নিঠুর হে
নানা,
তোমার কি মনে আছে আজ আমার বয়স কত হল ? রাতটা পোহালে আমার বয়স দুই বছর পূর্ণ হয়ে যাবে । জানুয়ারির ১৯ তারিখ, আমার অভিশপ্ত জীবনের শুরু এ পৃথিবীতে । আমার জন্মদিনে তোমাদের কোন আয়োজন নেই মনে হচ্ছে । কেনই বা থাকবে – আমার মত একটা জড়বস্তুকে নিয়ে কি কোন আনন্দ করতে পারে কেউ? নানা, তোমার কি মনে আছে আমি এ পৃথিবীতে এসে একটুও কাঁদিনি- ডাক্তার-নার্সরা অনেক চেষ্টা করেও আমাকে কাঁদাতে পারেনি । নাকে নল ঢুকিয়ে তারা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল । তারা তো আমার ভবিষ্যৎ ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিল, তবু তারা কেন আমাকে বাঁচিয়ে রাখল !
আমি এ পৃথিবীতে আসবার পরে ৭৩০ বার সূর্য উঠেছে, আমি একবারও সে সূর্যের আলো দেখতে পাইনি, আমার দিন আমার রাত সব একই । আমার হাত, আমার পা আমার সমস্ত দেহ আমার সম্পদ না-হয়ে বোঝা হল কেন? এতগুলো দিনরাত কেটে গেল, আমি আমার হাত দিয়ে তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারলামনা – আমার মাকেও না, কাউকে না । আমি উঠে দাঁড়াবার শক্তি পেলামনা । তোমাদের এ পৃথিবীতে শত শত কোটি জীব অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছে, অথচ আমার বেলায় তার অনটন দেখা দিল ! কত কিছু রান্না হয়, বিচিত্র সব শব্দ শুনি, গন্ধ পাই- কিন্তু আমাকে কেন শুধু দুধ-সুজি, সেরেলাক খেয়ে থাকতে হয়? আমার তো অনেকগুলো দাঁত উঠেছে, তবুও কেন চিবিয়ে খেতে পারিনা ? খাবার গিলতে গেলে তা কেন আমার শ্বাসনালীতে চলে যায়?
আমি কেন উঠে বসতে পারিনা, কেন আমি হাঁটতে পারিনা, কেনইবা আমি একটু নড়াচড়া করে এপাশ-ওপাশ করতে পারিনা ! নানা, তুমি যে বলেছিলে, আমি ভাল হয়ে যাব, তা’হলে এখনও কেন ভালো হচ্ছিনা। ভালই যদি হব, তা’হলে আমাকে কোলে নিয়ে তোমার চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে কেন, কেনইবা তোমার চোখের পানি আমার গালে এসে পড়ে?
তুমি এখন আর সব সময় আমার কাছে থাকোনা, তোমার কষ্ট হয় বলে । তুমি না থাকলে আমারও কষ্ট হয় । তুমি এলে, তুমি আমার কাছে এসে আমার গায়ে হাত দিলেই আমার কষ্ট অনেক কমে যায় । তুমি না খাওয়ালে আমার খেতে ভালো লাগেনা-তুমি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেনা আমার প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন কখন তা। আমার কষ্ট তোমাকে কষ্ট দেয়, আর সে জন্যও আমি, তুমি আমার কাছে না থাকলেও তা মেনে নিয়েছি।
আমি তোমাদের সব কথা শুনতে পাই, সব কথা বুঝতে না পারলেও অনেক কথাই বুঝি। তুমি মাঝে মাঝে যে আমাকে চলে যেতে বল সেটা বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছে। কোথায় যাব কেমন করে যাব তা আমার কাছে পরিস্কার নয়। তবে এটা বুঝি যে সেখানে গেলে আমার কোন কষ্ট থাকবে না । কিন্তু সেখানে কেমন করে যেতে হয় তা’ আমি জানিনা, তা’ছাড়া সেখানে তুমি থাকবে কিনা তাও তো আমার জানা নেই । সেখানে আমি একা কেমন করে থাকবো!
আমিও তো তোমাদের মত একজন মানুষ। বিধাতার সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি নাকি মানুষ! আ্মি তার প্রিয় হতে পারলামনা কেন? আমাকে কেন তিনি এমন করে এ পৃথিবীতে পাঠালেন? অসীম ক্ষমতাবান স্রষ্টা আমাকে সৃষ্টি করবার সময়ে তার সবটুকু ক্ষমতা না-খাটিয়ে আমাকে এমন অসম্পূর্ণ করে দুনিয়ায় কেন পাঠিয়ে দিলেন? নানা, নানাগো, আমি এখানে আর থাকতে চাই না । আমি চলে যেতে চাই, আমার আর এ কষ্ট সহ্য হয়না। কিন্তু কেমন করে যেতে হয়, তা তো আমি জানিনা, কে আমাকে সে পথ চিনিয়ে দেবে ?
আমি আলো চাই, আমি বাতাস চাই, আমি আনন্দ চাই, আমি হাসতে চাই, আমি চাই এমন একটা জায়গা যেখানে কষ্ট নেই। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারলোনা। নানা, তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার কষ্ট হবে, তবু আমি চলে যেতে চাই, তোমাকে আমার কষ্ট দেখা থেকে বাঁচাবার জন্যও আমাকে যেতে হবে ।
--তোমার আরীব ।
নাজমুল ভাই, হতভম্ব হয়ে পড়লাম। যাক পিচ্চিটার জন্য অনেক অনেক আদর আর শুভকামনা রইলো। একদিন আলো ফুটবেই।
অ.ট. আপনি কি প্রো-পিক নিয়ে বিয়াপুক টেনশনে আছেন নাকি? প্রতিদিনই দেখি একটা করে চেঞ্জান।
মীর, আপনার আদর, শুভ কামনা আর আশাবাদ আমাকে আশান্বিত হতে উদ্বুদ্ধ করে । ব্লাকহোলের অতল গহবরে সে আশা বিলীন হতে সময় নেয়না মুহূর্তমাত্র । আরীবের কষ্টের অবসান বোধহয় তার জীবনাবসান ব্যতীত অন্য আর কিছুতে সম্ভব নয় । আপনার মন্তব্যটা পড়লাম ব্লগে ঢুকেই, তখন আরীব আমার কোলে, প্রস্রাব করবার চেষ্টায় কষ্ট পাচ্ছে আর মুখ দিয়ে অর্থহীন শব্দ করছে ।
অঃটঃ বিয়াপুক ভয়ানক টেনশন, যতই বদলাই, আমি সেই পুরাতন পিক দেখি ।
আবীরকে দেরীতে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম।
আবীরের নানা থাকতে আবীর চলে যাবে কেন!
(চোখে পানি এসে গেছে। একদিন আসুন)
ওর নাম আরীব (AREEB) । আরীবের কষ্ট নানা আর সইতে পারেনা । যেখানে তার আর কোন কষ্ট হবেনা, সেখানে যাওয়ায় তো ওর জন্য মঙ্গলময় ।
আপনার নূতন লেখা চাই।
এখন অনেক সুন্দর ও ভালো ভালো লেখা আসছে বিরতিহীনভাবে । আর সেগুলো সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় নিয়ে লেখা হচ্ছে । এ সব লেখার উপরে আলোচনা-সমালোচনার মূল্য অনেক । আমার একটা বস্তা পঁচা লেখা প্রথম পাতায় দিলে যে জায়গা জুড়ে থাকবে, সেখানে অমন একটা লেখা থাকলে সকলের জন্য তা মঙ্গলকর । কাজেই - - - -
মন্তব্য করুন