এইম ইন লাইফ - শিবির
হাইস্কুলের পাঠ চুকিয়েছে। এবার কলেজে ভর্তি হবার পালা। দরিদ্র বাবা-মা এর স্বপ্ন ছেলে শহরের কোন কলেজে পড়বে, একদিন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে বাবা-মা এর নাম উজ্জ্বল করবে, সাথে পরিবারে আসবে স্বচ্ছলতা। ঘরে আছে ছোট দু'টি বোন। তাদের বিয়ের বয়স হতে হতে নিজ পায়ে দাঁড়াবে তাদের ভাই। ধুমধাম করে বিয়ে দিবে।
ভর্তি হলো শহরের একটি কলেজে। যাবার সময় মা তার অনেক দিনের জমানো কিছু টাকা হাতে গুজে দিয়ে বলে, "যা বাপ, আমারে কিছু দিতে হইবো না, আমার মাইয়া দুইডারে চাইলেই হইবো।" বাবা আশ পাশের গ্রামের ধনী পরিবারগুলোর জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। প্রতিদিন তার মজুরী থেকে কিছু টাকা উঠিয়ে রাখেন ছেলের মাসিক খরচের সাথে দু'টো টাকা যদি বেশি দেয়া যায় ছেলেটা খুশী হবে।
ছেলেটি শহরে এসে গ্রামের কথা খুব মনে পড়ে। সবসময় মনে হয় সে নিজে যদি কিছু করতে পারতো, যদি একটা টিউশনি পেতো তবে তার বাবার কাছ থেকে প্রতিমাসে টাকা নিতে হতো না। সে টাকায় তার পরিবার আরেকটু সচ্ছলভাবে চলতে পারতো। সহপাঠীদের সাহায্য চায় এ ব্যাপারে।
এদিকে কলেজের সিনিয়রদের নজরে পড়ে ছেলেটি। সাদাসিদে ছেলেটিকে মাঝে মাঝে ডেকে বেশ ভালো ভালো উপদেশ দেয় তারা। জানতে চায় তার এবং তার পরিবারের সম্পর্কে। মাঝে মাঝে ছেলেটিকে দাওয়াত করে ধর্মের বাণী শোনায়, সাথে রাতের কিংবা দুপুরের খাবার। ধীরে ধীরে এমন দাওয়াত প্রায় পেতে থাকে, শুরুতে মাসে কিংবা দুই এক মাসে একবার হলেও, তা বেড়ে প্রতি মাস হয়ে এখন সপ্তাহে দুই তিনবার। নিজের খাবারের খরচ বেঁচে যেতে লাগলো তার। বাবাকে চিঠি দিয়ে জানায় পরের মাস থেকে এত টাকা লাগবে না। অর্ধেক পাঠালেও চলবে।
একদিন হোস্টেলের এক বড় ভাই এসে বলে তার জন্য একটি সুখবর আছে আর তা হলো তার জন্য একটি টিউশনির ব্যবস্থা হয়েছে। পরদিন থেকেই শুরু করতে হবে, মাসে যে টাকা পাবে তাতে গ্রাম থেকে তার পরিবার আর কোন টাকায়ই পাঠাতে হবে না। সে তো মহা খুশী। সাথে সাথেই বাবাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলো সে খবর। বাবা-মা খবরটি জেনে খুবই আনন্দিত হলেন। ভাবলেন, ছেলে ধীরে ধীরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
ছেলেটি টিউশনি করছে, পরের মাসে আরো একটা টিউশনি পায়। প্রতি মাসে নিজের খরচ চালিয়ে বাড়িতেও টাকা পাঠায় এখন সে। প্রায় সময় বাবা-মা, বোনদের এর জন্য বিশেষ উপহার আর সাথে চিঠি। উপহারগুলো পেয়ে বেশ খুশী থাকে পরিবার, আর চিঠিতে দেয়া ধর্মীয় উপদেশগুলো মানতে শুরু করে। কলেজ শেষ করে ইতিমধ্যে সে ভর্তি হয় দেশের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঐদিকে বড় বোনটির স্কুল শেষ হলে, ভাইয়ের কাছে চিঠি দেয় বোন, যাতে লিখে, "ভাইজান, আমার স্কুল শেষ হইছে। আমারে শহরে নিয়া যাও। আমি তোমার মত পড়াশোনা করতে চাই।"
ভাইয়ের জবাব আসে বাবার কাছে, "মেয়েদের এত পড়াশোনা করতে হয় না। বকুলের জন্য পাত্র দেখা শুরু করেন। বিয়ের খরচ নিয়ে ভাববেন না। আমি সময় মত পাঠিয়ে দিবো।" সংসারের প্রায় সব খরচ চালায় ছেলে তাই ছেলের উপর কথা বাড়ায় না বাবা। পাত্র দেখা শুরু করে।
পাশের গ্রামের মাতব্বরের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়। দিনক্ষণ ঠিক করে জানায় ছেলেকে। ছেলে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে জানায় বিয়ের আগেরদিন সে গ্রামে আসবে। বিশেষ কারণে আসতে পারছে না এখনি। বিয়ের আগের দিনও আসতে পারে না ভাই, তাই গায়ে হলুদের দিন কান্না থামেনি বোনের। বিয়ের দিনও একই অবস্থা। ভাই, ফোন করে জানায় বিশেষ একটা কাজের জন্য সে আসতে পারছে না, কাজ শেষ হলেই এসে দেখে যাবে।
পরদিন, গ্রামের হাটে গেলে বাবাকে একজন ডেকে একটি সংবাদপত্রে তার ছেলের ছবি দেখিয়ে বলে, গতরাতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার ছেলেকে রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকা থেকে। সরলমনা বাবা সেই লোকের কাছে বিষ্ময়ের সাথে জানতে চায়, "বিস্ফোরক কি?
সুন্দর হইছে লেখা!
সত্যি সত্যি আর নাথিং বাট সত্যি
জীবন যেখানে যেমন। শিবিরটার কলেজের সিনিয়রদেরকেও একইভাবে গ্রেফতার করা উচিত।
মন্তব্য করুন