কাকে বলি ওগো মৃত্যু থামাও ? মরে যাওয়া বুকে এনে দাও প্রান!
অন্য সবার মতোই মন মেজাজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত। অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না সবাই ভারাক্রান্ত কিনা? কারন রাস্তা ঘাটে পাড়া মহল্লায় লোকজন টিভিতে যে মর্মান্তিক সাভার পরিনতি খেতে খেতে কিংবা হাসতে হাসতে উপভোগ করছে তা দেখে অবাক হই। হোস্টেল মুভির যেরকম নারকীয় সব সিন মানুষ ইন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে মজা নেয় লোকজন হয়তো সেভাবেই ব্যাপারটাকে ইঞ্জয় করছে। তবে কোনো বিবরনেই সাভারের এই জঘন্য গনহত্যার লাইভ দেখা আমার জন্যে টলারেট করা সম্ভব না। লাকিলি বাসায় টিভি নাই ছয় সাত মাস ধরে।
আমি আগের মতো খুব মন দিয়েও পত্রিকাও পড়ি না তাই বেচে গেছি। আর সকাল বেলা শুনি বিবিসি বাংলা। ওখানে খুব স্মারটলী এই ব্যাপারটাকে হ্যান্ডেল করতেছে। তারা সুবিধা থাকা সত্তেও মাইক নিয়ে কাউকে জিগেষ করে নাই ভাইয়া আটকে আছেন, আপনার অনুভুতি কি? বিবিসি বাংলা খবর দেয়, রিপোর্টারের কাছ থেকে আপডেট নেয় এতোটুকুই। দেশের এতো এতো চ্যানেল এখনো এই জিনিসটাই শিখলো না, যে লাশের ছবি বা মর্মান্তিক নানান কান্ড কিভাবে মীর ভাইয়ের ভাষায় ঢাকনা বা কাভার দিতে হয়? তবে একটা জিনিস ভালো যে আগের চেয়ে এখন অবস্থা ভালো প্রিন্ট মিডিয়ার। এই কিছুদিন আগেও এরকম কান্ডে পত্রিকা যে হরদম মুড়ি মুরকীর মতো ফাটা কাটা রক্তাক্ত লাশের ছবি ছাপাইতো তার হাত থেকে জাতি থেকে মুক্তি পাইছে। আর কপাল ভালো সাভার ট্রাজেডীর আগেই অন্য এক ব্যাপার নিয়ে মেজাজ খারাপে ফেসবুক ডিএক্টিভেট মারছিলাম। তাই ননসেন্স পাবলিকের শেয়ার করা লাশের ছবি হজম করতে হচ্ছে না। আসলে এতো এতো মৃত্যু যা কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। চায়ের দোকানে যখন বিভিন্ন সংখ্যা শুনি ২৬৩ বা ১৪৭ বা ২৮৫ তখন আতকে উঠি। কি অদ্ভুত এই দেশ। কি সস্তা একেকটা জীবনের পাইকারী দাম। আজ থেকে প্রায় দুই তিন বছর আগে সাপ্তাহিক বুধবারে আমার একটা লেখা ছাপায়ছিলো এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না। আমার এখন খালি সেই লেখাটার কথা মনে পড়ে। আর মনে পড়ে ফারুক ওয়াসিফের পুরানো একটা লেখার শিরোনাম প্রথমআলোয়। বাংলাদেশ যেখানে জীবন জীয়ে না! আমি ওতো মরনাতংকের লোক না। মরতে হবেই একদিন তা যেকোনো সময়েই তা অনাহুতে মতোই আসবে। কিন্তু একটা স্কুলের মাঠে এতো সারি সারি লাশ এরচেয়ে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে? শুনতে না চাইলেও স্বজনদের আহাজারি, তা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আজ ঢাকা ট্রিবিউনে একটা ছবি ছাপা হইছে যে নিখোজের পাসপোর্ট ছবি আর হাতে একশো টাকা। মেয়েটা হয়তো অনেক দূর থেকে আসছে, বাস ভাড়া দিয়ে হয়তো হাতে এই একশো দুইশো টাকাই সম্বল তাও পাগলের মতো খুজতেছে তার স্বজনকে। নিমিষে শত সহস্র জীবন স্বপ্ন সংগ্রাম শেষ করে দিতে পারায় এই দেশের নিয়তির জুড়ি নাই। সবাই বলে হায়াত মওত নাকি আল্লাহর হাতে। আমিও তা মানি। কিন্তু এরকম হিংস্র নির্মম গনহত্যা আল্লাহর কাজ হতে পারে না, এইটা শয়তান পিশাচদের কাজ। নিজেকে বিষন্ন বিলাসী পরিচয় দেই। সময়ে অসময়ে খুব মন খারাপ থাকে নিজের অবস্থায়। কিন্তু এখনো আমি সেই ভাগ্যবানদের দলেই যাদের এই সব কোনো বিপদই আচ করে না। কিন্তু সামনেই আমাদের দিকেও আসবে। পালিয়ে বাচার শত শত চেষ্টাতেও হায়েনাদের বর্বরতার কাছেই হয়তো হার মানতে হবে জীবনের। তাজরীন গার্মেন্টের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পরে মোহাম্মদপুরে বেড়িবাধে সাইদ বেপারীর ছোটো গার্মেন্টসে আগুন লাগছিলো। গেছিলাম সেই সময়ই সেখানে। গিয়ে দেখছিলাম কেচী গেট লাগানো তাই বের হতে পারে নাই ১০-১২ জন মারা গেছে। আর হুরাহুরিতে অনেকে ইনজুরড। কি যে খারাপ অবস্থা তখন। রক্ত, পোড়া মানুষের গন্ধ, পুলিশের গাড়ীর আওয়াজ, মন্ত্রী বাহাদুরদের আগমন এক বাজারের শব্দে সয়লাভ। অনেকেই সাভারে গেলো। আমি যাই নি। কারন ভালো লাগে না। এতো মৃত্যু এতো শোক বাতাসে গলিত লাশের গন্ধ এইটা আমার সহ্য ক্ষমতার বাইরে। এতো শক্ত হয়ে এখনো হতে পারি নি। যেদিন বিশাল শক্ত মানুষ হবো সেই দিন আমি এই সব জায়গায় যাবো। এমনিতেই আজ সকাল বেলা একজন্যের পা কাটছে রাস্তায়। রক্ত পড়তেছে। তাই দেখে আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মনে হচ্ছে আমারই পা থেকে রক্ত পড়ে ভেসে যাচ্ছে। ক্লাস টেনে হাসপাতালে এডিমিট থাকার কারনে বন্ধুর মারা যাওয়া বাপের লাশ কাটার সিনের ৫ মিনিট দেখতে হয়ছিলো। এরপর এডমিটের বাকী দিন গুলোতে হাসপাতালে ভাতই খেতে পারি নাই। এই কলিজা নিয়ে আর যাই হোক উদ্ধার বা পরিদর্শনে না যাওয়াই ভালো।
রক্ত আমার গরুর রক্ত। বিপজেটিভ। তাই কোথাও আর দেয়া হলো না। আর বিবিসি বাংলায় এনাম মেডিকেলের ডক্টর জানালো প্রচুর রক্ত তাদের হাতে আছে। তাই ভাবলাম কারো ব্যাবসা চাঙ্গা করার জন্য মাঠে নামার কোনো মানে নাই। রক্ত দেয়ার নামে রবি যে ব্যাবসা স্টার্ট করছে তা আসলেই প্যাথেটিক। রেডিও চ্যানেল গুলাতে পাচ মিনিট পর পর রক্তের জন্য হাহাকার। নিঃসন্দেহে অনেক রক্তের দরকার আহতদের বাচাতে। কিন্তু এরা সেই আবেগ নিয়ে শেইমলেস ব্যাবসায় নামছে। আবার বন্ধু এহতেশামের মুখে শুনলাম ফেসবুকের অনেক পেইজ নাকি টাকা তুলে মেরে দিতেছে সমানে। জানি না সত্য কি না। তবে বাঙ্গালীরা আসলেই একেকটা চীজ, সবকিছুতেই তাদের ধান্দা আর দালাল মানসিকতা বন্ধ হবে না। এই তীব্র খারাপ সময়ে মখা বিবিসি বাংলায় করলো বেফাস মন্তব্য। এরকম জঘন্য নির্বুদ্ধিতার কথা শুধু মন্ত্রী থেকেই বলা সম্ভব। রাস্তা ঘাটের পাগলেরও এর চেয়ে বেশি ভারসাম্য আছে। আজকে আমি অনেককেই দেখলাম সাভারের এই নির্মম গনহত্যার আলাপ বাদ দিয়ে মখার বক্তব্য নিয়ে ফাজলামীতে মেতে থাকতে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা অমায়িক সব লোক। সব ঘটনাকে পলিটিক্যাল মুটিভেটেড বানাতে তাদের চেয়ে সেরা কেউ নাই। পাড়ার ছোটো ভাই জাবি পড়ুয়া ইশতিয়াক আমাকে বললো রানা নাকি দুর্ঘটনা ঘটার পরেও বিল্ডিং এর সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। মুরাদ জং আসে যখন তখন পুলিশের সামনেই সে নিরাপদে গা ঢাকা দেয়। আমি জানি সামনেই এই ইস্যু হারিয়ে যাবে। রানাদের হিন্দী চুলও কেউ ছিড়তে পারবে না সরকার। পাতি দুয়েকটা গার্মেন্টস মালিককে ধরে আইওয়াশ ভাবে। তারপর আমরা বসে থাকবো এর চেয়েও ভয়াবহ কোনো হত্যাকান্ড উপভোগের আশায়। বিএনপি পাতি নেতারা দেখলাম খুব মওজে আছে। বলতেছে এই সরকার কুফা। আমি খালি বললাম ভবন ধসে বা আগুন যখন লাগবে তখন দেখবেন বিএনপি করেন বলে বেচে নাও ফিরতে পারেন। কারন নিয়তি কাউকে ছাড়বে না।
কাল রাতে সাভারের ট্রাজেডী আর নানানবিধ ব্যাক্তিগত মন খারাপে ঘুম আসে নি। পাচটাতেই উঠে নামায পড়ে হাটা দিতে গিয়েই বিপত্তি। একজনের মেসেজ পাঠাই আরেকজনরে। সারাদিন খুব ভয়ে ছিলা কি না কি মনে করে বেফাস এসেমেস! ব্যাপারটা খুব ইন্সাল্টিং আমার জন্যে। কারন এরকম আমার নতুন না। আদনানকে এসেমেস পাঠাতে গিয়ে মেসেজ পাঠাইছি আম্মুকে। আম্মু ফোন করে জিগেষ করে তোর নিজেরই চলে না তুই আবার বন্ধুদের দেস টাকা? কি বিপদ। আমার তো আর চাপার ওতো জোর নাই। তাই স্বীকার করা ছাড়া উপায় নাই। আবীরকে মেসেজ পাঠাতে গিয়ে এসেমেস করছি আরেক মেয়ে বন্ধুকে। সে আমার মেসেজ পায়া আকাশ থেকে পড়ছে। আবীরকে আমি পাঠায়ছিলাম বন্ধুত্বসুলভ গালিগালাজ লেখে। তা যখন সে পড়লো তখন বুঝালাম আমার বন্ধুকে লিখছি। সে বলে উঠলো আপনার মুখ এতো খারাপ তা আমার জানা ছিলো না। ফেসবুক ছাড়া দারুন আছি। দারুন সময় কাটে মাহমুদুল হকে বই পড়তে পড়তে। শওকত ওসমানের একটা বই আছে কালরাত্রির খন্ডচিত্র। সেখানে দারুন বর্ননা ক্রাকডাউনের দিন গুলার। সকাল বেলা থেকেই ছিলো মেজাজ খারাপ। পকেটে টাকা নাই একেবারেই। কোথাও যেতে পারছি না। নান্নুর দোকানে বাকী খাচ্ছি। এতো এতো বাকি দিতে দিতে সে কাহিল। তাও খাই উপায় নাই গোলাম হোসেন। বাসায় এসে গোসল করে ঢাকা ট্রিবিউন পড়লাম। মন আরো খারাপ হলো বিভিন্ন শোকার্ত কাহিনী পড়ে। আমি আর মামা অনেক দিন পর এক সাথে চায়ের দোকানে আসলাম। চা খেলাম ভালো লাগে না আর। দোকানে খালি সেই সাভার নিয়েই প্যাচাল ক্যাচাল। লাশ নাকি গুম করে ফেলতেছে। জীবিত মানুষ নিয়ে আলাপ। কোনো আলাপই যুক্তিসংগত না। তাই আমার ভালো লাগছিলো না বসে ছিলাম। আমার প্রিয় যে নামায পড়ার জায়গা। মাদ্রাসার রুম তা বন্ধ। গেলাম আরেক মসজিদে। জায়গা নাই তাই রাস্তায় বসা। এই মসজিদটা আমার ভালো লাগে না আগে থেকেই। রাস্তায় রোদে ঘেমে নেয়ে নামায পড়া। যে হুজুর নাস্তিক ব্লগারদের ধরা এতো ছিলো উচ্চকন্ঠ সাভার নিয়ে তার কোনো কথাই নাই। খালি মোনাজাতের সময় একটু বললো। হুজুর সমাজরা এরকমই। অনেক বড় বড় জিনিস যা সমাজকে ব্যাপক আলোড়িত করছে তা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নাই। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া কোনো ইস্যু নিয়ে তাদের ব্যাপক মাথা ব্যাথা। ভীরাভীড়ের ভেতরে নামায শেষে বাসায় ফেরা। বাসায় ফিরে ভাত খাওয়া তীব্র গরমে। খেয়ে দেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা। কিন্তু ঘুম আর আসে না। অনেক কষ্টে বিকালে একটা নাইস ঘুম দিলাম। উঠে চায়ের দোকানে। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার বয়সের নানান সবজান্তা বাতেনদের নানান কথা হজম করলাম। সব ভুলবাল বকতেছে। রিপিট দেই না কোনোই। কারন টেকা পয়সা নাই, স্পেনের ২৮ ভাগের মতোই ভয়াবহ বেকারত্বের জ্বালা তাই চুপ থাকা। এহতেশাম আসলো প্যাচাল শুনলাম তার লাইফের। চায়ের দোকানেই তার এক স্কুল বড় ভাই হাজির। ১১ বছর পরে দেখা। দুইজনে মিলে আলাপে আমি হলাম বোর। কি আর করার বন্ধু মানুষ। চায়ের দোকান ভালো লাগতেছিলনা। বাসায় এসে দেখি কারেন্ট নাই। কারেন্ট নাই কি আর করার এন্ড্রয়েডে ফ্রুট স্লাইস খেলা। এতো সহজ একটা গেম তাও পারি না ভালো। আমার আসলেই ব্যাপক স্কিলের ঘাটতি। ভাত খেয়ে লিখলাম এই পোস্ট। এতো এতো মানুষ মরে গেলো, তবুও আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। নিজেরা বলা যায় নিজেদের মতোই নিরাপদ পালিয়ে বাচা আনন্দে আছি। কিন্তু কয়দিন আর? এদের মতোই কোনো শয়তানের অশুভ হাতেই আমাদের নিয়তির মরন খুব কাছেই তো!
পড়ে, বিষণ্ণ হলাম।
আমি এখনো বিষন্নই আছি!
আপনার মত আমার মনটাও খুব নরম। তাই পড়াটা পড়তে পারলাম না।
কী আর করার!
কিছুই বলার নাই, চেয়ে চেয়ে শুধু দেখি, অসহ্য হলে চোখ সরিয়ে নেই। আমার ভাল লাগা না লাগায় কারো কিছুই আসে যায় না।
সাভারের ট্র্যাজেডীর সবচেয়ে কঠিন অংশ লাগে আমার ফেবুতে ভয়াবহ সব ছবি শোয়র করে স্যাডিষট আননদ নেয়া। সিক পিপল সব
হুমম। এই জন্যেই তো ডীএক্টিভেট মারছিলাম। তবে যতো আশা করছিলাম সিকের সংখ্যা ততো বেশী না!
মন্তব্য করুন