আমাদের কখনো জন্ম হয় না
আমার জন্মদিন কবে সত্যি আমার জানা নেই। আমার মায়েরও নেই। বাবারও ছিল না। ঠাকুরদার তো মনে থাকার কথাই নেই। এসব বালাই তাদের ছিল না। ভাগ্যিস আমারও নেই।
আমার ভাইবোনদের কারোরই জন্মদিন বলে কোনো ব্যাপারে কখনো আগ্রহ দেখা যায়নি। সবার একটা জন্মদিন আছে বটে--সেটা বানানো। স্কুল থেকে দেওয়া। যেদিন ভর্তি হয়েছিলাম স্কুলে ক্লাশ টুতে-- হুজুর স্যার একটা জন্মতারিখ বসিয়েছিলেন--মনে পড়ে। ক্লাশ ফাইভে বৃত্তিপরীক্ষার সময়ে হেড স্যার আরেকটা বানিয়েছিলেন। ফাইনালী ক্লাশ নাইনে রেজিস্ট্রশনের আমার ফাইনাল জন্মতারিখ কেরানী কাকু হিসেব করে ঠিক করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন--আর নো চেঞ্জ।
আমার বড় দিদির একমাত্র নাতনীর বয়স বছরখানেক। গেল মাসে হুট করে দিদি পোলার বাসা থেকে খবরাদি না দিয়েই চলে এসেছে মায়ের কাছে। আমার বুড়ি মা মহাখুশি তার বড় মেয়েকে পেয়ে। তাকে এটা খেতে দেয়--ওটা পরতে দেয়। শিয়রে বসে ঘুম পাড়ায়। গুণ গুণ করে কাঁকনমালার গল্প গায়।
মাঝরাতে দিদি চোখ মেলে বলে, অ মা, কওতো আমার জন্মদিন কবে?
মা অস্ফুট গলায় বলে, ক্যান রে?
দিদি বলে, আমার নাতনীর জন্মদিন হবে। আমার পোলা জিগাইছে, মা তুমার জন্মদিন কবে?
মা জানতে চায়, তুই কি কইলি?
দিদি বলে, কইছি, বেটা, আমার জন্মদিন জাইনা তুই কি করবি?
পোলা কয়--আমার মাইয়ার লগে তুমার জন্মদিনও করুম এবার থিকা।
মা অবাক হয়ে শোনে দিদির কথা। দিদির চুলে বিলি কেটে দেয়। এ সময় দুএকটা ইঁদুর ঘরের মধ্যে এদিক ওদিক দৌঁড়ে যায়। হারিকেন দপ দপ করে জ্বলে--নেভে। কারো কারো নাসিকা গর্জন হাওয়ায় ভাসে। কে একটা শিশু ঘুমের মধ্যে থেকে থেকে কেঁদে ওঠে।
মা জানে এরপর তার বড় মেয়ে কী বলবে। জানে বলেই মা নিঃশব্দে হাসে। মায়ের মনে পড়ে কোনো এক বর্ষারাতের কথা। প্রবল যন্ত্রণার কথা--প্রথম আনন্দের কথা। আশ্বিনের ব্যাথা। অঘ্রাণের যথা। চৈত্রের জ্যোৎস্নার ভেতরে কে কখন হয়েছিল আজ তার মনে নেই। মনে কোনোদিন ছিল না ভেবে মা হালকা করে হাসে। দিদিও হাসতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
দিদির পাশে আমার বুড়া মা কাত হয়। বহুদিন পরে তার আবার ঘুম পায়। ঘুমিয়ে পড়ার আগে দেখতে পায় দিদির চুল পেকেছে। কপালের শিরা জেগেছে। শিরার ভেতরে রক্ত দপ দপ করে। তার নিজের মায়ের কী চুল পেকেছিল?
আমার মায়ের চুল কবরের মতো কালো। অন্ধকারে চাঁদ হেলে পড়ে। ক্ষুৎপিপাসা বাড়ে। এইখানে এসে মনে পড়ে--আমি তো দিদির ভাই।
সত্যি সত্যি আমার জন্ম হয়নি। হতে নেই। হবেও না। জন্ম হয়ে লাভ কী?
ভালো লাগলো অনেক, দাদা। কেমন আছেন ?
ভাল। আপনি?
দারুণ করে লিখেছেন দাদা। পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
জটিল মনস্তাত্বিক লেখা, থ্যাংকু
লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
ছবিটা দারুণ সুন্দর। লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
একটা কথা মনে পড়লো.... আমার এক বন্ধুর ৭ ভাই। ওরা সবাই তাদের জন্মদিন জানে না। মা ভুলে গেছেন। বড় ভাই এর বিয়ের পর, ভাবী মায়ের কাছে জানতে চাইলেন কার কবে জন্মদিন। মা বললেন, সবার একই ডেট এ জন্ম শুধু বছর আলাদা।ভাবী তো পুরা টাশকি খাইলো। তারপর কোন এক ডাইরী ঘেটে সবার জন্মতারিখ বের করা হলো।
মন কেমন করা লেখা।
আমি একটু অপ্রাসঙ্গিক কথা বলি - আমরা সবে এইচএসসি পাশ দিয়েছি , তো আমার এক বন্ধুর বড় বোনের জন্য আকিজ গ্রুপের কোন এক ছেলের বৈবাহিক বুত্তান্ত এসেছে, বড় ছেলের সাথে মেঝ ছেলের গ্যাপ ৩ মাসের
আকিজ সাহেবের তিন বিবি ছিলেন বোধ হয়। এই কারনে বোধ হয়।

লেখাটা অনেক ভালো লাগছে।আমার প্রাইমারীর হেড মাস্টারের কল্যানে আগস্টের জায়গায় ফেব্রুয়ারী হয়ে গেছে।
===============================
আপনি জেনে শুনেই প্রতিবারই নিয়ম ভেঙ্গে যাচ্ছেন। বিষয়টা আপনার কাছে কোন ব্যাপার না হলেও আমাদের কাছে বিব্রতকর। আপনার এই আচরণ ঊদ্ধত্ত্বপূর্ণ।
আপনার একাউন্ট স্থগিত করা হল।
মন্তব্য করুন