কি হয়েছিলো সে রাতের পরে
শশাংক সাহেবের বই থেকে জানা যায়, সেদিনের সেই গোপন মিটিং এর পরে সর্বাধিক গোপনীয়তায় আরো দুইবার, বঙ্গবন্ধু, মানিক মিয়া এবং তিনি গোপনে দেখা করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের ভারতের কাছ থেকে চাওয়া সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা নেয়া।
ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধুর সেই গোপন চিঠি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিকট পাঠানো হয় তিন ধাপে এনক্রিপ্ট করে। সাধারণত গোপন সংবাদ কিংবা তথ্য পাঠাতে এই ধরণের পন্থা অবলম্বন করা হয় যাতে করে মাঝ পথে তা অন্য কারো হাতে পরলে সে যেন মূল তথ্য উদ্ধারে সফল না হয়। দিল্লীতে চিঠি পাওয়া মাত্র প্রধানমন্ত্রী অনতিবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা আহবান করলেন। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সরকারী সফরের কারণে দেশের বাহিরে থাকায় সেই সভা হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। সভার আলোচ্য বিষয় ছিলো, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের স্বাধীনতার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে কিভাবে দীর্ঘমেয়াদী সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে এবং এই স্বাধীনতা সংগ্রামের সহায়তা প্রদানের সুবিধা/অসুবিধা সহ বিভিন্ন দিক। দিল্লী থেকে জানানো হয়, তারা চিঠিটি পেয়েছে এবং যত শীঘ্রই তারা এব্যাপারে তাদের মতামত জানানো হবে।
দিল্লী হতে সিদ্ধান্ত আসতে বিলম্বের কারণে এদিকে বঙ্গবন্ধু কিছুটা অধৈর্য হয়ে পড়েন। তিনি মনে করেন, কূটনৈতিক পর্যায়ের প্রশাসনিক জটিলতার কারণে তিনি তার লক্ষ্যে হয়তো পৌঁছাতে পারবেন না। তাই তিনি, গোপনে ভারত সফরের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি বিনা পাসপোর্টে গোপনে সীমান্ত পার হয়ে আগরতলার তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী জনাব শচিন সিং এর সাথে বেশ কয়েকবার মিলিত হন এবং তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের রাজনৈতিক সমর্থনের গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো অনুরোধের ব্যাপারেও অবহিত করেন।
বঙ্গবন্ধু সম্ভবত ১৯৬২ এবং ১৯৬৩ সালে দুই বার গোপনে ভারত গিয়েছিলেন। এর মধ্যে একবার তিনি সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত যান, এবং সেবার তার সাথে ছিলেন মিজান চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্ধু সিলেট চা বাগানের ম্যানেজার কায়েস চৌধুরীর এর সহযোহীতায় চা বাগানের মালী ভীমা বঙ্গবন্ধু এবং মিজান চৌধুরীকে সীমান্ত পাড় করিয়ে দেন। যার সত্যতা পাওয়া যায় বর্তমানে সুইডেন প্রবাসী জনাব সালেহ মোস্তফা জামিল এর সাথে ভীমার ১৯৭৪ উদনচেড়া চা বাগানে কথোপকথনে। তবে ১৯৭২ সালের Blitz পত্রিকার নভেম্বর সংখ্যায় সাংবাদিক কুলদা রায়ের লিখায়ও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
তবে আগরতলা সফরের কিছুদিনের মধ্যে দিল্লী থেকে বিলম্বের কারণে ক্ষমা চেয়ে বাংলাদেশের জনগনের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সরকার সকল প্রকার সহযোগীতার আশ্বাস দেয়। তবে তারা জানায়, বিভিন্ন মাধ্যমে নয় শুধু মাত্র একটি মাধ্যমেই ভারতের সাথে সকল যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য এবং তা হবে ঢাকাস্থ ভারতীয় কূটনৈতিক মিশন।
বঙ্গবন্ধুর গোপনে আগরতলা সফরের খবর পেয়ে যায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা এবং ফেরার সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন তাদের হাতে, এবং সেই মামলাকেই আমরা জানি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে। প্রায় পাঁচ বছর সেই মামলা চলার পর, ১৯৬৯ এর ২১শে ফেব্রুয়ারী বেকসুর খালাস পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সূত্রঃ
১) Sashanka S. Banerjee – India, Mujibur Rahman, Bangladesh Liberation & Pakistan (a political treatise)
২) Blitz, নভেম্বর সংখ্যা ১৯৭২
৩) সাক্ষাতকার, জনাব সালেহ মোস্তফা জামিল
[বিস্তারিত আরো ঘটনা প্রবাহ নিয়ে শীঘ্রই আসছি পরের পোস্ট নিয়ে
সাথে আছি। চলুক।
দারুণ পোষ্ট । চলুক ।
প্রয়োজনীয় পোস্ট...
তথ্যসূত্রগুলো কি জুড়ে দিয়েছিলেন কোথাও?
গুরুত্বপূর্ণ লেখা।
দরকারী লেখা। চলুক...
চলুক। সবার জানা উচিত ।
পড়ছি!
অসংখ্য ধন্যবাদ .অনুগ্রহ করে প্রকাশ করতে থাকুন .
মিশু ভাই, অসাধারণ হচ্ছে এই কাজটা! অসাম, সিম্পলি অসাম!!
চমৎকার
ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় নিয়ে আপনার যত্ন আর চেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই মিশু।
একটি বহুল প্রচলিত ভুল এই লেখাতেও ঘটেছে এবং তাতে লেখার সৌন্দর্য্যে খানিক হলেও মলিনতা এসেছে মনে হয়েছে। তাই উল্লেখ করতে চাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পুরো নাম শেখ মুজিবুর রহমান ( অথচ এই লেখা এবং পূর্বের লেখাটিতেও সেটা এসেছে 'মুজিবর রহমান' রূপে। সংশোধন করে নিলে ভালো লাগবে।
ভালো থাকবেন।
ফকির কামরুল
অনেক ধন্যবাদ, সংশোধন করে নিলাম
সাথে আছি। চলুক।
মন্তব্য করুন