মধ্যরাতের চা খাওয়া
রাত এগারোটারও বেশি বাজে। বাবা খেয়ে ঘুমিয়ে গেছেন। বাসায় জেগে আছি আমরা তিন জন। টিভিতে তেমন কোন জমজমাট প্রোগ্রাম নেই। তিনজনেই আমার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছি। কাজের মেয়েটা ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে। ঘুমােত যেতে বলা হয়েছে তাকে। চোখে ঘুম, অথচ ঘুমাতে যাচ্ছে না। এই এক সমস্যা কাজের মানুষদের নিয়ে। যতক্ষণ টিভি চলবে, সুযোগ পেলে ততক্ষণ টিভি দেখবে। দেখুকগে...
আড্ডা চলছে আমাদের তিনজনের। নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নেই। রাতও বাড়ছে। একটু চা খেতে পারলে মন্দ হত না। কাল ছুটির দিন। অফিসের টেনশন নেই। কাজের মেয়েটাকে বলার জন্য আস্তে আস্তে ড্রয়িং রুমে এসে দেখি- টিভি দেখতে দেখতেই বেচারি ঘুমিয়ে পড়েছে। টিভি চলছে। ওকে আর উঠাতে ইচ্ছে হলো না। বেচারি ঘুমাক। আস্তে করে টিভি আর লাইটটা বন্ধ করে চলে এলাম রুমে। বাকী দুজন কথা বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারিনা, দুইজন মানুষ একসাথে কথা বললে শোনে কে ? ওরা বলে, ওরাই শোনে, একটু পর পর হাসে...
যাই হোক, ওদের বল্লাম কাজের মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে। তোমাদের কেউ একজন যাও- চা বানিয়ে নিয়ে আসো। তুমিই যাওনা প্লিজ ! চা বানিয়ে আনো। রান্নাঘরের সেলফে চা পাতা, দুধ, চিনি সবই আছে। উল্টো আমাকে বলে। এত রাতে আমার একদমই চা বানাতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে। কী যে করি ? হঠাৎই মাথায় বুদ্ধিটা এল। ওদের বললাম, চলো- বাইরে থেকে চা খেয়ে আসি। ওরা বললো, রাজি। চলো, বাইরে যাই। এক কথাতেই রাজি হয়ে যাবে, ভাবিনি। একটু অবাকই হলাম...
তিনজন বাসা থেকে চুপি চুপি বেরিয়ে পড়লাম। বাবা যাতে টের না পায়। তাইলে কেলেংকারীর সীমা থাকবেনা। বাসার মেইন গেটে তালা লাগালাম। গেরেজের তালা খুলে মটর সাইকেল বের করলাম। ঠেলে নিয়ে আসলাম বাসা থেকে বেশ ক্ষাণিকটা দুরে। তারপর তিনজন উঠে পড়লাম মটর সাইকেলে...
আস্তে ধীরেই চালাচ্ছি মটর সাইকেল। এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। একটা যেনো তেনো চায়ের দোকান পেলেই হয়। গরম গরম চা খেয়ে আবার বাসায় ফিরে যাবো। অশোকতলা গলি থেকে বেরিয়ে সামনে রানির বাজার। সব সুনশান। কোনো হোটেল খোলা নেই। মডার্ণ স্কুলের সামনে যেয়ে ডানে মোড় নিলাম। ঠাকুরপাড়া পার হলাম। দুর, মেজাজটা খারাপ হচ্ছে। ২/১ টা রিকশা আমাদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। অবাক চোখে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে। রাস্তায় ৩/৪ জন নৈশ প্রহরীর সাথে দেখা হলো। তারাও অবাক হয়ে তাকালো। তবে কেউ কোনোরুপ প্রশ্ন করলো না। ঠাকুরপাড়া পেরিয়ে টমছমব্রিজ গেলাম। পেলাম না চা। জিদ চেপে গেল। চা খাবোই আজ রাতে...
এখন চা খাবার জন্য দুটো জায়গায় যেতে পারি। এক: রেল স্টেশন। দুই: বিশ্বরোড। মটর সাইকেলের পেছনে দুটো মেয়েকে নিয়ে মধ্যরাতে চা খেতে রেল স্টেশনে যাওয়াটা ঠিক হবে না। মফস্বল শহর। বিষয়টা ভাল দেখাবে না। তাছাড়া দু-একজন পরিচিত লোকের সাথে দেখাও হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কাল সকালেই বাবার কানে যাবে ঘটনাটা। বাবা কষ্ট পাবেন। এই ঝুঁকিটা নেয়া ঠিক হবেনা। বাকী রইলো বিশ্বরোড, নুরজাহান হোটেল। তিনজনে আলোচনা করে ঠিক করলাম- নুরজাহানেই যাবো। তবু চা খাবো। ওকে, লেটস মোভ টু বিশ্বরোড...
টমছমব্রিজ থেকে বিশ্বরোড নুরজাহান প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা। নো প্রবলেম। নুরজাহান হোটেলে যখন পৌঁছলাম, ততক্ষণে ক্ষিধা লেগে গেছে। হোটেলের বাইরে বিভিন্ন কোম্পানির বেশ কটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কোনোটি ঢাকা যাবে। আবার কোনোটির গন্তব্য চট্টগ্রাম, ক্ক্সবাজার। মোটর সাইকেলে আমাদের দেখে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে বাসের বাইরের এবং ভেতরের লোকজন। ওদের তাকানোকে তোয়াক্কা না করে মোটর সাইকেল পার্ক করে তিন জন ভেতরে ঢুকলাম। হোটেলের েভতর অনেক লোক। হাত-মুখ ধুয়ে টেবিলে বসলাম। কে কী খাবে ? গরুর ভুনা গোশত আর পরোটা। দুইজনেই বললো। আমার ধারনা, হাত ধোবার সময়ই ওরা প্ল্যান করেছে- কী খাবে। তিন প্লেট গোশত আর ৬ টা পরোটার অর্ডার দিলাম। বেশ আয়েশ করে মধ্যরাতে পরোটা আর গোশত খেলাম। তারপর চা। বাইরে বেরিয়ে মশলা দিয়ে বানানো পান খেলাম তিন জনই। পান শেষে বাসার পথে মটর সাইকেল ছুটালাম আমরা তিনজন। আমি, ছোট বোন সুলতানা শিপলু আর আমার বৌ মনোয়ারা মনু...
আপনাদের পরিবারটা আসলেই ইউনিক ছিলো। বাড়ির নাম ছিলো 'যন্ত্রণা'
দারুন । বাড়ী ছাড়া এরকম চা আর কোথাও কাউকে নিয়ে খাননি ???
খাইছিরে ভাই। তয় কওন যাইবো না...
দূর্দান্ত !
ধন্যবাদ জনাব, আছেন কিরাম ?
জিদের জয় হলো। আপনাকে চা বানাতে বলায় এত জিদ!
আরে না, মধ্যরাতে চা খাওয়ার জিদ সেটা
মধ্যরাতের চা, দারুন জিনিশ!!
হ, দারুনতো বটেই
কুমিল্লার আরো গল্প চাই।
যন্ত্রণা পরিবারের এরাম আরো কত গল্প আছে ! জানামু
হিংসা।
হিংসা বিয়াপক খারাপ জিনিসরে বইন
ইয়ে মানে আপনাদের ফ্যামিলিতে স্বাভাবিক কেউ নাই?
আপনের কি মনে হয়, আমরা সবতে অস্বাভাবিক !
মেসবাহ ভাই রক্স।
আপনের সেই মধ্যরাইতে মটরসাইকেলে মাইয়ারে লৈয়া ঘুরনের কাহিনী পড়নের পর এইডা লেখার অপচেষ্টা...
রক্স যদি হনতো আপনে, গুরু
লজ্জা দিয়েন্না বড়ভাই। আমি খুব বেশিদূর পর্যন্ত গেলে একটা কাহিনী লিখতে পারবো মাত্র, আপনের মতো বাস্তবে ঘটনা ঘটায় দিতে পারবো না।
আপনের কথা যদি সত্য বলে ধরে নেই, তাইলে দেখেন- আপনে ঘটনা না ঘটাইয়াও (আপনের স্বীকারোক্তি মতে) যেভাবে গল্প লেখছেন ! রক বস। আমি বাস্তবে ঘটাইয়াও সেরকম লেখার কাছাকাছিও যেতে পারি নাই- সেইটাই তফাৎ আমগো দুইজনের মধ্যে। আমার লেখায় কোনো নাটকিয়তা নাই... অথচ আপনে যা লেখছেন না ... সবই কোপাল বস !!
জটিল। আমিও কুমিল্লার পোলা। তয় ঢাকায় মানুষ।
কুমিল্লার পোলা, ঢাকায় মানুষ ! সিওর কচ্ছেনতো ?
কুমিল্লায় থাকলে কি মানুষ হৈতেন্না
অশোকতলা
এক সময়ের কতো পরিচিত নাম আর এখন মনে হয় কোমার ওপার থেকে শুনছি।
আমি মাঝে মাঝে ঢাকাতে ভাইয়ের সাথে হেটে পান খেতে যেতাম এসো পান খাই দোকানে। কিন্তু রাত ন'টা দশটায়।
তাও ঢাকা তখন অনেক নিস্তব্ধ হয়ে যেতো। আমরা ইভনিং ওয়াক প্লাস পান খেতাম।
গল্পটা নষ্টালজিক করে দিল (
আপনের পৈত্রিক নিবাস কি কুমিল্লায় ?
টমছমব্রিজ, রেইসকোর্স, ঝাউতলা, বাদুরতলা, অশোকতলা, বাগিচাগাঁও...
আমারও কত শত স্মৃতি !!
জীবনে কোনদিন এরকম (অন্যরকম) আনন্দ করতে পারবো বলে মনে হয়না
দুর, কী যে বলোনা... জীবনতো মোটে শুরু...
পারবানা কেনো ! নিশ্চয়ই পারবা
পান শেষে বাসার পথে মটর সাইকেল ছুটালাম আমরা তিনজন। আমি, ছোট বোন সুলতানা শিপলু আর আমার বৌ মনোয়ারা মনু.....................
এই এক লাইনেই পুরো লেখা মাত!
বস কী আমারে শরম দিলেন ?
মন্তব্য করুন