স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার
ছবিঃ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ছাপানো হয় এই যন্ত্রটি দ্বারা।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে গ্রেপ্তারের আগেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের ততকালীন নেতাদের আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যান। তিনি একাধিক পরিকল্পনা করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় পরবর্তীতে। একাধিক পরিকল্পনার কারণ ছিল, কোন একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে যাতে অন্যটি কাজে লাগানো যায়। বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনা অনুসারেই
২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরেই তাজউদ্দিন আহমেদ নিরাপদ স্থানে পৌছানোর লক্ষ্যে ৩০শে মার্চ ফরিদপুর-কুষ্টিয়ার পথে পশ্চিম বাংলার সীমান্তে পৌছান। পরদিন ৩১শে মার্চ মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর সহায়তায় ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম সহ ভারত সীমান্ত অতিক্রম করেন। ভারত সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের যথাযোগ্য সম্মানের সাথে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে।
গ্রেপ্তারের আগ মূহুর্তে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যে ঘোষণা দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু সেই ঘোষণাকে ভিত্তি করে ৩রা এপ্রিল ততকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকে বসেন তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যেতে হলে একটি প্রশাসনিক কাঠামো অতীব জরূরী। সেদিন বৈঠকে বসার আগ মূহুর্ত পর্যন্তও তার সাথে অন্যান্য নেতাকর্মীদের ঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। তবুও আওয়ামীলীগের একজন প্রতিনিধি হিসেবেই এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে যুদ্ধকালীন সময়ে সকল রকম সহযোগীতার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব যোগাযোগের ভিত্তিতে সেদিন তাজউদ্দিন বিভিন্ন ব্যাপারে আলোচনা করেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির সাথে।
উক্ত বৈঠকে তাজউদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তার এই পরিচয় দেয়ার ভিত্তি ছিল স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই ৭০ এর নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার বৈধতা পায়। মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরাই উক্ত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে। তাজউদ্দিন আহমেদ এর সেই বৈঠকের সূত্র ধরেই ১০ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় যাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির সাথে উক্ত বৈঠকেই তাজউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক হিসেবে নিকেশের কারণে এবং পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র পাকিস্তানের এমন অভিযোগের কারণে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি না পাওয়া গেলেও, বাংলাদেশ সরকারকে সকল রকম সহযোগীতা এবং সরকারের অধীনে মুক্তিফৌজের যাবতীয় প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগীতার আশ্বাস পাওয়া যায়।
এখানে বলে রাখা ভাল, এক বৈঠকেই ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সকল রকম সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছে এমন ভাবলে ভুল হবে। এসবই ছিল বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পরিকল্পনা এবং ভারত সরকারের সাথে বঙ্গবন্ধুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং পূর্ব যোগাযোগ এর ফসল।
সুন্দর।
এ বিষয়ে আদিল ভাইয়েরও একটা লেখা আছে। আগ্রহীরা পড়তে পারেন- কিভাবে শুরু হল স্বাধীন বাংলা বেতারের যাত্রা ও স্বাধীনতার ঘোষনা সম্প্রচার
দারুন কাজ, ব্র্যাভো
মন্তব্য করুন