থেমে থাকবেনা কিছুই!
মন মেজাজ অত্যন্ত খারাপ। গত দুইদিন ধরে আমার মেজাজ এতো খারাপ যে প্রিয় মানুষজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতেই ইচ্ছা করে না। বারবার মনে হয় এতো বাজে সময় আগে কখনো পার করি নি। তবে এটা নতুন কিছু না, প্রতিবারই একি কথা মনে হয় এবং তার চেয়েও ভয়াবহ খারাপ সময় আসে। খারাপ সময় সবার জীবনেই কম বেশী আসে। কিন্তু আমার বেশী আসে আর না আসলে আমি জোর করে আনাই। আর তাতেও কাজ না হলে অযথাই বিষণ্ণ থাকে। আমার এক বন্ধু এই সব দেখে টেখে আমার নাম দিছিলো স্যাডিস্ট শান্ত। আর যা বাংলাতেই ডাকতো লোকজন দুখু মিয়া শান্ত। আমি নিজেরে কাজী নজরুল বানাতে চাই না। যে অবিস্মরনীয় প্রতিভা কাজী নজরুলের ইসলামের ছিলো তার ধারে কাছের নখের সমানের মেধাও আমার নাই। তাই নামটা ভালো লাগে না। সেই বন্ধুও আর আমাকে এখন আর কোনো নামেই ডাকে না। এতোই ব্যাস্ত সবাই- সময় কই তাদের আমার নাম মনে রাখার! গত কাল সকালে ফেসবুকে বসে দেখি এক পরিচিত ক্লাস মেট বান্ধবী নক করলো। সবার খোজ খবর জিগেষ করলো? দুয়েকজন বাদে আর কারো আপডেটই দিতে পারলাম না। বান্ধবী তো আরো জানে না কিছুই। আমি ভাবতেছিলাম কতো মানুষ ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের কতো ভাবে কাছে থাকে। আমরা সবাই সবাইরে হারিয়ে ফেললাম। অথচ আমাদের বন্ডিং খারাপ ছিলো না। পিতজা হাট, হাজীর বিরিয়ানী, কেএফসি, বিএফসি আর স্টারে খেতেখেতে পেট পচিয়ে ফেলছি দল বেধে। তাও এখন কেউ কারো সামান্য আপডেটই জানে না। আমিও অনেকদিন সবার আপডেট রেখে এখন আর রাখি না কারোর। কারন আর্বোভাইরাস গান গেয়ে গেছে কেউ কারো নয়, কেউ বন্ধু নয়/ আসতে পারো যদি একা, তবে কিসের ভয় ? এইটাই দুনিয়ার নিয়ম। তবে সেই নিয়ম আমরা সবার আগে পালন করতে উঠে পড়ে লেগে গেলাম। আজকে সকালে আরেক বন্ধুর সাথে ফেসবুকে কথা হলো সে আমার স্কুল ফ্রেন্ড। খুলনাতেই দারুন বন্ধুতা। চাকরী বাকরী করে না তাই হয়তো এই সাত সকালে ফেসবুকে নক দিয়েই খিস্তি, কিরে শান্ত মরোস নাই এখনো? কথায় কথা বাড়লো। সে জাহাঙ্গীর নগর থেকে পাশ করছে, মিরপুর ১৪তে ডেন্টালের সামনে আড্ডা দেয়। তার আড্ডার অনেক ছেলেকেই আমি চিনি বা নাম শুনছি। আমাদের নেভীর জগততো খুব একটা বড় না। তাদের সমন্ধে জিগেষ করতেই বন্ধুটা খেপে গেলো। গালিগালাজ করলো। সব শালা দুই নম্বর। আমি যখন ঢাকায় আসি তখন আমাকে সবাই বলতো মিরপুর ১৪তে যা সেখানে তো দারুন আড্ডা হয়। আমি ইচ্ছা করেই আর যাই নি। মোহাম্মদপুরেই থাকা সারাদিন রাত আর ভার্সিটি যাওয়া। নতুন কেউ ঢাকায় আসলে যেতাম ওখানে। আর মাঝে মধ্যে ঠেলায় পড়ে যাওয়া। তবে কখনোই ঐ জায়গাটা আমার ভালো লাগে না যতোই নেভী নেভী গন্ধ থাক। আজকে বন্ধুর মুখে শুনে শান্তি লাগলো যাক ওদিকে যেতে হয় না। মোহাম্মদপুরেই বিশাল এক সার্কেল নিয়ে বসে থাকা। আমার আরেক বন্ধুর সাথে কথা হলো। সে বলতেছে চিটাগাংয়ের বন্ধুরা গরীব আর বেকার বলে হাপিত্যেশ করে তাই ওগো তোর পছন্দ না? আমি কইলাম আমি কই থেকে বড়লোক? আমিও গরীব চলি হয়তো বাড়ীওয়ালার ছেলেদের সাথে তাও তাদের অবস্থা খুব বেশি ভালো না। দোকানে বাকী খেয়েই দিন পার করতে হয় সবার। তাই এই ধরনের কথা বার্তা বালের আলাপ। তবে এতো সাধের যে চায়ের দোকানের সার্কেল তাও হয়তো সামনে শেষ হয়ে যাবে। ওলরেডী পুলক কোর্টে যাওয়া শুরু করছে, আদনান বাইক নিয়ে চলে যায় শাহজাদপুর ব্রাঞ্চে, এহতেশাম তো বাসার সামনেই অফিস কলেজ গেইট তাও রিক্সায় চলে যায় লেইটে, সাইফ তানবীর পাভেলদের ভার্সিটি, অনিকের একটা জব শুরু। খালি বোকার হদ্দ আমি চায়ের দোকানে যাই সকালে মর্নিং ওয়াক শেষে। ২০-২৫ মিনিট থেকেই বাসায় বসে থাকা। আর সন্ধ্যায় ক্লাস না থাকলে যাই। সবাই খুব এক্সাইটিং আড্ডা দেয়। আমি মুড অফ করে বসে থাকি।
এই পোস্টটাও আমি গতকাল লিখছি সকালে। যা হয় আর কি? কারেন্ট চলে গেলো। ব্লগের কেউ আর আপনারা তো আর ল্যাপটপের ব্যাবস্থা করে দিলেন না। তাই এই কাহিনী চলতেই থাকবে। আর ওতো সেইভ সেইভ করে লিখতে আমার ভালো লাগে না। আমি লেখা লিখি ফ্রি স্পিরিটে। ওতো বাধা ধরা নিয়মে লিখতে মন চায় না। যাই হোক যে পোস্টটা লিখছিলাম তাতে ছিলো শুক্রবারের বিভীষিকাময় বর্ননা। লাশ দাফন জানাযা সেই সব নিয়ে কথা। সাথে ছিলো মরন নিয়ে নানান চিন্তা। নিজের ভাবনাগুলো তা কিছুই আর জানানো হলো না। শীর্ষেন্দুর একটা ইন্টারভিউতে বলছিলেন মরন চিন্তা এমন এক ঘোর। সে ঘোরে একবার পড়লে আর বেচে থাকা আর হয়ে উঠে না। প্রতি মুহূর্তে খালি মরা আর মরাই। আমার মাঝে মধ্যেই এই ঘোরে প্রচন্ড আবিষ্ট হই। একটা সময় আমার ছফার সাব স্ট্যান্ডার্ড একটা উপন্যাস মরন বিলাসটা প্রায় মুখস্থ ছিলো। মরন নিয়ে অতি দারুন দারুন সব উপলব্ধি ছিলো তা ভুলে গেছি। উপন্যাসটা আমার অতি প্রিয়। বিশেষ করে যখন সেই মন্ত্রীর একটার পর একটা করে শুধু ভয়াবহ অপরাধের কথা খুব সাধারন ভাবে বলে যাচ্ছেন। তীব্র ঘেন্না হয় তখন আবার সেই লোকই যখন কলকাতা কিলিংয়ে মানুষ বাচায় তখন স্যালুট দিতে ইচ্ছা করে। আসলে মানুষের জীবনই এমন। অসংখ্য পাপ তার ভিতর থেকে কিছু অসাধারন পুন্যের গল্প। আমার ক্লাসমেটের এই অকাল প্রয়ানে আমাদের মধ্যে ছোটোখাটো একটা গেট টুগেদার হয়ে গেলো। যে তীব্র রোগ শোকের যন্ত্রনায় সে ছিলো তার মুক্তিতে অনেকেই খুশী। কিন্তু আমি ওতো খুশী হতে পারি না। কারন তীব্র যন্ত্রনাতেও তো বেচে থাকা যায়। কিন্তু মরে গেলে হয়তো মুক্তি কিন্তু আর তো দুনিয়ায় আসা যাবে না। ইসলামের আলোকে হয়তো শাস্তি কম পাবে কারন দুনিয়াতেই যে আজাব তার অনেক ভোগ করতে হলো। তাও জীবন জীবনই। বেচে থাকার সাথে আসলেই কোনোকিছুর তুলনা চলে না। তাও মরতে হবেই। কিন্তু যতোদিন না মরছি জীবনটাতো থাকছেই আমার। বন্ধুর অকালপ্রয়ানের উসিলায় যাওয়া হলো মিরপুর ডিওএইচএস। সারি সারি বাড়ী আর প্রশস্ত রাস্তা। চারিপাশে শুধু অবসর প্রাপ্ত সামরিক বুর্জোয়াদের বাড়ী আর এপার্টমেন্ট। আর চারিপাশে শুধু ট্রাস্ট ব্যাংক আর ইংলিশ মিডিয়াম টিউশনীর এড। সিএঞ্জি দিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু ভাড়া চায় ৩০০ তাই লোকাল বাসই ভরসা। আমার জন্য বন্ধু একটা অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো রোদে। রিক্সা পাই না। তাই মিরপুর ১২ থেকে দেড় কিলোমিটারের মতো হেটে গিয়ে দেখি ফাস্ট জানাযা শেষ। মসজিদে তিন বন্ধুকে পাওয়া। অনেকদিন পর দেখা। আলাপ সালাপ করা লাশ মসজিদের এক রুমে রেখে। আমাকে পেয়েই ব্লগটগ হালহাকিকত নিয়ে নানান কোয়েশ্চেন। যার সাথে যাদের দেখা হয় তাদের খোজখবর জানানো আর নেয়া। লাশ দেখা হয় নি কারন আরেক বন্ধু বললো যে অবস্থা ভয় পাবি! সবাই বললো পাশে কেন্টিন আছে খেয়ে আয়। আমি ভাবলাম গ্যাস্ট্রিক তো আছেই আলসার হোক। বেচে তো আছি। আর সেই সময় সিংগারা চা কোনো খাবারই আর পেটে ডুকবে না। তাই বসে থাকলাম মসজিদেই। মরহুম বন্ধুর আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা হলো। তারা আপসেট আবার কিছুটা সন্তুষ্ট কারন যে কষ্ট পাইছে গত চারবছরে মরে গিয়ে নাকি শান্তি! নেভীর প্লাটুন ট্রাক আসলো। একদিকে লাশ আর আরেকদিকে আমরা ছয়সাত বন্ধু। তার আগে মা খালারা আসলো কি যে কান্নাকাটি। তা দেখেই বুক ছিড়ে যাচ্ছিলো। আসলে সন্তান হারানোর বেদনা অবিশ্বাস্য কষ্টের। লাশের পাশে বসে সবাই জিকির করতেছে আমিও তাই। এতো ঝকঝকে সব বাড়ী নতুন ফ্লাইওভার কিছুই আমাকে টানছে না। বনানীতে নেভীর হেড কোয়ারটারের মসজিদে নামলাম। সেখানে আরো কিছু বন্ধুর আগমন। কথা হলো। সবাই সবার খোজ খবর নিলাম। হেফাজতীদের প্রতি দুর্বল এমন বন্ধুদের সংখ্যাই বেশী। তাদের আল জাজিরা চেনানোর বয়ান শুনলাম। আছরের নামায পড়লাম মসজিদে। ঝা চকচকে মসজিদ সামরিক বুর্জোয়াদের জন্য। মুসুল্লীদের গায়ে দামী পাঞ্জাবী দামী সেন্টের গন্ধ ভুরভুর করে ফিরে। মসজিদেই জানাযা হলো দারুন সিস্টেম আছে সেখানে দরজা খোলে দেয়ার। মসজিদটা মনে হয় জানাযার জন্য খুব বিখ্যাত। কারন সবাই এতো সুচারু রুপে জানাযার নামায পড়লাম তা অবিশ্বাস্য। বন্ধুর বাবার আবেগময় বক্তব্যে খুবই মন খারাপ হলো। তবে উনি মনে হয় প্রস্তুত ছিলেন ব্যাপারটায়। কারন ডাক্তাররা তো অনেক আগে ভাগেই আশা ভরসা ত্যাগ করেছিলো। বনানী সেনা কর্মকর্তাদের কবরস্থান অত্যন্ত পরিপাটি। সিরামিক দিয়ে বান্ধানো বা দেয়ালদেয়া অনেক কবরে। বায়োডাটা আকারে নাম ধাম কোরানের আয়াত লেখা। চারিদিকে শুধু হাইভোল্টেজ মানুষদের কবর। খালেদা জিয়ার ভাই থেকে শুরু সাবেক বাহিনী প্রধান সবার কবরেই দিকে চোখ গেলো। তবে যেই জিনিসটা মেজাজ খারাপের তা হলো কবর গুলার চেহারা অনেকটা ওয়্যার সিমেন্ট্রীর মতো। অনেকের কবর আবার কফিন স্ট্যান্ডের মতও করে আটকানো। মরার পরেও তারা জায়গা ওকুপাই করতে ভুলে নাই। দাফন হলো দোয়া হলো। পাশেই কিছু নেভী বুর্জোয়াদের হাদীসের রেফারেন্স দেয়া নিয়ে বয়ান শুনলাম। বলা উচিত ছিলো এক্সকিউজ মি আংকেল আপনি বালের বয়ান বন্ধ করেন। কিন্তু তা কি আর হয়। পোলাপান একটু পাশেই প্রসস্ত পার্কিংয়ে দারুন আড্ডা দিচ্ছে। আমার ভালো লাগে নাই। ঘুরে ফিরে সেই হেফাজতী কথাবারতা আই এম সিক অফ ইট! চটজলদি বিদায় নিলাম। সবাই বললো জাকারিয়া আছে আগের মতোই। এই কথাটা শুনতে ভালোই লাগে। দুনিয়া এতো ওলোট পালোট হয়ে গেলাম আর আমি যদি আগের মতোই থাকি তাহলে স্যালুট জানাই নিজেকে। হাটা দিলাম দেখি কাছের এক মানুষের মেসেজ। রিপ্লাই দেয়ার চিন্তা করলাম পরে ভাবলাম থাক। এই অথর্ব জীবনে কিছুই করি না এই কন্ডিশনে রিপ্লাই দেই কিভাবে? যাই হোক কেউ আমাকে বুঝলো না আর আমিও কাউকে বুঝাতে পারলাম না। আর বুঝতে গিয়ে বুঝলো ভুল। তাই চুপ থাকাই ভালো।
দিন চলছেই। হাটছি হাসছি আড্ডা মারছি ক্লাস করছি দিন চলে যাচ্ছে। মরন চিন্তা ভুলে গেছি। শুধু বাচার চিন্তাই করি। অনেক ভালো সময় পার করার চিন্তা করি, বাবা মা ভাইভাবীর জন্য অনেক কিছু করার চিন্তা করি, লীনাপু কামাল ভাই মাসুম ভাইদের মতো অনেক ভালো ভালো বই পড়ার চিন্তা করি। অনেক সিনেমা টিভি দেখার ভাবনা মাথায় আনি। অসাধারন কোনো মেয়ের সাথে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখি। কিন্তু সব থামিয়ে দিতে পারে মরন। বারবার তখন মনে হবে কেনো হুজুর হলাম না। কিন্তু তাতে কার কি আসে যায়! থেমে থাকবে না কিছুই। আমি মরলেও না আর আমার প্রিয় কোনো মানূষের মরার পরেও না
আজকে এই ব্লগের অতি কাছের মানুষ রনি ওরফে রন ভাইয়ের জন্মদিন। শুভেচ্ছা রাশি রাশি। যে লম্বা সময় ধরে তিনি লগ ইন থাকেন যদি পোস্ট দিতেন তাহলে কতো ভালো হতো। অত্যন্ত কর্মপটিয়সী এই যুবককে জন্মদিনে লাল সালাম। এই ব্লগটাকে আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। আর সেই ভালোবাসা এই মানুষগুলার প্রতিও। আরেকটা আবদার এই বছরেই আরেকখান পিকনিক চাই আয়োজন করেন। ভালো কাটুক জন্মদিন ভালো থাকেন ভাইয়া!
এমনিতেই দিন খারাপ,
প্রায় পুরা লেখার বিষণ্ণতায় মন আরো খারাপ হৈয়া গেল।
নিওয়ে
নিজের মত বেঁচে থাকাটাই আসলে অনেক কিছু।
শুভ জন্মদিন রনি ভাই।
জীবন হোক আনন্দময়।
মন খারাপ করে দিলে সরি!
আমারো লিখে টিখে মন খারাপ থাকে
ভালো থাকেন!
লেখার এই ফ্রি স্পিরিটটাই তো ব্যাপক পছন্দ
সেইটা মেনে নিয়ে তো লিখি যা ইচ্ছে তাই!
"মানুষের জীবন জুড়ে অনেক মুহূর্ত। তাদের কেউ বাঁচিয়ে রাখে না তাকে। মানুষ বেঁচে ওঠে শুধু একটা মুহূর্তে। যখন সে বাঁচতে চায়। আর সেটা তার মৃত্যু মুহূর্ত।"
সন্দীপনের লেখায় পড়েছিলাম এ-কথাটা। তোমার পোস্ট পড়ে কথাগুলো মনে পড়ে গেল।
লাইনটা মোবাইলে ড্রাফট করা আছে। মাঝে মধ্যেই পড়ে নেই টুক করে। জটিল কথা বলে গেছেন উনি।
ভালো থাকেন আপু। পারলে নিয়মিত ব্লগে আইসেন আর লেইখেন কিছু!
জীবন হলো স্বপন আর মরন হলো বাসতবতা (
মন্তব্য করুন