ইরা,অসি এবং ভালোবাসা
ত্রিশ শতকের কোন এক সকাল। কাকভোরেই ঘুম ভাঙ্গে ইরার। বেডে শুয়েই হেড সেটটা মাথায় পরে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা...। নাহ্ কোন সংকেত নেই। হতাশ হয় ইরা। আজো কোন টি-মেইল (ট্যালিপ্যাথিক মেইল)আসেনি ওর নামে। হেডসেটটা রেখে হাতে রিমোট কন্ট্রোল তুলে নেয় ও। ‘উইন্ডো’ লেখা বোতামে আঙুল ছোঁয়ায়। সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে ওঠে দেয়ালে সেট করা ওয়াল টু ওয়াল সুপারভিশন মনিটর। সারা দেয়ালজুড়ে ফুটে ওঠে মেঘলা আকাশ। ধুসর প্রকৃতি। এবার রিমোট কন্ট্রোলের ‘ প্রোগ্রাম’ বোতামটা স্পর্শ করে ইরা। মুহূর্তেই মেঘলা আকাশ মুছে যায়...। দেয়ালটা হয়ে যায় বিশাল টিভি পর্দা। আবহাওয়ার সংবাদ পড়ছে একটা মেয়ে। হাঁ আজ বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির কথা শুনে মন ভালো হয়ে যায় ইরার। আহা...কতদিন বৃষ্টি হয়না...। জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে পৃথিবীতে আর আগের মতো যখন-তখন বৃষ্টি নামে না। আজেকের দিনটা সত্যি অন্যরকম। আজ মঙ্গল থেকে ষ্পেসশিপ আসবে পৃথিবীতে...।
আজ অসি আসতে পারে
তাই আজ অনেকদিন পর শাড়ি পরেছে ইরা। কপালে শাড়ি রঙের টিপ। অসির প্রিয় রং। রিমোট কন্টোলে ‘মিরর’বোতামে চাপ দেয় ইরা। সঙ্গে সঙ্গে দেয়ালের সুপারভিশন মনিটরটি বিশাল একটি আয়না হয়ে যায়। অনেক দিন পর সাজতে বসে ইরা। সাজতে সাজতে আনমনা হয়ে পড়ে ও।।মনে পড়ে যায়... অসির সঙ্গে ওর প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে। অত:পর একহাজার তলার এই স্কাই-স্ক্যাপারে সুখের নীড় বাঁধা। সাত’শ বিশ তলার এই ফ্লাটে কত সুখেইনা ছিলো ওরা। অসির কর্পোরেট হাউজের জব, আর ইরার বাচ্চাদের স্কুলের ব্যস্ততা-বেশতো কাটছিলো ওদের দিনগুলো...। কিন্তু হঠাৎ করেই অসির খেয়াল চাপলো,মঙ্গলে যাবে।ওর বন্ধুরা নাকি মঙ্গলে গিয়ে একেকজন ট্রিলিয়নার। ইরা কতকরে বুঝালো ওকে, দেখো,আমরাতো এখানে বেশ আছি...কিশের আভাব আমাদের! কিন্তু একরোখা অসি কোন যুক্তিই মানলো না,এই ‘ফকিরা’পৃথিবীর দুষিত পরিবেশে কিছুতেই থাকবেনা সে। ইরার সব নিষেধ উপেক্ষা করে ,ওকে একা ফেলে ঠিকই চলে গেল অসি। যাবার সময় বলে গেল, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসবে সে।এসে নিয়ে যাবে ইরা’কেও...।
ইরা’র টু-সিটেড পার্সোনাল যান ‘হেলিপাস’
মেঘ ছুঁই ছুঁই উঁচু হয়ে উড়ছে ওটা। গন্তব্য ‘স্পেসটার্মিনাল’। বাতাসে ওর চুল উড়ছে ,উড়ছে আঁচল। নিচের দিকে তাকিয়ে বিষন্ন হয় ইরা। পৃথিবীটা ক্রমশ: পরিনত হচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গলে। নোংরা বস্তিতে। ইরা শুনেছে...বিংশ শতাব্দীতে নাকি পৃথিবীতে অনেকগুলো নদী ছিল। এখন একটাও নেই। পৃথিবীটা নাকি তখন সবুজ ছিল,ছিল সবুজ পাহাড় আর অরণ্য। আর এখন...! সবুজের চিহ্নও নেই কোথাও, পৃথিবীর রং এখন পাংসুটে হলুদ। অরণ্যের বদলে এখন নগর। বিশাল বিশাল সব অট্রালিকা আর জঞ্জালে ভর্তি নগর। এলিট শ্রেণীর লোকেরা এখন পৃথিবীতে থাকেনা। মঙ্গল গ্রহে ওরা বিলাসবহুল আবাস গড়েছে। গড়েছে নিজস্ব স্বর্গ। অসিও চলে গেছে সেই স্বর্গালোকে। সোনার হরিণের খোঁজে যেমন অনেক আগে মানুষেরা যেতো মধ্যপ্রাচ্যে...। যাওয়ার সময় অসি বলে গেছে, ‘ইরা,এই কর্পোরেট বিশ্বে টাকা ছাড়া আর কোন কিছুরই মূল্য নেই। যেদিন আমার অনেক টাকা হবে , সেদিন ফিরবো। তুমি অপেক্ষায় থেকো। প্রতিদিন সকালে তোমার মস্তিস্কের নিওরনে আমি টি-মেইল পাঠাবো। বিংশ শতাব্দীর কোন কবিতা শুনিয়ে তোমার ঘুম ভাঙ্গাবো, কথা দিলাম...’।
নাহ্ কথা রাখেনি অসি। মঙ্গলে ওর তিন বছর হতে চললো। প্রথম প্রথম কিছুদিন টি-মেইল পাঠায়। ইরাও পাঠাতো প্রতিদিন। কিন্তু... হঠাৎ করেই সব যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয় অসি। অসির এই রহস্যময় আচরণের কোন কারণ খুঁজে পায়না ইরা। তবুও...প্রতিমাসে স্পসটার্মিনালে ছুঁটে যায় ও। যদি চলে আসে অসি। হঠাৎ এসে ওকে সারপ্রাইজ দেয় ! আজ রোববার । ছুটির দিন। তবুও আকাশে প্রচুর ভিড়। বিচিত্র সব আকাশ যান। নানা বর্ণের,নানা আকৃতির। ছুঁটে চলছে....।
কক্সবাজার স্পেসটার্মিনাল
ফুটবল মাঠের মতো বিশাল ভাসমান প্লাটফর্ম। দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্যমানুষ। স্পেসশিপের আপেক্ষায়। কখন আসবে শিপ, আসবে প্রিয় স্বজন ! ইরাও দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে একটি প্লাকার্ড।
শব্দটা হঠাৎ করেই শোনা গেল। ভোঁতা অথচ তীব্র একটা শব্দ। তারপর...সহসা আকাশের মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো সিলভারের পাতিলের মতো বিশাল আকাশযানটা। গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে ওটা নেমে এলো টার্মিনালে...।
নির্জন প্লাটফর্মে স্পেসশিপটি
আবছা অন্ধকারেও চকচক করছে ওটার ধাতব শরীর। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে ইরা।ওর হাতে এখনো ধরা সেই প্লাকার্ড, ‘অসি আই’ম হিয়ার’। কিন্তু...আসেনি অসি। কোথাও কেউ নেই...। সবাই চলে গেছে,যার যার স্বজন নিয়ে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে ইরা। একাকি। ভাসমান প্লাটফর্মে। ইরার বুকের ভেতরে ঢেউ ভাঙ্গে,নীল কষ্টের তীব্র ঢেউ। চোখের সৈকত ছাপিয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। এই মুহূর্তে ইরা যেন চেতন আর অবচেতনের মাঝামাঝি অন্য কোন জগতে । হঠাৎ করেই ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। ইরার খুব পছন্দের বৃষ্টি। নিশ্চুপ-নির্জন প্লাটফর্মে চোখের জল আর বৃষ্টিজলে ভিজতে থাকে ইরা...।
অসম্ভব ভালো লাগলো ঈশান ভাই। দারুণ লিখেছেন।
মীর,আপনার এই আন্তরিক প্রশংসা আমার জন্য প্রেরণাদায়ক।
সাব্বাস, সাবাস।
স্বল্পভাষী বন্ধু আমার,তোমার মুখের একটি শব্দই আমার জন্য অনেক কিছু...।
ঈশান, দুপুরে পড়েছি । ভাল লাগাটা বেজায় বেশী হওয়ায় তখন অতিকথনের সম্ভাবনা ছিল বলে কোন মন্তব্য লিখিনি । কিন্তু কিছু না বলা পর্যন্ত মনের খচখচানি যাচ্ছে না । আমার মনে হল, এটা একটা উপন্যাসের অতি উপযুক্ত আরম্ভ মাত্র । এ প্লট নিয়ে ধারাবহিক উপন্যাস লিখে ফেলতে পারেন ।
বড়ভাই, আপনি আমাকে অবশ্যই 'তুমি' করে বলবেন। ডায়রিতে এই লেখাটির নোট লিখেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে।তখন এটাকে 'বড় গল্প' করবো এমন ইচ্ছেই ছিল। কিন্তু...আমার অন্যসব অসম্পুর্ণ,ব্যর্থ কাজের মতো এই লেখাটিও আলসেমীর জন্য পরিত্যাক্ত হয়।এতিদন পর এবি'র সৌজন্যে লেখাটি সম্পুর্ণ হয়ে আলোর মুখ দেখলো। কিন্তু বড় করার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও ধৈর্য ধরে সে কাজটা করা আমার পক্ষে সম্ভব হলোনা। তাছাড়া...আমার ধারনা,লেখা বেশি বড় হলে পাঠকদেরও ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। কখনো প্রিন্ট মিডিয়ায় দিলে তখন হয়তো অন্যভাবে লিখবো।আপনাকে ধন্যবাদ।
বন্ধুত্বের বন্ধন হোক না আরও একটু শক্ত, তখন দেখা যাবে 'আপনি-তুমি'র ব্যাপারটা । অনেক ছোট লেখাতেও পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে কিন্তু । লেখার মাধুর্য পাঠককে ধরে রাখতে পারে, তার আয়তন ধর্তব্যের মধ্যে নেয় না পাঠক ।
পড়তে বেশ লাগলো। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো যে, আয়না বোতাম চাপলে যদি আয়না তৈরি হয় তাহলে, ইরার সজ্জার ব্যাপারটিও কেন অমন হতে পারলো না? সে আয়নায় দেখতে থাকবে কোন সাজটি তাকে ভালো লাগছে তখন সেটাকেই সে তার অবয়বে স্থির রাখতে পারতো। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রযুক্তির যত উৎকর্ষ ঘটুক না কেন, কিছু কিছু ব্যাপার থেকেই যাবে বিজ্ঞানের ধরাছোঁওয়ার বাইরেই। যেমন মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপারটিকে বিজ্ঞান করায়ত্ব করতে হয়তো পারবে না কখনোই।
জুলিয়ান সিদ্দিকী, আপনার আইডিয়াটা দারুন ! লুফে নিলাম। গল্পটা যখন প্রিন্ট মিডিয়াটে দেবো,তখন.,.আপনার আইডিয়াটা কাজে লাগাবো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
খুব ভালো একটা গল্প পড়লাম ঈশান। বড় গল্প আমরা পাঠকরা ভালো পাই না, এটা একটা ভ্রান্ত ধারমা মাত্র। টাইন্না বড় কিংবা কাতুকুতু হাসি লুকে বালা পায় না সত্যিই তাই বলে বড়কে বড় আর সত্যিকারের মজার জিনিস লুকে খায় না কথাটা অবিচার।
আপনি পাঠকের কথা না ভেবে, নিজের মনের আনন্দে লিখে যান, সাইজ যেটা দাঁড়াবে সেটাই ফীআমান্নিলাহ বলে ছেড়ে দিবেন, যার পড়ার পড়বে আর যে না পড়বে সে মুড়ি খাবে, ব্যস।
ভালো থাকবেন।
আমাকে দেখে সবাই ভাবে আমি 'অত্যন্ত ধীর-স্থির, অচঞ্চল' একজন মানুষ।আসলে ভেতরে ভেতরে আমি খুবই অস্থির, অশান্ত এবং ছটফটে । ধৈর্যহীনতার জন্য জীবনে কিছুই করা হলোনা। আমার বড় লেখা লিখতে যে অনীহা,সেটাও এই অধৈর্য স্বভাবেরই প্রতিফলন। তবুও চেষ্টা করছি, ধীরে ধীরে...।আগে টাইপিং'এ স্পীডতো বাড়িয়ে নেই।অনেক ধন্যবাদ তানবীরা।
বাহ। সময় যাই হোক না, অনুভূতিগুলো একই রকম থাকবে?
মানুষ যদি থাকে,অনুভূতিগুলোও থাকবে,তবে...পাল্টে যাবে অবশ্যই।ধন্যবাদ শওকত মাসুম।
দারুন ভালবাসার এক গল্প, ইরার জন্য মন খারাপ আমার । আমরা তো ধীরে ধীরে অসি –ইরার দিকেই এগুচ্ছি। প্রযুক্তি আমাদের ইমোশন নিয়ে খেলতে পারবে না। ঈশান মাহমুদকে ধন্যবাদ চমৎকার গল্পের জন্য।
আগনাকেও ধন্যবাদ লিটন চমৎকার মন্তব্যর জন্য।
আগনাকেও ধন্যবাদ লিটন চমৎকার মন্তব্যর জন্য।
দারুন একটা লেখা পড়লাম।
আপনি নিয়মিত লেখেন না ক্যান?
টুটুল,গল্পটি পছন্দ করার জন্য ধন্যবাদ।ভাই নিয়মিতইতো লিখছি,এক মাসে চারটা লেখা....।
৩০ দিনে মাস ... আর লেখা মোটে চাইর খান



এইডে হইলো? এইডে অবিচার না? আপ্নেই কন?
টুটুল,আমি ভা্ই ভুল বলছি,আমার প্রথম লেখা গেছে ১৮-১০ এ।মাত্র পনের দিন হইছে...।তা ছাড়া আজকে আরেকটা দিছি...।
ওরে বাবা এতো হাইফাই সাইফাই!!!!!!!
ভালো লাগলো.................।
অনেক ধন্যবাদ শাপলা।
তাতাপু র কথায় যুক্তি আছে।
আমার এন্টেনায় এই গল্প ধরে নাই।যাই মুড়ি খাইয়া আসি।

মন্তব্য করুন