উপোষের দিন রাত্রী!
আম্মু আব্বুর সাথে যখন বাসায় ছিলাম তখন রোজার দিনগুলান ছিলো একটু বিপদ জনক। নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়তে হবে, টিভি দেখা যাবে না বেশি, রোজা রেখে কোরান খতম দিতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! নামাজ পড়তাম কিন্তু মসজিদে যেতাম কম। তারাবীর নাম দিয়ে বের হয়ে দিতাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা। আরেকটু ছেলেবেলায় চিটাগাংয়ে ছিলাম তখন প্রত্যেক বিল্ডিংয়ের পিছনে ছিলো বাগান। যেখানে টমেটোই ছিল মেইন সব্জী। সেটা নিয়ে বোম্বাস্টিং খেলাই ছিলো কাজ রাতের বেলা। জামা কাপড়ে লাল লাল টমেটোর দাগে অবস্থা কাহিল। পরে ঘোষনা দিয়ে ক্ষেত বন্ধ করলো। আমরাও তারাবীতে খেলা ছেড়ে দিলাম না। এরপর আরো ডেঞ্জারাস খেলা শুরু করলাম। গোল্লাছূট। লাইট কম মাঠে সেইখানেই এই খেলা শুরু। কিন্তু বিপদ হলো মাঠ টা একটু অসমান তাই প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হয়। শেষে একজনের নাক ভাঙ্গলো। গলগল করে রক্ত পড়ছে। আমার গেঞ্জীতেও রাখলো রক্ত। হাসপাতালে নেয়া হলো। বাসায় ফিরলাম। আম্মু জিগেষ করে লাল কি এগুলা? আমি বললাম টমেটোর দাগ সে যাত্রায় বেচে গেলাম। তারপর সবাই বড় হচ্ছি। যা খেলার তা দিনেই খেলি ক্লান্ত হয়ে যাই। রাতে চলে নির্ভেজাল আড্ডা। তখন কেউ কেউ সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে। তাই এক সাইড আড্ডা দেয় বাইরে মার্কেটের ছাদে। আরেক গ্রুপ আমার মত মাঠে বসে। দিনের বেলা কার্ড খেলে সবাই। আমি মায়ের সাথে মিথ্যা কথা বলতে পারবো না তাই একাই একাই হাটি। লোকজনের সাথে আড্ডা দেই এইভাবেই যায়। কিন্তু ইন্টার মিডিয়েট শেষে গেঞ্জামের শুরু। সবাই দেখি অদ্ভুত রকমের ব্যাস্ততা। তখন কলোনীর বাসা ছাড়ছি তাই কিছু হলেই সমুদ্রের পাশে চলে যাই। শান্তিতে বসে আছি কিছুই করি না হাটতে হাটতে আসি হেটেই আবার ফেরত যাই। র্যাব এসে ডিস্টার্ব দেয় তখন বলি বাপের পরিচয় পদবী তখন আর সমস্যা নাই। লোকজন পুরাই অবাক আমি কোথাও যাই না তাদের সাথে শপিঙয়েও যাই না। মুলত তখন থেকেই আমার একা চলা একা ভাবনা শুরু। সেই একা থাকতেই কিছু বন্ধু হয়ে যায় যাদেরকে চিনতাম আগে কিন্তু অতো চেনাজানা ছিলো। দেখলাম তারাই অসাধারন ছেলে। ঈদে কি কিনবে? কোথায় যাবে? বাবা মা কত টাকা দিছে বাজেট তা নিয়ে কোনো ভাবনাই নাই। বস্তির ভিতরে গিয়া পড়ায় সেই খান থেকে কামাই করা টাকা দিয়ে চা পুরি খাওয়ায়। আমার কিছু বন্ধুর সাথেও তাদের পরিচয় করে দিলাম। অসাধারন একটা সারকেল হলো তখন। তার ভিতরে মারা গেলো এক বন্ধুর বাবা। তখনি পেলাম মরন যন্ত্রনা কারে বলে। বন্ধু কামরুল আমার শার্ট ধরে সে কি কান্না। আমিও হাউমাউ করে কাদছি। তখনি বুঝলাম বড় হয়ে গেছি। তার কিছুদিন পরেই ঢাকায় এসে পড়লাম। তখনি বুঝলাম কত অসাধারন ছিলো লাইফ চিটাগাংয়ে। এসেই পেলাম রোজা। রোজায় হলো টাইফয়েড। অনেক দিন পর সব কয়টাই রোজাই ছাড়তে হলো। ছিলাম সিএমসে এডমিট। আমার মনে আছে ভাইয়া আমাকে একটা লাল রংয়ের মিউজিক প্লেয়ার দিয়েছিলো। কিযে খুশী হয়ে ছিলাম। সেই প্লেয়ারে শুধু অঞ্জন দত্ত অর্থহীন আর আর্টসেলের গান। প্রতিদিন আম্মু আসতো সেই মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটী থেকে সিএমএস। বানিয়ে আনতো পছন্দের সব খাবার। আমি খুব ইফতারী পাগল ছেলে সেই অসুস্থতার ভেতরেই হাল্কা তেলে ভাজা খাবার দাবার নিয়ে হাজির। আব্বু প্রতিদিন নেভীর ড্রেস পরে প্রথম আলো ডেইলি স্টার কিনে নিয়ে এসে খোজ নিতো কি করি ডাক্তার কি বলে। তখন বুঝি বাবা মায়ের ভালোবাসা কি জিনিস। অনেকেই বলে ভাই ভাইয়ের মতো। কিন্তু আমি তখনি বুঝে গেছি ভাইয়া আসলে কী পরিমান ভালোবাসে আমাকে। নিজের জীবনে যেই সমস্ত যা কিছুর অভাব বোধ করছে তা সব কিছুর প্রাচুর্যে আমি ভারসিটীর দিন গুলান পার করছি। তারপরের বছর থেকে বন্ধু হওয়া শুরু হলো। গ্রীন রোড, ধানমন্ডী ৩২, শংকর নানা জায়গায় চলতো রমজান স্পেশাল আড্ডা। এরপর গত তিন বছর ধরে রোজার সময় মানেই হুলস্থুল অবস্থা। আড্ডায় চায়ের দোকান মুখরিত, ক্যাম্পে গিয়ে চাপ খাওয়া এই ভাবেই কাটতো। তবে নামায পড়ে নিতাম নিজ দ্বায়িত্বে যেনো আম্মুর সাথে মিথ্যা না বলা লাগে। তবে গত তিন রোজার ইদ ধরে টেনশন। বাড়ীতে কিভাবে যাবো। আগে গেলে ঢাকা খুব মিস করি সাথে অনেক কাজ থাকে। পরে গেলে ট্রেনের টিকেট নাই গেঞ্জাম। কিভাবে যাবো হতাশা। সামনে চাকরী বাকরী পেলে বাড়িতে যাব না। ঢাকাতেই থাকবো। বছরে অনেক সময় আছে নাড়ির টান দেখানোর। এতো গেঞ্জাম করে বাড়ি যাবার কোনো মানে নাই। কারন ইদ অনেক আসবে কিন্তু জান তো একটাই। জানে পানি না থাকলে যায়া লাভ কি। এবারো টিকেট পাই নাই। বাসে যাওয়া গেঞ্জাম তবুও যেতে হবে কিচ্ছু করার নাই। ১০ তারিখে সেকেন্ড মিড তাই থাকা। জানি না কিভাবে যাবো। তবে যেতে হবেই। এই নৈরাজ্যের দেশে কোনো কিছুতেই শান্তি নাই!
আপনের লেখা গুলি পড়লেই আপনেরে খালি চেনা চেনা লাগে।
লেখার ধরনের জন্য হৈতে পারে,
পড়ার সময় মনে হয় আমার পাশে বইসা কেউ এইসব বলতাছে।
ঢাকা আসার আগে পর্যন্ত সবার লাইফই অন্যরকম সুন্দর থাকে।
একা চুপচাপ বসে সমূদ্র দেখার মত ভালোলাগা মুহূর্ত দুনিয়াতে কম আছে।
আপনার ও আপনার বাসার সবার জন্য অনেক অনেক ভালবাসা।
বিঃদ্রঃ আচ্ছা ভাই,
এবি তে ইউজার নেম বদলানোর নিয়ম টা কি আপনার জানা আছে?
রনি ভাইরে অনুরোধ কইরা দেখেন... কাম হইতারে
রনি ভাইরে অনুরোধ কইরা দেখেন... কাম হইতারে
ধন্যবাদ ভাইজান। আপনাদের লেখা আরও বেশী পছন্দ করি। তাই তো এসব বেহুদা লেখা লিখে যাই টেনশন ছাড়া!
শান্তর লেখায় সবসময় একটা আকর্ষন থাকে।
লেখা টা আমার ছোটবেলা সামনে নিয়ে চলে এলো।
আপনার দেভদাস সুপার আগায়তছে। পর্ব সংখ্যা বাড়াতে থাকেন!
বেশ লাগে তোমার লেখা গুলা...
ধন্যবাদ নাগরিক কবিয়াল। অনেক অনেক শুভকামনা!
শান্তর লেখা পড়তে সবসময়ই ভালো লাগে। সাবলীল লেখা। পড়তে আরাম।নিয়মিত লেইখো।।
আপনি লেখা ছাইরা দিছেন কেন? লিখেন ক্লান্তিতে থাকলেও।
আপনার লেখা ভালো তার চেয়েও ভালো পাই আপনাদের এই স্নেহ!
শান্তর লেখা পড়তে সবসময়ই ভালো লাগে। সাবলীল লেখা। পড়তে আরাম।নিয়মিত লেইখো।।
থ্যান্কু আপু। অনেক ভালো থাকেন! আপ্নারা পড়েন বলেই তো লিখি!
এত স্বাভাবিক ঘটনাগুলি কিভাবে লেখার গুনে অসাদ্গারন হয়ে উঠে। লেখা পড়তে পড়তে সেই কৈশরে চলে গিয়েছিলাম।
শান্ত'র লেখা বরাবরের মত। ভালো। পড়ে আরাম পাই।
সবাই তোমার লেখার প্রশংসা করছে।
অন্যেরা লিখুক বা না লিখুক, তুমি নিয়মিত লিখে
যাও। ভালো থেকো।
সাধারণ কথা অসাধারণ হয় লেখার গুণ, আপনার সেই গুণ ভাল মতই আছে ।
সাধারণ কথা অসাধারণ হয় লেখার গুণে, আপনার সেই গুণ ভাল মতই আছে ।
মন্তব্য করুন