বইমেলায় আগুন লাগেনি, আগুন লেগেছে আমাদের প্রাণে, আমাদের অস্তিত্বে
বই মেলায় আগুন! এও সম্ভব, এটাও হতে পারে! খবরটা শুনার পর স্থাণু হয়ে গিয়েছিলাম। পুরো ২৪ ঘন্টা অনুভূতিশূন্য থাকার পর লিখতে বসেছি। চোখ ফেটে জল আসছে, রাগ, ক্ষোভ -ঘৃণা অপমান, অভিমানে সারা শরীর থরথর করে কাপছে। বইমেলা শুধুই একটা মেলা নয়। এই মেলার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বের ইতিহাস, আমাদের চেতনা, আমাদের ভাষার ইতিহাস। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলা রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি। এ মেলার সাথে জড়িয়ে আছে একটি জাতির অভ্যূত্থানের ইতিহাস। বইমেলার সাথে জড়িয়ে আছে বাঙ্গালীর আবেগ, ভালবাসা। অথচ সেই বইমেলায় আগুন! অবিশ্বাস্য! নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
বইমেলায় আগুন লেগে প্রায় অর্ধশতাধিক স্টল পুড়ে গেছে। প্রকাশকদের ক্ষতি হয়েছে ২০ লক্ষ টাকার ও বেশি। বাংলাদেশে এমনিতেই প্রকাশনা ব্যবসার অবস্থা তথৈবচ। প্রকাশকদের সারা বছরের লাভ-ক্ষতি হয় বইমেলাতেই। বইমেলাকে ঘিরে প্রকাশকরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। বইমেলা উপলক্ষে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নেন, লেখকদের পিছনে লগ্নি করেন লাখ লাখ টাকা। বিজ্ঞাপনের পিছনে যায় আরো মোটা অংকের টাকা। অনেকে টাকা ধারদেনা করেও বই মেলায় তুলেন লাভের আশায়। লেখকদের সম্মানী, কপিরাইট ও মেলার স্টলের খরচ দিতে গিয়েও প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যায়। এই মেলা ছাড়া তাদের ব্যাবসা হয়ই না বলতে গেলে। স্টল পুড়ে যাওয়ায় তাদের পেটে লাথি পড়ল। এতবড় ক্ষতি তাদের একার পক্ষে সামলে ওঠা সম্ভব না। প্রকৃতপক্ষে এই ক্ষতি অপূরনীয়। এ ঘটনা ধাক্কা দিয়েছে আমাদের সমগ্র চেতনায়, অস্তিত্বে।
ভাবতেও অবাক লাগে এত বড় মেলায় কোন নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নেই! এত এত মানুষের মাঝে কীভাবে আগুন লাগল সেটাও বিরাট রহস্যময় ব্যাপার। আগুন লাগার আগে ককটেল বিস্ফোরণের পর নিরাপত্তাকর্মীরা সতর্ক হলে এ ঘৃণ্য ঘটনা ঘটার সুযোগ হত না। দেখা যায় অনেক ছোট ও অগুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়, অথচ বইমেলার মত একটা বিশাল জাতীয় উৎসবে নামে মাত্র নিরাপত্তা ছাড়া আর কিছুই নেই। আর যারা আগুন লাগিয়েছে সেইসব শুয়োরের বাচ্চাদের প্রতি রইল সারা বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে হৃদয় নিংড়ানো সবটুকু ঘৃণা। ভাবতেও অবাক লাগছে শুয়োরের দল কীভাবে বইমেলার মত পবিত্র জায়গায় আগুন দিতে পারে। পিশাচগুলোর নজিরবিহীন শাস্তি দাবি করছি, সেই সাথে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছি। পাশাপাশি মেলায় কার্যকর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক অবস্থার মুখোমুখি হতে না হয়।
বইমেলা আমাদের গর্ব। এ মেলা বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা। প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ দূর-দুরান্ত থেকে প্রাণের টানে মেলায় ছুটে আসে। বইমেলা বইপিপাসু আর লেখকদের মিলনমেলা, মানুষ তার প্রিয় লেখকের সান্নিধ্য লাভ করে বইমেলায়। সেই বইমেলায় আগুন লেগে পুড়ে গেল অর্ধশতাধিক স্টল। আগুন লাগাটা যদি দুর্ঘটনা না হয়ে পরিকল্পিত স্যাবোটাজ হয় তাহলে পবিত্র এ মেলার শপথ নিয়ে বলছি একটা শুয়োরের বাচ্চাকেও ছাড়ব না। জামাত-শিবির বুঝি না, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বুঝি না, শুধু বুঝি আমাদের প্রাণের মেলায় যারা আগুন লাগিয়েছে ওদেরকে একটা একটা করে ধরে ধরে আগুনে পুড়িয়ে মারতে হবে। বইমেলায় আগুন লাগেনি, আগুন লেগেছে বাঙ্গালীর অস্তিত্বে, চেতনায়, গর্বে।
বইমেলায় আগুন লাগার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও এর কারণ উদঘাটনে প্রশাসন বয্রথ। এই রহস্যময় বয্রথতা মেনে নেওয়া যায় না। এ বয্রথতা ক্ষমা করা যায় না। অতিসত্বর এ রহস্যের সমাধান না হলে জনগণ অন্য কিছু ভাবতে বাধ্য হবে। ়
লেখার শিরোনামটাও ভাল লেগেছে
ধন্যবাদ
মনটা খুব খারাপ হলো আজ মেলায় গিয়ে!
মন প্রচণ্ড খারাপ করে দেওয়া একটা খবর।
পুড়ে যাওয়া স্টলগুলোর ছবি দেখতে এত্তো খারাপ লাগছিল!
মন্তব্য করুন