ঈশ্বরবাবু আসছেন...
নাটকটা শুরু হয় একস্তুপ জঞ্জালের পাশে বসা দু’জন ভবঘুরের আলাপে-- ভ্লাদিমির ও এস্ট্রাগন। তারা প্রতিদিন এসে বসেন এক মরা গাছের নিচে, বসে অপেক্ষা করেন ঈশ্বরবাবু (Godot) নামক এক ভদ্রলোকের জন্য। তিনি আসবেন তা নিশ্চিত; কিন্তু আসলে কি হবে, কি বলবেন তিনি, কি পাবে দুই ভবঘুরে-- জানা নাই কারও। তারা দিনের পর দিন কাটিয়ে দেন জঞ্জালের পাশে অপেক্ষায় দিনগুনে। তারা নিজেদের মাঝে ঝগড়াঝাটি করে, একে অন্যকে গালাগালি দিয়ে যায়, ছেড়ে যায় একে অন্যকে, কিন্তু পরক্ষনেই আবার মিটমাট। সেখানেই তারা হাসে, কাঁদে, গান গায়, প্রাতঃকৃত্য সারে। খালি মাঝে মাঝে একজন বলে উঠে, “ধুর বাল, চল গলায় দড়ি দেই এরচেয়ে।” অন্যজন তৎক্ষণাৎ মনে করিয়ে দেয়, “তবে ঈশ্বরবাবু যে আসছেন...।” "ও হ্যাঁ হ্যাঁ। অপেক্ষা করতে তো হবে”- বলে আবার শুরু হয় তাদের কালক্ষেপন।
একজন বলে ওঠে,“আচ্ছা গাছের নিচে অপেক্ষা যে করতে বললেন, তা কি এই গাছ নাকি অন্য কোন গাছ?” উত্তর জানা নাই অন্যজনের। সে বলে “জানা নাই, তবে খুব কষ্ট হচ্ছে।” হঠাত হঠাত এসে উপস্থিত হয় এক বিলাসী প্রভু আর তার প্রায় কুকুরের মতন অনুগত ভৃত্য। “তবে ইনিই কি ঈশ্বরবাবু?”, ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করে ভ্লাদিমির। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বিলাসী প্রভু, “তবে তুমি কি আমাকে ঈশ্বরবাবু (Godot) ভাবলে? আমার নাম নশ্বরবাবু (Pozzo), আমি খুব ফেমাস লোক হে, আর এ আমার চাকর সুখী (Lucky)।প্রভুকে টুল পেতে দিয়ে দূরে গিয়ে বসে থাকে সুখী। নশ্বরবাবু মুরগীর রান কপকপ করে খেয়ে হাড্ডিটা সুখীর সামনে ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “অনেক হল, বুঝলে? একে এবার বিক্রি করে দিবো, শুয়োরটা খুব বদ।” শুনে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে সুখী, কাঁদতেই থাকে। আবার প্রভুর আদেশে গান করে, কোমর দুলিয়ে সকলকে নাচ দেখায়। কিছুক্ষন পরে সুখীকে চাবুক মারতে মারতে বিদায় হন নশ্বরবাবু।
আবার শুরু হয় ঈশ্বরবাবুর প্রতীক্ষা। পড়ন্ত বিকালে একটি কিশোর দূর থেকে এসে বলেন, “ঈশ্বরবাবু কাল আসবেন। আপনাদের জানাতে বলেছেন।” একজন জিজ্ঞেস করে “খোকা ঈশ্বরবাবু দেখতে কেমন? উনি তোমাকে মারে?” ছেলেটি বলে, “আমাকে মারেনা, তবে আমার যে ছোটভাই উনার ভেড়ার পাল দেখাশুনা করে তাকে প্রায়ই মারে। আমি উনার ছাগল চরাই।” বলেই বিদায় নেয় সে। “এই চল চলে যাই, এই ভন্ডামি আর ভাল লাগেনা” বলে ভ্লাদিমির আর এস্ট্রাগন আবারো বসে থাকে স্টেজে।
পরদিন আবার শুরু হয় ইশ্বরবাবুর অপেক্ষা। আবারো মারামারি করে দুই ভবঘুরে, মিটমাট করে নেয়, আবার তারা গলায় দড়ি দিতে চায়, কিন্তু দেওয়া হয়না। এবার তারা বসে বসে ইতিহাস,রাজনীতি, দর্শন, ধর্ম কপচায়। কিন্তু কোনটাতেই যেন ঠিক সময় যায়না। এসে হাজির হয় নশ্বরবাবু ও সুখী। এবার নশ্বরবাবু অন্ধ। কুকুরের মতন পাশে পাশে ঘুরে সুখী। ভ্লাদিমির বলে উঠে “একটু গান-নাচ করলে সময়টা কাটত।” নশ্বরবাবু বলেন, “গান করবে কি, ও তো বোবা হে! এবার এই শুয়োরটাকে বেচতেই হবে।” তারা চলে যাবার পরে আবারও দৌড়ে আসে ছোট ছেলেটি। দূর থেকে বলে “ঈশ্বরবাবু আজ আসতে পারবেন না, তবে কাল অবশ্য আসছেন...।” এবার তার পিছনে ছুটে যায় এস্ট্রাগন, “এই দাঁড়া বলে যা উনি কেমন দেখতে?” ছেলেটি দ্রুত পালিয়ে যায়।
“চল যাই আজ”।
“বেশিদূরে গিয়ে কি হবে, কাল তো আবার ফিরতে হবে”।
“ও হ্যাঁ হ্যাঁ, ঈশ্বরবাবুতো আসছেন”।
“উনি না এলে গলায় দড়ি দিবো”।
“আহ খুব কষ্ট হচ্ছে”।
“চল যাই যাই, কাল আসবো”।
এত কথা বলেও কোথাও যায়না তারা। জঞ্জালের পাশে স্থির বসে থাকে দুই ভবঘুরে। শেষ হয় নাটক।
স্যামুয়েল বেকেটের নাটক “ওয়েটিং ফর গডো” এভাবেই শেষ হয় আমাদের অন্তহীন অপেক্ষার জগদ্দল পাথরটি বুকের উপরে বসিয়ে। মনে করিয়ে দেন আমরা সবাই অপেক্ষা করে যাচ্ছি একজন ঈশ্বরবাবুর। তিনি কে, মানুষটি কেমন, এলে কি হবে, আমরা কি পাবো-- ঠিক জানিনা। তারপরও মনে হয় কিছু একটা হবে। কোন একটা পরিবর্তন আসবে! সেই কিছু একটার প্রত্যাশায় প্রতিদিন বসে আছি। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে এই বুঝি ঈশ্বরবাবু এলেন, আমাদের এবার ত্বরাবেন। ভুল! ভুল! সেতো নশ্বরবাবু, আর তার দাস সুখী। তারা তাদের মতন খেয়েদেয়ে, গেয়ে নেচে বিদায় নেয়। আমরা বসেই থাকি। কে যেন বলেছিলো ঈশ্বরবাবু আসছেন! মরতেও পারছিনা তার সাথে দেখা না হলে। ধুর্বাল, চল গলায় দড়ি দিই। তবে কে যে বললো উনি আসবেন। ও হ্যাঁ হ্যাঁ.....
**নাটকটি সম্পূর্ন টেক্সট এখানে পাবেন।
** নাটকটির ভিডিও এখানে পাবেন।
হায়!!! ঈশ্বরবাবুও আসেন না, আর আমাদের মতো ভবঘুরেদের অপেক্ষাও শেষ হয় না...
আসবেন যখন বলেছেন, অপেক্ষা না করে আর উপায় কি।
তয় আপনের পোস্টটা কইলা ফাঁকিবাজি হইসে
কেনু, কেনু?
এম্নেই খুচাইলাম আর কি...
এই এক নাটকেই লাইফটা তেজপাতা হৈয়া গেল!
অনেক দিন পর আপনের পোস্ট দেইখা অনেক ভাল লাগতেছে।
আপনি ভাল আছেন তো আপু?
আগে কি জিলাপী ছিলো নাকি যে এখন তেজপাতা হইলো?
আমার চলছে। কেমন আছিস তুই?
কত কি যে কইতে মন্চায়!!!
বহুকাল পর আসলেন । রোজ আইসেন ।
গোপনে বলে দিয়েন। আমি আছি।
বলার দিন শেষ
অনেক দিন পর আসলেন!
নাটকটা পড়ছিলাম আগেই আমরা পড়ে আছি সেখানেই!
হু তা আছি।
ঈশ্বরবাবু কে আমারো দরকার, কয়েকটা প্রশ্ন ছিলো করার।
উনি আসলে আপনেরে মিস কল দিতে বল্বোনে।
অপেক্ষা পোষাচ্ছেনা আর । যাই যাই করছি ঈশ্বর বাবুর ধারে । দোয়া করেন । তয় অনেক অনেক দিন পরে আইলেন । "এতদিন কোথায় ছিলেন ? "
আমিও অপেক্ষায় ছিলাম কাদের ভাই। এখনো আছি। আপনি ভালো আছেন তো?
হায়!!! ঈশ্বরবাবুও আসেন না, আর আমাদের মতো ভবঘুরেদের অপেক্ষাও শেষ হয় না...
কেউ আসেন না
তাইতো মনে হচ্ছে মাসুমভাই। সব প্রতিশ্রুতিই মিথ্যা ছিল। ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ আনোয়ার। যদিও এটা কোনক্রমেই সম্পূর্ন নাটকের অনুবাদের সাথে তুলনীয় না-- সারাংশ বলতে পারেন। দেশের এই অবস্থায় নাটকটির কথা বারবার মনে পড়ছিলো, সে কারনেই লেখা।
ও আফা
আপনে কঅঅঅঅঅঅই?!
আফা অফিসে গেছে, বাসায় নাই।
পরে আসেন।
মন্তব্য করুন