ফেরার গল্প-১
এখানে একটা সত্যিকারের পুকুর ছিলো। আর কেউ না মনে রাখলেও আমি সেটা মনে রেখেছি। সেই পুকুর পাড়ে কত শত উদাসী দুপুর যে কাটিয়েছি ভাবলেই এই খড়খড়ে রোদের দুপুরটাও বেশ মায়াময় হয়ে ওঠে। আমি অনেকদিন পরে এই রাস্তায় ফিরছি। ঐ যে ওখানে একটা বিষণ্ণ আতাগাছ দেখছেন, ওটার পাশের গলিটা দিয়ে পঞ্চাশ গজ মত গেলেই আমার বাড়ী। কিংবা বলতে পারেন আমার বাড়ী ছিলো। এখন কেউ আছে কি না, সেটা জানা নেই।
একবিন্দুও বাড়িয়ে বলছিনা, আমি আসলেই ফিরে এসেছি। যদিও চেনা রাস্তাটা আর আগের মতো চেনা নেই। কালাম মামার চা সিগারেটের দোকানটা যেখানে ছিলো, সেখানে একটা কিম্ভুত আকৃতির হাইরাইজ দেখছি। কে জানে, কালাম মামাই এটার মালিক কি না।
এই যে লাল ইটের নোনাধরা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে, এখানে থাকতো রচনা'রা। তবে এই বাড়িটা এরকম ভাঙ্গাচোরা ছিলোনা তখন। এই পাড়ার সবচে' আধুনিক বাড়িটার এমন হতশ্রী দশা দেখে বুক হু হু করে উঠছে। একসময় রচনার সাথে একটু কথা বলতে পারলে তাদের বাসার লনে খানিকক্ষণ খেলাধুলা করতে পারলে পাড়ার কিশোরদের কাছে নিজেকে অনেক বড় লাগতো। কামরুল কিংবা নওশাদের সাথে যদি রচনা বেশী সময় কথা বলতো, তাহলে কিশোর বুকে চিনচিনে ব্যাথা হ'তো। সেই দিনগুলোও কতদুরে ফেলে এসেছি...
একদিন রচনার বিয়েও হয়ে গিয়েছিলো তার বাবার মতই এক ব্যবসায়ীর সাথে। তরুন আমি, কামরুল, নওশাদের জন্য সেদিনটা ছিলো অনেক কষ্টের। গাড়ি চেপে বরের বাড়িতে রচনা চলে যাবার পর আমরা তিন বন্ধু মিলে সারারাত একসাথে হেঁটেছিলাম। কেউ কোনো কথা বলিনি, শুধু একের পর এক সিগারেট পুড়েছিলো আমাদের হাতে।
কামরুলরা এই পাড়া ছেড়েছিলো তার কিছুদিন পরেই। আর কোনো খোঁজ পাইনি ওদের। নওশাদ এখানেই ছিলো। ঐ যে বাঁ পাশে টিনের চাল ওয়ালা ঘরগুলো উঠেছে, ওটা ছিলো নওশাদদের উঠোন। একটা বিশাল আমগাছ ছিলো উঠানে। নওশাদের মা এই আমগাছের আম দিয়েই প্রতি বছর আমসত্ত্ব বানাতেন। আমরা ছিলাম তার রাক্ষস কুল।
সময় অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিলো, সাথে নওশাদটাও অনেক যাযাবর হয়ে গিয়েছিলো। আমি চাকরী পাবার অল্প কিছুদিন আগে নওশাদ একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলো। কোন মেয়ে নাকি ওকে প্রত্যাখান করেছে তাই। সেই যাত্রা বেঁচে ওঠার পর, নওশাদের মা ওকে ধরে বিয়ে করিয়ে দিলো। কেয়া ভাবী দারুণ একজন মানুষ ছিলেন। নওশাদকে একটানে যাযাবর থেকে গৃহস্থ বানিয়ে ফেলেছিলেন। সব পাগলামি ঝেড়ে ফেলে নওশাদ নিজের ব্যবসা শুরু করলো, আর বছর না ঘুরতেই মিষ্টি একটা ছেলের বাবাও হয়ে গেলো।
আহ! আমার ফিরে আসার গল্প বলতে গিয়ে দেখি বিশাল কাহিনী ফেঁদে বসলাম। যাক্, আমিও মোটামুটি দু'-তিন বছর চাকরী করে মা-বাবার চাপে পড়ে লোপাকে বিয়ে করে ফেলি। নিজের স্ত্রী বলে বলছি না, লোপার মত মেয়েকে পাওয়া আমার সাত জনমের ভাগ্য ছিলো। অন্যের বাবা-মা কে কেউ এভাবে আপন করে নিতে পারে, আমার জানা ছিলোনা। আর আমার বাবা-মা? তারাও লোপাকে পেয়ে যেনো নিজের হারানো মেয়েকে খুঁজে পেলো। বলতে বোধহয় ভুলে গেছিলাম, আমার একটা বড় বোন ছিলো। আমার জন্মের পরপরই, মাত্র তিন দিনের জ্বরে ভুগে মারা যায়। যা হোক, লোপার কথা বলছিলাম...
তারপর.......? অপেক্ষায়
কাল্কেই অপেক্ষা শেষ হবে আশা রাখি...
সুমনা আপুর জ্বর ৬ঘন্টা ছিল মাত্র, আম্মু ভাল করে কিছু বুঝে উঠার আগেই আপুকে বিধাতা তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমার জন্মের এক বছর একদিন আগের ঘটনা!
যাই হউক, ভাবীর কথা শুনার অপেক্ষায় রইলাম
খুব কষ্ট লাগলো কথাটা জেনে
ভাবী কই পেলেন
এখন খেয়াল করলাম যে এইটা গল্প কইতেসেন আপ্নে আসলেই কি এইটা শুধুই গল্প?
হা হা আসলেই এইটা শুধুই গল্প...
আমি তো প্রথমে ভাবসিলাম শুচিস্মিতার আম্মুর কথা বলতিসেন, পরে দেখি গল্প ট্যাগ করা
শুচিস্মিতার আম্মুর কথা হয়তো অন্য কোন সময় বলবো
আমি কিছু ভাবছি না, শুধু গল্প পড়ছি
গল্প কেমন হচ্ছে বললেন না
পুরনো দিন গুলোতে আবারও ফিরে গেলাম লেখাটা পড়ে শুভ ভাই
আসলে মনেহয় পুরোনো দিনগুলোর কথাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে...
আমি প্রথমে ট্যাগ খেয়াল করি নাই।
ট্যাগটা না দিলে কি সত্যি ঘটনা ভাইবা নিতেন?
একটু রাগ লাগতেছিল, এতোদিন ধরে পরিচয়- দাওয়াত না দিয়া বিয়া করে ফেললেন!
হা হা হা =))
লোপা অনেক কমন একটা বাংলাদেশি নাম। এটা কোন দেশি শব্দ কেউ জানেন?
আমার অন্ততঃ জানা নাই। তবে লোপামুদ্রা নামটা শুনলে মনেহয় এই নামটা বাংলা/সংস্কৃত ভাষারই শব্দ...
শব্দটার অর্থ কি?
জানিনা
পাঁচ তারা পাওয়ার মত লেখা।
চলুক। অপেক্ষায় থাকলাম।
পাঁচতারা একতারা ব্যাপার না, অনেক দিন ধরেই প্লটটা মাথায় ঘুরতেছে। আলস্য কইরা লেখা হয়না...
দুই পর্ব একসাথে পড়বো দেখে বাকীর খাতায় রাখলাম।
কিন্তু আপনি জানলেন কেম্নে যে দুই পর্বেই শেষ কইরা দিমু?
মন্তব্য করুন