ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণ আবার জেগে উঠেছে
আমি ফটিকছড়ির ভূজপুর গ্রামের বাসিন্দা। এই গ্রামের মেঠো ধুলাই আমার কবিতার অঙ্গ। তার ঝির ঝিরে হাওয়া আমার গ্রীষ্মের প্রাণ। এখানের শীতের কুয়াশা গাঢ়, খেজুর গাছ থেকে রস পড়ে নিয়ম মেনে, ফুল ফুটে বসন্তে, ভ্রমর গায় গুঞ্জরনে। এখানের বর্ষায় হাঁটু জল হয় না, মাঝে মাঝে বান ঢাকে পুকুর-বিলে একাকার হয়। শাপলা কুড়াবার জন্য ঠিক অন্য এলাকার মতই আমাদের গ্রামেও বাচ্চারা উলঙ্গ হয়ে ডুব দেয় পুকুরে। নবান্নের হাসি ফুটে গৃহবধুর মুখে, ধানের মরা খর ছড়িয়ে পড়ে পথে পথে। এমন রূপসী গ্রাম বাংলার সবখানেই, আমাদের গ্রামটা কি একটু বেশীই?
যখন কেউ বলে জামায়াত মাত্র চার পার্সেন্ট, আমি অবাক হয়ে যাই। তারা চার পার্সেন্ট হতে পারে কিন্তু তাদের সাপোর্টার আমাদের গ্রামের প্রায় সব লোক। তারা বিএনপিতে ভোট দেয় আর ধর্মগোঁড়ামি নিয়ে জামায়াতকেই পছন্দ করে। সেই ছেলে বেলা থেকেই শিবিরের মারামারি কাটাকাটির কথা শুনে আসছি। মাঝখানে ১০-১২ বছর চুপ-চাপ ছিল এলাকাটা। কিন্তু সাম্প্রতিক হেফাজতের কল্যাণে ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণ আবার জেগে উঠেছে।
আমার বাল্য গ্রাম্য স্কুলটাতেই আমার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। সেখানে কোন মাদ্রাসা ছিল না। তাই সব বাচ্চা কাচ্চা ওই স্কুলে পড়ত। পড়ে শুনলাম ওই স্কুলের পাশেই একটা মাদ্রাসা বানানো হয়। তখন নাকি অনেক বাচ্চা স্কুল ছেড়ে দিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। এমনই ধর্মপ্রিয় লোক তারা। অথচ যখন বিনা উস্কানিতে হেফাজত-শিবির হামলা করে মানুষ মারে, মহিলাদের গায়ে হাত তুলে তখন তাদের ধর্ম কোথায় থাকে?
হ্যাঁ, তারা মহিলাদের গায়েও হাত তুলেছে আজকে। আজকে কেন? এই পর্যন্ত দুই জন মহিলা সাংবাদিককে তারা পিটিয়েছে। আর আজ আমার বাড়িতেই তারা দুইজন মহিলার গায়ে হাত তুলল। যখন জামাত-হেফাজতের লোকেরা আওয়ামীলীগের ছেলেদের মারছিল তখন তারা দিশেহারা হয়ে গ্রামের ভিতরে যে যেদিকে পেরেছে ঢুকে যায়। আমাদের বাড়ির উঠানে বেশ কয়েকটা যানবাহন তারা রাখে ও বাড়িতে আশ্রয় নেয়। উন্মত্ত জামায়াত ও সমমনা লোকেরা তখন বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ওই যানবাহন পোড়ানোর চেষ্টা করছিল।
বাড়ির লোকেরা বাঁধা দিতে যায়, তারা বলে আমাদের ঘরে তোমরা জ্বালাও পোড়াও না করে বাইরে গিয়ে পোড়াও। এই সময় উপস্থিত বয়স্ক ও মধ্যবয়সী দুই নারীকে তারা মারধর করে, তাদের সাহায্যে আসলে আরো দুইজন পুরুষ মানুষকেও মারধোর করে। এরপর চার পাঁচটা মোটর সাইকেল বাড়ি থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
সন্ধার সময় বাড়ির লোকদের জিজ্ঞেস করলে তাঁরা আমাকে বলেন যে, কয়জন মারা গেছে তার কোন হিসাব নেই। কে কোন দিকে পরে মরে আছে তা কেউ যানেনা। আওয়ামীলীগের বহু লোক জখম হয়েছে। আওয়ামীলীগের এই দলটা ছিল ফটিকছড়ি থানার নানুপুরের। তারা এই এলাকায় অপরিচিত, এই কারণেই তারা এতো বেশী মার খেয়েছে। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম, এরা নাকি গ্রামবাসি?- তখন আমাকে উনি জানালেন- "এখানে হেফাজত জামায়াত সব একই রকম, কোন তফাৎ নেই। এখন নাকি তারা বলাবলি করছে হিন্দুর মন্দিরও নাকি ভেঙ্গে দিবে।"
আমি খুব দুঃখিত যে আমি এমন একটা এলাকার লোক, যে এলাকায় কালচার বলে কিছু নেই। আমার গ্রামের এমন ছবি নিশ্চই আমার কাম্য নয়। ভবিষ্যতে আপনাদের আরো ভালো ছবি দেখানোর আশাবাদ রইল।
নতুন সংযুক্তিঃ
ডেয়ার ডেভিলদের খুনোখুনি সম্পর্কে যারা সন্দেহ পোষণ করেন তাঁদের জন্য সংযুক্তি এই ভিডিও
ছেলেবেলায় এক শীতের সকালে গ্রামের বাড়িতে একটা শেয়াল ভুল করে চলে আসে। এই শেয়াল গ্রামের পোলাপাইনের সামনে পড়ে। আর যায় কোথায়? তারা সেই শেয়ালকে তাড়া করলে প্রানীটা রাস্তার দুই পাড়ে পানি যাওয়ার একটা টিউবে ঢুকে পড়ে। তখন ছেলেরা দুই দিক থেকে খড় জ্বালিয়ে নর্দমায় প্রবেশ করায় আর সমানে অবোধ প্রানীটাকে গুতা দিতে থাকে। এক্সময় প্রানীটা মারা যায়। বদমাইশ ছেলেরা সেটাকে গুতিয়ে বের করে টিউবের মধ্য হতে। অর্ধ পোড়া অসহায় প্রানীর মুখ দেখলাম আমার একই গ্রামে। এই ভিডিওতে।
খবরের লিঙ্কঃ
http://www.kalerkantho.com/print_news.php?pub_no=1210&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=4
http://www.brahmanbaria24.com/web-on-line/crime-roundup/4940-2013-04-12-20-24-33.html
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-11/news/344171
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article612699.bdnews
http://banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=f128747b914f32c2ef652a83e4ab9f46&nttl=11042013188343
কখনো ভাবিনি আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মতো নারকীয় বীভৎসতার ছবি দেখতে হবে আমাদের এই প্রিয় বাসভূমিতে।ধর্মীয় উন্মাদনায় মত্ত একদল মানুষ দা-বটি নিয়ে তাড়া করছে তাদেরই প্রতিবেশী মানুষগুলোকে! হোক ভিন্ন গ্রাম তবুতো তারা একই এলাকার মানুষ।হয়তো এদের মাঝেই আছে তাদের কোন নিকট আত্মিয় অথবা বন্ধুজন।ভাবা যায়না।
মানুষ যখন উন্মাদ হয়ে যায় তাদের মাঝে কোন বাছ-বিচার থাকেনা।কিন্তু এই উন্মাদনার সৃষ্টি করে যারা তারা কাজটা করে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় সুনিপুন কৌশলে ।
এই ঠান্ডা মাথার খুনীদের এই মূহুর্ত্তে রুখা না গেলে দেশ ও জাতির সামনে কি অপেক্ষা করে আছে ভাবতে গেলে শিউরে উঠতে হয়।
হরতালের বিরুদ্ধে মিছিল করে আওয়ামীলীগের লোকেরা। অথচ কী আশ্চর্য! আওয়ামীলীগ চাইলেই আইন করে হরতাল অবৈধ করতে পারে, তাদের না দুই তৃতীয়াংশ জনসমর্থন আছে!!
এখন আইন করে নিষিদ্ধ করে দিলে যখন ক্ষমতায় থাকবেনা তখন মাঠ গরম রাখার এমন হাতিয়ার কি আর সহজে ছেড়ে দেওয়া যায়?
এই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই আজ দেশের এই অবস্থা।
১০০% সঠিক বলেছেন
আমি জানিনা আপনারা বুঝে না বুঝার ভান করে এই মন্তব্য করেছেন কি না ।প্রথম কথা হরতাল বন্ধ করলেই এই পিশাচ রা খুন জখম বন্ধ করবেনা ,দ্বিতীয়ত আইন করে হরতাল বন্ধ করলে আপনারাই আবার গলাবাজি করবেন 'সরকার বাকশাল কায়েম করছে ' বলে ।
জ্বি না। হরতাল নাগরিক অধিকার হরণ করছে, রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে হঠাৎ করে জনগনের উপর গজব নেমে আসছে হরতালের কারণে। কেউই এই হরতাল সাপোর্ট করে না। তাইলে আবার বাকশালী বলতে যাব কেন? যারা সমালোচনা করার তারা সব কিছুতেই করবে।
লীগ একবার হরতাল না করার ঘোষণা দিয়েছিল। এটাকে জনগণ স্বাগত করেছিল। কিন্তু পরে তারাই একসময় সে ঘোষণা থেকে ফিরে আসে।
এভাবে ঘোষণা না দিয়ে বরং আইন করে সবার জন্যই হরতাল বন্ধ করা উচিৎ
আমার গ্রামের বাড়িও ভূজপুর উইনিয়নে । মির্জারহাটের কাছে ।
আপত্তি না থাকলে ভূজপুর কোনখানে আপনার বাড়ি, জানাবেন ?
ব্লগে বলতে না চাইলে ই-মেইলে যোগাযোগ করবার অনুরোধ রইলো ।
arashi1980@gmail.com
বললাম না ঘটনা আমার বাড়িতেও গেছে।
ভয়াবহ অবস্থা! ধর্মের নাম করে এরা এখনও যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে!
হেফাজতকে আরো বেশী করে তেলাইতে বলেন
গতকালকেই আপনার পোস্টটা পড়ছিলাম খুব মন খারাপ। কি দুর্বিষহ অবস্থা!
প্রিয় লেখক,
আপনার পোষ্ট পড়ে মর্মাহত হয়েছি । দূর্ভাগ্যবশত: সন্ত্রাসের এই জনপদ আমারও জন্মভুমি । '৭১ এ আমার প্রিয় ফটিকছড়ি ছিল সামপ্রদায়িক সহমর্মিতার বিশ্ব-নন্দিত দৃষ্টান্ত । চোখ বুজলে আমি এখনো দেখতে পাই নিপীড়িত মানুষের কাফেলা চলছে আর পথের পাশে দাড়িয়ে রাতদিন গুড়-মুড়ি-চিড়া-কলা- বিস্কিট - পানি দিয়ে সেবা দিচ্ছে আপনার কথিত কুম্ভকর্ণদের পূর্বসূরীরা । স্বাধীনতার ৪২ বছর পর শুধুমাত্র একটি মাদ্রাসা স্থাপনের কারণে এইসব সহনশীল মানুষ রাতারাতি উগ্র সামপ্রদায়িক খুনি বনে গেল ? বিশ্বা করতে কষট হয় । যা ঘটেছে তার অন্তর-নিহিত মূল কারণ কি কখনো আলোয় আসবে ?
হরতালকে ঘৃণা করি । হরতাল প্রতিহতের নামে হিংস্রতার ইন্দন যোগায় যারা তাদেরকে আরো বেশি থুক দেই । ১৮/২০ কি মি দূর থেকে শ' তিনেক লোক নিয়ে গিয়ে হরতাল বিরোধীতার নামে শো-ডাউন করে কথিত কুম্ভকর্ণদের জাগিয়ে দেবার প্রয়োজন কার স্বার্থে ?
প্রিয় লেখক, 'অন্তরজ্বালা জলি' থেকে লিখছি । আমাদের এই এলাকাটি চট্ট গ্রামের অন্যান্য থানার তূলনায় ৭১ এ সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা দিয়েছ । বিপরীতে স্বাধীনতার পর এ'যাবত সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে । সবাই জানে কারা এ'সবের হোতা । কিন্তু কেউ বলবেনা । সবার মুখে দলীয় কুলুপ আটা । মিস নাজনীন খলীল ঠিকই বলেছন, ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য সব ইস্যূই রেখে দেয়া হবে, কোনটির মীমংসা হবেনা ।
ধন্যবাদ !
মৌলবাদের জন্য চট্টগ্রাম ও সিলেট এখন বিখ্যাত। আমার দাদাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করে পাঞ্জাবিরা। তাঁর দোষ তিনি রিফিউজিদের খাবার দিচ্ছিলেন, আশ্রয় দিচ্ছিলেন, রামগড় বর্ডারে যেতে হলে আমাদের গ্রাম হয়ে যেতে হয়। ফটিকছড়ির চেয়ারম্যান রাজাকার আছিল, সে মিলিটারিকে দেখাই দিছে আমাদের বাড়ি। আপনি যে সাম্প্রদায়ীক সম্পৃতির কথা বলছেন সে সম্পৃতি বরং আমাদের পরিবার করেছে। মোল্লারা না।
কি কথার কি জবাব ভা'য়া ! তবুও ধন্যবাদ !
আপনার শহীদ দাদার রুহের মাফেরাত কামনা করছি । শুধু আপনার পরিবার নয়, সে সময় রামগড় গামী রাস্তার উভয় পাশের পরিবারগুলো অবর্ণনীয় পাকি নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, কে মোল্লা আর কে মোল্লা না তা দেখা হয়নি ।
তিন বছর বয়সী 'হেফাজত' এর কোন বক্তব্যেএখন পর্যন্ত রাজনীতির কোন গন্ধ খোজে পাওয়া যাবেনা । যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধীতা হেফাজত করেনি, জামাত শিবিরের তান্ডবেও কখনো শরিক হয়নি । তাহলে কিছু ধর্মীয় ইস্যূ সৃষ্টি এই নির্বিরোধ জন গুষ্টিকে উসকে দেওয়া কেন ?
বাংলাদেশে সবচেয়ে সংঘটিত দল হচ্ছে জামাত শিবির । আপনি নিজেও বলেছেন আপনার এলাকায় মঅ্উ্লবাদীদের প্রধান্য অধিক । তাহলে সংগটিত দানবদের 'ডেন' এ অন্য এলাকার শ'তিনেক লোক নিয়ে শো-ডাউন করতে যাওয়ার কোন যুক্তি আছে ? এইযে অমূল্য কিছু প্রাণ ঝরে গেল, এই দায় কার ? ইতিপূর্বে এরা আজাদী বাজারে মার খেয়েছে, জাফত নগর ফাড়ির পুলিশদের সাথে নিয়েও মার খেয়েছে । তবু যদি বোধোদয় নাহয় কি বলার আছে !
লিংকের জন্য ধন্যবাদ ।
সাম্প্রদায়ীক সম্পৃতি শব্দটাকে মাঝে মাঝে খুব হাস্যকর লাগে। আলীগের লোকেরা তো সেখানে মারামারি করতে যায় নি। তাদের গাড়ির বহরে হঠাৎ আক্রমণ করে সম্ভবতঃ বিএনপি বা শিবিরের কিছু ছেলে কাজিরহাটে। এরপর লীগের ছেলেরা ওদের মারার জন্য পিছু নিলে ওরা মসজিদে প্রবেশ করে। এইসময় মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে নাস্তিকেরা মসজিদ আক্রমণ করছে, তাদের হুজুরকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘোষণার পরপরই লোকজন এসে ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। কি পরিমাণ কেরোসিন ও গানপাওডার মজুদ থাকলে ওরা এতগুলো গাড়ি পোড়াতে পারে। সকলের হাতে দেখা গেছে গাছের ডাল ছেঁচে তৈরিকৃত ডান্ডা। এরা এগুলো আগেই প্রস্তুক করেছিল।
লীগের ছেলেরা নিশ্চই মারামারি করতে যায় নি, তাই তাদের কোন প্রস্তুতি ছিল না এবং মার খেয়েছে, মারা গেছে।
এই ভিডিওটা দেখবেন। কিরকম সংগঠীত ও প্রস্তুত থাকলে এতবড় ধ্বংসযজ্ঞ করা যায় বুঝে নিবেন।
কি ভয়াবহ অবস্থা! হেফাজত জামায়াতে ইসলাম এর এই লোকগুলার কি নূন্যতম মানবিক বোধও নেই?
এক মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়েই কি কি হোয়েছে দেখেন-
এই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই আজ দেশের এই অবস্থা।
আমাদের দুর্ভাগ্য
মন্তব্য করুন