লাশটি উপুর হয়ে পড়েছিল
"অন্যেরা যখন ১৬ই ডিসেম্বর সকালে ছাদে ছাদে পতাকা উড়ায়, গলা ছেড়ে জয় বাংলা ধ্বনিতে বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত করে, আমি তখন ভাগারে ভাগারে আমার স্বামীর লাশের খোঁজে ব্যস্ত। দমকা হাওয়ায় হারিয়ে যাও সেই প্রিয় মুখটি আর একবার দেখার জন্য সহস্র বন্ধুকের গুলি বুক পেতে নিতে প্রস্তুত। সে সময় কত এলোপাতাড়ি গুলি চলছিলো, কত লোক ১৬ ডিসেম্বরেও গুলি খেয়েছে কিন্তু একটি গুলিও আমাকে স্পর্শ করেনি। আলীম হত্যার সাক্ষী হয়ে থাকবো বলেই হয়তো।"
স্বামী ডাঃ আলীম চৌধুরীর লাশটি এভাবেই খুঁজেছিলেন শ্যামলী চৌধুরী। সেই লাশটি তিনি পেয়েছিলেন ১৮ই ডিসেম্বর। একটি ইটের ভাটায় পড়েছিলো ডাঃ রাব্বি, আলিম চৌধুরী সহ আরো অনেকের লাশ। লাশটি উপুর হয়ে পড়েছিল।
একাত্তরের জুলাইতে নিজ চক্ষু চিকিৎসালয়ের সবকিছু সরিয়ে আশ্রয় দিয়েছিলেন মৌলানা আব্দুল মান্নানকে। তার ১০/১৫ দিন পরেই মৌলানার আসল রুপ প্রকাশ পেলো। দিনরাত পাকিস্তানী সৈন্যদের আনাগোনা এবং আলবদর সদস্যদের বন্দুক নিয়ে পাহাড়া দেয়া দেখে মৌলানার আসল রুপ বুঝতে পারলেও তখন বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল।
সেই আব্দুল মান্নান সবসময় মিথ্যা আশ্বাস দিতেন আলীম চৌধুরী এবং তার পরিবারকে। বলতো, কোন রকম সমস্যা হলে সে সাহায্য করবে। বার বার শ্যামলী চৌধুরী নিরাপদে সরে যাবার কথা বললেও রাজী হতেন না আলীম চৌধুরী। এক সময় রাজীও হয়েছিলেন এবং হাসপাতালে থাকার অনুমতি চেয়েও পাননি। তাদের বড় কন্যা নীপার বয়স ছিল তিন বছর এবং ছোট কন্যা সম্পার বয়স ছিল দুই বছর। আলীম চৌধুরী প্রায় কন্যাদের বুকে চেপে ধরতেন এবং নিজের সাথে নিয়ে ঘুমাতেন।
১৫ই ডিসেম্বরে সারাদিন ব্যস্ততার জন্য কেরোসিন নিয়ে ফিরতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। নিশ্চিত বিজয় জেনে প্রচন্ড আনন্দিত ছিলেন ডাঃ আলীম চৌধুরী। রাতে পিলখানার উপর বোমা বর্ষণ দেখছিলেন বারান্দা থেকে শ্যামলী চৌধুরী, তার মা এবং ডাঃ আলীম চৌধুরী। এমন সময় মাটি মাখা একটি গাড়ি এসে থামে তাদের বাড়ির সামনে। মৌলানা আশ্রয় নেয়ার পর থেকে এ ঘটনা নতুন ছিল না তাদের জন্য। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দরজায় করাঘাত শুনে কিছুটা ভয় পেলেন। জানালা দিয়ে দেখলেন দুই জন আলবদর সদস্য বন্দুক উঁচিয়ে ডাঃ আলীম চৌধুরীকে ডাকছে। তিনি তখন নীচ তলায় মৌলানার কাছে যেয়ে সাহায্য চাইলে সে ঘরে দরজা না খুলে ভেতর থেকে উনাকে তাদের সাথে যেতে বলে।
এরপর শ্যামলী চৌধুরী মৌলানার কাছে অনুনয় বিনয় করলেও সে অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছে তার ছাত্ররা নাকি ডাঃ আলীম চৌধুরীকে চোখের চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেছে।
এরপর.......
বিনম্র শ্রদ্ধা!
বিনম্র শ্রদ্ধা!
ধন্যবাদ, তথ্যটি আমারেদ সাথে ভাগ করার জন্য।
মন্তব্য করুন