দূরে থাকা মেঘ তুই দূরে দূরে থাক!
ইদানিং প্রত্যেকটা সকাল শুরু হয় অনেক ভোরে। আমার যদি ঘুম থেকে উঠার তাড়া থাকে সামান্য, তাহলে আমি অন্তত রাতেই দুই তিন বার জেগে উঠি, সময় দেখি আবার শুই আবার উঠি এভাবেই চলে। পাচটার দিকে উঠে পড়ি। উঠেই প্রথম কাজ মোবাইলে ফেসবুক স্টেটাস দেখা মাইনষের। এই অভ্যাসটা মোটেও সুবিধের না। চোখই ভালো মতো খুলি নাই তার ভিতরেই আমার অনেকের পলিটিক্যাল প্রপাগান্ডা ময় স্ট্যাটাস পড়তেছি কি একটা বিপদ আমাদের মতো লোকদের। আমার এক বন্ধু সেদিন বলছিলো যে আমরা প্রযুক্তি ব্যাবহারের সিস্টেমটা বুঝি না? যখন মোবাইলের জমানা তখন খালি মোবাইলে দিন পার। কথা বলা ম্যাসেজিং, গান শুনা ছবি তুলা কতো কাজে দিন পার। যখন ইন্টারনেট তখন শুধু ইন্টারনেট এর বাইরে আর কিচ্ছু বুঝি না। এখন ফেসবুক তাই শয়নে স্বপনে দিবা নিশি জাগরনে শুধু ফেসবুকেই সবাই পড়ে থাকি এইটাতো প্রযুক্তি ইউসের কোনো সিস্টেম হতে পারে না। কথাটা আমার খুব মনে ধরছে। অনেক কাল আগে আরেকটা কথা শুনছিলাম যে যাদের মোবাইলে ইন্টারনেট আছে তারা রাতে ৩৫-৪০ মিনিট শুয়ে পড়ার পরে ঘুমানোর চেষ্টা করে। এইটা নাকি এক অলিখিত নিয়ম। যে সারাদিন রাত নেটে বসেও ঘুমানোর আগে রাতেও মোবাইল নিয়ে গুতাগুতি করার আগ্রহে ভাটা পড়ে নাই অনেকের। যাই হোক প্রতিটা সকালই শুরু হয় আমার অনেক ভোরে। ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ি। তখনি কেডস পড়ে বেরিয়ে যাই। সাধারনত হরতাল না থাকলে আমি গেঞ্জী পড়ি না। গেঞ্জী পড়তে আমার ভালো রকমের অনীহা। কিন্তু হরতাল কিংবা এমনি সকালে পড়তেই হয়। বের হই সাথে থাকে সাইফ কিংবা অনিক তাদের ভেতর থেকে একজন কিংবা কপাল ভালো থাকলে দুই জন। তিনজন থাকলে দারুন আড্ডা হয়। দুইজন থাকলে দোড় হাটাহাটিতে আগ্রহ বাড়ে বেশী আর একজন শুধু আমি থাকলে কানে হেডফোন দিয়ে হাটতে হাটতে বিষন্ন লাগে। আবার মাঝে মাঝে খুব সতেজ ভালো লাগাও কাজ করে। ডিপেন্ড করে রাতে কেমন ঘুমালাম বা দিনকাল কেমন যাচ্ছে তার উপরে! তবে আমি খুব ইঞ্জয় করতেছি সকালের এই হাটা। কারন সকাল সকাল চোর পুলিশ খেলায় নামতে হয়। সাইফের চোর পুলিশ খেলা হলো তার আব্বার প্রচুর বন্ধুরা হাটে তারা যেনো না দেখো দেখলেই নাকি শত সহস্র প্রশ্ন নাকি করবে? অনিকের চোর পুলিশ খেলা তার বোনের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় স্ব্জনদের মেলা বসে তাদের থেকে এড়ায় চলা। আর আমার আগে ছিলো না সাম্প্রতিক কালে শুরু হইছে। আমার আম্মুর মামতো ভাই বসুন্ধরার বড় চাকুরে প্রভাবশালী মডেল জগিং করে। বলা যায় উনি থাকে আমার চায়ের দোকানের পাশেই তাই রুট একটাই। তবে আমি সযতনে চেষ্টা করি যেনো না দেখে উনি, তাও মুখামুখী হয়ে যাই কিন্তু আমি কোনো কথাই বলি না। না চেনার ভান করে হাটি জোরে। আমার আসলে আত্মীয় স্ব্জন মোটেই ভালো লাগে না। কারোর সাথে সামান্য ভদ্রতা দেখানোতাও আমার কাছে কেমন জানি ছোটোলোকি আচরন মনে হয়। তাই সব সময় আমি আমার মতোই থাকি। তবে সকালে জিয়া উদ্যানে যেতে যেতে ইদানিং প্রচুর চেনা মুখ হয়ে গেছে। এবং সুবিধা হলো প্রত্যেকটা চেনা মুখের নির্দিস্ট একটা জায়গা আছে সেখানেই তাকে পাওয়া যাবে। এমন চার পাচ আংকেলের একটা গ্রুপ ব্যায়ামের নামে মাঠা বানায় এমন এক ফেরীওয়ালার পাশের লনে বসে থাকে। আর উনারা সারা সকালে এনিমেল প্লানেট, ন্যাশনালে জিওগ্রাফিকে কি দেখছে তাই নিয়ে শুধু আলাপ। আবার আরেক গ্রুপ আছে যারা ছোলা ওয়ালার আশে পাশে থাকে তারা বেশীর ভাগই সাবেক আমলা ও ব্যাবসায়ী গোছের। নিজেদের জীবনে কে কিভাবে কারে সাইজ করছে তার আলাপ শুধু। এরা বেশীর ভাগই আমারদেশ পাঠক। তবে আমারদেশের দুস্প্রাপ্যতায় তাদের সংগী এখন নয়াদিগন্ত। আরেক গ্রুপ আঙ্কেল সমাজ আছে যারা একটা দল বেধে ব্যায়াম করে। তবে তাদের ইন্সট্রাক্টরটা পুরাই লেডিস। বিশাল পেটের অধিকারী। এরকম ভুরিওয়ালা লেডিস টাইপের পুরুষেরা হবে ইয়োগার টিচার তা বাদ দিয়ে উনি ব্যায়াম করায় আংকেলদের। সেইখানের এক আংকেল দেখলাম আজ ব্যাপক খুশী। খুশী হবার কারন কি? কারন তার বউয়ের ছবি গতকালকের প্রথম পাতায় আসছে। তিনি বরিশালে তার এক আত্মীয়কে তা জোগার করে দেখতে বলতেছেন। আমার ধারনা সম্ভবত সেরা রাধুনী টাধুনীর ব্যাপার স্যাপার। বেচারার বউ খুব ব্যাস্ত আজ ঢাকা কাল খুলনা এরকম শিডিউল। বেচারা আংকেলের কথা চিন্তা করতেছি। আসলেই বেচারা কারন দেশ সেরা রাধুনী বউয়ের রান্না অথচ নিজে খেতে পারে না! সেইখানে আরো কিছু আংকেল আছে খুব মজার। এক আংকেলের কথা বলতে পারি বিশাল বপুর। বেচারার শরীর নড়ে না। তাও জোরে শাহাদাতের বোলিং মতো শব্দ ইয়াহ ইয়াহ ইয়া। এখন একবার পুলক সাইফ আসছে আমি তখন বাড়িতে। সাইফ আদরের ছোটো ভাই তাই পুলককে মনোস্টার ডেকে খেপাচ্ছে এমন সময় আংকেল কট মট চোখে ইয়াহ ইয়াহ করতে করতে তাকিয়ে আছে। সাইফ ফিক করে হেসে বলে আংকেল আপনাকে না এই লিটল হাল্ক বড় ভাইকে বলি!
অনেকে তরুন সমাজ কেউ দেখি তবে তাদের সংখ্যা কম আর অনিয়মিত। তবে সব চাইতে কম তরুনী সম্প্রদায়ের। তরুনী বালিকারা মনে হয় সকালে হাটা হাটি ওতো পছন্দ করে না। তাও কয়েকটা মেয়ে কমন। যেমন ইয়া লম্বা সাদা গেঞ্জী পড়া এক মেয়ে নিয়মিত আসে। তার বাসা মে বি আমাদের ওখানেই। প্রতিটা সকালেই সেই মেয়ের সাথে সরাসরি সামনে পড়ে যাই তিন চারবার। মনে মনে চিন্তা করি রনবীর কাপুরদের জীবন কতো দারুন। সিনেমার পর্দায় তারা অপরিচিত মেয়ে দেখলেই বান্দরের মতো নাচতে নাচতে বলবে বেদতমিজ দিল বেদতমিজ দিল মানে না মানে না! আর আমাদের জীবন এভোয়েডের। সামনে পড়লো চোখ নামিয়ে অন্যদিকে ফিরে থাকো। আর আরেকটা মেয়ে আসে তার বাবার সাথে। তার বাবা ছয়ফুটি লম্বু এমন ভাবে মেয়ের সাথে হাটে যেনো বডিগার্ড লাভলি সিং রিপোর্টিং। এই মোটামুটি চেনাজানার পরিধি। আর ব্যাপক সংখ্যক আপু লেভেলের মহিলা লোকজন আসে। তারা গাড়িতে আসে। কিছুক্ষণ হেটেই আড্ডায় বসে পড়ে। আর কিছু বোরকাওয়ালী তারা হাটে আর হাটে থামাথামি নাই। গরমে বোরখা ভিজিয়ে টিজিয়ে গোসল অবস্থা তাদের সবার। আর কিছু আসে একেবারেই বুড়ো। উনারা এসে বসে থাকে। তাদের নাম দিলাম বুড়ো সমাজ। এই বুড়ো সমাজেরা সব এমপি হোস্টেলের ওদিকে রাস্তার পাশে যে সারি সারি কৃষ্ণচুড়া রাধাচুড়া সমাহার সেখানে বসে থাকে। আমিও সেই ফাকা ফাকা বুড়ো সমাজের সাথে দূরে বসে রেস্ট নেই। এই সব বুড়ো সমাজরা আবার হাই সোসাইটী মেইনটেইন করে। তাদের দেখলাম গুনগ্রাহী আন্টি মহিলাদের অভাব নাই। সবার সাথেই তারা আপন মনে গল্প জুড়ে দেয়। এরকম এক সিনিয়র মুরুব্বীর সাথে পরিচয় হলো। উনার সখ হইছে ফুল তোলার আমাকে দিলো লাঠি বললো ফুল নামায়া দেও। আমি চাহিদা মাফিক তাকে অনেক রক্তজবা নামায় দিলাম তিনি খুব খুশী হয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। আমার পড়াশুনার খোজ নিলেন। খুব উৎসাহ দিলেন। ডীনের নাম টিচারদের নাম শুনলেন। বললেন তুমার তো খুব ব্রাইট ফিউচার। চাকরী বাকরী পেলে এই হাটার অভ্যাস ছেড়ো না। এরকম প্রশান্তি ময় সকালে সবারই আসলে হাটা উচিত। আরো কথা বললেন। এমন সময় তার এক গুনগ্রাহী মহিলার আবির্ভাব। উনি বললেন আমার জন্য ফুল তুললেন আমাকে দিবেন না কেন? হাবিজাবি আরো কতো কথা। আমি দূরে সরে গেলাম মুরুব্বীর থেকে বিদায় নিয়ে। বসে ছিলাম একাই এমন সময় দেখি একটা ছেলে আমার কেনো জানি চেনা চেনা মনে হলো। পরে মনে পড়লো এতো সংগীত শিল্পী লিমন একটা সুন্দরী তরুন হাটছে। আমি প্রথমে দেখেই ঘাড় ফিরিয়ে নিলাম। অবাক করার ব্যাপার হলো লিমন আমার সামনে থেমে জিগেষ করলো কি অবস্থা কেমন আছো? এতো ভাবে আছো কেন? আমি বললাম কই ভাবে? আপনারা শিল্পী মানুষ আমগো কথা মনে রাখবেন ভাবি নাই। বললো ঢং ছাড়ো কি করতেছো চাকরী করো না? আমি বললাম না এমবিএ করতেছি। আমার নাম্বার নিলো মিসড কল দিলো। আমি তো এরকম আচরনে অবাক পুরাই। আজ সুর্য কোন দিকে উঠলো? আমি এককালে একতার মিউজিক থেকে যখন লিমনের গান বের হতো মিক্সডে তার বিশাল ভক্ত ছিলাম। তখন আমার ছেলে মানুষী আবেগ তার স্টুডিওতে যেয়ে দেখাও করে আসছিলাম। তারপর আর খোজ নাই। তারপর লিমন মিউজিক ডিরেক্টর শিল্পী মানুষ তার আর কোনো কিছুই জানার ইচ্ছা জাগে নাই। এতোদিন পরে তার এই সামান্য অভাজনের উপরে এতো বিনয় দেখে টাস্কিত খেলাম। সংগী মেয়ে টা আমার দিকে এমন ভাবে চাইছিলো মনে হয় আমি বড় কোনো হেডামওয়ালা মানুষ। ফিরলাম এই মন ভালো লাগা নিয়ে। নাস্তা করলাম হোটেলে। নান্নু বউ নিয়ে গেছে বাড়ীতে তাই দোকান অফ। বাসায় ফিরে গোসল করেই নেটে বসে গেলাম। আর লেখা হলো এই পোস্ট। শিরোনামটা জলের গান ব্যান্ডের একটা গান থেকে নেয়ে। সিডিটা কিনি নাই কিনতে হবে। যদিও সব গানই আগেই শুনা। আর ভাবতেছিলা আমিও একদিন বুড়ো হবা। বসে থাকবো। আর গুনগ্রাহী মহিলা সমাজদেরকে চায়ের দোকানে যে আড্ডা পিটাইতাম তার গল্প করবো।
মন ভাল করে দেওয়া পোস্ট।
মন ভালো করে দেয়া কমেনট!
স্যালুট
স্যালুট দেয়ার কিছু নাই। ভালো আছো মামা?
তোমার পোষ্ট পড়ে মেলাদিন আগে রমনায় জগিং করার কথা মনে পড়ে গেল। এখন মোবাইলে ৩/৪ বোমা না বাজলে সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না
ভালো আছো চাঙ্কু? হাজার বছর পরে তুমারে দেখলাম। ভালো থাকো নিয়মিত আইসো এদিকে!
অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম, সিমপলি অসাধারণ
থ্যাঙ্কু আপু।
লেখা ভাল্লাগছে।
নিজের সময়টারে তুলে রাখতেসেন, এই চেষ্টা ধইরা রাইখেন।
ধন্যবাদ। ভালো বলছেন সেই সময় ধরে রাখারই চেষ্টায় আছি!
চান্কুরে মেলাদিন পরে দেখলাম। হ্যা, আসে কেমুন! জানবার মন চায়!
বিজি ম্যান ভালোই হয়তো আছে চান্তেক কুল নিয়ে!
মন্তব্য করুন