জীবন থেকে নেয়া (টুকরা টাকরা গল্প)
আজকাল সাংবাদিকরা সবাই একযোগে এক কাজ করেন। বিশেষ করে কোন একটা কিছু হিট হয়ে গেলেতো কথাই নাই। সবাই তার পিছনেই ছুটবেন। ফেব্রুয়ারীতে বাংলা একাডেমীর বইমেলায় যেয়ে বাচ্চা আর বাচ্চার মায়েদের প্রশ্ন করা কেনো এই বইমেলা, একুশে ফেব্রুয়ারী মানে কি জানেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশির ভাগ সময়ই যেসব মায়েরা বা তাদের বাচ্চারা সঠিক উত্তর দিতে পারে না, তাদের সাক্ষাতকার চ্যানেলে প্রচার করা, সব চ্যানেলেই মোটামুটি এই কাজটা গেলো দু/তিন বছর ধরে যত্নের সাথে করে যাচ্ছে। এই কাজটা করা তাদের নৈতিক সাংবাদিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে গেছে। মেয়ের বাবা বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাসের জ্ঞানের এই বহর দেখে, এই পরিনতি নিয়ে যারপর নাই হতাশ। বিদেশে বসে নৈতিক হতাশা জ্ঞাপন করেন আর দেশের কি হবে ভেবে নিয়মিত আফসোসায়িত হন। আমি একদিন বল্লাম, চ্যারিটি বিগিনস এট হোম, তোমার মেয়েকেতো এতো একুশের প্রোগ্রামে নিয়ে গেছো, একুশে নিয়ে জ্ঞান দিয়েছো, কাঠ বিড়ালী কাঠ বিড়ালী আবৃত্তি করিয়েছো সাড়ে তিন বছর বয়েসে, তখনো বাংলা অক্ষর জ্ঞান নেই, কিন্তু ছড়া মুখস্থ করিয়েছি, জিজ্ঞেস করোতো ডেকে একুশে ফেব্রুয়ারী কি ব্যাপার? মেয়ের বাবা মেয়েকে ডাকলেন। মেয়ে নিনটেনডোতে গেম খেলতে খেলতে নিতান্ত অনইচ্ছুক গলায় বললো, জানিতো, পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ হয়েছিল। ব্যাস, শুধু মাথায় এটাই আছে যে পাকিস্তানিরা খুব খারাপ, বাংলাদেশীদের সাথে যুদ্ধ করেছে তাই যেকোন প্রশ্নে এই কুমীর ছানা প্রদর্শন হয়ে যায়। মেয়ের বাবা যখন বলতে গেলেন আবার একুশের ফেব্রুয়ারী আসলে কি ব্যাপার তখন আবার আরো ব্যস্ত গলায় জানিয়ে দিলো কন্যা, আমিতো জানি জানি।
কিন্তু হরতাল কি সেটা জানে বিদেশে বসে। নিজ দায়িত্বেই জানে। মিছিল দেখে, ধাওয়া পালটা ধাওয়া দেখে, বানান করে ব্যানার পড়ে আর জিজ্ঞেস করে এরা কি হরতালের পক্ষে বলছে না বিপক্ষে বলছে? কেনো একজন বাংলাদেশী আর একজন বাংলাদেশীকে মারছে? বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সালাম – নমস্কার। প্রবাসে থাকা বাচ্চারাও জানে বাংলাদেশে কিছু একটা হয় যার নাম “হরতাল”। এখানে বসে বাচ্চাদেরকে “হরতাল” কি বস্তুর নাম তা ব্যাখা করা মুশকিল। আসলে তারচেয়েও বড় কথা হরতাল কি তাতো নিজেও জানি না। এটার উদ্দেশ্য বিধেয়ওতো জানি না। জানি কথায় কথা না মিললে মারামারি করার উছিলার নাম হলো হরতাল। হরতাল মানে ছোটবেলা থেকে দেখেছি, টায়ার পোড়ানো, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া, দু চারজন টোকাই আর ছাত্র মারা যাওয়া, তা নিয়ে আবার মিছিল, বাসে আগুন, হল খালি, পরীক্ষা পিছানো, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, যার সাথে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী কিংবা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষদের আসলে কোন যোগাযোগ নেই। প্রতিবাদ এখানেও হয় তবে তার গড়ন ধরন এতো অন্য যে বাচ্চাকে কিছু বুঝাবো তো কি বুঝাবো? এপার থেকে ওপারের ঘটনা দেখলে অনেক সময় ছোটবেলায় দেখা টারজান সিনেমার কথা মনে পড়ে যায়। নেংটি পড়া জংলীরা যে তীর ধনুক নিয়ে মারামারি করতো, এখানে নেংটির বদলে আলখাল্লা পড়া থাকে এই যা পার্থক্য।
আমাদের ছয় বছরের আরভিন তার মায়ের সাথে শান্তিনিকেতন বেড়াতে গেছে। আমাদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছে, এতো বড় বাড়ি কার? কে এই ভদ্রলোক? তার মা তাকে ব্যাখা করেছে পড়ে সে অবাক হয়ে বলেছে, শুধু স্টোরি লিখে এতো বড় বাড়ি পাওয়া যায়? স্টোরিতো আমিও কতো লিখি!!! আমারতো কিছুই নাই। মা বলেছেন, লিখতে থাকো বাবা, দেখো একদিন তুমিও.........
এবার বইমেলায় আমার প্রথম বই প্রকাশ হলো। আমি বাসায় ফোন করেছি, আমাকে আরভিন বলেছে, তোমাকে কনগ্রেচুলেশন্স। আমি বললাম কেনো বাবা? সে বললো, এবারের বুক ফেয়ারে তুমি একটা বুক পেয়েছো, তাই। আমি হেসে বললাম, কে বলেছে তোমাকে? আরভিনের নিরুত্তাপ জবাব, আম্মু।
এর ওপরে আর কি কথা থাকতে পারে?
এ পোষ্টটা আমাদের ছোট ভাই আরাফাত শান্তকে উৎসর্গ করা হলো। উৎসর্গের বিবিধ কারণ আছে
০১/০৬/২০১৩
হরতাল কি কেবল জামাত হেফাজত ই দেয়?!
আরভিনের জন্য শুভকামনা!
উত্সর্গের ধরনখানা ব্যাপক মজা দিল!
এত্ত এত্ত দিনের পর
সকাল সকাল
এবি তে এসে আপনার
নতুন লেখা! আহ!
মন ভালো করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ..
প্রথম মন্তব্যের জন্যও তোমাকে ধন্যবাদ
এক নিশ্বাসে পড়লাম। হরতাল শুধু জামাত হেফাজত দেয় তা ঠিক না। তবে ওদের হরতালে যে জ্বালাও পোড়াও আতঙ্ক হয় তা আর কারো হরতালে হয় না। তাই ওদের টা নজরে বেশি আসে।
শান্ত ভাইয়্যা আপনার মত কবে হব জানিনা, তাইলে হয়তবা
আওয়ামি লীগের হরতাল ভুইলা গেছেন এত তাড়াতাড়ি?!
সে কি ভাই যায়রে ভূলা
৩৩ দিনের হরতাল গুলা
আমাকে করল থইলা ঝাড়া
একেবারে দেশ ছাড়া।
আমার বাড়ি বেড়াতে আসার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপা
সমরেশ এক লেখায় (বই এর নাম- 'বাঙালির নষ্টামি') হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে লিখেছিলেন, সেদিনের ছোকরা হুমায়ূন একটি বই লিখে আগাম বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা পায়, ভাবা যায় ! (কথাটা স্মৃতি থেকে লিখলাম, বিস্তারিত পড়লে মজা পাবে)। তো, বলতে পারি- শান্তিনিকেতনের বুড়ো লেখালেখি করে এত টাকা চোখেও দেখেন্নাই।
টাকা দিয়া কাম কি? সন্দীপনের মতো দু' লাইন লিখতে পারলে এ-জীবনে আর কিছু চাইতাম না।
হরতাল নিয়ে কি আর বলবো! "আমার প্রিয়" মন্ত্রী মহোদয়ের ভাষায় বলি- রাবিশ।
এটা ঠিক হুমায়ূন আহমেদ লিভড লাইক এ কিং .।.।.।.।.।.।.।।। রবী ঠাকুর বেঁচে থাকলে ওনারও ফ্রা্সষ্টেশান হইতো হুমায়ূনকে নিয়ে আমি শিওর
অদ্ভুত ভাল লাগ্লো আপনার লেখা সব সময়ের মত
অদ্ভূত ধন্যবাদ সব সময়ের মতো
সুইট একটা লেখা লিখে ফেললেন। আমি এরকম করে লিখতেই পারি না
তাই চেষ্টা করাও বাদ দিছি।
এতো অসাধারন পোষ্ট আমাকে উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ। এই ব্লগে কেউ কোথাও আমার নাম নিলেই মনে হয় এতো কষ্ট করে, পিসি হ্যাং খেয়ে মশার কামড় খেতে খেতে ক্লান্ত, এক লেখা তিনবার লিখে পোস্ট দিতে না পা্রার দুঃখ সব ভুলিয়ে দেয়। থ্যাঙ্কস এ লট আপু!
ইউ কাম কাম ছোট ভাই। তুমিতো একটা পোষ্ট এমনিতেই ডিজার্ভ করো আফটার অল ব্লগটাকে বাঁচিয়ে রেখেছো
হরতালের যন্ত্রণায় জীবন অতিষ্ট।সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণার কারণ আগে অফিস দু'দিন বন্ধ ছিল।আর এখন হরতালের কারণে শনিবারে অফিস করতে হয়।রাজনীতিবিদরা হরতালের ডাক দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে,আর তাদের চামচারা রাস্তায় পিকেটিং করে গাড়ি ভাংচুর করবে,কারো চোখ নষ্ট করবে,কারো হাত-পা ভাংগবে,কাউকে পুড়িয়ে মারবে,আর এত সব ঝুঁকির কথা জেনেও আমাদের মতো ছাপোষা কেরানীদেরকে অসুস্থ শরীর নিয়েও অফিস করতে হবে।একেই বলে কপাল!!!!!!!!

শান্ত'র খুশি খুশি চেহারা কল্পনা করতে ভালো লাগছে।
আমারো

আপনি বলেন দেখি ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি হয়েছিলো ?
তাইতো কি জানি হয়েছিলো

দাড়ি টুপি মানে জামায়াত মানে পাকিস্তানি মানে খারাপ মানে জম্বির মত খারাপ। তোমার বাচ্চার মত একই প্রশ্ন এরা ভাল না খারাপ। সেদিন ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই চিতকার আমি ওই স্কুলে আমি আর যাবো না কারন কোন ছেলে নাকি ওকে গালি দিয়েছে।
ওকে নাকি বলেছে ওর বাবা জামাত করে।
আর এখন তো পাঞ্জাবী টুপি মানেই হেফাজতকি যে অবস্থা। যতই সংস্কার মুক্ত করতে চাই ততই জড়িয়ে যাচ্ছে।
অনেকদিন পর লিখলেন আপু!!!
আরভিনের ভাষায় "ওরা কি বোকা, হরতাল দেয় কেন? স্কুলে পড়েনি, জানেনা জিনিস নষ্ট করতে হয়না? আম্মু, ওদেরকে পানিশ দেয়না কেন পুলিশ? আমরা অন্য কোন প্রাইম মিনিস্টার নিতে পারি না?"
স্টক নাই অফার নাই
(
জামাত-হেফাজত মিলে দেশের ধর্মপ্রাণ সহজ-সরল মানুষগুলোর জীবন ধারণও এখন কঠিন করে তুলেছে। আজকাল কেবল ধর্মকর্ম করা লোকদেরকেও একই পাল্লায় মাপা হয়। বুঝতে হবে জামাত-হেফাজত আর সাধারণ মুসলিম এক নয়। রাজাকার আর সাধারণ বাংলাদেশি যেমন এক নয়, তেমন।
অনেকদিন পর লিখলেন, অবশ্য অনেকেই লেখা ছেঁড়ে দিয়েছে!
আরেকজনের লেখা বিশেষ মিস করি, সে হচ্ছে - মীর। লোকটা কোথায় যে ডুব দিল!
আমরা এখন হরতালে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই সপ্তাহটা হরতাল থেকে রক্ষা পেলাম, মনে হচ্ছে এটাই অনেক বড় পাওয়া।
সত্যিই তাই
হরতালে ভিআইপি রাস্তায় রিক্সায় অফিস আসার একটা আলাদা আনন্দ আছে
আলাদা আনন্দটা জানি জানতে চায়
মন্তব্য করুন