মাস্টারদা আমাদেরই
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের বাঙ্গালীদের অনেক বড় ভূমিকা থাকলেও স্বীকৃতি যেটুকু আছে তার কৃতিত্ব পুরোটায় দাবী করে বর্তমান ভারত, তবুও ইতিহাস বলে বাঙ্গালীদের দাবিয়ে রাখা যায়নি কোন কালেই, কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি এই জাতি, কোন লোভ কিংবা ভয় দেখিয়ে বাঙ্গালী জাতির কোন আন্দোলনকে রুখে দিতে পারেনি কেউ কোন কালেই। শুরুটা করে দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেন। চট্টগ্রামের সেই সূর্যসন্তান। ১২ই জানুয়ারী ১৯৩৪ এর দিবাগত রাত ১২টা ০১ মিনিটেই মাস্টারদা কে এবং তার সঙ্গী তারেকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসী দিয়েছিলো ততকালীন বৃটিশ সরকার।
হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী তাদের লাশের সংস্কার করা হয়নি। ফাঁসীর পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার "The Renown" এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
ফাঁসীর ৫ ঘন্টা আগে চট্টগ্রামের জেলে বসে মাস্টারদা এর লিখা জীবনের শেষ কথাগুলো,
"আমার শেষ বাণী আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে। এই ত সাধনার সময়। বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এই ত সময়। ফেলে আসা দিনগুলোকে স্মরণ করার এই ত সময়।
কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমরা ভাই-বোনেরা তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিত্র্যহীন আমার এই জীবনের একঘেঁয়েমিকে ভেঙে দেয়। উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পেঁৗছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমার বন্ধুরা এগিয়ে চল, এগিয়ে চল কখনো পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ। কখনো হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহের কথা কোনও দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলখা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।
আমাদের সংগঠনে যেন বিভেদ না আসে এই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশীর্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে।
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক
বন্দেমাতরম।"
স্যালুট মাস্টারদা।
সূর্যদার ওপরে সিনেমা
http://www.youtube.com/watch?v=chIGJ5mQgxI
http://www.youtube.com/watch?v=4VXorVCFOBU
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক
বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক।
এইসব ঐতিহাসিক স্মৄতিবিজড়িত স্হানগুলোকে, এ সম্পকিত তথ্য উপস্হাপনের জন্য কোন ব্যবস্হা নেই না আমরা।
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!! প্রতিটি মানুষের নিজস্ব বিপ্লব!
মন্তব্য করুন