ক্যালিফোর্নিয়া
ক্যালিফোর্নিয়া হলো আমেরিকানদের স্বপ্নের রাজ্য।
১৮৪৮ সালে রাজ্যটির কলোমা নামক শহরে আবিস্কার হয় স্বর্ণখনি। তাবত আমেরিকার অন্যান্য রাজ্যের মানুষতো বটেই-- চায়না, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার ভাগ্যান্বেষী মানুষেরাও খেয়ে না খেয়ে ছুটতে থাকে ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে। স্বপ্ন একটাই-- সোনা খুজে পাওয়া, ফলাফল রাতারাতি ভাগ্যবদল। এই স্বর্ন-হুজুকের (gold rush) পাল্লায় পড়ে ঘর-বাড়ি বিক্রি করে দেয় বহু লোক, ছেড়ে আসে প্রিয় মানুষের সঙ্গ, শুধু মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে থাকে। পথ দুর্গম, মৃত্যুও সদা উপস্থিত। কিন্তু ফেরা যাবেনা, ক্যালিফোর্নিয়া যেতেই হবে! স্বর্ন-হুজুক হয়ে যায় মধ্য-শতকের সবচেয়ে চাঙ্গা আমেরিকান নেশার নাম। মাত্র আট বছরে, ১৮৫৫ সালের মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া পরিনত হয় আমেরিকার অন্যতম বহুজাতিক রাজ্যে। সারা পৃথিবী থেকে ৩০ লাখেরও বেশী মানুষ ভীড় করে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরঘেঁষে দাঁড়ানো এই রাজ্যটিতে। ক্যালিফোর্নিয়া হয়ে উঠে আমেরিকান ড্রিমের সমার্থক শব্দ।
স্বর্ন-বানিজ্য জমে যেতে সময় লাগেনা। কৃষিপ্রধান এই অঞ্চল দেখতে শুরু করে এক অভাবনীয় বানিজ্যিক উত্তরন। শহরগুলোতে ভীড় করে নানা দেশের নানা বনিকের দল। তাদের হাতে উড়ানোর জন্য আছে প্রচুর কাঁচা টাকা। তাই আনন্দ চাই, তীব্র আনন্দ। অচিরেই বিনোদন ব্যবসার পত্তন ঘটে লস এঞ্জেলেসের হলিউডে। ১৯১৫ সালের মধেই আমেরিকার অধিকাংশ সিনেমা বানাতে শুরু করে হলিউডের ৪-৫ টি স্টুডিও। অর্থলোভের সাথে যুক্ত হয় সুন্দরী নারী আর দেশজোড়া খ্যাতি পাবার সম্ভাবনা। ক্যালিফোর্নিয়া সকল আমেরিকান তরুনের রক্তে বাজাতে থাকে উত্তাল দামামা। এটা সত্যি যে সকল স্বপ্নের মত এই স্বপ্নও প্রায়শই অধরা থেকে যায়, তবু আকর্ষন যেন কিছুতেই কমেনা। চার্লি চ্যাপলিন ১৯২৫ সালে তৈরী করেন “গোল্ড রাশ” -- ছবিটা এই স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের এক সামাজিক দলিল।
আমেরিকান সমাজে ক্যালিফোর্নিয়া হৃদয়হীনতার রূপকও বটে। চাকচিক্য থাকলেও স্বর্নহুজুকের সময় রাজ্যটির আত্মা লুট হয়ে গেছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। এখানে সবাই বুঁদ টাকার ঘোরে, নারীর লোভে, খ্যাতির মোহে—্মানবীয় গুনাবলী অবলুপ্ত প্রায়। পপুলার কালচারে তাই ক্যালিফোর্নিয়া একটি হৃদয়হীন ফাঁদ — নন্দিত নরক। পা দিয়েছ কি মরেছ। ঈগলস এর বিখ্যাত গান ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’তে ঘুরে ঘুরে আসে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন—“ You can check out any time you like, but you can never leave.”
এইসব ভাবছিলাম যেদিন ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্য রওনা হই। সাথে আছে ভারতীয় বন্ধু। যানবাহন বলতে আমার অতি পুরানো ফোর্ড গাড়ি। আমার শহর থেকে ক্যালিফোর্নিয়া প্রায় ২২০০ মাইল দূরে, একটানা ড্রাইভ করলে ২৪ ঘন্টায় পৌছানো সম্ভব।পথে একরাত হোটেলে থাকতে হবে। প্রথম গন্তব্য “যশুয়া ট্রি ন্যাশনাল পার্ক”। বইয়ে পড়েছি যশুয়া গাছ নাকি অপার্থিব সুন্দর, শুধুমাত্র ক্যালিফোর্নিয়ার ঐ একটি জায়গাতেই গাছগুলো হয়। দেখতেই হবে। ওখান থেকে লস এঞ্জেলেস, মন্টেরী, সান ফ্রানসিস্কো, নাপা ভ্যালী (ওয়াইন কান্ট্রি) ও লেক তাহো যাওয়ার প্ল্যান আছে।খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পিং করা হবে, তাই গাড়ি ভর্তি জিনিষপত্রঃ তাঁবু, চুলা, হাড়ি-পাতিল, হারিকেন, ফলমূল, কি নাই! নিজেকে কেন যেন স্বর্নহুজুকের হুজুগে মনে হচ্ছে। পুরা সংসার নিয়ে রওনা দিয়েছি। বন্ধু মহা আনন্দে জোরে হিন্দী গান লাগায়ে মাথা নাড়ায়ে তাল দিচ্ছে। আমার অস্বস্তি বাড়তে শুরু করেছে।
যাত্রাপথে ফাঁড়ার অভাব নাই। প্রথম দিনে অন্য এক গাড়ি পিছন থেকে এসে দিলো এক মহাধাক্কা। আমরা প্রায় ছিটকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। মাথায় ও ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেলাম। প্যাঁ-পোঁ করে পুলিশ এম্বুলেন্স এসে অনেক সময় নষ্ট করলো। আবার রওনা দিলাম। ঘন্টা তিনেক পরে আরেকটা এক্সিডেন্ট।৮০ মাইল গতি্তে গাড়ী চলছে, হটাত পিছনের চাকাটা ফেটে গেল। কিছুতে নিয়ন্ত্রন রাখা যায়না, তীব্র গতিতে কাঁপতে কাঁপতে থেমে গেলো দুই রাস্তার মাঝের খালি জায়গাটাতে। কিছুক্ষন পরে চাকা বদল করে আবার রওনা হবো, বেঁকে বসলো ভারতীয়। আজকের দিনে নাকি দারুন কুফা, দানে দানে তিন দান। এরপরের এক্সিডেন্টে নাকি মৃত্যু হবে। সে রাস্তায় থাকবে, তাও গাড়ীতে চড়বেনা। আমি যতই বুঝাই, সে ততই মাথা গুঁজে না না করতে থাকে। অনেকক্ষন আলাপ আলোচনার পরে রাস্তার উদ্দেশ্য ১ ডলার সদকা দেয়ার প্রস্তাবে সে রাজী হল। বিখ্যাত হাইওয়ে রুট ৬৬’এ এক ডলার ফেলে আবার রওনা হলাম। হোটেলে পৌছানোর কথা ছিলো রাত ৯টায়। পৌছাতে পৌছাতে রাত ৪ টা হয়ে গেলো।
পরদিন সকালে উঠে যশুয়া গাছ দেখতে যাব। সেজেগুজে কোমরে ক্যামেরার পোটলা নিয়ে বের হয়ে দেখি আবারো গাড়ী নষ্ট, পানির ট্যাঙ্কে লিক। দুই-তিনজন মেকানিকের কাছে গেলাম। বললো এই শহরে কিছুতেই ঠিক করা যাবেনা এটা। যেতে হবে প্রায় দুই ঘন্টা দুরের শহর রেডল্যান্ডস। গেলাম। ঠিক করাতে করাতে বিকাল। এখন আর ফিরে যেয়ে লাভ নাই। রাত হয়ে যাবে। যশুয়া গাছ দেখা হলোনা রওনা দিলাম লস এঞ্জেলেসের দিকে। ওখানে এক বন্ধুর বাসায় থাকার ব্যাবস্থা আছে। এত কাছে এসেও গাছ না দেখে ফিরে যাচ্ছি। আমার রীতিমত শারিরিক কষ্ট হতে লাগলো। সন্ধ্যা গড়ানোর পরে পৌছালাম চিরগ্রীষ্মের স্বপ্নের শহর লস এঞ্জেলেসে।
(মীর, অসমাপ্ত লেখাটা আপনাকে ডেডিকেট করা হলো)
বাহ ক্যালিফোর্নিয়াতেও উইন্ডমিল আছে দেখছি। দারুন লাগে এই শহরটার গল্প শুনতে।
পরের পর্বগুলো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম
ক্যালিফোর্নিয়া ভর্তি উইন্ডমিল!
আসলেই দারুন একটা স্টেট, আপু। আমার খুব পছন্দ হৈসে।
আরো ছবি চাই।

লেখাও ভাল পাই!!
হইবে হইবে বৎস!
সবই পাইবে।
ক্যালিফোর্নিয়া সম্পর্কে লেখার শুরুর বর্ণনা আকৃষ্ট করেছিল।
এখানে মধ্য-শতক বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
চলুক। শেষ পর্যন্ত থাকার ইচ্ছে আছে।
এখানে মধ্যশতক মানে উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। ১৮৪৯ সালের গোল্ডরাশ শুরু হয়।তবে ক্যালিফোর্নিয়া যাওয়ার স্বপ্ন আজও সমান লোভনীয়।কেন, সেটা নিয়ে আগামী কিস্তিতে লিখব।
ভাল একটা ফিচার। বেশ ভাল লাগল। এমনিতেই ভ্রমন কাহিনী বেশ ভাললাগে । আপনার জন্য শুভকামনা রইল ।
ধন্যবাদ।
দেশী বইন এতো দিন অপেক্ষা করাইয়া এ কি দিলা? পরের পর্বে পুষায় দিয়ো।
ক্যান বুলিচ্চ গো ভাইডি, ভাল লাগিচ্ছেনা?
আপনারে একটু প্রেশারে রাখলাম আর কী।পরের পর্ব ফাটাফাটি হবে আশা করি।

এমনিতেই জ্ঞানর্জন ও অর্থাজনের প্রেশারে দিশাহারা এই অভাজন। নতুন প্রেশার তৈরী হলে পুরাই কেইস গন হইতে টাইম লাগবেনা।
আপনে দিশেহারা পর্যায়ে আছেন।আর আমিতো তারও আরেক ডিগ্রী উপরে আছি।

আর শুনতে চাই দেখতে চাই।
নিশ্চয়!
একটা ছবি সুন্দর হইছে
এইটাই এত পছন্দ করে ফেললেন, হুম?
আমি ভাবতেসিলাম সমুদ্রসৈকতে ক্যালি সুন্দরীদের জলকেলির ছবিগুলো দিবো এসপেশালি আপনার জন্য। আপনি যখন এতেই খুশিতে বাকবাকুম, তাহলে ঐগুলা বাদ রাখলাম।
হাহাহাহাহাহা
আমার জন্য না হয় নাই দিলেন... অন্যদের জন্য দেন
দেন

অন্যদের জন্য অন্যছবি দেওয়া হবে।
আরো শুনতে চাই দেখতে চাই
জ্বি আচ্ছা। ধন্যবাদ।
সবাই লেখা নিয়ে বলতেছে, আমি ছবি নিয়ে বলি...
একাকী সাইকেল আর তার পরের ছবিটা আনবিলিভেবল সুন্দর...
সাইকেলের ছবিটা আমার সবচে পছন্দ।
বইলেই তো ফেল্লি, এখন একটু মনে রাখার চেষ্টা করিস।
তোর নামের একি হাল?
সব মডুর ষড়যন্ত্র দোস্ত
ঠিকই বলসিশ তুই, ৬-৭ দিন লাগবে শেষ করতে ..
নে এইটা তোর জন্য।
কি একটা ঢুকাইলি মাথায়, এখন সারাদিন ধইরা মাথায় ঘুরতেসে পিচ্চির চিল্লানি। উফফফ!
তিন নাম্বার ছবিটা উমদা আধুনিক হইছে। বাকী ছবিগুলিও বেশ।
বাকীগুলা আধুনিক হয়নাই? হা হা।
তা'ইতো কইলাম। একটা উমদা আধুনিক আর বাকীগুলি কেবল আধুনিক...
যাইতে মন চায়। পরের পর্ব পড়তেও মন চায়
ঠিক আছে, মাসুম ভাই।
একবার কেমনে কেমনে যেন সান ফ্রান্সিসকো চইলা গেছিলাম। আহা, কী সুন্দর
হুম, বড়ই সুন্দর মাসুম ভাই। এই লেখায় কিছুটা গল্প হবে সান ফ্রানসিস্কো বিষয়ক।
কপালে থাকলে আগামী এপ্রিলে যাবো। তখন মিলিয়ে দেখবো।
কি মিলায়ে দেখবেন?
লেখা পড়ে ও ছবি দেখে আপনারে একবস্তা নির্জলা হিংসা দিলাম।
ভালো থাকেন। পরের পর্ব জলদি দেন।
হুম।
হুমম।
ছবিগুলা দেইখা তো বিদেশ যাইতে মঞ্চাইতাছে।:(
জয়িতা, ছবিগুলো এডিট করা হয়েছে।
তাগাদা: দুইদিন পার্হতে আর ঘন্টা তিনেক বাকী আছে মাত্র...
তাগাদা: দুইদিন কিন্তু আমার এখানে পার হয়ে গেছে।
ওয়েস্টার্ন কাহিনীতে পড়তাম ক্যালিফোর্নিয়ার কথা... মলিন অভিজাত স্পানিশ জমিদার কন্যাদের সাথে গরু নিয়া ক্যালিফোর্নিয়ায় র্যাঞ্চ বানাতে যাওয়া ইয়াঙ্কিদের প্রেম... ইয়াঙ্কি কথাটার মানে বোঝারও চেষ্টা করেছি বহুদিন।
ডনরা ইয়াঙ্কিদের দেখতে পারতো না, আর ডনদের ভাগনা ভাস্তারা ডনের কন্যাকে বিয়ে করে উত্তরাধিকার চায়, ওদিকে প্রাসাদের আটসাট জীবনে হাফ ধরে যাওয়া ডনকন্যা মন দিয়ে বসে আছে বেপরোয়া কাউবয়কে, ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ে জীবনের বড় সময়টাই এইটুকুই ছিল জ্ঞান।
পরর পর্বের জন্য বসে আছি, যদি রোমাঞ্চ একটু বাড়ে। একদিন নিশ্চয়ই পৌঁছেও যাব ক্যালিফোর্নিয়া।
দুইদিন পার হয়ে মাস পার হয়ে গেলো দেশী বহিন।
তুমার কোন চ্যালাশব্দ পাছিনা ক্যান গো।

লেখা ও ছবি দুইটাই অসাধারণ হৈসে। যদিও আপনারে বলে লাভ নাই, কারণ আপনে তো রিপ্লাই দেয়ারও সময় পান্না
কুন কথার রিপ্লাই দেইনাই? দ্যাখান দেখি একটা!
দেখাইলাম্না, তো? আপনে আছেন কিরাম? দেখি না ক্যান? খোঁজখবর পাই না ক্যান? নতুন লেখা কই? আমার লেখায় কমেন্ট কৈ? ইরাম ভুইলা যাইতে পার্লেন? দুঃখে চৌক্ষে পানি আয়া পড়ল
মন্তব্য করুন