ওড টু মাই ফ্যামিলিঃ ৬ (খালাতো/ ফুপাতো/ চাচাতো/মামাতো )
আমার বড়লোক বন্ধুটি খালি তুতো ভাইবইনের গল্প করতে চান। আজ এ মামাতো বিদেশ হইতে আসলো, তো কাইল সে খালাতো গিফট পাঠাইলো, পরশু আবার আরেক চাচতো বিয়া সান্ধাইল, বা বিয়া ভাংলো, ইত্যাদি ইত্যাদি। মোটকথা চরম বিরক্তিকর। সে ফোন দিলেই আমি আর দুস্ত ত্রাহি ত্রাহি কইরা দ্বিগবিদিক দৌড়াইয়ে পালাইতে চাই। লাভ হয়না। ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিমেষে পাড়ি দিয়ে তুতোময় বন্ধু ঠিক আমাদের ধরে ফেলে। এরপর চরদখলের মত তুতোআলাপি বন্ধু কলকল করে দখল করতে থাকে আমাদের সময়। আমরা গোমড়া মুখে বসে থাকি, শুনতে শুনতে কানের অবস্থা যায়যায় প্রায়। তাই একদিন উনারে বললাম আচ্ছা, আপনার খালাতো মামাতোদের গল্প তো শুনলাম, আসেন এবার আমারগুলা বলি।
-“শিওর, শিওর, হাউ নাইস!! আমার না কাজিনদের গল্প শুনতে এত্ত মজা লাগে, চিন্তার বাইরে।”
-কন কি? আমি তো কাজিনদের দুইচক্ষে দেখতে পারিনা।
-ও!!! কেন? বাট হোয়াই? ইস দেয়ার সামথিং রং? (তুতো আবার খুব ইংরেজীবাজ)
- আরে শুনেন না, তাইলেই বুজবেন। এই যেমন ধরেন আমার দুরসম্পর্কের এক চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলেন জার্মানি। প্রথম বছরে ফিরার পরে দেখি বিয়াপক হাতি হইছেন। উন্নত দেশ, উন্নত খাওয়াদাওয়া এসব আরকি। সে বছর আবার চাচী তাকে বিয়া দিতে চাইলেন। তা ভাই যে মেয়েই পছন্দ করে, সেই হাতি বিয়া করবেনা বলে ঘরে কপাট দেয়। ভাইয়ের পুরুষ ইগো ভেঙ্গে তছনছ। মনটন খারাপ করে বিদায় নিলেন। পরের বছর ফিরলেন আবার। এবার দেখি সেইরকম সুন্দর স্বাস্থ্য। গুজব শুনলাম সারাবছর নাকি পুরাদমে খাটাখাটানি করে ফিগার ঠিক করে ফেলসেন। আমরা অবশ্য জানি যে তার মত আইলসা আর নাই। পরদিন বাসায় দাওয়াত । সে যখন এক প্লেট গরুর ভুনা শেষ করল আমরা জিগাইলাম কাহিনি্টা কি?
- আরে দারুন তো! কিভাবে করলেন? আমার না ওয়েস্টলাইনটা কমানো দরকার। রিয়েল পিপলের কাছ থেকে তাই সাজেশন নিচ্ছি।
-হ তা উনি বানী দিছেন যে ওজন কমানো কুন ব্যাপার না। খালি ফোকাস ঠিক রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে যে কয়েকজন ওয়েস্টলাইন নিয়া চিন্তিত তারা জিগাইলাম তুমি ফোকাস ঠিক রাখলা কেমনে? চাচাতো বললেন- “আমি প্রতিদিন সক্কালে উঠে গেঞ্জি আর ট্র্যাকপ্যান্ট পইড়া বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়াইয়া থাকি। ১০-১৫ মিনিট আশেপাশের সুন্দরীদের দেইখা ওয়ার্ম-আপ করি। তারপর যেকোন এক শর্টস পড়া সুন্দরীর পিছনের দিকে ফোকাস কইরা দৌড়ানো শুরু করি। কখন যে পাঁচ মাইল যায়গা বুঝতেই পারিনা।” ভাই যে শব্দটা ব্যাবহার করলেন সেটা ঠিক "পিছন" না, মানে এই শব্দটা একটু অদল-বদল, যোগবিয়োগ করে বুঝে নেন।
-ওহ! হা হা! হো হো! হাউ ফানি!
-তারপর ধরেন ২০০৩ সালে আমার খালাতো ভাইদের ফুপাতো বইনের বিয়া হইলো। মহিলা আবার সেইরকম রূপসচেতন। সারাক্ষন পার্লারে পইরা থাকে। বিয়ের কথাবার্তা শুরু হওয়ার সাথে সাথে সে শাড়ির সাথে ম্যাচ করে গয়না, জুতা, ব্যাগ, এমনকি নখপালিশ পর্যন্ত কিনা ফেলসে। প্রিয় পার্লারের টপ বিঊটিশিয়ানের সাথে আলাপ করে সেইরকম জাঁকজমক মেকাপের প্ল্যানও বাকি নাই। বিয়ের দিন দেখা গেল কোন কিছুই তার মনের মত না- কানের দুল বেশী লম্বা, ব্লাউজের ডিজাইন দর্জি ভুল করছে, হাতের মেনদি রং ধরতেসেনা। পার্লার থেকে মেকাপ করে ফিরে বোন একটু পরপর রাগারাগি, কান্নাকাটি করে এলাকা গরম রাখসে। এর মধ্যে আবার আসছে দুলাভাইয়ের পক্ষের ভিডিওক্যামেরাম্যান। সে বোনকে একবার এদিকে তাকাতে বলে একবার সেদিকে তাকাতে বলে। বোন মনে হইলো একটু খুশি। কারন ক্যামেরাম্যান একটু পরপর বলতেসে “ভাবী, আপনাকে খুব সুন্দর লাগতেসে, একটু মুচকি হাসি দ্যান তো! হ্যা হ্যা একদম ঠিক আছে, মাথাটা একটু উপ্রে করেন। বাহ বাহ। খুব ভালো।" বোন খুশি হয়ে পোজ দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে ভিডিওম্যান বলা শুরু করলেন “ভাবি, আপনাকে বাম দিক থেকে একদম কোনজানি একটা তারকার মত লাগছে, নামটা মনে হচ্ছেনা।” বোনের খুশি দেখে কে? সে গদগদ হয়ে আহ্ললাদি গলায় বললো, কার মত? ভিডিওম্যান বললেন “একদম খিয়াল আসছেনা। হ্যা একটু নিচে তাকান! হাসেন! বাহ বাহ” ভিডিও শেষ হবার পরে ক্যামেরাম্যান বের হইতে যাবেন তখন তার চোখ পড়লো পাশের দেয়ালে টাঙ্গানো একটা পোস্টারের দিকে। “ভাবী আপনাকে একদম উনার মত লাগতেসে। আমরা এসে দেখি বোন ভয়ানক রাগ, সবার সাথে চিৎকার চেচামেচি করতেসেন। সে খাওয়া দাওয়া বন্ধ ঘোষনা দিসে। মেকাপের আর্টিস্টের বিরুদ্ধে নাকি মামলা করবে। বিয়ের স্টেজে দুলাভাইকে ঝাড়ি দিয়ে বলসে রুসমতের সময় খবরদার আয়নায় দেখতে ট্রাই করবানা, যদি কর তাইলে সারাজীবনের মত কথা বন্ধ। দুলাভাই তো ব্যাপক চিপায়। আমরা পাশ থেকে চিল্লাইতেসি কি দেখলেন কি দেখলেন? সে বিরক্ত হয়ে বলে “চাঁদ", এখন বলেন দেখি কাহিনিটা কি?
- কি? কি?
- কাহিনী হইলো ক্যামেরাম্যান যে পোস্টারটা দেখায়া খুশিতে লাফদিয়া বলসিলো “ভাবী একদম ইনার মত”, পোস্টারটা ছিলো ডেঞ্জারাস নামক এক এলবামের, প্রচ্ছদে আছেন স্বয়ং পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন!
-হা হা! হি হি! সো ফানি! হিলারিয়াস! আরেকটা গল্প বলেন না প্লিজ!
আমি হাই তুলে বললাম, নাহ আজকে আর না। ছবির হাটে যামু আমি আর দুস্ত। কাইল পরশু দেখা হইলে আরো দুএকটা বলা যাবে। স্টকে আরো আছে।
-ওকে, গুড গুড! দেখা হবে কিন্তু! মজা করে গল্প করবো!
“হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়” বলে বিদায় দিলাম বড়লোকরে। তারপর আমি আর দুস্ত সিএনজি নিয়া সোজা ছবির হাট।
তুতো ভাই বোন দের গপ্প ভালা পাইলাম।
কি বলেন? আয়হায়!
তবুও ধন্যবাদ।
ঘুম শেষ হৈলো তাইলে
ঘুমানোর তো মাত্র প্রস্তুতি নিতেসি! রাত সাড়ে তিন ঘটিকায় এইসদ রূপকধর্মী কথা মাথায় যাইতেসে না ঠিক।
আমি আরো ভাব্লাম ঘুম শেষ কইরা জাগলেন, সকালের জন্য রেডি হইতেছেন।
উহু। কেমন আছেন?
জ্যান্তো আছি এখনো।
ভাল সংবাদ। ইন্ডিয়ার বর্ডার থেইকা দূরে থাইকেন, এই কামনা করি।
ভাইরে সাম্প্রতিক কালে ইন্ডিয়ার বর্ডারে যাওনের ইচ্ছা নাই। ভবিষ্যতে কখনো গেলেও সবার কাছ থিকা ক্ষমা-ঘেন্না চাইয়া যামু।
কাজিনদের গল্প আরো চাই চাই চাই।
তোমার সাথে চুটায়ে আড্ডা দিতে পারি নাই, আফসুস। ভবিষ্যতে ভুল হবে না
আরো আছে কিছু, তবে স্টক সীমিত। আপনার জন্যে ইস্পিশাল দিমুনে।
তাড়াতাড়ি দেশে আসো
আসতে ছাই! এক্ষনই!!
কান্দেনা, চইলা আসো।
আচছা।
তোমার খালাতো ভাইদের ফুপাতো বইন এই পোষ্ট আর এই ছবি দেখলে তোমার খবর আছে
এই কারনে আগামী ৬ মাসের মধ্যে দেশে ফেরা যাবেনা। লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে।
বোরখা পইরা থাকলে চিনতে পারবেনা
মন্তব্যটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এর অর্থ বুঝার চেষ্টা করতেসি।
ওয়াও। মেডাম আপায় দেক্তে বড়ি সৈন্দর্য আছেন

আবার জিগস!
কইয়েন না ম্যান, এখনো এই আপার অনেক গান খুব ভাল্লাগে।
শুধু গান ভাল্লাগে? আর মেকাপ?
হিজড়া মেকাপ।
এইটা কি বললেন লীনাপা? আমাদের দেশের মেকাপশিল্প যার পদাঙ্ক অনুসরন করে বিকশিত হইলো, আপনি তাকে এমনে ডিসমিস কইরা দিলেন? আহা, আপ্সুস! আবার বলতে চাই, মনোযোগ দিয়ে ভেবে বা গভীরভাবে চিন্তা করে এর অর্থ বুঝার চেষ্টা করলে এরম হইত্য না।
আজকে একজন হিজড়া মেকাপঅলা আপুরে দেখে উষ্টা খেয়ে পইড়া যাইতে লাগছিলাম, ভাগ্যিস একটা পিলার ছিলো! ধইরা দাঁড়ায়ে থাকলাম। আল্লাহ বাঁচাইছে! তুমি এতো গভীরে যাও ক্যান, হালকার উপরেই সব যখন বোঝা যাইতেছে
২২শে শ্রাবন সিনামার গান মনে পর্লো...
গভীরে যাও
আরো গভীরে যাও... (আগে পিছে মিউজিকের ইমো দেইখা লইতে হইবো)
শিশুকালে উনার চকচকা জ্যাকেট + পাতলুন বড়ই লাইক্কর্তাম
আশাকরি বয়সকালে শুভবুদ্ধির উদয় হইসে।
বয়স্কালে সবখানেই গ্লসির্থিকা ম্যাট'এ টিসি হইছি
শুভবুদ্ধি তাইলে হইসে, চমেতকার!
শুভ'র যেকোনো বুদ্ধিই শুভবুদ্ধি
গ্লসি থেকে ম্যাট হইলে শুভ, কিন্তু ম্যাটম্যাটে হইলে আবার সমস্যা।
ম্যাটম্যাটে হইলে সমস্যা কি? টেস্ট হীন হইবো, আর বেশী কিছুতো হইবো না
বুঝলেন্না ব্যাপারটা। এটাও সমস্যা।
হাহাহাহাহহাহাহাহাাাাাাাাাাা।
এ নমুনাগুলারে সহ্য করা দায়
একদম ঠিক!
এই রকম অনেক পাবলিক আছে। আমি চিনি একজনরে তার কথাই হইল ঢাকার বড় বড় সব কিছুর মালিক তার খালা-মামা। হাতে একটা টিস্যু থাকলেও ঐটা কই থেকে কিনসে, কত দিয়ে কিনসে তার ফিরিস্তি
এগ্লা যে কি অসহ্য!
এরকম কিসিম সবার লাইফেই থাকে দুয়েকজন!
আপ্নের লেখা ভালু পাই। সিকুয়েল বাঞ্ছনীয়!
ধন্যবাদ।
বিয়াপুক তো। নতুন বোতলে সুস্বাদু পুরান মদ।
পুরান মদ? কেমনে? আপনি কি ইনাদের চিনেন নাকি?
আপনের কাজিনদের ভালো পাইলাম...তারা বেশ বিনোদনমূলক!
কি আর বলপ, মামা! সবই কপাল।
তবে সিরিয়াসলি কই...পরিচিত জোক'এর সাথে মিল থাকলেও আপনের কাজিনরে কিন্তু আমার বেশ অধ্যাবসায়ী'ই লাগলো; যেই দিনকাল পড়ছে, মানুষ এখন কারো পেছনে দৌড়ানোর চিন্তারে অহেতুক মনে করবো। আগের আমলের রোমান্টিকতার কোনো অবশেষ আর নাই...
আর সৌন্দর্য সচেতন কাজিনের খেপাটাও কিন্তু জায়েজ...যেই ক্যামেরা ম্যান মাইকেল জ্যাকসনরে চিনে নাই তার শাস্তির একটা পদ্ধতিই মাথায় আসতেছে...যেইটা প্রকাশ্যে বলার সাহস পাইতেছি না।
সিরিয়াসনেসের কড়া ডোজ হয়ে গেসে। এক এক করে উত্তর দেই।
১) আপনার পরিচিত জগতের বাইরে যাওয়ার হুজ্জত কি আমাদের আছে?
২) আসলে দৌড়নোটা একদমই রোমান্টিক অর্থে ব্যবহার করা হয়নাই। আপনার মত বিদগ্ধ পাঠক সেটা মনে করলো, খুবই দুঃখের কথা।
৩) মাইকেল জ্যাকসনকে চিনেনাই এটাও ঠিক না। ঐ মূহুর্তে নাম বলতে পারেনাই লোকটা। আর ঘটনার চরিত্র জয়দেবপুরের ছায়াবীথির পাড়ার ভিডিওম্যান, বিধায় তার পশ্চিমা গানের জগতের সব নাম মুখেস্থ থাকবে এটা ধারনা করাও মনে হয় ঠিক না।
ধন্যবাদ।
হে হে! মজা পাইলাম তুতো আলাপ!
সাথে কমেন্টও
ধন্যবাদ!
যথারীতি উত্তম লেখা। পড়ে মজা পাইলাম।
ধন্যবাদ।
পোষ্ট অার কমেন্ট পড়ে যা বলতে চাইছিলাম ভুলে গেছি।
আয়হায়!
যথারীতি মজা পাইলাম
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন