শেষ রাতের শেষ অন্ধকারের কিছু স্মৃতি... পর্ব দুই
ভূমিকাঃ ভোর হয়েছে বেশ আগেই। গাছের পাতা কালো থেকে সবুজে রুপ নিয়েছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আমাকে আনন্দ দেয়না; যেমন দিচ্ছেনা এখন। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আপ্রান চেষ্ঠা চালাচ্ছে গাছের পাতার সাথে মিশে যেতে। কিছুক্ষন চষে বেড়িয়েই গড়িয়ে পড়ে, মাঝে মাঝে দু’এক ফোটা প্রান-পণে লেপ্টে ধরে আছে গাছের পাতার সাথে, অনেকটা যোকের মত। যেনো বৃষ্টির ফোঁটার প্রার্থনা পাতার মাঝেই বসত গড়া। গাছের পাতার সাথে লেপ্টে থাকা বৃষ্টির ফোঁটায় আকাশের প্রতিবিম্ব দেখা একসময় ভালোই লাগতো। এখন ক্যামন করেই য্যানো ইচ্ছেগুলো আর ইচ্ছে করেনা। জানালা খুলে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখিনা। ঝুম বৃষ্টিতে কাঁথা গায়ে দিয়ে কোনো হাস্যময়ীকে কল্পনা করিনা। “যদি মন কাঁদে ... তুমি চলে এসো... এক বরষায়” এই গান শুনতে শুনতে বিড়ি ফুঁকিনা। আকাশ ভরা কালো মেঘ আমাকে আহ্লাদিত করেনা।
-------------------------
কাহিনীঃ
রাত সোয়া এগারোটা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে প্রেমিকার সাথে রিক্সায় ভালো মানানোর কথা। ঝুম বৃষ্টিতে কাঁথা গায়ে ঘুম দেয়া আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে দীঘিতে গোসল দেয়া ভালো উপভোগের বিষয়। উপভোগ উপলব্ধি করার মত জ্ঞান সবাইকে মাবুদে এলাহী দেন নাই, সুখের উপলব্ধি মানুষ কখনো পরিপূর্ণ নিতে পারেনা, যতটা দুঃখের কিংবা বেদনারটা শিরায় শিরায় হজম করে। একা হাঁটছি। এখন বোঝার উপায় নেই... কোন টাইপের বৃষ্টি আমার উপর নাযিল হচ্ছে। একা হাটার মাঝে দুই টাইপের আনন্দ কাজ করে... দেহ থাকে এক কূলে আর মন থাকে আরেক কূলে। দেহের শান্তি মনকে ছুয় না, আর মনের টা দেহকে।
সামনেই স্টেশন। চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। রিক্সায় উঠতে ইচ্ছা করছেনা। আসলে ইচ্ছে করছেনা বললে ভূল হবে। পকেট নিরাপদে আছে বৃষ্টি থেকে। বৃষ্টির পানিতে টাকা ভিজে নষ্ট হবার কোন চান্স নেই। রিক্সাওয়ালা বেচারাগুলোকে দেখে হিংসে হচ্ছে... রিক্সার ভেতরে পা উঠিয়ে পর্দা টানিয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে ভীতর থেকে বিড়ির ধুঁয়া ভেসে আসছে। এই ফিলিংসটা হয়তো সে উপভোগ করতে পারছেনা...। তার উপভোগের বিষয় হচ্ছে কখন প্যাসেঞ্জার ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা দিবে...।
তারাহুরা আমার নেই। স্বাভাবিক নিয়মেই হাঁটছি। ভয়ংকর কোন ঘটনাতে মানুষ অস্বাভাবিক কান্ড করার চেয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে আরো বেশি স্বাভাবিক হয়ে যায়। সেইটাই কারো কারো কাছে অস্বাভাবিক কার্যক্রম। সামনে পিছনে ভয়ংকর আর আতংক গদাগদি করছে আমার। মাথার উপর আছে বৃষ্টি, বৃষ্টিকে আমার সব সময় রহস্য বলেই মনে হয়। কুমিল্লা যেতে হবে... চট্টগ্রাম থেকে বাসের ভাড়া? সম্ভব নাহ! ডিষ্ট্রিক ট্রাক। মায়ের দোয়া। সমগ্র বাংলাদেশ। ব্যাপারটা মজাদার, ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করা হলো, ও ভাই, টাকা নাই, কুমিল্লা নামায়া দিবেন?! ড্রাইভার জানালো, ভীতরে সীট নাই, মহিলা আছে। ছাদের উপ্রে বইসা যাইতে পারলে চলেন, আবার মাঝপথে কইতারবেন না ভাইরে বৃষ্টিতে চুবা চুবা আমারে ভিত্রে নিয়া যান।
মাথা নাড়লাম। কমুনা । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি চলছে। এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির স্বভাবটা অনেকটা মহিলাদের মত। শুরু হলে থামা থামি নাই। চলছে তো চলছেই... বসার জায়গাটা খারাপ নাহ। তেরপালের উপর কাচুমাচু হয়ে বসে থাকা ভালোই। জামা কাপড় ভিজে শ্যাত শ্যাতে হয়ে আছে। ড্রাইভার কখন গাড়ি ছাড়ে তার নাই ঠিক। মতিগতিও বুঝা যাচ্ছেনা। বিড়ি টানতে পারলে ভালো হতো। ড্রাইভার থেকে চাওয়া যেতে পারে... ড্রাইভার ভাই, আপনের কাছে একটা বিড়ি চাইতাম, কিন্তু একটা বিড়ি দিয়েতো হবেনা। তাই বার বার চাইতে হবে। আপ্নে আমারে ৩টা টাকা দেন। কোনো দিন দেখা হলে ফিরত দিয়া দিবো।
ড্রাইভারটা খাটাস টাইপের দেখতে। পাঁচ টাকা দিলো। মানুষের বাহির দেখে ভীতর গণনা করা আসলেই অনেক দুঃসাধ্য। প্রথমে দর্শনদারী... পরে গুন বিচারী, এই টাইপের ডায়লগ ভাবতেই বিরক্ত লাগছে। এক প্যাকেট আকিজ আর এককাপ গরম গরম চা। পাঁচ টাকার মামলা শেষ। আমার এক আত্মীয় আছেন, ঠান্ডা চা ছাড়া খেতে পারেন নাহ। রুচিও একটা রহস্যের ব্যাপার।
কিশোরগঞ্জে আমার এক পাতানো ভাই আছেন, মুশুরির ডাল, ভাত আর চিনি একসাথে খান। ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও... তাঁর কথায় অবাক হলামঃ- আরে শোনো এইডা হইলো খাবারের ফিউশন। তোমার কি ধারনা এই যে তুমি ডাইলের মইধ্যে লবন দেও, মরিচ দেও, হলুদ দেও তা একদিনে আসছে? আসলে তা না... মানুষের অনেক দিনের এক্সপেরিমেন্টের ফসল আজকের বাগার দেয়া ডাল। ডাল দিয়া চিনি দিয়া খাইতেছি অবাক হও ক্যান? ডাল দিয়া দুধ দিয়াও খাবো, মজাদার নিয়া কথা। এইবার দুধ দিয়া খিচুরী মিক্স কইরা খাও আর পোলাও দিয়া চাঁপা শুটকীর ভর্তা দিয়া খাও।
বুঝা যাচ্ছে ক্ষুদা পেয়েছে। ক্ষুদাবস্থায় মানুষের সব কিছুতেই খাবারের চিন্তা আসে। উপায় নেই। এককাপ চায়ের গরমভাবটা নেক্সট ৪ ঘন্টা ধরে রাখতে হবে। আকিজ বিড়ি বৃষ্টিতে খারাপ লাগেনাহ। টানে টানে আরাম পাচ্ছি। আরামটা আবিস্কার করলাম অন্য কারনে, আরাম টানে পাচ্ছিনা। আরামটা পাচ্ছি একটা বিড়ি শেষ হলেও সমস্যা নাই... আরো ১৯টা আছে ভেবে বিরাট আনন্দ। আনন্দের কোনো সংজ্ঞা নাই।
ট্রাক ছেড়েছে। বাহ! ব্যাপারটা খারাপ নাহ। উপরে খোলা আকাশ। তারমাঝে মাঝে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি। মৃদু দমকা হাওয়া। তালে তালে আমি উড়ছি। হাতে আছে জলন্ত আকিজ। অলংকার পেড়িয়ে কর্ণেল হাট ক্রস করছি... সিটি গেইট পাড় হতেই .........
( ইফতার করুম... পরে লেখমুনে বাকীটা )
বিঃদ্রঃ জয়িবুরে থাঙ্ক্যু
ইফতার শেষ হৈছে.......?
হ! ইফতার তো শেষ।
সারা দিনের ক্লান্তি শুরু হয় ঠিক ইফতারির পর মুহুর্তে,
মধ্যরাত্রে এমুন পোস্ট!
ভাই, তারপর কি হৈল?
পোস্টের আধা লেখা হলো আজ ভোর রাতে।। কোন ফাকে ঘুমাই গেছি টের পাই নাই। চোখ মেলে দেখি বিকাল।
বাকী আধা বিকালে লেখা ইফতারির আগে।
তারপরের কাহিনী পরের পোস্টে দেই।। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আরে অতিথি দেখি।
পথ ভুলে এদিকে নাকি ?
লেখা উমদা হইছে !!! তারপর কি হইলো জানতে মঞ্চায় ।
হ! আছেন কিরাম?
পথ ভুলে বলেন কিংবা ভুল পথ বলেন, এটাতে মাথা ব্যাথা নাই। লাইফটাই তো একটা জার্নি। এ জার্নিতে কতো পথই তো মাড়ি দিতে হবে। নিজস্ব বাসস্থান ক'জনেই গড়তে পারে বলেন? সময়ের তালে তালে পথ চলতে হয়, কখনো দ্রুত কখনোবা স্লো। মাঝে মাঝে কারো বসত বাড়ি দেখতে পেলে আর পছন্দ হলে উঁকি দিয়ে যাই। সেই রকমই উঁকি দেয়া আর কি।
আপ্নের যে আমার লেখা উমদা লাগে সেইটা খারাপ লেখলেও বলবেন। ( সিনায় সিনায় লাগে টানের খাতিরে
)।
তারপরের কাহিনী দি্মু। একটু জিরায়া নেই।
বিঃদ্রঃ কি অবস্থা আপনার এখন? দিনকাল যাচ্ছে কেমন? ভাল্লাগেনা আর সাঈদ ভাই। দেশে আসতেও ইচ্ছা করেনা এখন।
এইরকম লেখা বহুদিন পর পড়লাম। আপনারে মাইনাস দেয়া উচিত এত কম কম লেখার জন্য।
ট্রাক যাত্রার অভিজ্ঞতা দুইবার হইছিল। একবার ট্রাকের ড্রাইভারের পাশের সীটে(সীট না, একটা খালি তক্তা, পাছার হাড্ডির কি অবস্থা হইছিল মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠি। আর আরেকবার পেছনে খোলা আসমান মাথায় নিয়ে সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও ছিল, এই লেখা পড়ে পেছনে চলে গেলাম...........কতোদিন!!
গল্পের যাত্রা তো মাত্র শুরু হইলো। বিড়ি এখনো ১৯টা বাকী। কাহিনীর বাকীটা রেডী করেন.......
আপনার লাটিম লেখা পইড়া হাসলাম কিছুক্ষন।। কতো স্টাইলেই যে লাটিম চালাইতে পারতাম। হাহ।
অনেক ধন্যবাদ নীড়-দা পড়ার লাইগ। দেখি দু একদিনের ভিতর দিয়ে দিবো বাকীটা।
ভাজতা/ভাজতি কিরাম আছে ?
তারপর???
=====================
অনেক লম্বা গ্যাপে আসেন। ঠিক না
কেমন আছেন নুশেরাবু??
অনেক দিন পরনা ঠিক। মাঝে মাঝে এসেই ঢু দিয়ে যাই। দুই একটাতে কমেন্টও করে যাই চিপা চাপা দিয়া। তাই হয়তো খেয়াল করেন নাহ। পরের পর্বটা দিবোনে.।
পাখীরে ব্লগে দেখলাম অনেকদিন পর। ভালো লাগলো খুব।পোষ্ট রাতেই পড়লাম। চ্রম। কিন্তু বাকীটা দিতে কতদিন লাগাবেন? ৫ দিন আগে বলছিলেন ব্লগের পাতায় চোখ রাখতে, চোখ ব্যাথা হইলো পরে অর্ধেক লিখলেন? বাকীটা একটু তাড়াতাঢ়ি দনে। পাঠকের অনুরোধ।
ধুরু জয়িবু, এমনি কইলে নিজের কাছেই শরম লাগে।।
মন মেজাজ ঠিক থাকেনা সব সময়। দেখা যায় কামলা দিয়া আইসা ঘুম দেই। চোখ খুইলা দেখি পড়ন্ত দুপুর। মুখ ধুইয়া একটু বাইর হই নইলে আবার কম্বল মুরি দিয়া শুয়ে থাকি। ইফতারের আগে উঠি। ইফতার করার পর সমস্ত ক্লান্তি গ্রাস করে। কিছুক্ষন আড্ডা দেই। নইলে মুভি দেখি। এমনি কইরাই পাড় করি। নেটে ছিলাম না মাঝখানে অনেক দিন।
পরের পর্ব দিতাছি। পোস্টের নীচে আপ্নারে থাঙ্ক্যু দিছিলাম। এখন আবার থাঙ্কু দিয়া লাভ নাই।
পাখি, একসময় ব্লগ একটা নেশা ছিলো। সারাদিন পরে থাকতাম ব্লগে। কি দারুণ সময় ছিলো তখন! মাঝখানে ব্লগে বিতৃষ্ঞা চলে আসছিলো। এ বি শুরু হওয়ার পর আবার একটা নেশা তৈরী হলো। আপনারা প্রথম দিকে আসতেন নিয়মিত। এখন দেখি না একদম। নিশিকাব্য খুব মিস করি।হঠাৎ আসেন, খুব ভাল্লাগে, আবার হাওয়া হয়ে যান, সেইটা আর ভাল্লাগে না। নিয়মিত হন। আমরা তো এত চমৎকার লেখা মিস করতে চাই না।
আমারে থ্যাংকু কেন?দেখছি আগেই। আমরা আমরাই তো।আপনারে ধইন্যা ৫ কেজি।পরের পর্ব লেখেন এবার।রিকুস্ট।
লেখা তো প্রায় শেষ। এখন লেখাটা আরেকটু নীচে নামলেই পোস্ট করে দিবো। পাশাপাশি দুইটা নিজের পোস্ট দেখতেও কেমন যেনো খারাপ লাগে।
আপনাদের সব কথা এখনো ঠিকঠাক বুঝিনা, বোঝার চেষ্টা করছি, ফাঁক পেলেই এবির পুরনো লেখাগুলি পড়ি। তো যা বলছিলাম, জয়িতা, ৫ কেজি ধইন্যা মানে কি ধনে পাতা? তাহলে আমাকে ১০০ গ্রাম দেন, প্রায়দিন ধনে পাতা ছাড়া পিঁয়াজু বানাচ্ছি, মনে বড় কষ্ট হয়।
ধূর!!!
বহু দিন বাদে আইসা একখান গপ্প দিলেন, তাও আদ্ধেক!!!
খুব খ্রাপ!!!
তাড়াতাড়ি বাকিটা দেন। আমরা ট্রাকের ছাদে উইঠা বইসা রইছি তো...
ট্রাকের ছাদে যদি সত্য সত্যই বসাইতে পারতাম। টের পাইতেন গো ভাইডি।
ভাবছিলাম দুই এক দিনের ভিত্রে দিমু। আজকেই দিয়া দেয়ার ইচ্ছা আছে।
ধন্যবাদ ভাইডি পড়ার লাইগা।
অপেক্ষায় থাক্লাম।
বাহহ। অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে । শীঘ্রই দিচ্ছি।
ডালের সঙ্গে চিনি কিংবা দুধ! দারুণ!! আপনি দেখি ওস্তাদ লোক, আমাকে ছাড়িয়ে গেছেন...। বিরিয়ানীর সঙ্গে শুটকি ভর্তা, পোলাওর সঙ্গে ডাল, কলা দিয়ে পটেটো ক্রেকার্স...আরো কতরকম যে ...ভাই-বোনরা কখনো হাসাহাসি করতেন, কখনো পাগল-ছাগল বলে বেইজ্জত করতন...তবে এখন আমার পার্টনার বেশ লোক, সে লইট্টা শুঁটকি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করতে চায়, আমি বরং দেইনা...হা, হা, হা!!! ওস্তাদ, লেখা শেষ করেন। ধন্যবাদ।
বেশ
ইফতার শেষ হৈছে.......?
মন্তব্য করুন