বর বলে ফোন কেটে দিল।

হঠাৎ খালামনির মনে হল আজ তো তার বড় বোন বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরেছে। সাথে সাহেই তাকে ফোন করে টাকা হারানোর কথা জানতে চাইল, মা অকপটে স্বীকার করল।

তারপর যা হবার তাই হল, খালামনি সহ যারা টাকা পেয়েছেন সবাই আমদের বাসায় আসল। টাকা আর চুড়ি বুঝে দিল তার মালিকের কাছে। মা হয়তো তাদেরকে হাদিয়া সরুপ দুই হাজার টাকা দিতে চাইছিল, প্রতিউত্তরে তার বলেছিল তারা যদি লোভ ই করত তাহলে তো পুরাটাই মেরে দিতে পারত।

সৎ এই মানুষ দুজন ছিল টঙ্গি কলেজের প্রথম বর্ষের দুজন ছাত্র। বাড়ি আমাদের এই বাংলাদেশেই।
মা এর কাছ থেকে তাদের মোবাইল নম্বর নিলাম, মাঝ মাঝেই তাদের সাথে কথা হত।
দাওয়াত করে একদিন খাওয়ালাম সবাইকে। ধন্যবাদ , লাখো সালাম তাদের। ইহকাল ও পরকাল দু ক্ষেত্রেই যেন তারা হেফাজতে থাকে এই কামনা সবসময়।

বাবা পৃথিবীতে এখনো সৎ ও মহৎ লোকেরা বেঁচে আছে বলেই হয়তো পৃথিবীটা টিকে আছে।
সততা এক মহৎ গুণ। আর মানুষ বেঁচে থাকে আজীবন তার মহৎ কর্মের মাধ্যমে। এই গুরুগম্ভীর কথাগুলাই মা সেদিন বারবার বলছিল । এখনো মাঝে মাঝেই কানে বাজে মায়ের সেই কন্ঠসর । মনে পড়ে সেই দুই ভাইকে যাদেরকে আমি পরে আল আমীন নামেই ডাকতাম।

পোস্টটি ২৫ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

জাহিদ জুয়েল's picture


আমরা বন্ধু ব্লগে আমি এক নবীন সদস্য। সবার লেখাই পড়ার চেষ্টা করি। যতক্ষন এখানে থাকি মনে হয় সবার সাথে কল্পনার জগতে আড্ডা দিচ্ছি। একটা জিনিস খেয়াল করলাম এখানে মন্তব্য হয় খুব কম।

সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি......
আমি সবাইকে অনুরোধ করব যারা আমার লেখা পড়বেন পারলে মন্তব্য করবেন চাই ভাল অথবা মন্দ। কারন সমালোচনা ছাড়া ভুল শুধরানো কঠিন। হয়তো কোন মন্তব্য দিবে আমায় নতুন অনুপ্রেরণা।
আর এখানে আমরা সবাই বন্ধু ,তাই না বন্ধু???????

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

জাহিদ জুয়েল's picture

নিজের সম্পর্কে

কেন যে ইঞ্জিনিয়ার হলাম, এইসব রসহীন জীবন খুব তিতা হয়ে গেছে,

ছোটবেলা থেকে সাহিত্যের প্রতি কিসের যে মায়া তা নিজেও জানি না। একটা সময় মনে হয়ত সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করি, কিন্তু তা আর হয়নি। রবি ঠাকুরের ছোট গল্প কিংবা কবিতা করেছে মুগ্ধ সেই ছোটবেলায়, জীবনের অনেকটা পথ অতিক্রম করে এসে আজও দেখছি ঐ একটা জিনিস আজও ভালবাসি হ্রদয়ের গহীন থেকে। তাইতো অসময়ে ছূটে এসেছি প্রিয় এই ব্লগে।