ফালতু, পুরাই ফালতু!
সাহাইয্য চাইঃ সুপ্রিয় ব্লগারস, আপনারা কেউ কি টেলিটক ফ্ল্যাশ মডেমের মডেল জানেন? কেউ জানলে আমাকে একটু কষ্ট করে জানান, ইহা জানা আমার জন্য অতীব জরুরী। আপনারা যদি দয়া করিয়া আমাকে জানান তাহলে আমার অতিশয় উপকার হয় এবং আপনাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী থাকিব। আশা করি পোস্টের শুরুতে আপনারা অধমের এই অবাঞ্ছিত প্রসঙ্গকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবেন। আসলে শুধু এইটুকু সাহায্যের জন্য ছোট্ট করে পোস্ট দিয়ে ব্লগের মুল্যবান পাতা নষ্ট করতে ইচ্ছা করল না, তাই মূল পোস্টের আগে ছোট্ট করে সাহায্যটুকু চেয়ে নিলাম। আশা করি আপনারা অত্যাচারটুকু সহ্য করে নেবেন।(অবশ্য আমার পোস্ট মানেই অত্যাচার, খালি আজাইরা প্যাঁচাল পাইরা আপনাদের দামী সময় নষ্ট, হে, হে...)।
গত শুক্রবারে বাড়িতে পায়ের ধুলা দেওয়ার পর মাঝে সাত দিন পেরিয়ে আজ আরেক শুক্রবার চলে এসেছে, অথচ বাড়ি থেকে বেরোবার নামও নিচ্ছি না। আরামসে খাওয়া দাওয়া করছি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি আর ঘুরছি, আর কোন কাজ নাই। ও হ্যাঁ, মাঝে মাঝে হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে, মাথার চুল ছিঁড়ে বহু কষ্টে দুই-তিনদিনের ঘটনা মিলিয়ে ডায়েরি লেখার চেষ্টা করছি। মানুষ যে কেমনে এত সুন্দর সুন্দর পোস্ট লেখে ভেবেই পাই না। ভাবতে অবাক লাগে আমি কয়েকদিনের ঘটনা একসাথে করেও ঠিকমত ডায়েরি লিখতে পারি না, আর আরাফাত শান্ত ভাই কি সুন্দর করে গুছিয়ে প্রতিদিন একটা করে পোস্ট লিখে ফেলেন! শান্ত ভাই আপনার হাতে যাদু আছে, আপনারে 'লাল স্যালুট'। টাইপ কইরা পোস্ট দিতেও বিরাট আইলসামি লাগে, টাইপ করা যে এত কষ্ট আগে জানতাম না। তাছাড়া কতবার যে পোস্ট লেখার পর সেইভ না করে রাখার জন্য নতুন করে লিখতে হয়েছে তার কোন হিসেব নাই। এই পোস্টের আগের দুই পোস্টের প্রত্যেকটা গড়ে পাঁচবার করে লিখতে হয়েছে। এই পোস্ট লেখতে অবশ্য তুলনামূলক কম সময় লাগছে, মাত্র তিনবার লাগছে।
কাল বিকেলে আড্ডা দিচ্ছিলাম, এমন সময় সজিব এসে বলল-'কাইলকা রেডি থাকিস, তরে লইয়া এক জায়গায় খেলতে যামু, ফাইনাল খেলা।' খেলা কোথায় জিজ্ঞেস করতেই দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলল-'এত কথা কস ক্যান? যাইলেই দেখবি কোন জাহান্নামে লইয়া যাই।' আমি ভয়ে আর কিছু বললাম না। ব্যাটা ক্রিকেট খেইলা নিজে তো স্টার হইছেই এখন ভাব দেইখা মনে হয় আমারেও সুপারস্টার বানাইতে না পারুক কমপক্ষে স্টার বানায়া ছাইড়া দিব, যেখানেই খেলতে যায় লগে আমারেও নিয়া যায়। আজকে দুপুর দুইটা বাজতে না বাজতেই ব্যাটা এসে হাঁক ডাক লাগায়া দিল-'কিরে কতক্ষণ লাগে, এত্ত স্লো ক্যা?' কাহিনী বুঝলাম না, শালা সারাজীবন সব জায়গায় লেট কইরা আইজকা আইসা আমারে ঝারি মারে! কাহিনী আর বোঝার চেষ্টাও করলাম না, কোনরকমে কাপড় পড়েই বের হয়ে পড়লাম। মাঠে গিয়ে দেখি প্যান্ডেল-ট্যান্ডেল বেঁধে বিশাল হুলস্থুল ব্যাপার, দেইখা তো তাম্বি খায়া গেলাম। সজিব তো গিয়াই সবাইরে বলতে লাগল আমারে স্পেসালিস্ট ব্যাটসম্যান ও বোলার দুইটা হিসেবেই চালানো যায়, হেন-তেন। আমি তো লজ্জায় পইড়া গেলাম, আজকা নিশ্চিত ইজ্জত নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারব না। ইচ্ছা করছিল ব্যাটাকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলি, আমার নামে এত্ত বড় অপবাদ! মাঠটা অন্যান্য মাঠের তুলনায় বেশ কিছুটা ছোট। এই মাঠে সজিব আগের ম্যাচে ২০৬ রান একলাই করছে, শুইনা অবাক হই নাই। এটা ওর জন্য অবশ্য অসম্ভব কিছু না, আগেও ও অনেকবার ১১০-১২০ করছে, আর আমার খালি ১০-২০ করতেই কালাঘাম ছুইটা যায়। মাঠ যত ছোটই হোক ২০০ রান করা মুখের কথা না। ওর ব্যাটিং দেখলে মনে হয় দুনিয়াতে চার-ছয় মারার চেয়ে সহজ কাজ বুঝি আর কিছু নাই। অবশ্য আজ একটা চার আর একটা ছয় মেরে ও আউট হয়ে গেল। কোন দলে যে খেলতে গেলাম, অধিনায়ক ৬ ওভার যাওয়ার পরেই মাইর দে, মাইর দে জপ করতে করতে গলা শুকায়া ফালাইল; মেজাজ গেল খিঁচড়ায়া।আমারে নামাইলো চার ওভার বাকি থাকতে, নামায়া দিয়া বলদগুলা কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকল-'ভাই মারেন, ভাই মারেন।' ইচ্ছা করতেছিল খেলার কপালে উস্টা মাইরা চইলা আসতে, শেষমেষ বিরক্ত হয়ে আল্লাহ আল্লাহ কইরা খুব কষ্টে দুইটা ছয় মাইরা রান আউট হইয়া চইলা আসলাম। এক ওভার বল করতে দিছিল, ৭ রান দিছি। অবশ্য খেলার ফিনিশিং দিছি আমি-ই লাস্ট প্লেয়ারের ক্যাচ ধইরা। খেলা ব্যাপক উত্তেজনাময় হইছে, আমরা কাস্ট ওভারে মাত্র ১১ রানে জিতছি। সজিব আমার পারফরম্যান্সে হতাশ, আমি দাঁত বার কইরা কইলাম-'আগেই কইছিলাম আমারে দিয়া হইব না, এহন গরম হও ক্যান?'
টেলিটকের থ্রি জি মডেম নিব ভেবেছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নেওয়া হয়নি, মডেমের মডেল জানিনা বলে। কেউ যদি টেলিটক ফ্ল্যাশ মডেমের মোডেলটা জানেন তাহলে দয়া করে আমাকে জানাবেন। মডেল জানার পরে সিদ্ধান্ত নিতে পারব কিনব কি কিনব না। আপাততঃ গ্রামীণ দিয়াই চলতেছি।
গ্রামীণে নাইট টাইম আনলিমিটেড প্যাক নিলাম। ইচ্ছা ছিল পুরো এক মাস প্রতিদিন ৩০টা করে বই ডাউনলোড করব, এভাবে এক মাসে ৯০০ বই লোড দিব। কিন্তু ১০ দিন যেতে না যেতেই বাড়িতে চলে আসলাম। এই ১০ দিনে ২৫০ বই ডাউনলোড করতেই ট্যাবের ৪ গিগাবাইট মেমোরি ফুল হয়ে গেছে, বাড়তি কোন মেমোরি বা পেন ড্রাইভও আনিনি। পোলাপান সবগুলা বটলা, কয়েকদিনের জন্য মেমোরি চাইতেই সবগুলা দাঁত ক্যালায়া নোকিয়া ১১১০ ফোন দেখায়া দেয়, না হয় ফুল মেমোরি দেখায়া দেয়। বই আর লোড করতে পারছি না, বিরাট বিপদে আছি, মিশন মনে হয় ফেইল করবে।
আজকে নতুন এক ধরনের খেলা শুরু করেছি, উল্টো করে কথা বলা। খেলাটা অবশ্য নতুন নয়, অনেক আগে থেকেই খেলতাম, মাঝে অনেকদিন বন্ধ ছিল, আজ আবার নতুন করে শুরু করেছি। খেলাটার মাঝে নির্মল আনন্দ পাচ্ছি। খেলাটা এরকম-কারো সাথে দেখা হলেই তার সাথে উল্টো করে কথা শুরু করি অথবা ঐ লোকের সামনে আমরা নিজেরা উল্ট করে কথা বলতে শুরু করি। যেমন-"রেকি লয়েজু, কি রবখ? ইক লিছিগে?"(কিরে জুয়েল, কি খবর? কই গেছিলি?)। মাঝে মাঝে রাস্তায় কোন লোকের সামনে উল্টা ভাষায় কথা বলতে শুরু করি। এ ধরনের কথা হঠাত করে শুনে একেকজনের যা চেহারা হয় সেটা দেখে আমরা হেসে কুটিকুটি হই। ওরা তখন কিছু না বুঝে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাথা নাড়তে নাড়তে চলে যায়। ব্যাপারটা যে এত আনন্দের আগে জানতাম না, এখন থেকে নিয়মিত প্র্যাক্টিস করতে হবে। এখন থেকে রাস্তায় পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে উল্টা ভাষায় জিজ্ঞেস করব-"কি ইভা কি রবখ? নছেআ নমকে?"(কি ভাই, কি খবর? আছেন কেমন?)। আরেকটা মজা করি বন্ধুদের সাথে। কারো সাথে দেখা হলে খুব বিজ্ঞের ভাব নিয়া বলি-'একটা প্রশ্নের উত্তর দে তো। বলতো কোন প্রাণীর জিভ সবচেয়ে পরিষ্কার?' প্রশ্ন শুনে সবাই একেবারে হকচকিয়ে যায়, কেউই উত্তর দিতে পারেনা। সবাই ক্যাবলাকান্তের মত হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। পারবে কি করে আমি নিজেই তো পারি না। আমি তখন গম্ভীর গলায় ওদেরকে উপদেশ দেই-'বাড়িতে গিয়ে বই ঘেঁটে জেনে নিবি।' তখন একেকজনের চেহারা হয় দেখার মত, পুরাই বিনোদন।
বন্ধুদের সাথে সময়গুলো চমতকার কেটে যাচ্ছে। বন্ধুরা সাথে থাকলে সময় যে কোথা দিয়ে ফুড়ুত করে উড়ে যায় টেরই পাই না। এই বন্ধুরা না থাকলে কি করে যে বেঁচে থাকতাম ভেবেই পাই না। জীবনে বন্ধুদের প্রভাব ও গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি যখন থেকে এক এক করে প্রিয় বন্ধুগুলোর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে লাগলাম। এখন বুঝি বন্ধু কী, বন্ধুত্ব কী জিনিস। বন্ধুত্ব আসলে আপেক্ষিক, একেকজনের কাছে এর সংজ্ঞা একেকরকম। আমি বন্ধুত্বের কোন সংজ্ঞা দিতে চাই না। কারণ বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিয়ে বন্ধুত্বকে কোন নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ গন্ডিতে আটকাতে চাই না। বন্ধুত্ব একেকজনের কাছে ধরা দেয় একেক রূপে। সবার সাথে বন্ধুত্বের ধরনও এক রকম নয়; এক বন্ধুর সাথে সাথে যেমন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কাটিয়ে দেয়া যায়, অন্য বন্ধুর সাথে তেমনি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা না বলে শুধু বসে থেকে কাটিয়ে দেয়া যায়, তখন কথা হয় মনে মনে। বন্ধুত্বের রূপ সারা বিশ্বে একেক রকম হলেও এর সার্বজনীন আবেদন এক রকম, সবাই বন্ধুত্বের কাঙ্গাল। বন্ধুত্বের সার্বজনীন দাবি এক-বিশ্বাস এবং ভালবাসা; বন্ধুত্বের সম্পর্কে একজন মানুষ এর বেশি কিছু দাবি করেনা। পৃথীবিতে সবচেয়ে নির্ভেজাল এবং স্বার্থহীন সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। একজন মানুষের জীবনে অর্জিত সকল সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ একজন খাঁটি বন্ধু। আমি সৌভাগ্যবান আমি কয়েকজন ভালো বন্ধু পেয়েছি। পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ আমাকে কয়েকজন ভালো বন্ধু দেওয়ার জন্য। যেকোন বিপদে আপদে এরা সাহায্য করতে ছুটে আসে, যদি সরাসরি সাহায্য করতে না পারে তাহলে মানসিকভাবে সাহায্য করে। এরা না থাকলে জীবনটাই পানসে হয়ে যেত। এরকম কতগুলো বন্ধুর জন্য আমি আবারো পরম করুণাময়ের নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
(২২'শে মার্চ, ২০১৩)
সব ফালতু হলেও আপনার পোষ্টটা কিন্তু ভালোই লাগলো। ঢাকাতে ওলো চালাই খারাপ না। আর মোবাইলে গ্রামীনই বেষ্ট। কিনতু ডেস্কটপে গ্রামীনের যে স্পিড তা দেখলে মনে হয় গাভাস্কার আমলের নেট চালাচ্ছি। নিয়মিত লেইখেন।
গ্রামীনের নেট ভালোই কিন্তু থ্রি জি চাই। আমি তো লিখবোই, আপনার পোস্ট কই?
পোষ্ট উপাদেয় হয়েছে
মন্তব্য করুন