প্রেমের গল্প লেখার অপচেষ্টা
আমরা খুব অস্থির একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। অনেক দূরে, ছোট্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের যে ভূখণ্ডে আমি জন্মেছিলাম, বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটছে তার রাজনীতিতে, সমাজনীতিতে। নিজেকে কখনো রাজনৈতিক মানুষ বলে বিবেচনা করিনি। সক্রিয় রাজনৈতিক কার্যক্রমের জায়গা আমার জীবনে খুবই অল্প। তারপরেও দিনশেষে আমরা সবাই রাজনৈতিক জীব। বেঁচে থাকার জন্য জীববিজ্ঞানের সংজ্ঞায় প্রোটোপ্লাজমের ভেতরে থাকা অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেই যেমন, ঠিক তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রণোদনা জোগানো চেতনাকে ধারণ করি অনায়াসেই। ঠিক এমনি অস্থির সময়ে প্রেমের গল্প লেখার আইডিয়া আমার মনে কেমন যেন একটা অপরাধবোধের জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু আপাতঃ ঘটনাহীন জীবনে, অনেকগুলো দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে সেই নিষিদ্ধ গন্ধম ফলের হাতছানিকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারছিনা। মগজ বলছে, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, মন বলছে হারাই হারাই সদা ভয় হয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে। এই টানাপোড়েনে মনের জয় অবশ্যম্ভাবী আমি জানি। কারণ আমি নিজেকে চিনি। পৃথিবীর সবচাইতে সম্পূর্ণ আবেগ আমার কাছে প্রেম। সবচাইতে শুদ্ধ অনুভূতির নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা, ভালোলাগা, ঘোরলাগা মুহুর্ত এদের জন্য আমি অনায়াসে ছাড়তে পারি অনেক কিছু। জীবনে অনেক কিছু এ কারণে হারিয়েছি। কিন্তু সুযোগ পেলে আবারও হারাবো। বিশ্বসংসার তুচ্ছ হয় যে ভালোবাসার কাছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমা্র কাছে আর কিছুই নেই। আমার এই স্বীকারোক্তিটুকুর দরকার ছিলোনা। লেখা হিসেবে এই অংশটুকুকে বাহুল্য আখ্যা দেয়া যায় সহজেই। কিন্তু নিজের কাছে, নিজের শুদ্ধতম আবেগের কাছে, সৎ থাকতে চেয়ে এইটুকু লেখা।
এটা একটা একেবারেই গভীরতাহীন মিলস এন্ড বুন জাতীয় প্রেমের গল্প। ছোটবেলায় যে গল্পগুলো পড়ে শিহরিত হতাম অকারণেই, কৈশোরের সেই শিহরণকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। সাহিত্যমূল্য অতিনিম্ন। সাহিত্যমূল্য চিন্তা করলে নিজেকে খুলতে পারছিলাম না।তাই সে চেষ্টায় ইতি দিয়ে শিহরণকেই সঙ্গী মানলাম।
----------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------
১।
বিনুনিটা কিছুতেই সোজা হচ্ছেনা। উফ্ফ্! অসহ্য লাগে কুশির। বারেবারে টান দেয়। চিরুনী দিয়ে সিঁথির ঠিক মাঝখানে ল-ম্বা একটা রেখা আঁকে দ্বিতীয়বারের মতো। দু’দিকে চুল সমান করে, তারপর খুলে আবার বাঁধে। কিন্তু এবারেও একদিকের বেণি একটু মোটা হয়ে যাচ্ছে। উফ্ফ্, উফ্ফ্, উফ্ফ্ফ্!! অসহ্য! ঠিক স্কুলে যাওয়ার সময়ে, রাজ্যের তাড়া যখন, অতি অবশ্যই এইসব ডিসগাটিং জিনিসপত্র হতে হবে। “কুশ, টেবিলে নাস্তারেডি, জলদি আয়” মা’র চিত্কার শুনে চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে পাঁচফুট চার পেরিয়ে পাঁচ ছুঁইছুঁই লতানো শরীরের বালিকাটির। দ্রুত ওড়না আর রুমাল ভাঁজ করে কোমরের বেল্টে গুঁজতে গুঁজতে মা’র সামনে তড়িঘড়ি বসে পড়ে। এসময় মা’র মেজাজ পুরো মিলিটারি থাকে, একচুল এদিক ওদিক হ’লেই চড়চাপাটি বিচিত্র কিছু না। ডিম খেতে বমি লাগে, দুধে গন্ধ- কিচ্ছু বলা যাবেনা! আচ্ছা, বুয়াকে কতোবার সে বলেছে, একটু ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে দিয়ো।এই কুৎ’সিত জিনিসটা প্রতিদিন মায়ের অত্যাচারে তাকে মুখ বুঁজে খেতে হয়। একটু সহনীয় করা যায়না ব্যাপারটা? না, তাকে খেতেই হবে। না খেলে লম্বা হবেনা, হাড় শক্ত হবেনা, স্কিন সুন্দর হবেনা, মাস্ল বিল্ড হবেনা আরো হাজারটা কথা। এম্নিতেই ক্লাসের সবগুলো মেয়ের মধ্যে সে সবচেয়ে লম্বা, চিকন বেতের মতো ছিপছিপে শরীরের কারণে তাকে আরো লম্বা দেখায়। সাড়ে তেরো পেরিয়ে চোদ্দ বছরে পড়বে সে আসছে অগাস্টে, শরীরের বাঁক এখনো স্পষ্ট হতে শুরু করেনি, কিন্তু তার হাত পা গুলো ইতিমধ্যেই জানান দিতে শুরু করেছে সে আরো অনেক লম্বা হবে। বাবা মা দু’জনেই লম্বা বলে কুশি জানে লম্বা হওয়াটা তার ভবিতব্য, কিন্তু আজকাল ইন্টারনেটে পড়ে, ছবি দেখে যা বোঝে, লম্বা মেয়েদের বাইরের দেশগুলোতে খুব কদর। এদেশে, বন্ধুবান্ধব এমনকী আত্মীয়স্বজনরাও তাকে “কিরে কুশ, ঢ্যাঙঢ্যাঙিয়ে কেবল বাড়ছিসই দেখি, তালগাছ না হয়ে থামবি না না’কি” ইত্যকার নানা বাক্যবাণে জর্জরিত করতে শুরু করেছে। কুশি যে কথাটা জানেনা, বা ছোট বলে তার মাথায় ঢোকেনা সেটা হ’লো সে দেখতেও ভারী সুন্দর হয়ে উঠছে। খুব ধারালো চোয়াল, পরিষ্কার টলটলে চোখ আর লম্বাটে একটা মুখ। এতটুকু বাড়তি মেদ নেই সে মুখে, কৈশোরের সারল্য লেপটে থাকে তার চাউনিতে আর লালচে গালে। আত্মীয়দের মধ্যে হিংসুটে আর মুখরা বলে পরিচিত অনেক মহিলাই এজন্য তাকে একা পেলে বেশ ঠেস দিয়ে কথা বলে বা রূঢ়ভাবে খোঁচা দেয় যেগুলোর বেশিভাগই সে বোঝেনা। সেদিন অর্ণব ভাইয়ার সাথে আনিকার রুমে অনেকক্ষণ স্ক্র্যাবল খেলছিলো, সবাই কখন চলে গ্যাছে পড়া শেষ করে তার মনেও নেই। কুশি খুব মনযোগী ছাত্রী, শব্দ বানানোর খেলা স্কুলের বাস্কেটবলের পরেই তার জানের জান। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক কেটে গ্যাছে, দু’জনেই খেলায় বেহুঁশ, হঠাত আনিকা অর্ণবের মা ঘরে ঢুকে কুশি আর অর্ণবকে খুব বকাবকি! চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞ চোখ কৈশোরের সারল্য ছাপিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন, কুশির স্কার্টের ঝুল হাঁটুর বেশ কিছুটা ওপরে উঠে রয়েছে, পা মুড়ে বসে খেললেও উরুর অনেকটাই উন্মুক্ত আর অর্ণব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। ব্যাপারটার মধ্যে অশ্লীলতার গন্ধ খুঁজে পাননি রীতা, কারণ দু’টো ছেলেমেয়েই সমবয়সী, তার ওপর তার কোলেপিঠেই মানুষ। কিন্তু সহজাত নারীত্বের একটা ইন্সটিঙ্কট আছে। ব্যাপারটা হঠাত তার রাগ চড়িয়ে দেয়। বেচারা কুশি রীতা খালার ধমকে এক্কেবারে জড়োসড়ো, বিশেষতঃ যখন তাকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে স্কার্ট না পরে পা ঢাকা কিছু পরতে বলেছিলেন এরপর থেকে- তার মাথায় কিছুই ঢোকেনি। পা? পা দেখালে কি প্রব্লেম? বাস্কেটবল কোর্টে কোচসহ তারা সবগুলো মেয়ে শর্টস পরেই তো খেলে! যাইহোক রীতাখালা মায়ের সবচে’ প্রিয় বন্ধু। মায়ের পরেই সবচাইতে বেশি সে যাকে ভয় পায়, ভালোও বাসে। কয়েকটা কথা কানে লেগে আছে এখনো। “কুশি তুই জানিসনা, তোকে কতো সাবধানে চলতে হবে। বড় হচ্ছিস, এখন হুটোপুটিতেও রাশ টানতে হবে। আর মেয়ে হচ্ছিস, এটা মনে রাখছিস তো?”
ডিমের কুসুমটাকে মাখন লাগানো রুটির ওপর ব্যালান্স করতে করতে হঠাৎ তার মনে হয়, মেয়ে হওয়া ব্যাপারটা আসলে কী?
(চলবে??)
(চলবে কী'না ঠিক বুঝতে পারছিনা)
লেখাটা নিজের পাতায় না রেখে প্রথম পাতায় দিতে পারেন।
অস্থির সময়ে সবচেয়ে বেশি অস্থির প্রেমের গলপের জনম হয়েছে
তানবীরাদি, ামাকে তুমি করে বল্কীলে খুশি হবো।
কী যে বলেন, প্রথম পাতা! হেফাজতে ইসলাম আবার তেড়ে না আসে
হ্যাঁ, "কলেরার দিনগুলোতে প্রেম" মনে পড়লো
মন্তব্য করুন