কথায় আছেনা, মক্কার মানুষ হজ্ব পায়না
আচ্ছা বন্ধুরা, আমার এই কথাগুলি কি আপনারা বিশ্বাস করবেন? আমি software quality assurance & testing department-এ কাজ করি। ডেস্কটপ ও ওয়েব এ্যাপ্লীকেশন টেষ্ট করা ও তার কোয়ালিটি নিশ্চিত করা আমার কাজ। আমি যদি বলি যদিও আমার অফিসে পিসি ও ইন্টারনেট আছে, আমার বাসায় কোন পিসি বা নেট কানেকশন নেই, তবে বিশ্বাস যোগ্য হবে? হবে না, তাই না? বা একটা হোটেলের একজন বাবুর্চী যদি বলে সে খাদ্যাভাবে কষ্ট পায় সেটাও হয়তো আমরা বিশ্বাস করবো না, তাই না?
সকালে অফিস আসতে খুব অল্প রাস্তাই হাঁটতে হয়। মানে বাসা থেকে মেইন রাস্তায় (বাস ষ্ট্যান্ড) আসতে এই আধা কি এক কিলোমিটার হবে হয়তো। তো আমি যখন এই সামান্য রাস্তাটুকু হাঁটি মেইন রাস্তার দিকে তখন প্রায় ১০০ কি ১৫০শত মানুষ আমার বিপরিতে হেঁটে যায়। আমাকে খুব সাবধানেই হাঁটতে হয় ঐ সামান্য রাস্তাটুকু। কারন ওরা ৯৫% ই মহিলা/মেয়ে আর ওদের হাঁটার গতি আমার গতির চাইতে প্রায় ৩ গুন বেশি থাকে। ওরা গার্মেন্টস্ শ্রমিক।
আমি চোখে দেখে সার্ভে করে যতোটুকু বুঝলাম ওরা ১০০% ই সামারের পোষাকে ফ্রাক্টরী যায়। বিশ্বাস করুন আমি খুব দ্রুত সকলকে পর্যবেক্ষন করেছি। কারো গায়ে চাদর, জ্যাকেট, সোয়েটার, শাল, মাফলার, কানটুপি দেখিনি। যেহেতু প্রায় ৯৫% মেয়ে, আমি দেখেছি ওদের গায়ে ওড়নাটাই যেন শীতের পোষাক হয়ে আছে। হাতদুটি ভেতরে গুজানো, ঠিক নামাজে যেভাবে হাত বেঁধে দাঁড়াই। কেউ কেউ যেন একটু কাঁপেও শীতে। কিন্তু আমার অনুভুতি এমন হলেও ওরা বান্ধবীরা কিন্তু হাসতে হাসতেই দ্রুত গতিতে গল্প করতে করতে পথ চলে।
পোষাক নিয়েই যারা কাজ করে তাদেরি শীতের পোষাক নেই। আচ্ছা ব্যাপারটা তবে কি এমন যে মক্কার মানুষ হজ্ব পায়না। হতে পারে হয়তো ঐ ফ্যাক্টরীটা এমন কিছু বানায় যা পোষাক পর্যায়ে পরেনা। কিন্তু তাই বলে অলমোষ্ট ১০০% জনেরই শীতের পোষাক নেই। বর্ষা কালে আমি এটাও খেয়াল করেছি যে ওদের ছাতাও থাকেনা। গুড়ী গুড়ী বৃষ্টিতে হনহন করে হেঁটেই যায় আর হেঁটেই যায়। বৃষ্টি, শীল, শীত না রোদ কিছুই যেন ওদের যায় আসেনা।
আচ্ছা, তবে কি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীরা দুনিয়ার মানুষের পোষাক চাহিদা মেটাতে পারলেও ওদের নিজেদের কর্মীর প্রয়োজনীয় পোষাক চাহিদা মেটাতে অক্ষম। তবে সম্ভবত সকল ফ্যাক্টরীর এক অবস্থা নয়। আমার এলাকার ওরা শীতবস্ত্রহীন হলেও অন্য এলাকার কর্মীদের গায়ে অবশ্য শীতবস্ত্র দেখেছি।
তেমন কিছু না। একটা অবজার্ভেশন শেয়ার করলাম মাত্র।
মালিকদের অর্থলিপ্সা সবকিছুকে অর্থহীন করে দিয়েছে। আমাদের অনুভূতিকেও ভোঁতা বানিয়ে দিয়েছে। নূন্যতম মজুরী দিয়েই তারা নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছেন, আর কিছু ভাববার সময় কোথায় তাদের!
লেখাটা ভালো লাগলো।
বৃষ্টির দিনেও দেখেছি তারা ওড়না দিয়ে মাথাটাকে ঢেকে বৃষ্টি থেকে নিজেকে বাচাতে চেষ্টা করতে করতে কর্মক্ষেত্রে যেতে এবং আসতে দেখেছি। দূর্ভাগ্য জনক হলো তারা যখন মুষলধারের বৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করে পেটের দায়ে ভিজে চুপচুপা হয়ে কর্মক্ষেত্রে যায় সারাটা দিন তারা এই ভেজা কাপরেই কাজ করে
ওদের শীতের পোশাক আছে বলে আমার মনে হয়। গায়ে না চাপানোর হয়তো অন্য কোন কারণ আছে । আমাদের দেশে এখন খুব স্বস্তায় শীতের পোশাক পাওয়া যায়। তাদের কেনার সামর্থ্যের মধ্যেই আছে সেগুলো ।
লিজা আপু, অন্য কারনটা কি হতে পারে?
কারণ কি আমি জানিনা ভাইয়া
। তবে তাদের সিনেমা হলে যাবার ভালো পোশাক যদি থাকে তবে ৫০ বা ১০০ টাকা দিয়ে একটা গরম কাপড় কেনার টাকা কেন হবে না বলেন? এইরকম পোশাকে শীত মানায়না এটা আবার বইলেননা । আমি নিজেও পড়েছি ।
আর হ্যা, তাদের বেতনের যে ব্যাপারটা সেটা অন্য । দেখা যায় গার্মেন্ট কর্মীদের মাসের পর মাস বেতন নেই অথচ ফ্যাক্টরী মালিকের অযথাই লাখ লাখ খরচ হয়ে যাচ্ছে। মালিক শেরাটনে গিয়ে ডিনার খায় আর কর্মী মরিচ লবন দিয়ে ভাত খায়। বেতন বাড়াইতে গেলে তাদের মাথায় বাজ পড়ে । কমাইতে বা সামান্য কারণে বেতন কাটতে মালিক পক্ষের কোন কষ্টই হয়না ।
এসব বলে কোন আসলে কোন ফায়দা নাই । এরা যা করার করবেই । যদি সরকার আর জনগন মিল্লা টাইট না দেয় ।
আপু, আপনার আমি কন্ভিন্সড্। ওদের বিনোদনের ব্যাপারটা আমার মাথায় ছিলোনা।
শিবলী মেহেদীর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতায় মুগ্ধ হলাম । আমাদের অনুভূতি সত্যিই ভোঁতা হয়ে গেছে । এসব দেখেও দেখতে পাইনা । আর যারা দেখলে ওদের উপকার হতো তারা ইচ্ছা করে দেখেনা । শুভেচ্ছা শিবলী ।
এ বি তে আপনাকে স্বাগতম।
আমরাবন্ধুতে স্বাগতম!
শিবলী, আপাতত শুধু ধন্যবাদ নিয়ে রাখুন!
আমরা বন্ধুতে স্বাগতম, শিবলী।
আপনার অবজারভেশন সত্যি দু:খজনক,তবে লিজার কথাতেও যুক্তি আছে।
পোশাক শিল্পের মালিকদের যদি সাধ্য থাকতো তাহলে শ্রমিকদের জন্য কয়েদখানার মতই কলোনি বানাতো। দাসদের মত আটকে রেখে কাজ করতে বাধ্য করতো। আর তা পারে না বলেই পুলিশও বুদ্ধিজীবী ভাড়া করে তাদের আন্দোলনকে গলা টিপে মারে।
আপনার বাসায় কেনো নেট কানেকশান নেই / পিসি নেই কেনো সেটা যদি একটু ব্যাখা করতেন
আমার পিসি ও নেট আছে। কিন্তু আমি আসলে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে আমি নিজে সফ্টওয়্যার ও ওয়েব টেষ্টিং পেশায় আছি আর সেই আমি যদি বলি আমার ব্যাক্তিগত পিসি বা নেট নেই তবে যেমন বিশ্বাস করাটা কঠিন হয়ে যাবে, তেমনি পোষাক শিল্পে কাজ করেও প্রয়োজনীয় পোষাক নেই... (অনেকটা এভাবে প্রকাশ করতে চেয়েছি...)
ভাল পর্যবেক্ষণ।
কথাটা কিছুটা হলেও সত্য। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বাসায় দেখেছি স্টেথো/বিপি মেশিন নেই।
অমি পিয়াল ভাইয়ের একটা পোস্ট ছিলো; কম্বল, শীতবস্ত্র এগুলো পরবর্তী শীত মৌসুমে কোথায় যায়- তা নিয়ে।
স্বাগতম আমরাবন্ধুতে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটা নিয়ে আমরা যতোটা চিন্তিত প্রকৃত ভুক্তভুগীরা হয়তো আদৌও চিন্তিত নয়।
আজ সকালেও অনেক শীত পড়েছিল। তারা এমনই।
মন্তব্য করুন