আরেকটি কার্যনির্বাহী কমিটি
'আমরা একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি' - বক্তা সুদর্শন এক যুবা - এই মুহুর্তে আমার সামনে উপবিষ্ট - বয়স বিশের কাছাকাছি - হাল ফ্যাশনের দামী পোশাকে তাকে বেশ মানিয়েছে - যুবক একা নয় - সাথে সমবয়সী আরেক যুবা আর তিন সুদর্শনা - পরিধেয় পোশাক সাক্ষ্য দেয় প্রত্যেকেই অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান - জিজ্ঞাসু চোখে ছেলেটির দিকে তাকালাম পরবর্তী ভাষ্য শোনার জন্য - 'আমাদের একটা সংগঠন আছে - নাম '.......' - আমরা সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে আপনাকে চাচ্ছি .'
মোটামুটি থতমত খেয়ে গেলাম - ক্ষীণ সন্দেহ হলো - এরা বোধহয় ঠিকানা ভুল করে আমার কাছে চলে এসেছে - আমি পেশায় সুদের কারবারী - ছাপোষা চাকরিজীবি - সাপ্তাহিক এই ছুটির দিনটিতে দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছি - পেটে এখনো কিছু পড়েনি - মাথার চুল উসকো খুসকো - পরনের ট্রাউজার মলিন - কুচকানো - টি শার্টের অবস্থাও তথৈবচ - বালতিতে সারা সপ্তাহের ময়লা কাপড় ভিজিয়ে রেখেছি - এখনো ধোয়া হয়নি - দুপুরের আহার সংস্থান নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন - এই সময় বিনা মেঘে বজ্রপাত - দলটির আগমন - আর তাদের এই অদ্ভুত প্রস্তাব.
আমার বিস্ময় কাটার আগেই ছেলেটি আবার মুখ খুলল - 'আমরা জেনেছি - আপনার মা একজন লেখিকা - একসময় ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী ছিলেন - খালারা ও লিখতেন - মামারা রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন - শুনেছি আপনি ও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন..... ' (শেষের কথাটা সর্বৈব ভুল).
কিছুটা বিরক্ত হয়েই ছেলেটিকে থামালাম - আমি কোনো বিখ্যাত পরিবারের সন্তান নই - নিতান্তই অভাজন - সম্পদ বা খ্যাতি কোনটাই আমার নেই - এরা কার কাছ থেকে কি শুনে এসেছে জানি না - কিন্তু ভুল মানুষের কাছে ভুল প্রস্তাব নিয়ে এসেছে.
'না বলার আগে আমাদের পুরো কথাটা শুনুন' - ভাষ্যকার পরিবর্তন - এবারের বক্তা দ্বিতীয় যুবা - তার ভাষ্যমতে - তাদের সংগঠনটি নতুন - দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করতে চায় - এই যেমন - পোশাক বিতরণ - স্বাস্থ্য সেবা - অর্থ সাহায্য - ইত্যাদি - আপাতত তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে - কার্য নির্বাহী কমিটিতে সব সিনিয়র নাগরিকরা আছেন - শুধু দুজন নবীন সদস্য রাখা হচ্ছে - আমি সেই ভাগ্যবান (?) দ্বৈতের একজন - আমার নাম প্রস্তাব করেছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক (বুঝতে পারছি না - এই শুভানুধ্যায়ী (?) শিক্ষক সাহেবের সাথে আমার কিসের বিরোধ ).
আবারও ধারা ভাষ্যকার পরিবর্তন - এবার এক সুদর্শনা হাল ধরলেন - জানলাম - সামনের সপ্তাহে কমিটির মিটিং আছে - নামকরা একটি রেস্তোরায় - সেখানে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ হবে - আমি যেন অবশ্যই উপস্থিত হই.
আমি বেরসিক বেহায়ার মত জিজ্ঞেস করে ফেললাম - 'লাঞ্চের ব্যবস্থা আছে কিনা' - মেয়েটি সাগ্রহে জানালো - আছে - আমার পরের প্রশ্ন - অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হচ্ছে - জানানো হলো - গণমানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে - চাঁদার রশিদ বই ছাপানো হয়েছে - সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে - তাছাড়া সিলেটের দানবীর (?) রাগিব আলী সাহেবের কাছ থেকেও বড় অনুদান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে.
সব কথা শুনলাম - ধন্যবাদ জানালাম আমার মত অচিন অস্পৃশ্যকে কমিটিতে স্থান দিতে চাওয়ার জন্য - ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজের অপারগতার কথাও জানালাম - ছেলেমেয়েগুলো অসন্তুষ্ট চিত্তে বিদায় নিল (মনে মনে এরা বোধহয় আমাকে গালিগালাজ করছিল) - পরে ওই শিক্ষকের কাছ থেকে শুনেছি - আমার সম্বন্ধে ওই পঞ্চের মন্তব্য - আমি হচ্ছি নিদারুণ অভদ্র অহংকারী এক লোক - আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি - এই মন্তব্য আমার জন্য নতুন নয়.
নিজের আচরণের জন্য আমি একবিন্দু লজ্জিত নই - কমিটি শব্দটিতে আমার এলার্জি আছে - এটা কমিটির দেশ - সেবার জন্য কমিটি - দানের জন্য কমিটি - কমিটি তদন্তের জন্য - কমিটি তদন্ত রহিতের জন্য -কমিটি দাবি আদায়ের - কমিটি আপোষহীন নেত্রীদের আপোষের - এমনকি মরা পোতার জন্য কিংবা শব ব্যবচ্ছেদের জন্য ও এখানে কমিটি হয় - কমিটি হয় - কিন্তু কাজ হয়না - যেটা হয় সেটা শুধুই কিছু মানুষের কার্য সিদ্ধি.
সাধারণ মানুষের হৃদয় অনেক বড় - কষ্টার্জিত উপার্জন থেকেও তাই দান আসে - চাঁদার রশিদ বই বড় দ্রুত শেষ হয় - কমিটির পর কমিটি হয় - সদস্যরা তারকা হোটেলে বসে কর্মপন্থা উদ্ভাবন করেন - চিংড়ির কাটলেটটা ভালো ছিল না বলে কেউ কেউ রাগ করেন - কেউ বা বিমর্ষ হন পানিটা কেন 'মাম' হলো না এই ভেবে - শীতবস্ত্র দিতে দিতে গ্রীষ্ম এসে যায় - স্যালাইন দেবার আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায় - পাঁচ হাজারের ত্রান আসে - সাথে আসে দশ হাজারী ভিডিওম্যান - ভুখা মানুষের শুন্য উদরে ত্রানের ওষুধ সয় না - ভিডিওর কোয়ালিটি ভালো নয় বলে কমিটির আক্ষেপ তবু যায় না.
ওয়েল সেইড...
কথাগুলো ভাল বলেছেন।
অফটপিকঃ আপনার প্রোফাইল দেখলাম ২৪টা পোস্ট করেছেন কিন্তু কমেন্ট করেছেন মাত্র ১৮ টি। কেন ভাই? আপনার পোস্ট যারা পড়ছে ভাল লাগা থেকে কমেন্ট করছে তাদেরকে একটা ধন্যবাদতো দিতে পারেন। নাকি?
ঠিক কথাগুলোই বললেন।
লাঞ্চটা মিস করলেন?

ভালো লাগলো আপনার উপলব্দিসম্পন্ন লেখাটা পড়ে... এরকম করে ভাবতে পারে কয়জন। লিখে যান নিজের ভাবনাগুলো। লিখতে থাকুন...
কী আর করার আছে!
মন্তব্য করুন