কুয়োর ব্যাঙের স্বর্গ ভ্রমন-১
এই গল্পের প্রধান চরিত্র আমি নই। প্রধান চরিত্র চার ল্যাবরেটরিয়ান। সুমন (তাস্তুবালা), মাকসুদ (মাক্কু), শিবলী এবং হাসিব। এই চার বন্ধু এই শহরের এমন চারটি মানুষ, যারা অবাধ স্বাধীনতায় বড় হয়েও বেড়ে উঠেছে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পথে। কোন নেশা নেই, কোন অনৈতিক কাজে তাদের সায় নেই।মোটেই প্রশংসা করছিনা। যা সত্য শুধু ততটুকুই বলছি। এই চার বন্ধু তাদের অবাধ স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে অপার বিস্ময়ে দেখছে পৃথিবীর অনন্য রূপ। এরা টাকা জমিয়ে দেশে বিদেশে ঘুরতে পছন্দ করে। এমন নয় যে স্বচ্ছল হয়েই এখন তারা ঘোরে। তারা চারজন বেড়ায় তখন থেকে, যখন তারা ছিল স্বচ্ছলতার সীমার বাইরে। আমার ভালো লাগাটা এখানেই।
এই চার বন্ধু (নিজেদের যারা ফোর্স বা 4's বলে থাকে) এমন সব জায়গা খুঁজে বের করে যেখানে অ্যাডভেঞ্চার করা যায়।নেট-এ নাক ডুবিয়ে অ্যাডভেঞ্চারাস জায়গা খুঁজে বের করাতে হাসিব হলো ওস্তাদের ওস্তাদ। এই নাক ডুবানি থেকেই আড়াই বছর আগে তারা খুঁজে পেল এমন একটি জায়গা, যেটিকে একজন পর্যটক অভিহিত করেছিল, “লস্ট প্যারাডাইজ" নামে। জায়গাটি হলো, মালয়শিয়ার পারহেনশিয়ান আইল্যান্ড। আড়াই বছর ধরে কতো কম খরচে কোন কোন উপায়ে যাওয়া যায় সেখানে- এসব নিয়ে গবেষণা করলো হাসিব। এই বছরে এসে হাসিব হেসে উঠলো। কারণ, “লস্ট প্যারাডাইজ" উপভোগ করার জন্য সে সব সম্ভব পথ খুঁজে বের করে ফেলেছে। সুমনও তৈরি তার যথার্থ কিপ্টামি ব্যবহার করে বন্ধুদের চমৎকার একটি ট্যুর উপহার দেয়ার জন্য । উল্লেখ্য, সুমন যতই কিপ্টামি করুক না কেন, বাকী তিনজন ট্যুরের জন্য বরাদ্দ সব টাকা সুমনের হাতে তুলে দেয়। সুমন সেই বরাদ্দ টাকা দিয়েই ট্যুর ঠিকঠাকমতো সম্পন্ন করে।মাক্কু তৈরি, শিবলীও। এবারও প্রস্তুতিতে কোন পরিবর্তন ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাক্কুর বোনটা আমেরিকা যাওয়ার বিশাল সুযোগ পেয়ে গেল। ফলে মাক্কুর রণে ভঙ্গ। বাকি তিনজন হতাশ।
গল্পের ঠিক এই জায়গাতে আমার প্রবেশ সশরীরে। ভাগ্যক্রমে (কেনো ভাগ্যক্রমে- আমাদের সেই মজার বিয়ের গল্প পরে হবে) হাসিব নামক ব্যক্তিটি আমার জামাই হওয়াতে আমার ভাগ্যে শিঁকে, তীর, বল্লম, শাবল- সব ছিঁড়লো। হাসিব এই জায়গা খুঁজবেই। ওর তো নেশা! ফলে মনে মনে বললো, “বউ-ই সই"! আমি খুশিতে ডগমগ। বেড়ানোর ত্যাড়া নেশা যে আমার মাঝেও নেই- তা নয়। আমরা দুজন কোথাও যাইনা- তাও ঠিক নয়। তবে এটাতে যাওয়া ছিল আমার হিসাবের বাইরে। আমি কখনো তাদের বন্ধুদের মাঝে আমার পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির অবয়ব নিয়ে প্রবেশ করিনা। ফলে, আচমকা এই সুযোগে আমি ব্যাপক খুশি হলাম। ভিসা হলো, টিকিট হলো, লাগেজ তৈরি, আমরাও তৈরি "লস্ট প্যারাডাইজ" আবিষ্কার করার জন্য।
২৪ তারিখের বিকালে শুরু হলো যাত্রা। এবার চলবে সচিত্র বর্ণনা।
মালয়শিয়ার এয়ারপোর্ট সংলগ্ন টাইনি "টিউন" হোটেলে একরাত কাটিয়ে পরের দিন আবার এয়ার এশিয়ায় চেপে পঞ্চান্ন মিনিটের ফ্লাইট ধরে পৌঁছালাম কোটা ভারু। এখান থেকে জেটিতে পৌঁছাতে প্রয়োজন ট্যাক্সির। সে বহু খরচ। জুটিয়ে নিলাম আরেক জুটিকে। পর্তুগিজ দুই গ্রাফিক্স ডিজাইনার আমাদের সাথে ট্যাক্সি শেয়ার করলো। এরা আবার নয় মাস ধরে ঘুরেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে (বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছাড়া- এই বিষয়ে আগে লিখেছি)। পারহেনশিয়ান তাদের যাত্রার শেষ অধ্যায়। এরপর দেশে ফিরে বিশ্বকাপ দেখবে।
এক ঘণ্টা পয়ত্রিশ মিনিট ট্যাক্সিতে বসে ফের এলাম জেটিতে। সেখানে হলো হোটেল বুকিং। দশ লিটার পানির একটা বিরাট ক্যান কেনা হলো। যেটা নিয়ে প্রথমে আমরা মজা করলেও পরে প্রয়োজনীয়তাটা টের পেয়েছিলাম। এরপর শুরু হলো মোটামুটি ঘণ্টা ক্ষানেকের স্পিডবোট যাত্রা..
বাসের যাত্রীদের মতো স্পিড বোটের বিভিন্ন যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হলো বিভিন্ন দ্বীপের সামনে। এক একটি দ্বীপের চারপাশে এক-একটি রিসোর্ট। যেখানে লোকালয়ের ব্যস্ততার ছিটেফোটা নেই। সংরক্ষিত দ্বীপ, দ্বীপবাসী এবং দ্বীপ সংলগ্নবাসী। বিভিন্ন দ্বীপ ঘেষে মাথে তুলে জেগে আছে লাইম স্টোন গুলি..দেখলেই মনে হয়- একটু ছুঁয়ে দেখি..
আমাদের কোরাল ভিউ নামের রিসোর্টটি একটু পরের। তাই আমরা নামলাম সবচেয়ে পরে অন্যান্য দ্বীপ স্বল্প সময়ের জন্য দেখার পর। নামলাম বললে ভুল হবে। স্পিডবোট থেকে চাপলাম আরেকটি নৌকায়।ঐ এলাকায় যা পরিচিত ওয়াটার ট্যাক্সি নামে। ওয়াটার ট্যাক্সিতে ৫ মিনিট পারি দিয়ে পারহেনশিয়ান আইল্যান্ড।
গোড়ালি ভেজানো সৈকতের পানিতে নেমে মনে হলো- কি দেখলাম!! অদ্ভুদ সুন্দর একটি দ্বীপ। খাবারের পানিও সেখানে নোনা। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যাওয়ায় ভাবলাম একটু(!) সৈকতে নেমে পরেই খাই। গেলাম "কোরাল ভিউ" এর রিসিপশনে।এই রিসোর্টের সম্মানিত অতিথি হিসেবে নিজেদের তালিকাবদ্ধ করে নিলাম।এর মাঝে হাসিব জেনে নিল ডে ট্রিপ-এর কি ব্যবস্থা। হোটেলের সবাই ইয়েস-নো-ভেরি গুড টাইপের ইংরেজি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, কোরাল দেখা বা স্নর কেলিং-এর জন্য ডে ট্রিপের দরকার নেই।আমরা ভাবলাম, এলাকার লোক! ফাঁপর নিচ্ছে..! গেলাম রুমে। ছোট ছোট কাঠের রুম। বিদ্যুৎ নেই। তাতে কি জেনারেটরের বদৌলতে এসি আছে, ফ্যান আছে।থাকার চমৎকার ব্যবসথা। পাখির ডাক। কটেজের সামনের বারান্দায় অসংখ্য কাঠবেড়ালি। আহা! মাত্র একদিনের ব্যবধানে কোথা থেকে কোথায় চলে এলাম। কুয়ার ব্যাঙ পৃথিবীর এই স্বর্গে এসে হেসে উঠলো আপন মনে।হাসিব তৈরি ততক্ষণে সমুদ্রে নামার জন্য। আমিও তাই। নামলাম। মনে হলো, সমুদ্রটা এখানে এই রিসোর্টের ঠিক যেন সুইমিং পুল..। আর তার নিচে জলে ডোবা অদ্ভুদ এক পৃথিবী! এক হাত দুরত্ব থেকে বিচিত্র সেসব কোরাল। ঝাঁক ঝাঁক মাছ আর নীল পানি।নীলের যতগুলো শেড আছে সব যেন এসে ধরা দিয়েছে আমাদের চোখের সামনে।সমুদ্র সৈকতে আমাদের সেই "একটু" সময় শেষ হয়েছিল বিকাল পাঁচটায়।
তারপর ফ্রেশ খাবার..আমি শশা-গাজর খাওয়া খরগোশ ঐ কয়টা বেলা খেলাম হাঙরের মতো। থেকেও যেমন শান্তি। খেয়েও তাই।
চলবে...
আমি ছবি আপলোড করতে পারছিনা..সহায়তা করুন..
ভালো তো
ধন্যবাদ..কিন্তু ছবি আরো দিতে চাই..তা না হলে মজা কম..
বাহ, মজা তো। দারুণ, আরো ছবি দিন
আমাদের সেইন্টমার্টিনকেও এমন করতে হবে।
ভালো লাগলো। আরও ছবি দিন প্লিজ
পারহেনশিয়ান আইল্যান্ড যাইতাম্চাই
জোস
পয়সা হোক, আমিও একদিন... 
বড় ভাই, অত পয়সা লাগেনা..একটু কেরিক্যাচা করলেই হয়ে যায়..
দারুণ, চলুক। ছবি দেন আরো। আপনারে হিংসা ঈর্ষা সব করলাম
অজন্তা-ইলোরার প্ল্যান করেন ..জলদী..
ছবিতো ঠিকমতই আপলোড করছে.. এই তরিকায় বাকিগুলা করে ফেল
ভাইরে..কিছুতেই পারছিনা..খালি কয়, "ইউজার ডিরেক্টরি লোডেড.."..
আপনার আসলেই স্বর্গভ্রমন হয়েছে
প্রথম থেকে এই লাইন পর্যন্ত লেখা চমৎকার হইছে।
ইটা কিতা মাত মাতরায় বাইসাব..বর্ণনা বালা অয় নাই কিতা!!
বালা অয় নাই মানে। আমি তো প্রথম তিন প্যারা পইড়া আপনার লেখার পাঙখা হয়ে গেছি।
:\
চলুক
এই তো হইছে... সুন্দর সুন্দর ফটো আসতেছে... গুড... কে বলে রুম্পা পারে না?
জানি আমি পারবো..
শেষের ছবিটা দারুণ। মনে হয় তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে
দারুণ সব ছবি। জোশশশশশশশশশশশশশ।
ছবির সাথে সাথে লেখাও ভালো লাগছে...
মন্তব্য করুন