অমুসলিমরা কোথায় যাব?
এই দেশ স্বাধীন করতে কে কী করেছে তা সবারই জানা। একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার জন্য সবাই মুক্তি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল। বাঙালি কী আর অবাঙালি কী। সবাই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। সেই ইতিহাসে না যাই। কারণ সেসব ইতিহাস সবার জানা আর না জানা থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। কারণ বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় আছে অমুসলিমরা। সুতরাং তাদের অতীতের ইতিহাস জেনে কী লাভ। সময় নিয়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অনেক ঘোরা যাবে কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতায় ফিরে আসা সবচেয়ে জরুরী।
মায়ানমায় রোহিঙ্গাদের উপর কোন হামলা হলে তার দায় চুকাতে হয় এদেশের বৌদ্ধদের। ইতোমধ্যে এই দায় চুকিয়ে ফেলেছে। রামুতে হামলার কথা নিশ্চই সবার মনে আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছে ভিন্নধর্মালম্বীর মানুষেরা। রামু, সাতক্ষীরা, চিটাগাং, নোয়াখালী, রবিশাল, পাবনা কোথায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি। সব জায়গায় হয়েছে। আগে ঢাকের শব্দ শুনে বুঝতাম পূজা আসছে এখন দেখতে পাই পত্রিকার পাতায়; মূর্তি ভাঙার সংবাদে। পূজা আসবে আর মূর্তি ভাঙা হবে না, এটা কী হয় নাকি। এই দেশে হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা করতে কোন অযুহাত লাগে না। রাতে আপনার সঙ্গমে সমস্যা হয়েছেন? এই ক্ষোভে আপনি কারো বাড়িতে হামলা করে বসতে পারেন। আপনি যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ সেহেতু আপনার সেই অধিকারটুকু রয়েছে। সবচেয়ে মজার খবর ছিল চট্টগ্রামের সংবাদটা। পঞ্চাশ টাকা দিয়ে এক মাতালকে বলেছিল মসজিদে ঢিল মারতে। মাতাল কথামতন তাই করল। পরে মাইকে গুজব ছড়ানো হল যে; হিন্দুরা মসজিদে আক্রমন করেছে, মসজিদ ভেঙে ফেলছে। বাঙালির রক্ত গু+, গুজবী জাতি মুহূর্তের মধ্যে হিন্দুদের বাড়ি ঘর দোকান লুট করা শুরু করে দিল। লুট করাই এসব হামলার মূল রহস্য। যদি উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় তাহলে ভূমি দখল। যদি গুজব ছড়ানো সম্ভব হয় তাহলে লুট করা যায়। এসব সাম্প্রদায়িক হামলার মূল উদ্দেশ্য-ই হল লুট। ঘটনারগুলো বিস্তারিত ভাবে খেয়াল করলে লুটের বিষয়টি স্পষ্ট হবে। লুটের পর দেখা যায় মন্দিরের ক্যাশ বাক্স ভাঙা, সোনার পতিমা গায়েব, মূলবান সামগ্রি হাওয়া।
এই দেশে একটা কুকুর অনেক নিরাপদ বোধ করে যতটা ভীত বোধ করে হিন্দুরা। দেশ স্বাধীন হল। বলা হল; হিন্দুদের ষড়যন্ত্রে দেশ স্বাধীন হল। ৯১-তে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় ঢাকায় ইনকিলাব পত্রিকা নিউজ ছাপল যে; ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মিষ্টি বিতরণ। পরের দিন তারা ভুল সংবাদের জন্য মাপ চেয়ে বিবৃতি দেয়। কিন্তু তাদের যা করার তা আগের রাত্রেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। রাতেই হিন্দু পল্লীতে আগুন দিয়ে দেওয় হয়। এর পর আসল নির্বাচনের কাহিনি। আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে নির্বাচন একটা অভিশাপ। নির্বাচনে কেউ জিতলে তাদের উপর নির্যাতনের ছায়া নেমে আসে আর কেউ না জিতলেও তাদের উপর নির্যাতনের ছায়া নেমে আসে। পূর্ণিমার কথা আপনাদের মনে আছে? যার মা হায়নাদের পা জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন; বাবারা তোমরা একজন একজন করে যাও, আমার মেয়েটা অনেক ছোট। সাতজন পশু মিলে গ্যাং রেপ করেছিল পূর্ণিমাকে। এরকম আর কতো পূর্ণিমার কথা বলব? আর কতো অত্যাচারের কথা বলল? সাইদি ফাঁসি রায় হওয়ার পর; সাইদির চন্দ্র ভ্রমনকে কেন্দ্রে করে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালানো হয়। সাইদির ফাঁসি হয়েছে এর জন্যও হিন্দুরা দায়ী। অবশ্যই দায়ী কারণ হিন্দুরা দেশ স্বাধীন না করলে তো সাইদীর ফাঁসি হতো না তাই না? এই দেশের মাটিতে এতো নাকি সোনার ফসল জন্মে। কিন্তু এতো বেশি শুকর ছানা জন্মাতে পারে তা স্বয়ং বিধাতাও মনে হয় অনুমান করতে পারেননি।
আজকে দেখলাম কাদের মোল্লার রায়ের পরপরই কক্সবাজার সহ বিভিন্ন হিন্দু পল্লীতে হামলা। এখানেও কী হিন্দুদের ষড়যন্ত্র? দেশের খৎনা করিয়ে তো রাষ্ট্রে রাষ্ট্র ধর্ম লাগানো হয়েছে। তাই বলে কী এখানে কোন অমুসলিম নিরাপদে থাকতে পারবে না? ইউরোপ আমেরিকায় তো এরূপ হামলার খবর শুনি না। বরং ঐসব দেশে গিয়ে কামলা খেটে গাড়ি বাড়ি করে বড় লোক হতে দেখেছি। এই দেশে হিন্দুদের উপর হামলা কিংবা বৌদ্ধদের উপর হামলা হলে এর প্রতিশোধ হিসেবে কী অন্যকোন রাষ্ট্রে মুসলিমদের উপর হামলা হয়? অথচ অন্য রাষ্ট্রে কোন কাহিনি হলে ঐ ল্যাটা আমাদের দেশের ভিন্নধর্মালম্বীদের মিটাতে হয়!!! আসলে আমাদের সমস্যা কোথায়? আমার রক্তে নাকি আমাদের মগজে? নাকি হিন্দু বৌদ্ধরা আসলেই সমস্যা পাকায়? এভাবে চলতে থাকলে কয়েকদিন পর আলাদা একটি সংরক্ষিত এলাকা করে জোট বন্ধ হয়ে অমুসলিমদের থাকতে হবে। আর নিরাপত্তার জন্য না হয় জিজিয়া কর দিল, তাতে মন্দ কী। অন্তত শান্তিতে তো একটু ঘুমাতে পারবে। এই দেশ মানুষের না, এই দেশ চুতিয়াদের।
আপনার কষট অনুভব করতে পারছি। সমবেদন রইলো।
সারাজীবন নিজের দেশে মার কেন খেয়ে যাবেন? জোট করুন আর ফিরে মার লাগান। এর কোন বিকলপ নেই। ছু্ইলেই গদাম দিবেন।
আমার পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই মনের এই অনুভূতিকে প্রকাশ করতে পারার জন্য।
আপনার অনুমতি থাকলে আমি আপনার এ লিখা অন্য একটি বৌদ্ধদের জনপ্রিয় সাইট প্রকাশ করতে চাই।
আপত্তি থাকবে কেন ভাই। অবশ্যই করতে পারবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
তথ্যে যদি ভুল না থাকে তবে আমাদের দেশে এখন প্রায় তিন কোটির উপরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস।বৌদ্ধ খৃষ্টান মিলিয়ে সংখ্যাটা আরো বাড়বে বই কমবেনা।আর আপনি যেই চুতিয়াদের কথা বলছেন তাদের সংখ্যাটা কত?আপনাদের তিনভাগের একভাগও হবেনা।আপনাদের যেটা সমস্যা সেটা হল আপনারা স্বাধিনতার ৪৩বছর পরও নিজেদের সংঘটিত করতে পারেননাই।নিজেদেরকে সবসমই দুর্বল ভেবেছেন।একজন প্রতিবাদ করলে দশজন পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছেন।ফলে ঐ একজন নির্জাতনের স্বিকার হয়েছেন।মতিঝিলে হেফাজতিদের সংখ্যাটাকি খুব বেশী ছিল?আপনারা একদিন মতিঝিলে এসে দেখেননা, মতিঝিল আপনাদের ভার সহ্য করতে পারবেনা।একদিন রামদার বদলে রামদা দিয়ে প্রতিহত করুন।দেখবেন কেমন করে চুতিয়ারা কুত্তার মত পালিয়ে যায়।কিন্তু পারবেননা।পূর্ণিমা যখন রেপ হয় তখন আপনার সম্প্রদায়ের আরএকজন দরজা জানালা বন্ধ করে নিজের মেয়েকে লুকিয়ে রেখে ঠাকুর জপ করেছেন।রামদা নিয়ে পুর্ণিমার পাশে দাড়ান নাই।ঘেনর ঘেনর করলে কিছু লোকের সহানুভূতি পাওয়া যায়,লাভের লাভ কিচ্ছু হয়না।অধিকার রক্ষার জন্য সাহস আর ঐক্যের প্রয়োজন আপনাদের মধ্যে তার বিন্দুমাত্র লেশ দিখিনা।
জানি, সমবেদনা জানানোতে কিছুই আসবে যাবে না। ষোলকোটি বাঙ্গালির একজন হিসেবে আজ লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে
পড়লাম, কিছু কিছু লিখায় মন্তব্যে কিছু বলার থাকেনা
আমাদের কষ্ট হয় যখন দেখি ধর্মের দোহাই দিয়ে অধর্ম হয় বেশি।
মুষ্টিমেয় কিছু সাম্প্রদায়িক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের(!!) জন্য অন্যায়ের দায়ভারটা চলে আসে সবার উপর।
কষ্টের প্রলেপ দেবার মতো ভাষা জানি না।
শুধু বলি বিশ্বাস রাখুন মনে ,এদেশ আমার-আপনার আমাদের দেশ।মানুষরূপী হায়েনারা আগেও ছিল,এখনো আছে,হয়তো ভবিষ্যতে ও থাকবে।
তারা হয়তো সাময়িকভাবে বেঁচে থাকার আনন্দ ম্লান করতে চেষ্টা করবে,কিন্তু কখনোই সুখ কেড়ে নিতে পারবে না।
এদের হাতে সাধারণ মুসলিমরাও বন্দি। তবুও আমি বুকে আশা রাখি হয়তো একদিন সব বদলাবে। সবাই তো এমন না। অনেকেই তো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। হোক তা সংখ্যায় কম তবুও তো কিছু মানুষ নামক মানুষ আছে।
আমাদের ধর্মটাকে ছোট করতে জামাতই যথেষ্ঠ । অসাম্প্রদায়িক একটা রাষ্ট্রে এইরকম অত্যাচার আজ আমাদের ধর্মটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে । আমাদের তীব্র নিন্দা জানানো ছাড়া কিছুই করার নেই ।
যাবার তো প্রয়োজন নেই । এই দেশেই এমন অনেক জায়গা আছে , যেখানে হিন্দুরা সম্মানের সাথে বসবাস করছে। স্থান গুলোর নাম আমরা অনেকেই জানি । সমস্যা হল আমাদের অস্তিত্ব যে হুমকির সম্মুখিন - সেটা বেশির ভাগ লোক বুঝতেই পারছেন না । সম্মানের সহিত, ক্ষমতা প্রয়গের সহিত যে বাস করা সম্ভব এটা অনেকেই মানতে চান না । এখনও ৪ কোটি হিন্ধু জন গোসটি এদেশে বাস করে। কিন্তু এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ।এভাবে আর হিন্দুরা থাকতে পারবে না । কারন একটি উগ্র গোস্ঠি চায় না হিন্দুরা এদেশে থাকুক। অস্তিত্বের সংকটটি সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের জাতীয় বা আঞ্চলিক সামাজিক সংগঠন গুলো এই ব্যাপারে কোন কাজ করেনি - এখনও করছে না । আমরা বিশ্বাস করি কিছু ব্যবস্থা নিলে - সম্মান ও ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব - যদি আমরা টা চাই ! সঠিক পরিকল্পনা এবং টা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অস্থিত্বের সংকটটি কাটিয়ে উটা সম্ভব। একসাথে ২০ - ৫০ হাজার পরিবার বসবাস করুন , দেখবেন ৯৯ % সমস্যা উধাও , বাকিটার জন্য আমরা তো আছিই , আছেন এই দেশের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন লাখো মানুস , আপনার পাশে , আপনার সহযোগিতায় । ইন্টারন্যাল মাইগ্রেশন টা অতি আবশ্যিক হয়ে পড়েছে । বার বার ভাবুন ( Internal Migration ) .
পাল্টা মার দিতে না শেখা পর্যন্ত পৃথিবীর সব ইতিহাসে দুর্বলকে মার খেতে হয়েছে। তবে আমার ধারণা, এই ইস্যুতে আমরা এখন পাল্টা মার দিতে শেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।
মন্তব্য করুন