ইউজার লগইন

পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের কন্ঠেই গণহত্যার সাক্ষ্য

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের বিভিন্ন সময়ের কথা বার্তায় উঠে এসেছে তাদের অপরাধের সত্যতার প্রমাণ, তারা কিভাবে পরিকল্পিতভাবে এই দেশে গণহত্যা চালিয়েছে সেসকল তথ্য।
হামিদুর রহমান কমিশনের কাছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজ আহমেদ খান তার সাক্ষ্যতে বলে, "জেনারেল নিয়াজি ঠাকুরগাঁও এবং বগুড়াতে আমার ইউনিট পরিদর্শনে এসে আমাদের কাছে জানতে চান, আমরা কি পরিমাণ হিন্দু হত্যা করেছি। মে মাসে একটি লিখিত নির্দেশ আসে হিন্দুদের হত্যা করার জন্য। এই নির্দেশ ২৩ ব্রিগেড এর ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ মালিক প্রেরণ করেছিলেন।"
ব্রিগেডিয়ার পাকিস্তানী অপর এক সেনা কর্মকর্তা তার এক বিবৃতিতে বলেছিলো, অফিসারদের খুশী করতে পাকিস্তানী সেনাসদস্যরা পাখির মতন গুলি করে বাঙ্গালীদের হত্যা করতো। সে আরো বলে ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জেনারেল গুল হোসেন তার কাছে প্রায় জানতে চাইতো সে কি পরিমাণ বাঙ্গালীকে গুলি করেছে।
২৫শে মার্চ রাতে অত্যাধিক গোলা-বারুদ ব্যবহারের কারণ উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার শাহ আব্দুল কাশিম তার সাক্ষ্যতে বলে, "সেই রাতে কোন যুদ্ধ হয়নি, অত্যাধিক গোলা বারুদ পাকিস্তানী সেনাসদস্যাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে শুধুমাত্র ক্রোধের বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ লেয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত সেনা অভিযানে।" এই কথার প্রমাণ পাওয়া যায় ৮ বালুচ ব্যাটেলিয়ন এবং পরবর্তীতে ৮৬ মুজাহিদ ব্যাটিলিয়নের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লেফটেনেন্ট কর্ণেল আজিজ আহমেদ খানের বক্তব্যেও। সে তার সাক্ষ্যতে বলে, "ব্রিগেডিয়ার আরব আমাকে আরো বলেছিলো জয়দেবপুরের সকল বসতি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। আমি এই নির্দেশের প্রায় সবটুকুই পালন করেছি।"
কমিশনের রিপোর্টের প্রকাশিত অংশের একটি স্থানে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, "নির্বিচারে গুলি করে হত্যা এবং লুটতরাজের কারণে পাকিস্তানের শত্রুপক্ষের লাভ হয়েছে। এর কারণে পাকিস্তানের সাধারণ নিরীহ যেই সকল নিরব সমর্থক ছিলো সেগুলোও আমাদের বিপক্ষে চলে গেছে। ৫৩ পদাতিক রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট জেনারেল ইয়াকুব মালিক এর নির্দেশে ২৭ এবং ২৮শে মার্চে পরিচালিত সেনা অভিযানে ১৭জন বাঙ্গালী অফিসার এবং ৯১৫ জন সাধারণ মানুষকে কোন কারণ ছাড়াই নির্বিচারে হত্যা করা হয়।"
লেফটেনেন্ট জেনারেল নিয়াজি এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী তাদের সাক্ষ্যতে জানায় প্রথম দিনেই তারা জেনারেল টিক্কা খানের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছিলো যে তাদের রেশন শেষ হয়ে যেতে পারে তাই এই অঞ্চলের গবাদি পশু থেকে শুরু করে যা ইচ্ছে নিয়ে যাবার জন্য। বার্মাতে এমনটিই করেছিলো বলে উল্লেখ করা হয়েছিলো উক্ত নির্দেশে।
ইস্টার্ণ জোনের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়াজি দায়িত্ব নেয় এপ্রিলের ১০ তারিখ, ইতিমধ্যে টিক্কা খানা যেই গণহত্যা শুরু করে তা সে অব্যহত রাখে।
ব্রিগেডিয়ার মিয়া তাস্কিনুদ্দিন এর সাক্ষ্য থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। সে বলে, "অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে জুনিয়র অফিসাররাও তথাকথিত দুষ্কৃতিকারীদের দমনের নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে যেই নির্যাতন চালানো হয় তা ছিলো অমানবিক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেসব জনসম্মুক্ষে করা হতো। বুঝা যাচ্ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিলো। ধুম ঘাটে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দুষ্কৃতকারীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছিলো।"
নিয়াজি তার পূর্ববর্তী কর্মকর্তার ঘাড়ে দোষ চাপাতে যেয়ে তার সাক্ষ্যতে উল্লেখ করে, "সেনা অভিযান প্রাথমিকভাবেই শুরু হয়েছিলো, বেশীরভাগ স্থানে স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে সেনাবাহিনী নির্বিচারে যেই অভিযান শুরুর দিকে চালায় সেই ধারবাহিকতা থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি।"
হামিদুর রহমান কমিশন দোষীদের সাজা দেয়ার পক্ষে সুপারিশ করলেও পাকিস্তান সরকার কখনোই সেই উদ্যেগ গ্রহণ করেনি। আজ এত বছর পরে যখন তারা তাদের সকল অপরাধ অস্বীকার করে তখন বুঝতে বাকী থাকে না জাতি হিসেবে তারা কতটা বর্বর। আর আমাদের দেশে এত বছর পরেও পেয়ারা পাকিস্তানের প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে "আফ্রিদি, মেরি মি" প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাওয়া যায় সেই নারী তার প্রতি নারী হিসেবে শ্রদ্ধাতো অনেক দূরের ব্যাপার বরং ভয় হয় এই মনোভাব পোষণ করা মানুষগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কি শিক্ষা দিচ্ছে বা দিবে, "হামারা পাকিস্তানই আচ্ছা থা!"???

পোস্টটি ১৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

ফাহিমা দিলশাদ's picture


বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ফাকিস্থান চরি পাকিস্থান ক্রিকেট টিমকে পছন্দ করে শুধুমাত্র মুসলমান বলে। ইন্ডিয়া পাকিস্থান খেলা হলে পাকিস্থানের সাথে আরও যে একটি দেশ পাকিস্থানের জন্য দোয়া করে তার নাম আমার সোনার বাংলাদেশ। যে দেশের আপামর জনতার একটা বিশাল অংশ এতটা নির্লজ্জ যে এরা খেলার সাথে স্বাধীনতাকে মেলানোটা একটা সুশীলয় কাজ বলে মনে করে তাদের নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি আগামী দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশের, হাউ ফানি। আমার ধারণা এদের নিজের মাকেও যদি আর্মি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যেত তাহলেও এদের তেমন কিছুই হত না কারণ এদের গায়ের চামড়া এতটাই মোটা অথচ জননী ও জন্মভূমি নিয়ে লিখতে বলতে এরাই পুরো ১৭ পৃষ্ঠার বিশাল রচনা লিখে ফেলবে।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.